কুরআন মজীদ সূরা হা-মীম সেজদাহ আয়াত ১৬
Qur'an Surah Fussilat Verse 16
হা-মীম সেজদাহ [৪১]: ১৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا صَرْصَرًا فِيْٓ اَيَّامٍ نَّحِسَاتٍ لِّنُذِيْقَهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِى الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا ۗوَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَخْزٰى وَهُمْ لَا يُنْصَرُوْنَ (فصلت : ٤١)
- fa-arsalnā
- فَأَرْسَلْنَا
- So We sent
- আমরা তাই পাঠালাম
- ʿalayhim
- عَلَيْهِمْ
- upon them
- তাদের বিরুদ্ধে
- rīḥan
- رِيحًا
- a wind
- বাতাস
- ṣarṣaran
- صَرْصَرًا
- furious
- ঝড়ো
- fī
- فِىٓ
- in
- মধ্যে
- ayyāmin
- أَيَّامٍ
- (the) days
- (কয়েক) দিনের
- naḥisātin
- نَّحِسَاتٍ
- (of) misfortune
- দুর্ভোগের
- linudhīqahum
- لِّنُذِيقَهُمْ
- that We may make them taste
- তাদেরকে আমরা ভোগ করাই যেন
- ʿadhāba
- عَذَابَ
- (the) punishment
- শাস্তি
- l-khiz'yi
- ٱلْخِزْىِ
- (of) disgrace
- লাঞ্ছনার
- fī
- فِى
- in
- মধ্যে
- l-ḥayati
- ٱلْحَيَوٰةِ
- the life
- জীবনে
- l-dun'yā
- ٱلدُّنْيَاۖ
- (of) the world
- পার্থিব
- walaʿadhābu
- وَلَعَذَابُ
- And surely, (the) punishment
- এবং অবশ্যই শাস্তি
- l-ākhirati
- ٱلْءَاخِرَةِ
- (of) the Hereafter
- পরকালের
- akhzā
- أَخْزَىٰۖ
- (is) more disgracing
- অধিক অপমানকর
- wahum
- وَهُمْ
- and they
- এবং তাদের
- lā
- لَا
- will not be helped
- না
- yunṣarūna
- يُنصَرُونَ
- will not be helped
- সাহায্য করা হবে
Transliteration:
Fa arsalnaa 'alaihim reehan sarsaran feee ayyaamin nahisaatil linuzeeqahum 'azaabal khizyi fil hayaatid dunyaa wa la'azaabul Aakhirati akhzaa wa hum laa yunsaroon(QS. Fuṣṣilat:16)
English Sahih International:
So We sent upon them a screaming wind during days of misfortune to make them taste the punishment of disgrace in the worldly life; but the punishment of the Hereafter is more disgracing, and they will not be helped. (QS. Fussilat, Ayah ১৬)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতঃপর আমি অশুভ দিনগুলোতে তাদের বিরুদ্ধে ঝাঞ্ঝা বায়ু পাঠালাম যাতে তারা দুনিয়ার জীবনে অপমানজনক শাস্তি আস্বাদন করে। আখিরাতের শাস্তি অবশ্যই অধিক লাঞ্ছনাদায়ক আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (হা-মীম সেজদাহ, আয়াত ১৬)
Tafsir Ahsanul Bayaan
অতঃপর আমি ওদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাবার জন্য কতিপয় অশুভ দিনে[১] ওদের উপরে ঝোড়ো হাওয়া[২] প্রেরণ করেছিলাম। আর পরলোকের শাস্তি তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং ওদেরকে সাহায্য করা হবে না।
[১] نَحِسَاتٌ এর অনুবাদ কেউ করেছেন ধারাবাহিক ও লাগাতার। কেননা, এ হাওয়া সাত দিন আট রাত পর্যন্ত লাগাতার চলেছে। আবার কেউ এর অর্থ কঠিন, কেউ ধূলা-বালি মিশ্রিত হাওয়া এবং কেউ অশুভও করেছেন। শেষোক্ত অনুবাদের সারমর্ম হবে, যে দিনগুলোতে তাদের উপর কঠিন তুফান চলেছে, সেগুলো তাদের জন্য বড়ই অকল্যাণকর ও অশুভ প্রমাণিত হয়েছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, দিনগুলোই অশুভ। কারণ কোন সময় বা দিন অশুভ হয় না।
[২] صَرْصَرٌ এর উৎপত্তি হল, صُرَّةٌ থেকে; যার অর্থঃ শব্দ। অর্থাৎ, এমন বাতাস যাতে বিকট শব্দ ছিল। অর্থাৎ, অতি প্রবল ও জোরদার ঝড়, যাতে ভীষণ শব্দও ছিল। কেউ কেউ বলেছেন, এটা صر থেকে গঠিত যার অর্থ, ঠান্ডা। অর্থাৎ, ঠান্ডা, শীতল বা হিমশীতল বাতাস। ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, সঠিক এই যে, উক্ত হাওয়ার মধ্যে বর্ণিত সব গুণগুলোই বর্তমান ছিল।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
তারপর আমরা তাদের উপর প্রেরণ করলাম ঝঞ্ঝাবায়ু [১] অশুভ দিনগুলোতে; যাতে আমরা তাদের আস্বাদন করাতে পারি জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি [২]। আর আখিরাতের শাস্তি তো তার চেয়ে বেশী লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে সাহায্য করা হবে না।
[১] এটা صاعقة এরই ব্যাখ্যা, যা পূর্বের ১৩ নং আয়াতে আদ ও সামুদের صاعقة বলে বর্ণিত
হয়েছে। صاعقة শব্দের আসল অর্থ অচেতন ও বেহুশকারী বস্তু। এ কারণেই বজ্রকেও صاعقة বলা হয়। আকস্মিক বিপদ অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আদ সম্প্রদায়ের উপর চাপানো ঝড়ও একটি صاعقة ছিল। একেই এখানে رِمْحًيا صَرْصَرًا নামে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস বুঝাতে এ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেনঃ এর অর্থ মারাত্মক “লু” প্রবাহ; কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস এবং কারো কারো মতে এর অর্থ এমন বাতাস যা প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচণ্ড শব্দ সৃষ্টি হয়। তবে এ অর্থে সবাই একমত যে, শব্দটি প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। [দেখুন-তবারী] কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে এ আযাব সম্পর্কে যেসব বিস্তারিত বর্ণনা আছে তা হচ্ছে, এ বাতাস উপর্যুপরি সাত দিন এবং আট রাত পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছিলো। এর প্রচণ্ডতায় মানুষ পড়ে গিয়ে এমনভাবে মৃত্যুবরণ করে এবং মরে মরে পড়ে থাকে যেমন খেজুরের ফাঁপা কাণ্ড পড়ে থাকে [আল-হাকিকাহ; ৭]। এ বাতাস যে জিনিসের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে তাকেই জরাজীর্ণ করে ফেলেছে [আযযারিয়াত; ৪২]। যে সময় এ বাতাস এগিয়ে আসছিলো তখন আদ জাতির লোকেরা এই ভেবে আনন্দে মেতে উঠেছিলো যে মেঘ চারদিক থেকে ঘিরে আসছে। এখন বৃষ্টি হবে এবং তাদের আশা পূর্ণ হবে। কিন্তু তা এমনভাবে আসলো যে গোটা এলাকাই ধ্বংস করে রেখে গেল। [আল-আহকাফ; ২৪, ২৫]
[২] দাহহাক বলেন, আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর তিন বছর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণ বন্ধ রাখেন। কেবল প্রবল শুষ্ক বাতাস প্রবাহিত হত। অবশেষে আট দিন ও সাত রাত্রি পর্যন্ত উপর্যুপরি তুফান চলতে থাকে [দেখুন, বাগভী, ফাতহুল কাদীর]
Tafsir Bayaan Foundation
তারপর আমি তাদের উপর অশুভ দিনগুলোতে ঝঞ্ঝাবায়ু পাঠালাম যাতে তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক আযাব আস্বাদন করাতে পারি। আর আখিরাতের আযাব তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে সাহায্য করা হবে না।
Muhiuddin Khan
অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনার আযাব আস্বাদন করানোর জন্যে তাদের উপর প্রেরণ করলাম ঝঞ্ঝাবায়ু বেশ কতিপয় অশুভ দিনে। আর পরকালের আযাব তো আরও লাঞ্ছনাকর এমতাবস্থায় যে, তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।
Zohurul Hoque
সেজন্য আমরা তাদের উপরে পাঠিয়েছিলাম এক ভয়ংকর ঝড়তুফান অশুভ দিনে, যেন আমরা পার্থিব জীবনেই তাদের আস্বাদন করাতে পারি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। আর আখেরাতের শাস্তি নিশ্চয়ই আরো বেশী লাঞ্ছনাদায়ক, আর তাদের সাহায্য করা হবে না।