Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল আ'রাফ আয়াত ১৬৫

Qur'an Surah Al-A'raf Verse 165

আল আ'রাফ [৭]: ১৬৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِهٖٓ اَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوْۤءِ وَاَخَذْنَا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا بِعَذَابٍۢ بَـِٔيْسٍۢ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُوْنَ (الأعراف : ٧)

falammā
فَلَمَّا
So when
অতঃপর যখন
nasū
نَسُوا۟
they forgot
তারা ভুলে গেলো
مَا
what
যা
dhukkirū
ذُكِّرُوا۟
they had been reminded
তাদের উপদেশ দেয়া হয়েছিলো
bihi
بِهِۦٓ
with [it]
সম্বন্ধে সে
anjaynā
أَنجَيْنَا
We saved
উদ্ধার করলাম আমরা
alladhīna
ٱلَّذِينَ
those who
(তাদেরকে) যারা
yanhawna
يَنْهَوْنَ
forbade
বিরত ছিলো
ʿani
عَنِ
[from]
হতে
l-sūi
ٱلسُّوٓءِ
the evil
মন্দ
wa-akhadhnā
وَأَخَذْنَا
and We seized
ও ধরলাম আমরা (তাদেরকে)
alladhīna
ٱلَّذِينَ
those who
যারা
ẓalamū
ظَلَمُوا۟
wronged
সীমালঙ্ঘন করেছিলো
biʿadhābin
بِعَذَابٍۭ
with a punishment
দিয়ে শাস্তি
baīsin
بَـِٔيسٍۭ
wretched
ভয়ানক
bimā
بِمَا
because
এ কারণে যা
kānū
كَانُوا۟
they were
তারা ছিলো
yafsuqūna
يَفْسُقُونَ
defiantly disobeying
তারা অবাধ্যতা করতে

Transliteration:

Falammaa nasoo maa zukkiroo bihee anjainal lazeena yanhawna 'anis sooo'i wa akhaznal lazeena zalamoo bi'azaabim ba'eeim bimaa kaanooyafsuqoon (QS. al-ʾAʿrāf:165)

English Sahih International:

And when they [i.e., those advised] forgot that by which they had been reminded, We saved those who had forbidden evil and seized those who wronged, with a wretched punishment, because they were defiantly disobeying. (QS. Al-A'raf, Ayah ১৬৫)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হচ্ছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন যারা মন্দ কাজ থেকে (অন্যদেরকে) নিষেধ করত তাদেরকে রক্ষা করলাম। আর যালিমদেরকে কঠিন আযাবে পাকড়াও করলাম যেহেতু তারা অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল। (আল আ'রাফ, আয়াত ১৬৫)

Tafsir Ahsanul Bayaan

যে উপদেশ তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হল,[১] তখন যারা মন্দ কাজে বাধা দান করত, তাদেরকে আমি উদ্ধার করলাম এবং যারা অত্যাচারী ছিল, তারা সত্যত্যাগ করত বলে আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তির সাথে পাকড়াও করলাম। [২]

[১] তারা উপদেশ ও নসীহতের কোন পরোয়া করল না; বরং আল্লাহর অবাধ্যতায় অবিচল থাকল।

[২] অর্থাৎ, তারা অত্যাচারীও ছিল, আল্লাহর অবাধ্যতা করে নিজেদের উপর তারা অত্যাচার করেছিল এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের ইন্ধন বানিয়ে নিয়েছিল। আর তারা সত্যত্যাগীও ছিল। তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করাকে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছিল।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন যারা অসৎকাজ থেকে নিষেধ করত তাদেরকে আমরা উদ্ধার করি। আর যারা যুলুম করেছিল তাদেরকে আমারা কঠোর শাস্তি দেই,কারণ তারা ফাসেকী করত [১]।

[১] এ বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, এ জনপদে তিন ধরনের লোক ছিল। এক, যারা প্রকাশে।ও পূর্ণ ঔদ্ধত্য সহকারে আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচারণ করছিল। দুই, যারা নিজের বিরুদ্ধাচারণ করছিল না কিন্তু অন্যের বিরুদ্ধাচারণকে নীরবে হাত পা গুটিয়ে বসে বসে দেখছিল এবং উপদেশ দানকারীদের বলছিল, এ হতভাগাদের উপদেশ দিয়ে কী লাভ? তিন, যারা ঈমানী সম্রমবোধ ও মর্যাদাবোধের কারণে আল্লাহর আইনের এহেন প্রকাশ্য আমর্যাদা বরদাশত করতে পারেনি এবং তারা এ মনে করে সৎকাজের আদেশ দিতে ও অসৎকাজ থেকে অপরাধীদেরকে বিরত রাখতে তৎপর ছিল যে, হয়তো ঐ অপরাধীরা তাদের উপদেশের প্রভাবে সৎপথে এসে যাবে, আর যদি তারা সৎপথে নাও আসে তাহলে অন্তত নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী কর্তব্য পালন করে তারা আল্লাহর সামনে নিজেদের দায়মুক্তির প্রমাণ পেশ করতে পারবে। ইবন কাসীরা এ অবস্থায় এ জনপদের উপর যখন আল্লাহর আযাব নেমে এলো, কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী তখন এ তিনটি দলের মধ্য থেকে তৃতীয় দলটিকেই বাঁচিয়ে নেয়া হয়েছিল আর যারা অপরাধ করেছিল তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করা হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দলটি, যারা অন্যায় করেনি তবে অন্যায় থেকে নিষেধ করেনি তাদের সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। কারণ তারা ভাল কিংবা মন্দ কিছুই করেনি যে, তাদের কথা আলোচনায় আসবে। [ইবন কাসীর] এমতাবস্থায় দ্বিতীয় দলটির পরিণতি কেমন হয়েছিল তাদের সম্পর্কে তাফসীরবিদদের দুটি মত পরিলক্ষিত হয়। ইবন আব্বাস থেকে এক সহীহ বর্ণনায় এসেছে যে, একমাত্র তারাই আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিল, যারা অন্যায় করেছিল। আর বাকী দু’টি দল যারা বলেছিল যে, “আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদেরকে সদুপদেশ দাও কেন?" আর যারা বলেছিল “তোমাদের রবের কাছে দায়িত্ব-মুক্তির জন্য” আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদের উভয় দলকেই শাস্তি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ]

কোন কোন তাফসীরবিদ, যারা অন্যায় করেনি তবে অন্যায় থেকে নিষেধও করেনি তাদেরকেও শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে বলে মনে করেন। এ বর্ণনাটিও ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। [ইবন কাসীর] তবে ইবন কাসীর প্রথম মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এ শেষোক্ত মতের পক্ষের লোকরা বলেন, কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, সামষ্টিক অপরাধের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। কুরআনে বলা

(وَاتَّقُوْا فِتْنَةً لَّا تُصِيْبَنَّ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْكُمْ خَاصَّةً) [সুরা আনফালঃ২৫]

অর্থাৎ সেই বিপর্যয় থেকে বেঁচে থাক যার কবলে বিশেষভাবে কেবলমাত্র তোমাদের মধ্য থেকে যারা যুলুম করেছে তারাই পড়বে না। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "মহান আল্লাহ বিশেষ লোকদের অপরাধের দরুন সর্বসাধারণকে শাস্তি দেন না, যতক্ষণ সাধারণ লোকদের অবস্থা এমন পর্যায়ে না পৌছে যায় যে, তারা নিজেদের চোখের সামনে খারাপ কাজ হতে দেখে এবং তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশের ক্ষমতাও রাখে এরপরও কোন অসন্তোষ প্রকাশ করে না। কাজেই লোকেরা যখন এমন অবস্থায় পৌঁছে যায় তখন আল্লাহ সাধারণ ও অসাধারণ নির্বিশেষে সবাইকে আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন। [আবু দাউদ;৪৩৩৮; তিরমিযী; ২১৬৮; ইবন মাজাহঃ ৪০০৫ মুসনাদে আহমাদঃ ১/২] এ ছাড়াও আলোচ্য আয়াত থেকে একথাও জানা যায় যে, এ জনপদের উপর দুই পর্যায়ে আল্লাহর আযাব নাযিল হয়। প্রথম পর্যায়ে নাযিল হয় কঠিন শাস্তি এবং হয়। ফাতহুল কাদীর দৃশ্যতঃ প্রথম পর্যায়ের আযাবে উভয় দলই শামিল ছিল এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আযাব দেয়া হয়েছিল কেবলমাত্র প্রথম দলকে।


কিন্তু আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছিযে, বিশুদ্ধ বর্ণনা ও তাফসীরবিদদের অধিকাংশের মত হচ্ছে যে, দ্বিতীয় দলটিও শাস্তি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ছিল। কারণ, তারা তো কোন যুলুম করেনি। আয়াতে শুধু যালেমদেরকেই শাস্তি দেয়ার কথা আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। আরও একটি বিষয় এখানে জানা আবশ্যক যে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা ফরযে কিফায়া। যদি কেউ সেটা করে তবে অন্যদের থেকে কর্তব্য আদায় হয়ে যায়। সুতরাং যারা নিষেধ করেছে, তারা চুপ থাকা লোকদের থেকে ফরযে কিফায়া আদায় করে দিয়েছে। তাছাড়া দ্বিতীয় দলটি যে একেবারে চুপ ছিল তা নয়, তারা বলেছিল যে, ‘আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন বা কঠোর শাস্তি দেবেন, তাদেরকে নসীহত করে কি লাভ?’ এতে এক ধরণের ক্রোধ প্রকাশ পেয়েছে। [সা'দী] সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, তারা সম্পূর্ণরূপে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা থেকে বিরত ছিল না। তাই তাদের উপর আযাব আসেনি এটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত।

Tafsir Bayaan Foundation

অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, যখন তারা তা ভুলে গেল তখন আমি মুক্তি দিলাম তাদেরকে যারা মন্দ হতে নিষেধ করে। আর যারা যুলম করেছে তাদেরকে কঠিন আযাব দ্বারা পাকড়াও করলাম। কারণ, তারা পাপাচার করত।

Muhiuddin Khan

অতঃপর যখন তারা সেসব বিষয় ভুলে গেল, যা তাদেরকে বোঝানো হয়েছিল, তখন আমি সেসব লোককে মুক্তি দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম, গোনাহগারদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের না-ফরমানীর দরুন।

Zohurul Hoque

কিন্তু যখন তারা বিস্মৃত হলো যা তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিল, আমরা উদ্ধার করেছিলাম তাদের যারা নিষেধ করতো অসৎকাজ থেকে, আর যারা অন্যায় করে তাদের আমরা পাকড়াও করলাম কঠিন শাস্তিতে, যেহেতু তারা পাপাচার করতো।