Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল আনআম আয়াত ৮২

Qur'an Surah Al-An'am Verse 82

আল আনআম [৬]: ৮২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْٓا اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰۤىِٕكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ࣖ (الأنعام : ٦)

alladhīna
ٱلَّذِينَ
Those who
যারা
āmanū
ءَامَنُوا۟
believed
ঈমান এনেছে
walam
وَلَمْ
and (did) not
এবং নি
yalbisū
يَلْبِسُوٓا۟
mix
মিশ্রিত করেছে
īmānahum
إِيمَٰنَهُم
their belief
ঈমান তাদের
biẓul'min
بِظُلْمٍ
with wrong
সাথে সীমালঙ্ঘনের
ulāika
أُو۟لَٰٓئِكَ
those
ঐ সব লোক
lahumu
لَهُمُ
for them
জন্যে তাদের (রয়েছে)
l-amnu
ٱلْأَمْنُ
(is) the security
নিরাপত্তা
wahum
وَهُم
and they
এবং তারা
muh'tadūna
مُّهْتَدُونَ
(are) rightly guided
সৎপথ প্রাপ্ত

Transliteration:

Allazeena aamanoo wa lam yalbisooo eemaanahum bizulmin ulaaa'ika lahumul amnu wa hum muhtadoon (QS. al-ʾAnʿām:82)

English Sahih International:

They who believe and do not mix their belief with injustice – those will have security, and they are [rightly] guided. (QS. Al-An'am, Ayah ৮২)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

যারা ঈমান এনেছে আর যুলম (অর্থাৎ শিরক) দ্বারা তাদের ঈমানকে কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা লাভ তারাই করবে আর তারাই হল সঠিক পথপ্রাপ্ত। (আল আনআম, আয়াত ৮২)

Tafsir Ahsanul Bayaan

যারা বিশ্বাস করেছে এবং তাদের বিশ্বাসকে যুলুম (শিরক) দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত।[১]

[১] আয়াতে এখানে 'যুলম' বলতে শিরককে বুঝানো হয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছে যে, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) যুলুমের সাধারণ অর্থ (অবজ্ঞা, ত্রুটি, পাপ এবং অত্যাচার ইত্যাদি) মনে করে বড়ই অস্থির হয়ে পড়লেন এবং রসূল (সাঃ)-এর কাছে এসে বলতে লাগলেন, أَيُّنَا لَمْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ 'আমাদের মধ্যে এমন কেই বা আছে, যে যুলুম করেনি?' তখন রসূল (সাঃ) বললেন, "এ থেকে উদ্দেশ্য সে যুলুম নয়, যেটা তোমরা মনে করছ, বরং এ থেকে উদ্দেশ্য শিরক। যেমন, লুকমান (আঃ) তাঁর ছেলেকে বলেছিলেন, {إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ} "অবশ্যই শিরক হল বড় যুলুম।" (সূরা লুকমান ৩১;১৩) (সহীহ বুখারীঃ তাফসীর সূরা আনআম)

Tafsir Abu Bakr Zakaria

যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম [১] (শির্ক) দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য [২] এবং তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত।

[১] এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী বলা হচ্ছে- যুলুমের অর্থ শির্ক- সাধারণ গোনাহ নয়। কিন্তু (ظلم) শব্দটি (نكرة) ব্যবহার করায় আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী এর অর্থ ব্যাপক হয়ে গেছে। অর্থাৎ যাবতীয় শির্কই এর অন্তর্ভুক্ত। (يَلْبَسُوْا) শব্দটি (لَبْسٌ) থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ পরিধান করা কিংবা মিশ্রিত করা। আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, যে ব্যক্তি স্বীয় বিশ্বাসের সাথে কোন প্রকার শির্ক মিশ্রিত করে তার কোন নিরাপত্তা নেই। এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে, খোলাখুলিভাবে মুশরিক বা মূর্তিপূজারী হয়ে যাওয়াই শুধু শির্ক নয়, বরং সে ব্যক্তিও মুশরিক, যে কোন প্রতিমার পূজা করে না এবং ইসলামের কালেমা উচ্চারণ করে; কিন্তু কোন ফিরিশতা কিংবা রাসূল কিংবা ওলীকে আল্লাহর কোন কোন বিশেষ গুণে অংশীদার মনে করে বা আল্লাহকে যা দিয়ে ইবাদাত করা হয় তাদেরকে তেমন কিছু দিয়ে ইবাদাত করে। সুতরাং জনসাধারণের মধ্যে যারা কোন পীর, জ্বিন, ওলী বা মাযার ইত্যাদিকে মনোবাঞ্ছা পূরণকারী বলে বিশ্বাস করে এবং কার্যতঃ মনে করে যে, আল্লাহর ক্ষমতা যেন তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই মুশরিক। তারা আল্লাহর রুবুবিয়াতে শির্ক করল। অনুরূপভাবে যারা কবরবাসী, ওলী, মাযার, জ্বিন ইত্যাদিকে আহবান করে, সিজদা করে, সাহায্য চায়, মান্নত করে, তাদের উদ্দেশ্যে যবেহ্ করে তারা সবাই মুশরিক। তাদের নিরাপত্তা নেই। তারা আল্লাহর উলুহিয়াতে শির্ক করল এবং তাওবা না করে মারা গেলে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে।

[২] অর্থাৎ শাস্তির কবল থেকে নিরাপদ ও নিশ্চিত তারাই হতে পারে, যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, তারপর সে ঈমানের সাথে কোনরূপ যুলুমকে মিশ্রিত করেনি। হাদীসে আছে, এ আয়াত নাযিল হলে সাহাবায়ে কেরাম চমকে উঠেন এবং আরয করেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে পাপের মাধ্যমে নিজের উপর যুলুম করেনি? এ আয়াতে শাস্তির কবল থেকে নিরাপদ হওয়ার জন্য বিশ্বাসের সাথে যুলুমকে মিশ্রিত না করার শর্ত বর্ণিত হয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের মুক্তির উপায় কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, তোমরা আয়াতের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সক্ষম হওনি। আয়াতে যুলুম' বলতে শির্ককে বোঝানো হয়েছে।
দেখ, অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন,

(اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ)

অর্থাৎ “নিশ্চিত শির্ক বিরাট যুলুম”। [বুখারীঃ ৪৬২৯, ৬৯১৮] কাজেই আয়াতের অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি ঈমান আনে, অতঃপর আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী এবং তার ইবাদাতে কাউকে অংশীদার স্থির না করে, সে শাস্তির কবল থেকে নিরাপদ ও সুপথ প্রাপ্ত।

Tafsir Bayaan Foundation

যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।

Muhiuddin Khan

যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।

Zohurul Hoque

যারা আল্লাহ্‌তে ঈমান এনেছে আর যারা তাদের ঈমানকে অন্যায় আচরণ দ্বারা মাখামাখি করে নি, তারাই -- এদেরই প্রাপ্য নিরাপত্তা, আর এরাই হচ্ছে সুপথে চালিত।