কুরআন মজীদ সূরা আল-আনফাল আয়াত ৩৯
Qur'an Surah Al-Anfal Verse 39
আল-আনফাল [৮]: ৩৯ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَقَاتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ كُلُّهٗ لِلّٰهِۚ فَاِنِ انْتَهَوْا فَاِنَّ اللّٰهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ (الأنفال : ٨)
- waqātilūhum
- وَقَٰتِلُوهُمْ
- And fight them
- তাদের সাথে তোমরা লড়াই করো
- ḥattā
- حَتَّىٰ
- until
- যতক্ষণ
- lā
- لَا
- not
- না
- takūna
- تَكُونَ
- there is
- থাকে (বাকী)
- fit'natun
- فِتْنَةٌ
- oppression
- ফিতনা
- wayakūna
- وَيَكُونَ
- and is
- এবং (প্রতিষ্ঠিত) হয়
- l-dīnu
- ٱلدِّينُ
- the religion
- দীন
- kulluhu
- كُلُّهُۥ
- all of it
- সামগ্রিকভাবে
- lillahi
- لِلَّهِۚ
- for Allah
- জন্যে আল্লাহরই
- fa-ini
- فَإِنِ
- But if
- অতঃপর যদি
- intahaw
- ٱنتَهَوْا۟
- they ceased
- তারা বিরত হয়
- fa-inna
- فَإِنَّ
- then indeed
- তবে নিশ্চয়ই
- l-laha
- ٱللَّهَ
- Allah
- আল্লাহ
- bimā
- بِمَا
- of what
- সে বিষয়ে যা
- yaʿmalūna
- يَعْمَلُونَ
- they do
- তারা কাজ করেছে
- baṣīrun
- بَصِيرٌ
- (is) All-Seer
- খুব দেখছেন
Transliteration:
Wa qaatiloohum hattaa laa takoona fitnatunw wa yakoonaddeenu kulluhoo lillaah; fainin tahaw fa innallaaha bimaa ya'maloona Baseer(QS. al-ʾAnfāl:39)
English Sahih International:
And fight against them until there is no fitnah and [until] the religion [i.e., worship], all of it, is for Allah. And if they cease – then indeed, Allah is Seeing of what they do. (QS. Al-Anfal, Ayah ৩৯)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না ফিতনা (কুফর ও শিরক) খতম হয়ে যায় আর দ্বীন পুরোপুরিভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। অতঃপর তারা যদি বিরত হয় তাহলে তারা (ন্যায় বা অন্যায়) যা করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। (আল-আনফাল, আয়াত ৩৯)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাক; যতক্ষণ না ফিতনা (শিরক) দূর হয়[১] এবং আল্লাহর ধর্ম সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।[২] অতঃপর তারা যদি বিরত হয়, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কার্যাবলীর সম্যক দ্রষ্টা।[৩]
[১] 'ফিতনা' শিরককে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, ঐ সময় পর্যন্ত জিহাদ চালু রাখো, যতক্ষণ শিরক নিঃশেষ না হয়ে যায়।
[২] অর্থাৎ, আল্লাহর একত্ববাদের পতাকা সারা পৃথিবী ব্যাপী উড্ডীন হয়।
[৩] অর্থাৎ, তাদের বাহ্যিক ইসলাম গ্রহণই তোমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তাদের গোপন ব্যাপার আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও। তিনি প্রকাশ্য-গোপন সবই জানেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেৎনা দূর হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় [১] তারপর যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ্ তো তার সম্যক দ্রষ্টা।
[১] এ আয়াতে বর্ণিত ফেৎনা ও দ্বীন শব্দ দুটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যবহার অনুযায়ী আয়াতে শব্দ দুটির একাধিক অর্থ করা হয়ে থাকেঃ এক. ফেৎনা অর্থ কুফর ও শির্ক আর দ্বীন অর্থ ইসলাম। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও এই বিশ্লেষণই বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এই তাফসীর অনুযায়ী আয়াতের অর্থ হবে, মুসলিমদেরকে কাফেরদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করে যেতে হবে যতক্ষণ না শির্ক ও কুফর নিঃশেষিত হয়ে যায়। [তাবারী; ইবন কাসীর] এক্ষেত্রে এ নির্দেশের উদ্দেশ্য হবে কিয়ামত পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে জিহাদ চালিয়ে যাওয়া যতক্ষণ না দুনিয়া থেকে শির্ক ও কুফর নিঃশেষিত না হবে বা শির্কের প্রভাব কমে না যাবে। দুই, যা আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামের উদ্ধৃতিতে বর্ণিত হয়েছে, তা হচ্ছে, ফেৎনা হচ্ছে দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদাপদের ধারা, পক্ষান্তরে ‘দ্বীন’ শব্দের অর্থ প্রভাব ও বিজয়। মক্কার কাফেররা সদাসর্বদা মুসলিমদের উপর এ ফেৎনা অব্যাহত রেখেছিল যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মক্কায় অবস্থান করছিলেন। প্রতি মুহুর্তে তাদের অবরোধে আবদ্ধ থেকে নানা রকম কষ্ট সহ্য করে গেছেন। তারপর যখন তারা মদীনায় হিজরত করেন, তারপরও গোটা মদীনা আক্রমণের মাধ্যমে তাদের হিংসা-রোষই প্রকাশ পেতে থাকে। এ ক্ষেত্রে আয়াতের ব্যাখ্যা হবে যে, মুসলিমগণকে কাফেরদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাকা কর্তব্য, যতক্ষণ না তারা অন্যায়-অত্যাচার-উৎপীড়ন থেকে মুক্তি লাভ করতে সমর্থ হন, মুসলিম আপন দ্বীন পালন করতে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়। [ইবন কাসীর]
তিন. আয়াতের তৃতীয় আরেকটি অর্থ হচ্ছে, এখানে জিহাদ করার আসল উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যের নেতিবাচক দিক হচ্ছে ফেৎনা না থাকা আর ইতিবাচক দিক হচ্ছে দ্বীন সম্পূর্ণরূপে কেবল আল্লাহর জন্য হবে। কেবলমাত্র এ সর্বাত্মক উদ্দেশ্যের জন্য লড়াই করাই মুসলিমদের জন্য জায়েয বরং ফরয। তা ব্যতীত অপর কোন উদ্দেশ্যে লড়াই করা মোটেই জায়েয নহে। তাতে অংশগ্রহণও ঈমানদার লোকদের শোভা পায় না। এ মতের সমর্থন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীসে পাই, তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কি? আমাদের কেউ কেউ ক্রোধের বশবর্তী হয়ে যুদ্ধ করে, আবার কেউ নিজস্ব অহমিকা (চাই তা গোত্রীয় বা জাতিগত যাই হোক তা) ঠিক রাখার জন্য যুদ্ধ করে। তখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীর প্রতি মাথা উঠিয়ে বললেনঃ "যে আল্লাহর কালেমা (তাওহীদ/দ্বন/কুরআন) কে বুলন্দ করার জন্য যুদ্ধ করে সে মহান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করল। [বুখারীঃ ১২৩] কোন কোন মুফাসসির এখানে উপরোক্ত তিনটি অর্থই গ্রহণ করেছেন। [মুয়াসসার]।
Tafsir Bayaan Foundation
আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। তবে যদি তারা বিরত হয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে সে বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।
Muhiuddin Khan
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।
Zohurul Hoque
আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ উৎপীড়ন আর না থাকে, আর ধর্ম তো সামগ্রিকভাবে আল্লাহ্র জন্যেই হবে। অতএব যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তার দর্শক।