Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল-ফুরকান আয়াত ১

Qur'an Surah Al-Furqan Verse 1

আল-ফুরকান [২৫]: ১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

تَبٰرَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِهٖ لِيَكُوْنَ لِلْعٰلَمِيْنَ نَذِيْرًا ۙ (الفرقان : ٢٥)

tabāraka
تَبَارَكَ
Blessed is He
অতীব কল্যাণময়
alladhī
ٱلَّذِى
Who
(সেই সত্ত্বা) যিনি
nazzala
نَزَّلَ
sent down
অবতীর্ণ করেছেন
l-fur'qāna
ٱلْفُرْقَانَ
the Criterion
সত্য-মিথ্যার মাপকাঠি
ʿalā
عَلَىٰ
upon
উপর
ʿabdihi
عَبْدِهِۦ
His slave
তাঁর দাসের
liyakūna
لِيَكُونَ
that he may be
যেন সে হয়
lil'ʿālamīna
لِلْعَٰلَمِينَ
to the worlds
জন্যে বিশ্ববাসীর
nadhīran
نَذِيرًا
a warner -
সতর্ককারী

Transliteration:

Tabaarakal lazee nazzalal Furqaana 'alaa 'abdihee li yakoona lil'aalameena nazeera (QS. al-Furq̈ān:1)

English Sahih International:

Blessed is He who sent down the Criterion upon His Servant that he may be to the worlds a warner – (QS. Al-Furqan, Ayah ১)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

মহা কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাহর উপর সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী (কিতাব) নাযিল করেছেন যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে। (আল-ফুরকান, আয়াত ১)

Tafsir Ahsanul Bayaan

কত প্রাচুর্যময় তিনি যিনি তাঁর দাসের প্রতি ফুরকান[১] (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে। [২]

[১] ফুরকানের অর্থঃ হক ও বাতিল, তাওহীদ ও শিরক, ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্যকারী; যেহেতু কুরআন উক্ত পার্থক্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে, সেহেতু তাকে 'ফুরকান' বলা হয়েছে।

[২] এখান হতে বুঝা যায় যে, নবী (সাঃ)-এর নবুঅত বিশ্বব্যাপী ছিল এবং তিনি সকল মানব-দানবের জন্য পথ-প্রর্দশক হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, {قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا} অর্থাৎ, বল, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহর (প্রেরিত) রসূল। (সূরা আ'রাফ ৭;১৫৮) মহানবী (সাঃ) বলেন, "আমাকে সাদা-কালো সকলের প্রতি নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে।" (মুসলিমঃ মাসাজিদ অধ্যায়) " পূর্বে নবীকে বিশেষ একটি জাতির নিকট পাঠানো হত। আর আমাকে সকল মানুষের জন্য নবী হিসাবে পাঠানো হয়েছে।" (বুখারী, মুসলিম) রিসালাত ও নবুঅত এর পর তাওহীদ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখানে আল্লাহর চারটি গুণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

কত বরকতময় তিনি [১]! যিনি তাঁর বান্দার উপর ফুরকান নাযিল করেছেন, সৃষ্টিজগতের জন্য [২] সতর্ককারী হওয়ার জন্য।

[১] تَبَارَكَ শব্দটি بركة থেকে উদ্ভূত। এর পূর্ণ অর্থ এক শব্দে তো দূরের কথা এক বাক্যে বর্ণনা করাও কঠিন। এর শব্দমূল রয়েছে ب-ر-ك অক্ষরত্রয়। এ থেকে بر كة ও بروك দু’টি ধাতু নিষ্পন্ন হয়। তন্মধ্যে প্রথম শব্দ بركة শব্দের মধ্যে রয়েছে কল্যাণ, বৃদ্ধি, সমৃদ্ধি, বিপুলতা ও প্রাচুর্যের ধারণা। আর بروك এর মধ্যে স্থায়িত্ব, দৃঢ়তা, অটলতা ও অনিবার্যতার ধারণা রয়েছে। তারপর এ ধাতু থেকে যখন تبارك এর ক্রিয়াপদ তৈরী করা হয় তখন تفاعل এর বৈশিষ্ট্য হিসেবে এর মধ্যে বাড়াবাড়ি, অতিরঞ্জন ও পূর্ণতা প্রকাশের অর্থ শামিল হয়ে যায়। এ অবস্থায় এর অর্থ দাঁড়ায় চরম প্রাচুর্য, বর্ধমান প্রাচুর্য ও চূড়ান্ত পর্যায়ের স্থায়িত্ব। আল্লাহ্‌র জন্য تبارك শব্দটি এক অর্থে নয় বরং বহু অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- একঃ মহা অনুগ্রহকারী ও সর্বজ্ঞ, কল্যাণকারী। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেনঃ প্রত্যেক কল্যাণ ও বরকত আল্লাহ্‌ তা‘আলার পক্ষ থেকে। তিনি নিজের বান্দাকে ফুরকানের মহান নিয়ামত দান করে সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেছেন। দুইঃ বড়ই মর্যাদাশালী ও সম্মানীয়। কারণ, পৃথিবী ও আকাশে তাঁরই রাজত্ব চলছে। তিনঃ বড়ই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। কারণ, তাঁর সত্তা সকল প্রকার শির্কের গন্ধমুক্ত। তাঁর সমজাতীয় কেউ নেই। ফলে আল্লাহ্‌র সত্তার সার্বভৌমত্ত্বে তাঁর কোন নজির ও সমকক্ষ নেই। তাঁর কোন ধ্বংস ও পরিবর্তন নেই। কাজেই তাঁর স্থলাভিষিক্তের জন্য কোন পুত্রের প্রয়োজন নেই। চারঃ বড়ই উন্নত ও শ্রেষ্ঠ। কারণ, সমগ্র রাজত্ব তাঁরই কর্তৃত্বাধীন। তাঁর ক্ষমতায় অংশীদার হবার যোগ্যতা ও মর্যাদা কারো নেই। পাঁচঃ শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ, তিনি বিশ্ব-জাহানের প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টিকারী ও তার ক্ষমতা নির্ধারণকারী। [দেখুন, তাবারী, কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]

[২] সারা বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হবার যে কথা এখানে বলা হয়েছে এ থেকে জানা যায় যে, কুরআনের দাওয়াত ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত কোন একটি দেশের জন্য নয় বরং সারা দুনিয়ার জন্য এবং কেবলমাত্র নিজেরই যুগের জন্য নয় বরং ভবিষ্যতের সকল যুগের জন্য। এ বিষয়বস্তুটি কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিবৃত হয়েছে। যেমন বলা হয়েছেঃ “হে মানুষেরা! আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে প্রেরিত”। [সূরা আল-আ‘রাফঃ ১৫৮] আরো এসেছে, “আমার কাছে এ কুরআন পাঠানো হয়েছে যাতে এর মাধ্যমে আমি তোমাদের এবং যাদের কাছে এটা পৌঁছে যায় তাদের সতর্ক করে দেই।” [সূরা আল-আন‘আমঃ ৯] আরো বলা হয়েছে, “আমরা আপনাকে সমগ্ৰ মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি”। [সূরা আস-সাবাঃ ২৮] অন্য আয়াতে এসেছে, “আর আমরা আপনাকে সারা দুনিয়াবাসীর জন্য রহমত বানিয়ে পাঠিয়েছি”। [সূরা আল-আম্বিয়াঃ ১০৭] এ বিষয়বস্তুটিকে আরো সুস্পষ্টভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে বার বার বর্ণনা করেছেনঃ তিনি বলেছেনঃ “আমাকে লাল-কালো সবার কাছে পাঠানো হয়েছে।” [মুসনাদে আহমাদঃ ১/৩০১] আরো বলেছেনঃ “প্রথমে একজন নবীকে বিশেষ করে তার নিজেরই জাতির কাছে পাঠানো হতো এবং আমাকে সাধারণভাবে সমগ্র মানব জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে।” [বুখারীঃ ৩৩৫, ৪৩৮, মুসলিমঃ ৫২১] তিনি আরো বলেনঃ “আমাকে সমস্ত সৃষ্টির কাছে পাঠানো হয়েছে এবং আমার আগমনে নবীদের আগমনের ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।” [মুসলিমঃ ৫২৩]

Tafsir Bayaan Foundation

তিনি বরকতময় যিনি তাঁর বান্দার উপর ফুরকান নাযিল করেছেন যেন সে জগতবাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে।

Muhiuddin Khan

পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবর্তীণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হয়,।

Zohurul Hoque

মহামহিম তিনি যিনি তাঁর দাসের কাছে অবতারণ করেছেন এই ফুরক্কান যেন তিনি বিশ্বমানবের জন্য একজন সতর্ককারী হতে পারেন।