কুরআন মজীদ সূরা হা-মীম সেজদাহ আয়াত ৩৭
Qur'an Surah Fussilat Verse 37
হা-মীম সেজদাহ [৪১]: ৩৭ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَمِنْ اٰيٰتِهِ الَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُۗ لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ (فصلت : ٤١)
- wamin
- وَمِنْ
- And of
- এবং মধ্যে হ'তে
- āyātihi
- ءَايَٰتِهِ
- His Signs
- তাঁর নিদর্শনাবলীর
- al-laylu
- ٱلَّيْلُ
- (are) the night
- (রয়েছে) রাত
- wal-nahāru
- وَٱلنَّهَارُ
- and the day
- ও দিন
- wal-shamsu
- وَٱلشَّمْسُ
- and the sun
- এবং সূর্য
- wal-qamaru
- وَٱلْقَمَرُۚ
- and the moon
- ও চাঁদ
- lā
- لَا
- (Do) not
- না
- tasjudū
- تَسْجُدُوا۟
- prostrate
- তোমরা সিজদা করো
- lilshamsi
- لِلشَّمْسِ
- to the sun
- সূর্যকে
- walā
- وَلَا
- and not
- আর না
- lil'qamari
- لِلْقَمَرِ
- to the moon
- চাঁদকে
- wa-us'judū
- وَٱسْجُدُوا۟
- but prostrate
- এবং তোমরা সিজদা করো
- lillahi
- لِلَّهِ
- to Allah
- আল্লাহর-ই
- alladhī
- ٱلَّذِى
- the One Who
- যিনি
- khalaqahunna
- خَلَقَهُنَّ
- created them
- তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন
- in
- إِن
- if
- যদি
- kuntum
- كُنتُمْ
- you
- তোমরা হও (বাস্তবিকই)
- iyyāhu
- إِيَّاهُ
- Him alone
- তাঁরই শুধু
- taʿbudūna
- تَعْبُدُونَ
- worship
- তোমরা ইবাদত করো
Transliteration:
Wa min Aayaatihil lailu wannahaaru washshamsu walqamar; laa tasjudoo lishshamsi wa laa lilqamari wasjudoo lillaahil lazee khala qahunna in kuntum iyyaahu ta'budoon(QS. Fuṣṣilat:37)
English Sahih International:
And of His signs are the night and day and the sun and moon. Do not prostrate to the sun or to the moon, but prostrate to Allah, who created them, if it should be Him that you worship. (QS. Fussilat, Ayah ৩৭)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে হল রাত, দিন, সূর্য আর চন্দ্র। সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না। সেজদা কর আল্লাহকে যিনি ওগুলোকে সৃষ্টি করেছেন যদি সত্যিকারভাবে একমাত্র তাঁরই তোমরা ইবাদাত করতে চাও। (হা-মীম সেজদাহ, আয়াত ৩৭)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র।[১] তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও নয়;[২] বরং সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন,[৩] যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত (দাসত্ব) কর।
[১] অর্থাৎ, রাতকে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দেওয়া যাতে মানুষ তাতে বিশ্রাম নিতে পারে এবং দিনকে আলোক-উজ্জ্বল করা যাতে জীবিকা উপার্জনে কোন অসুবিধা না হয়। অতঃপর পালাক্রমে রাত ও দিনের আগমন-প্রত্যাগমন। কখনো রাতের বড় ও দিনের ছোট হওয়া, আবার কখনো এর বিপরীত দিনের বড় ও রাতের ছোট হওয়া। অনুরূপ সূর্য ও চাঁদের নির্ধারিত সময়ে উদিত হওয়া ও অস্ত যাওয়া। তাদের স্ব স্ব কক্ষপথে নিজের নিজের পথ অতিক্রম করা এবং তাদের আপসে কোন সংঘর্ষ ঘটা থেকে সুরক্ষিত থাকা ইত্যাদি সবই প্রমাণ করে যে, তাদের অবশ্য অবশ্যই কোন স্রষ্টা এবং মালিক আছেন। অনুরূপ তিনি এক ও একক এবং সারা বিশ্বজগতে কেবল তাঁরই কর্তৃত্ব ও নির্দেশ চলে। যদি পরিচালনা করার ও নির্দেশ দেওয়ার অধিকারী একাধিক হত, তবে সারা জগতের এ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এত মজবুত এবং সুনিয়ন্ত্রিতভাবে টিকে থাকত না।
[২] কারণ, এরাও তোমাদের মত আল্লাহর সৃষ্ট। প্রভুত্বের কোন এখতিয়ার তাদের মধ্যে নেই। অথবা তাতে তারা শরীকও নয়।
[৩] خَلَقَهُنَّ তে সর্বনাম স্ত্রীলিঙ্গ বহুবচন এই জন্য এসেছে যে, হয় তো خَلَقَ هَذِه الأَرْبَعَةَ الْمَذْكُوْرَةَ অর্থের ভিত্তিতে। কেননা, জ্ঞানহীন বস্তুর বহুবচনের ক্ষেত্রে (ব্যাকরণগত) বিধান হল এটাই। অথবা এই সর্বনামের লক্ষ্য কেবল চাঁদ এবং সূর্য। আর কোন কোন ব্যাকরণ-শাস্ত্রবিদের কাছে দ্বিবচনও বহুবচনরূপে গণ্য হয়। কিংবা এর উদ্দিষ্ট হল, آيات নিদর্শনাবলী। (ফাতহুল ক্বাদীর)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ। তোমরা সূর্যকে সিজ্দা করো না, চাঁদকেও নয় [১]; আর সিজ্দা কর আল্লাহ্কে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত কর।
[১] অর্থাৎ এসব আল্লাহর প্রতিভূ নয় যে এগুলোর আকৃতিতে আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করছেন বলে মনে করে তাদের ইবাদত করতে শুরু করবে। বরং এগুলো আল্লাহর নিদর্শন এসব নিদর্শন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে তোমরা বিশ্ব জাহান ও তার ব্যবস্থাপনার সত্যতা ও বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবে এবং এ কথাও জানতে পারবে যে নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম আল্লাহ সম্পর্কে যে তাওহীদের শিক্ষা দিচ্ছেন তাই প্রকৃত সত্য। সূর্য ও চাঁদের উল্লেখের পূর্বে দিন ও রাতের উল্লেখ করা হয়েছে এ বিষয়ে সাবধান করে দেয়ার জন্য যে রাতের বেলা সূর্যের অদৃশ্য হওয়া ও চাঁদের আবির্ভূত হওয়া এবং দিনের বেলা চাঁদের অদৃশ্য হওয়া ও সূর্যের আবির্ভূত হওয়া সুস্পষ্ট ভাবে এ কথা প্রমাণ করে যে, এ দুটির কোনটিই আল্লাহ বা আল্লাহ প্রতিভূ নয়। উভয়েই তাঁর একান্ত দাস। তারা আল্লাহর আইনের নিগড়ে বাধা পড়ে আবর্তন করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাঁদ ও সূর্য সম্পর্কে মানুষের আকীদা-বিশ্বাসকে পরিশুদ্ধ করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তান ইব্রাহীম মারা গেলে সেদিনই সূর্যগ্রহণ হয়। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো যে, ইব্রাহীমের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ করো মৃত্যু বা জীবনের জন্য হয় না। বরং এ দুটি আল্লাহর নিদর্শনাবলী থেকে দুটি নিদর্শন; যা তিনি তাঁর বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন। সুতরাং যখন তোমরা এরূপ কিছু দেখবে, তখন সালাতের দিকে ধাবিত হবে ৷ [বুখারী; ১০৫৮]
Tafsir Bayaan Foundation
আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ । তোমরা না সূর্যকে সিজদা করবে, না চাঁদকে। আর তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদাত কর।
Muhiuddin Khan
তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত কর।
Zohurul Hoque
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন আর সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যের প্রতি সিজদা করো না আর চন্দ্রের প্রতিও নয়, বরং তোমরা সিজ্দা করো আল্লাহ্র প্রতি যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁকেই উপাসনা করতে চাও।