কুরআন মজীদ সূরা আন-নূর আয়াত ৪১
Qur'an Surah An-Nur Verse 41
আন-নূর [২৪]: ৪১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللّٰهَ يُسَبِّحُ لَهٗ مَنْ فِى السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ وَالطَّيْرُ صٰۤفّٰتٍۗ كُلٌّ قَدْ عَلِمَ صَلَاتَهٗ وَتَسْبِيْحَهٗۗ وَاللّٰهُ عَلِيْمٌۢ بِمَا يَفْعَلُوْنَ (النور : ٢٤)
- alam
- أَلَمْ
- Do not
- কি নি দেখো
- tara
- تَرَ
- you see
- তুমি
- anna
- أَنَّ
- that
- যে
- l-laha
- ٱللَّهَ
- Allah -
- আল্লাহ্র
- yusabbiḥu
- يُسَبِّحُ
- glorify
- পবিত্র মহিমা ঘোষনা করছে
- lahu
- لَهُۥ
- Him
- জন্যে তাঁরই
- man
- مَن
- whoever
- যা কিছু
- fī
- فِى
- (is) in
- মধ্যে (অাছে)
- l-samāwāti
- ٱلسَّمَٰوَٰتِ
- the heavens
- আকাশমণ্ডলির
- wal-arḍi
- وَٱلْأَرْضِ
- and the earth
- ও পৃথিবীতে
- wal-ṭayru
- وَٱلطَّيْرُ
- and the birds
- আর পাখিরাও (যারা)
- ṣāffātin
- صَٰٓفَّٰتٍۖ
- (with) wings outspread?
- ডানা মেলে চলছে (উড়ন্ত)
- kullun
- كُلٌّ
- Each one
- প্রত্যেকে
- qad
- قَدْ
- verily
- নিশ্চয়ই
- ʿalima
- عَلِمَ
- knows
- জেনে নিয়েছে
- ṣalātahu
- صَلَاتَهُۥ
- its prayer
- তাঁর প্রার্থনার
- watasbīḥahu
- وَتَسْبِيحَهُۥۗ
- and its glorification
- ও তাঁর পবিত্র মহিমা ঘোষনা করার (নিয়ম)
- wal-lahu
- وَٱللَّهُ
- And Allah
- আর আল্লাহ্
- ʿalīmun
- عَلِيمٌۢ
- (is) All-Knower
- খুব অবহিত
- bimā
- بِمَا
- of what
- ঐ বিষয়ে যা
- yafʿalūna
- يَفْعَلُونَ
- they do
- তারা করছে
Transliteration:
Alam tara annal laaha yusabbihu lahoo man fissamaawaati wal ardi wat tairu saaaffaatim kullun qad 'alima Salaatahoo wa tasbeehah; wallaahu 'aleemum bimaa yaf'aloon(QS. an-Nūr:41)
English Sahih International:
Do you not see that Allah is exalted by whomever is within the heavens and the earth and [by] the birds with wings spread [in flight]? Each [of them] has known his [means of] prayer and exalting [Him], and Allah is Knowing of what they do. (QS. An-Nur, Ayah ৪১)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তুমি কি দেখ না, তিনি হলেন আল্লাহ, আসমান ও যমীনে যারা আছে সকলেই যাঁর প্রশংসা গীতি উচ্চারণ করে আর (উড়ন্ত) পাখীরাও তাদের ডানা বিস্তার ক’রে? তাদের প্রত্যেকেই তাদের ‘ইবাদাত ও প্রশংসাগীতির পদ্ধতি জানে, তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে খুবই অবগত। (আন-নূর, আয়াত ৪১)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তুমি কি দেখ না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা এবং উড়ন্ত পাখীদল[১] আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? সকলেই তাঁর প্রশংসা এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি জানে।[২] আর ওরা যা করে, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।[৩]
[১] صَافَّات এর অর্থ بَاسِطات কর্তৃকারক, এর কর্মকারক ঊহ্য আছে, আর তা হল أجنِحتها অর্থাৎ, নিজেদের ডানা মেলে (উড়ন্ত)। 'আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে' এই ব্যাপক কথাতে পাখীদলও শামিল ছিল। কিন্তু এখানে তাদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করার কারণ হল, অন্যান্য সৃষ্টি হতে এদের এক বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যারা আল্লাহর পূর্ণ কুদরতে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থলে উড়ন্ত অবস্থায় আল্লাহর তসবীহ করে থাকে। এরা উড়তে পারে এবং পৃথিবীর উপর চলা-ফেরাও করতে পারে; পক্ষান্তরে অন্যান্য জন্তুরা উড়ার বৈশিষ্ট্য থেকে বঞ্চিত।
[২] অর্থাৎ, আল্লাহ প্রতিটি সৃষ্টিকে এই জ্ঞান দান করেছেন যে, তারা আল্লাহর মহিমা বর্ণনা কিভাবে করবে? যার অর্থ হল, এটি কোন ভাগ্যচক্রের কথা নয়। বরং আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টির আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করা, নামায পড়া --এসব তাঁরই কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। যেমন তাদের সৃষ্টিও তাঁর এক বৈচিত্রময় শিল্প নিপুণতা, যা করার আল্লাহ ছাড়া আর কারো শক্তি নেই।
[৩] অর্থাৎ, পৃথিবী ও আকাশবাসীরা যেভাবে আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর মহিমা বর্ণনা করে, সব কিছুই তাঁর জ্ঞানায়ত্তে রয়েছে। এ কথা বলে যেন মানব-দানবকে সতর্ক করা হচ্ছে যে, তোমাদেরকে আল্লাহ বিবেক ও ইচ্ছার স্বাধীনতা দান করেছেন। অতএব আল্লাহর মহিমা, প্রশংসা ও আনুগত্য অন্যান্য সৃষ্টির তুলনায় তোমাদেরকে বেশী করা উচিত। কিন্তু বাস্তব তার বিপরীত। অন্য সৃষ্টিরা আল্লাহর মহিমা-গানে ব্যস্ত থাকে; কিন্তু বিবেক ও ইচ্ছাশক্তি দ্বারা সুশোভিত সৃষ্টি এতে অলসতার শিকার। যার কারণে তারা অবশ্যই আল্লাহর পাকড়াও-যোগ্য।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আপনি কি দেখেন না যে, আসমানসমূহ ও যমীনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধভাবে উড্ডীয়মান পাখীরা আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই জানে তার ‘ইবাদতের ও পবিত্রতা-মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি। আর তারা যা করে সে বিষয় আল্লাহ্ সম্যক অবগত [১]।
[১] আয়াতের শুরুতে বলা হয়েছে যে, নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী প্রত্যেক সৃষ্টবস্তু আল্লাহ্ তা‘আলার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণায় মশগুল। এই পবিত্রতা ঘোষণার অর্থ কোন কোন মুফাসসিরের মতে এই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা পৃথিবীর প্রত্যেক বস্তু আসমান, যমীন, চন্দ্ৰ-সূৰ্য, গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, উপাদান চতুষ্টয় অগ্নি, পানি, মাটি, বাতাস সবাইকে বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন, সে সর্বক্ষণ সে কাজে ব্যাপৃত আছে এর চুল পরিমাণও বিরোধিতা করে না। এই আনুগত্যকেই তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা বলা হয়েছে।
কোন কোন তাফসীরবিদ বলেনঃ এটা অবান্তর নয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে এতটুকু বোধশক্তি ও চেতনা নিহিত রেখেছেন, যদ্বারা সে তার স্রষ্টা ও প্রভুর পরিচয় জানতে পারে এবং এটাও অবাস্তব নয় যে, তাদেরকে বিশেষ প্রকার বাকশক্তি দান করা হয়েছে ও বিশেষ প্রকার তাসবীহ এবং ইবাদাত শেখানো হয়েছে; যাতে তারা মশগুল থাকে। كُلٌّ قَدْ عَلِمَ صَلَاتَهٗ এই শেষ বাক্যে এ বিষয়বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আল্লাহ্ তা‘আলার তাসবীহ ও সালাতে সমগ্র সৃষ্টজগতই ব্যাপৃত আছে, কিন্তু প্রত্যেকের সালাত ও তাসবীহর পদ্ধতি ও আকার বিভিন্নরূপ। ফিরিশতাদের পদ্ধতি ভিন্ন, মানুষের পদ্ধতি ভিন্ন এবং উদ্ভিদরা অন্য পদ্ধতিতে সালাত ও তাসবীহ আদায় করে। জড় পদার্থের পদ্ধতিও ভিন্নরূপ। [দেখুন-তাবারী, কুরতুবী, সা‘দী, ফাতহুল কাদীর]
Tafsir Bayaan Foundation
তুমি কি দেখনি যে, আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই তাঁর সালাত ও তাসবীহ জানে। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত।
Muhiuddin Khan
তুমি কি দেখ না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা এবং উড়ন্ত পক্ষীকুল তাদের পাখা বিস্তার করতঃ আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই তার যোগ্য এবাদত এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি জানে। তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
Zohurul Hoque
তুমি কি দেখ না যে আল্লাহ্ -- তাঁরই জপতপ করে যারাই আছে মহাকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে, আর পাখা-মেলে-থাকা পাখি? প্রত্যেকেই জেনে রেখেছে তার নামায ও তার নামজপ। আর তারা যা করে সে-সন্বন্ধে আল্লাহ্ সম্যক জ্ঞাতা।