Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা নমল আয়াত ৮২

Qur'an Surah An-Naml Verse 82

নমল [২৭]: ৮২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

۞ وَاِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ اَخْرَجْنَا لَهُمْ دَاۤبَّةً مِّنَ الْاَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ اَنَّ النَّاسَ كَانُوْا بِاٰيٰتِنَا لَا يُوْقِنُوْنَ ࣖ (النمل : ٢٧)

wa-idhā
وَإِذَا
And when
এবং যখন
waqaʿa
وَقَعَ
(is) fulfilled
এসে পড়বে
l-qawlu
ٱلْقَوْلُ
the word
(ঘোষিত শাস্তির) কথা
ʿalayhim
عَلَيْهِمْ
against them
উপর তাদের
akhrajnā
أَخْرَجْنَا
We will bring forth
আমরা বের করবো
lahum
لَهُمْ
for them
জন্যে তাদের
dābbatan
دَآبَّةً
a creature
একটি জন্তু
mina
مِّنَ
from
হ'তে
l-arḍi
ٱلْأَرْضِ
the earth
মাটি
tukallimuhum
تُكَلِّمُهُمْ
speaking to them
সে কথা বলবে তাদের (সাথে)
anna
أَنَّ
that
যেহেতু
l-nāsa
ٱلنَّاسَ
the people
মানিষ
kānū
كَانُوا۟
were
তারা ছিলো
biāyātinā
بِـَٔايَٰتِنَا
of Our Signs
প্রতি আয়াতগুলোর আমাদের
لَا
not
না
yūqinūna
يُوقِنُونَ
certain
দৃঢ় বিশ্বাস করতো

Transliteration:

Wa izaa waqa'al qawhu 'alaihim akhrajnaa lahum daabbatam minal ardi tukal limuhum annan naasa kaanoo bi aayaatinaa laa yooqinoon (QS. an-Naml:82)

English Sahih International:

And when the word [i.e., decree] befalls them, We will bring forth for them a creature from the earth speaking to them, [saying] that the people were, of Our verses, not certain [in faith]. (QS. An-Naml, Ayah ৮২)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

তাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি যখন বাস্তবে পরিণত হবে, আমি তখন (কিয়ামাত আগমণের নির্দশন হিসেবে) ভূমি থেকে তাদের জন্য একটি জন্তু বের করব যা তাদের সঙ্গে এ কথা বলবে যে, মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না। (নমল, আয়াত ৮২)

Tafsir Ahsanul Bayaan

যখন ঘোষিত শাস্তি ওদের নিকট আসবে[১] তখন আমি ভূগর্ভ হতে এক (প্রকার) জন্তু নির্গত করব যা মানুষের সাথে কথা বলবে। [২] বস্তুতঃ ওরা আমার নিদর্শনে ছিল অবিশ্বাসী। [৩]

[১] অর্থাৎ, যখন সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্মে নিষেধ করার মত কেউ থাকবে না।

[২] এই জন্তু হল তাই, যা কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি নিদর্শন। যেমন হাদীসে এসেছে নবী (সাঃ) বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত দশটি নিদর্শন তোমরা না দেখবে। তার মধ্যে একটি হল উক্ত জন্তুর আবির্ভাব। (মুসলিম ফিতনা অধ্যায়) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে সর্বপ্রথম নিদর্শন যা প্রকাশ পাবে, তা হল সূর্যের পশ্চিম দিক হতে উদিত হওয়া এবং তার পর উক্ত জীবের আবির্ভাব হওয়া। এই দুয়ের মধ্যে যেটি প্রথম প্রকাশ পাবে তার পরপরই দ্বিতীয়টিও প্রকাশিত হবে। (মুসলিম, দাজ্জাল বের হওয়ার অধ্যায়)

[৩] এটি উক্ত জন্তুর বের হওয়ার কারণ। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ তাঁর এই নিদর্শন এই কারণে দেখাবেন, যেহেতু মানুষ আল্লাহর নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে না। কেউ কেউ বলেন, উক্ত বাক্য জন্তুটি নিজ মুখে বলবে। পক্ষান্তরে উক্ত জন্তুর মানুষের সাথে কথা বলার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কারণ কুরআন তা স্পষ্ট করে দিয়েছে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর যখন তাদের উপর ঘোষিত শাস্তি আসবে তখন আমরা তাদের জন্য যমীন থেকে এক জীব বের করব [১], যা তাদের সাথে কথা বলবে [২] যে, মানুষ আমাদের নিদর্শনসমূহে নিশ্চিত বিশ্বাস করত না।

[১] ‘যমীন থেকে এক জীব বের করব’ যা কিয়ামতের আলামত। কিয়ামতের পূর্বে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর নিদর্শনবাহী বেশ কিছু অলৌকিক কর্মকাণ্ড হতে দেবেন, এটা সেগুলোর অন্যতম। কিয়ামতের দশটি বড় বড় নিদর্শন সম্পর্কে হুযাইফা ইবনে আসীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে এসেছে, তিনি বলেনঃ “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের প্রতি দৃষ্টি দিলেন, আমরা পরস্পর আলোচনা করছিলাম, তিনি বললেনঃ ‘তোমরা কি আলোচনা করছিলে’? আমরা বললামঃ ‘আমরা কিয়ামতের কথা আলোচনা করছিলাম’। তিনি বললেনঃ ‘যতক্ষণ পর্যন্ত দশটি বৃহৎ আলামত বা নিদর্শন না দেখবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না’। তারপর তিনি ধোঁয়া, দাজ্জাল, বিশেষ ধরনের প্রাণীর আবির্ভাব, পশ্চিমে সূর্য উদিত হওয়া, ‘ঈসা ইবনে মারইয়াম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবতরণ, ইয়া’জুজ ও মা’জুজ, তিনটি ভূমি ধস যার একটি প্রাচ্যে, আরেকটি প্রাশ্চাত্যে, অন্যটি আরব উপদ্বীপে হবে, আর এ আলামতগুলোর সবশেষে ইয়ামেন থেকে একটি আগুন বের হবে যা মানুষকে তাদের একত্রিত হওয়ার স্থানের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে”। [মুসলিমঃ ২৯০১] কোন কোন হাদীসে মাহদী, ক্বাবার ধ্বংস ও যমীন থেকে কুরআন উঠে যাওয়ার কথা এসেছে। সে যাই হোক, সবার মতেই দাব্বাতুল আরদ হলো কিয়ামতের বড় আলামতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত। কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, কিয়ামতের পূর্বে তার আবির্ভাব হবে, যেমন আলোচ্য আয়াত তার প্রমাণ। তাছাড়া হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “তিনটি বস্তু যখন বের হবে তখন কোন আত্মার ঈমান গ্ৰহণ করা তার কোন উপকারে আসবে না যদি তারা আগে ঈমান না এনে থাকে বা তারা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণকর কিছু অর্জন না করে থাকে। পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদয় হওয়া, দাজ্জাল এবং দাব্বাতুল আরদ বা যমীন থেকে উত্থিত জীব” [মুসলিমঃ ১৫৮]। অনুরূপভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ “দাব্বাহ বের হয়ে মানুষের নাকের উপর দাগ দিয়ে দিবে, তারপর তোমাদের মধ্যে বিচরণ করবে, এমনকি কোন লোক উট খরিদ করার পর কেউ জিজ্ঞাসা করবে কার থেকে খরিদ করেছ? বলবেঃ একজন নাকের উপর দাগ বিশিষ্ট লোক থেকে” [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২৬৮]। সুতরাং আমাদেরকে এটার উপর ঈমান আনতে হবে।

[২] ভূগর্ভের জীব মানুষের সাথে কথা বলবে, এর অর্থ কি? কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ কুরআনে উল্লেখিত বাক্যটিই হবে তার কথা। অর্থাৎ

أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ

বা “মানুষ আমাদের নিদর্শনসমূহে নিশ্চিত বিশ্বাস করত না”। এ বাক্যটি সে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে শোনাবে। বাক্যের অর্থ এইঃ অনেক মানুষ আজকের পূর্বে আমাদের আয়াতসমূহে বিশ্বাস করবে না। উদ্দেশ্য এই যে, এখন সময় এসে গেছে। এখন সবাই বিশ্বাস করবে। কিন্তু তখনকার বিশ্বাস আইনতঃ ধর্তব্য হবে না। যদিও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, অদ্ভুত সে জন্তুটি শুধু কথাই বলবে না বরং দাগও দিবে। অর্থাৎ ঈমানদার ও কাফেরদেরকে দাগ দিয়ে পৃথক করে দিবে। [ফাতহুল কাদীর]

Tafsir Bayaan Foundation

আর যখন তাদের উপর ‘বাণী’ (আযাব) বাস্তবায়িত হবে তখন আমি যমীনের জন্তু (দাব্বাতুল আরদ)* বের করব, যে তাদের সাথে কথা বলবে। কারণ মানুষ আমার আয়াতসমূহে সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখত না।

* কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হল ‘দাববাতুল আরদ’ বের হওয়া। ইমাম আহমদ (র.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দশটি নিদর্শন না দেখা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না তন্মধ্যে অন্যতম হল, দাববাতুল আরদ বের হওয়া। ইবন কাছীর বলেন, শেষ যামানায় যখন মানুষ সৎকাজের আদেশ দেবে না, অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে না, সত্য দীন পরিবর্তন করবে এবং চারদিকে ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়বে তখন ‘দাব্বাতুল আরদ’ বের হবে।

Muhiuddin Khan

যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না।

Zohurul Hoque

আর যখন তাদের উপরে উক্তিটি বর্তাবে তখন তাদের জন্য আমরা বের ক’রে আনব মাটির কীট যেটি তাদের সঙ্গে বাক্যালাপ করবে, কেননা মানুষগুলো আমাদের নির্দেশাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে নি।