কুরআন মজীদ সূরা আল-আনফাল আয়াত ৬৩
Qur'an Surah Al-Anfal Verse 63
আল-আনফাল [৮]: ৬৩ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَاَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْۗ لَوْاَنْفَقْتَ مَا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا مَّآ اَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ اَلَّفَ بَيْنَهُمْۗ اِنَّهٗ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ (الأنفال : ٨)
- wa-allafa
- وَأَلَّفَ
- And He (has) put affection
- এবং সম্প্রীতি স্থাপন করেছেন
- bayna
- بَيْنَ
- between
- মাঝে
- qulūbihim
- قُلُوبِهِمْۚ
- their hearts
- অন্তরগুলোর তাদের
- law
- لَوْ
- If
- যদি
- anfaqta
- أَنفَقْتَ
- you (had) spent
- তুমি ব্যয় করতে
- mā
- مَا
- whatever
- যা কিছু
- fī
- فِى
- (is) in
- মধ্যে (আছে)
- l-arḍi
- ٱلْأَرْضِ
- the earth
- পৃথিবীর
- jamīʿan
- جَمِيعًا
- all
- সব কিছুই
- mā
- مَّآ
- not
- (তবুও) না
- allafta
- أَلَّفْتَ
- (could) you (have) put affection
- তুমি সম্প্রীতি স্থাপন করতে পারতে
- bayna
- بَيْنَ
- between
- মাঝে
- qulūbihim
- قُلُوبِهِمْ
- their hearts
- অন্তরসমূহের তাদের
- walākinna
- وَلَٰكِنَّ
- but
- কিন্তু
- l-laha
- ٱللَّهَ
- Allah
- আল্লাহ
- allafa
- أَلَّفَ
- (has) put affection
- সম্প্রীতি স্থাপন করেছেন
- baynahum
- بَيْنَهُمْۚ
- between them
- মাঝে তাদের
- innahu
- إِنَّهُۥ
- Indeed, He
- নিশ্চয়ই তিনি
- ʿazīzun
- عَزِيزٌ
- (is) All-Mighty
- পরাক্রমশালী
- ḥakīmun
- حَكِيمٌ
- All-Wise
- মহাবিজ্ঞ
Transliteration:
Wa allafa baina quloobihim; law anfaqta maa fil ardi jamee'am maaa allafta baina quloobihim wa laakinnallaaha allafa bainahum; innaahoo 'Azeezun Hakeem(QS. al-ʾAnfāl:63)
English Sahih International:
And brought together their hearts. If you had spent all that is in the earth, you could not have brought their hearts together; but Allah brought them together. Indeed, He is Exalted in Might and Wise. (QS. Al-Anfal, Ayah ৬৩)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তিনি তাদের হৃদয়গুলোকে প্রীতির বন্ধনে জুড়ে দিয়েছেন। দুনিয়ায় যা কিছু আছে তার সবটুকু খরচ করলেও তুমি তাদের অন্তরগুলোকে প্রীতির ডোরে বাঁধতে পারতে না, কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়েছেন, তিনি তো প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী। (আল-আনফাল, আয়াত ৬৩)
Tafsir Ahsanul Bayaan
এবং তিনি ওদের পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন, পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করলেও তুমি তাদের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না, কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন। [১] নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[১] এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী (সাঃ) এবং মু'মিনদের উপর যে অনুগ্রহ করেছেন তার মধ্যে একটি অনুগ্রহ উল্লেখ করেছেন। আর সেটা হল এই যে, তিনি মু'মিনদের দ্বারা নবী (সাঃ)-এর সাহায্য করলেন; তাঁরা নবীর হাত, বাহু, পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী হয়ে গেলেন। আর মু'মিনদের প্রতি এই অনুগ্রহ করেছেন যে, তাঁদের মাঝে প্রথম দিকে যে শত্রুতা ছিল তিনি তাকে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যে পরিণত করে দিলেন। প্রথম দিকে তাঁরা একে অপরের রক্তপিপাসু ছিলেন। কিন্তু এখন একে অপরের জন্য প্রাণ কুরবানী দিতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। প্রথম দিকে তাঁরা একে অপরের প্রাণের শত্রু ছিলেন, এখন তাঁরা একে অন্যের জন্য দয়া ও স্নেহশীল হয়ে গেলেন। বহু যুগের আপোসের পুরাতন শত্রুতাকে এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে তাদের মাঝে সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দেওয়া আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানী এবং তাঁর কুদরত ও ইচ্ছাশক্তির প্রকৃষ্ট নমুনা ছিল। নতুবা এ এমন একটা কাজ ছিল যে, তার জন্য পৃথিবীর সমপরিমাণ ধনভান্ডার ব্যয় করলেও এই অভীষ্ট রত্ন লাভ হতো না। আল্লাহ তাআলা উক্ত অনুগ্রহের কথা সূরা আলে ইমরান ৩;১০৩নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন "তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন। ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে গেলে।" আর নবী (সাঃ)ও হুনাইনের যুদ্ধে গনীমতের মাল বণ্টনের সময় আনসারদেরকে লক্ষ্য করে দেওয়া এক ভাষণে বললেন, "হে আনসারদল! এ কথা কি সত্য নয় যে, তোমরা ভ্রষ্ট ছিলে, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে হিদায়াত দান করলেন। তোমরা অভাবী ছিলে, আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিলেন। আর তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন ছিলে, আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে দিলেন?" নবী (সাঃ)-এর প্রত্যেক কথার উত্তরে আনসারগণ বললেন, 'আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক অনুগ্রহশীল।'
(বুখারীঃ মাগাযী অধ্যায়, তায়েফ যুদ্ধ পরিচ্ছেদ, মুসলিমঃ যাকাত অধ্যায়)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তিনি তাদের পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি [১] স্থাপন করছেন। যমীনের যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করলেও আপনি তাদের হৃদয়ের প্রীতি স্থাপন করতে পারতেন না; কিন্তু আল্লাহ্ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন; নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় [২]।
[১] এখানে সে ভ্রাতৃত্বভাব ও বন্ধুত্বের কথা বলা হয়েছে, যা আল্লাহ তা'আলা ঈমানদার আরববাসীদের পরস্পরের মধ্যে সৃষ্টি করে তাদেরকে এক মজবুত বাহিনী বানিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ এ বাহিনীর লোকেরা শতাব্দী কাল ধরে শক্রতা ও যুদ্ধবিগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষভাবে আওস ও খজরাজ গোত্রদ্বয়ের ব্যাপারে আল্লাহর এ রহমত ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট ও প্রকট। তারা পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য গত একশত বিশ বছর লিপ্ত ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর এরূপ কঠিন শক্রতাকে মাত্র দু-তিন বছরের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ও অপূর্ব অকৃত্রিম ভালবাসায় পরিণত করা এবং পরস্পর ঘৃণিত ব্যক্তিদের জুড়িয়ে এক অক্ষয় দূর্ভেদ্য প্রাচীর রচনা করা নিঃসন্দেহে একমাত্র আল্লাহরই কৃপায় সম্ভব হয়েছিল। নিছক বৈষয়িক সামগ্র দ্বারা এ রূপ বিরাট কীর্তি সম্পাদন ছিল সত্যই অসম্ভব। [আইসারুত তাফাসীর] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের যুদ্ধে যখন মক্কার নওমুসলিমদেরকে অধিক হারে গণীমতের মাল দিলেন অথচ আনসারদেরকে কিছুই দিলেন না, তখন আনসারদের মনে কিছুটা কষ্ট অনুভব হতে দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ "হে আনসার সম্প্রদায়! আমি কি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট পাইনি? তারপর আল্লাহ্ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হেদায়াত করেছেন। আর তোমরা ছিলে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত, আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছেন। তোমরা ছিলে দরিদ্র, আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে সম্পদশালী করেছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর রাসূলের ডাকে সাড়া দিতে কেন কুষ্ঠাবোধ করছ? তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা ছাগল আর উট নিয়ে যাবে অপরদিকে তোমরা আল্লাহর রাসূলকে তোমাদের সাথে নিয়ে যাবে? [বুখারীঃ ৪৩৩০]
[২] এতে বোঝা যাচ্ছে যে, মানুষের অন্তরে পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি হওয়া আল্লাহ তা'আলার দান। তাছাড়া এতে একথাও প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলার না-ফরমানীর মাধ্যমে তার দান অর্জন করা সম্ভব নয়; বরং তার দান লাভের জন্য তার আনুগত্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা একান্ত শর্ত। কুরআনুল হাকীম এই বাস্তবতার প্রতিই কয়েকটি আয়াতে ইঙ্গিত করেছে। এক জায়গায় বলা হয়েছে “আর তোমরা সকলে আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।" [আলে ইমরানঃ ১০৩] এই আয়াতে মতবিরোধ ও অনৈক্য থেকে বাচার পন্থা নির্দেশ করা হয়েছে যে, সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জ্বকে অর্থাৎ কুরআন তথা ইসলামী শরীআতকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর। তাহলে সবাই আপনা থেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে এবং পারস্পরিক যেসব বিরোধ রয়েছে, তা মিটে যাবে। ঝগড়া-বিবাদ তখনই হয়, যখন শরীআত নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘিত হয়।
Tafsir Bayaan Foundation
আর তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করেছেন। যদি তুমি যমীনে যা আছে, তার সবকিছু ব্যয় করতে, তবুও তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন, নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।
Muhiuddin Khan
আর প্রীতি সঞ্চার করেছেন তাদের অন্তরে। যদি তুমি সেসব কিছু ব্যয় করে ফেলতে, যা কিছু যমীনের বুকে রয়েছে, তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি পরাক্রমশালী, সুকৌশলী।
Zohurul Hoque
আর তাদের হৃদয়ের মধ্যে তিনি প্রীতি স্থাপন করেছেন। তুমি যদি পৃথিবীতে যা আছে তার সবটাই খরচ করতে তবু তুমি তাদের হৃদয়ের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না, কিন্তু আল্লাহ্ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন। নিঃসন্দেহ তিনি মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।