Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আন-নূর আয়াত ৬৩

Qur'an Surah An-Nur Verse 63

আন-নূর [২৪]: ৬৩ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

لَا تَجْعَلُوْا دُعَاۤءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاۤءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًاۗ قَدْ يَعْلَمُ اللّٰهُ الَّذِيْنَ يَتَسَلَّلُوْنَ مِنْكُمْ لِوَاذًاۚ فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ اَمْرِهٖٓ اَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ اَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ (النور : ٢٤)

لَّا
(Do) not
না
tajʿalū
تَجْعَلُوا۟
make
তোমরা গণ্য করো
duʿāa
دُعَآءَ
(the) calling
আহ্বানকে
l-rasūli
ٱلرَّسُولِ
(of) the Messenger
রাসূলের
baynakum
بَيْنَكُمْ
among you
তোমাদের মাঝে
kaduʿāi
كَدُعَآءِ
as (the) call
আহ্বানের মতো
baʿḍikum
بَعْضِكُم
(of) some of you
তোমাদের একে
baʿḍan
بَعْضًاۚ
(to) others
অপরের
qad
قَدْ
Verily
নিশ্চয়ই
yaʿlamu
يَعْلَمُ
Allah knows
জানেন
l-lahu
ٱللَّهُ
Allah knows
আল্লাহ্‌
alladhīna
ٱلَّذِينَ
those who
(তাদেরকে) যারা
yatasallalūna
يَتَسَلَّلُونَ
slip away
তারা সরে পড়ে
minkum
مِنكُمْ
among you
মধ্যে হ'তে তোমাদের
liwādhan
لِوَاذًاۚ
under shelter
(আড়ালে) চুপিচুপি
falyaḥdhari
فَلْيَحْذَرِ
So let beware
সুতরাং ভয় করা উচিৎ
alladhīna
ٱلَّذِينَ
those who
(তাদের) যারা
yukhālifūna
يُخَالِفُونَ
oppose
বিরুদ্ধাচারণ করে
ʿan
عَنْ
[from]
বিষয়ে
amrihi
أَمْرِهِۦٓ
his orders
তাঁর হুকুমের
an
أَن
lest
যে
tuṣībahum
تُصِيبَهُمْ
befalls them
(উপরে) পড়বে তাদের
fit'natun
فِتْنَةٌ
a trial
বিপর্যয়
aw
أَوْ
or
অথবা
yuṣībahum
يُصِيبَهُمْ
befalls them
(উপরে) পড়বে তাদের
ʿadhābun
عَذَابٌ
a punishment
শাস্তি
alīmun
أَلِيمٌ
painful
নিদারুণ

Transliteration:

La taj'aloo du'aaa'ar Rasooli bainakum kadu'aaa'i badikum ba'daa; qad ya'lamul laahul lazeena yatasallaloona minkum liwaazaa; fal yahzaril lazeena yukhaalifoona 'an amriheee an tuseebahum fitnatun aw yuseebahum 'azaabun aleem (QS. an-Nūr:63)

English Sahih International:

Do not make [your] calling of the Messenger among yourselves as the call of one of you to another. Already Allah knows those of you who slip away, concealed by others. So let those beware who dissent from his [i.e., the Prophet's] order, lest fitnah strike them or a painful punishment. (QS. An-Nur, Ayah ৬৩)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

রসূলের ডাককে তোমরা তোমাদের একের প্রতি অন্যের ডাকের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। কাজেই যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, তাদের উপর পরীক্ষা নেমে আসবে কিংবা তাদের উপর নেমে আসবে ভয়াবহ শাস্তি। (আন-নূর, আয়াত ৬৩)

Tafsir Ahsanul Bayaan

রসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের প্রতি আহবানের মত গণ্য করো না;[১] তোমাদের মধ্যে যারা চুপি চুপি সরে পড়ে, আল্লাহ তাদের জানেন।[২] সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয়[৩] অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে ।

[১] এর একটি অর্থ হল, যেভাবে তোমরা এক অপরকে নাম ধরে ডাক, রসূলকে ঐভাবে ডাকবে না। যেমন 'ওহে মুহাম্মাদ!' না বলে 'হে আল্লাহর রসূল! হে আল্লাহর নবী' ইত্যাদি বলে ডাকবে। (এটি ছিল তাঁর জীবিতকালের নির্দেশ; যখন তাঁকে ডাকা সাহাবাদের প্রয়োজন হত)। এর দ্বিতীয় অর্থ হল, রসূলের বদ্দুআকে অন্যান্যদের বদ্দুআর মত ভেবো না। কারণ নবীর দু'আ কবুল হয়। অতএব তোমরা নবীর বদ্দুআ নেওয়া হতে দূরে থাক; নচেৎ তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে।

[২] এ ছিল মুনাফিকদের আচরণ। পরামর্শ সভা হতে তারা চুপিচুপি বেরিয়ে পড়ত।

[৩] 'বিপর্যয়' বলতে অন্তরের সেই বত্রুতাকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষকে ঈমান হতে বঞ্চিত করে ফেলে। এ হল নবী (সাঃ)-এর আদেশ থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করা এবং তাঁর বিরোধিতা করার পরিণাম। আর ঈমান থেকে বঞ্চনা ও কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ জাহান্নামের চিরস্থায়ী শাস্তির কারণ; যেমন আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে। অতএব নবী (সাঃ)-এর আদর্শ, তরীকা ও সুন্নতকে সব সময় সামনে রাখা উচিত। কারণ, যেসব কথা ও কাজ সুন্নত মোতাবেক হবে তা আল্লাহর নিকটে গ্রহণীয়; অন্যথা সব প্রত্যাখ্যাত। নবী (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি এমন কর্ম করবে যাতে আমাদের নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।" (মুসলিম)

Tafsir Abu Bakr Zakaria

তোমরা রাসূলের আহ্বানকে তোমাদের একে অপরের আহ্বানের মত গণ্য কর না; তোমাদের মধ্যে যারা একে অপরকে আড়াল করে অলক্ষ্যে সরে পড়ে আল্লাহ্‌ তো তাদেরকে জানেন [১]। কাজেই যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি [২]।

[১] আয়াতের অর্থ নির্ধারনে বেশ কয়েকটি মত এসেছে,

(এক)

لَاتَجْعَلُوْادُعَآءَالرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ

এর অর্থ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরফ থেকে মুসলিমদেরকে ডাকা। (ব্যাকরণগত কায়দার দিক দিয়ে এটা إضافةإلى الفا عل) আয়াতের অর্থ এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ডাকেন, তখন একে সাধারণ মানুষের ডাকার মত মনে করো না যে, সাড়া দেয়া না দেয়া ইচ্ছাধীন; বরং তখন সাড়া দেয়া ফরয হয়ে যায় এবং অনুমতি ছাড়া চলে যাওয়া হারাম হয়ে যায়। আয়াতের বর্ণনাধারার সাথে এই তাফসীর অধিক নিকটবর্তী ও মিলে যায়। (দুই) আয়াতের অপর একটি তাফসীর ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইবনে কাসীর, কুরতুবী প্রমুখ বৰ্ণনা করেছেন। তা এই যে, دُعَآءَالرَّسُوْلِ এর অর্থ মানুষের তরফ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোন কাজের জন্য ডাকা। (ব্যাকরণগত কায়দার দিক দিয়ে এটা إضافةإلى المفعول)। এই তাফসীরের ভিত্তিতে আয়াতের অর্থ এই যে, যখন তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোন প্রয়োজনে আহ্বান কর অথবা সম্বোধন কর, তখন সাধারণ লোকের ন্যায় তার নাম নিয়ে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবে না- এটা বেআদবী; বরং সম্মানসূচক উপাধি দ্বারা ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ অথবা ‘ইয়া নবীআল্লাহ্‌’ বলবে। [বাগভী]

[২] অর্থাৎ যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথের বিরোধিতা করে, তার প্রবর্তিত শরীয়ত ও আইন অনুসারে জীবন পরিচালনা করে না, তার সুন্নাতের বিরোধিতা করে, তারা যেন তাদের অন্তরে কুফরী, নিফাকী, বিদ‘আত ইত্যাদি লালন করে অথবা তারা তাতে নিপতিত হওয়ার আশংকা করে। আরো আশংকা করে যে, তাদের উপর কঠোর শাস্তি আসবে। হত্যা, দণ্ডবিধি, জেল ইত্যাদি দুনিয়াতে এবং আখেরাতেও তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যাক্তি এমন কোন কাজ করবে যা আমার প্রদর্শিত পথের উপর নয়, তা তার উপরই ফিরিয়ে দেয়া হবে, গ্ৰহণযোগ্য হবে না।” [বুখারীঃ ২৬৯৭, মুসলিমঃ ১৭১৮]

অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আমার এবং তোমাদের মাঝে উদাহরণ হলো এমন এক ব্যাক্তির, যে আগুন জ্বালালো, তারপর সে আলোয় যখন চতুর্দিক আলোকিত হলো, তখন দেখা গেল যে, পোকামাকড় এবং ঐসমস্ত প্ৰাণী যা আগুনে পড়ে, সেগুলো আগুনে পড়তে লাগলো। তখন সে ব্যাক্তি তাদেরকে আগুন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলো। কিন্তু সেগুলো তাকে ছাড়িয়ে সে আগুনে ঝাঁপ দিতে থাকলো। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটাই হলো আমার এবং তোমাদের উদাহরণ। আমি তোমাদের কোমরের কাপড়ের গিরা ধরে আগুন থেকে দূরে রাখছি এবং বলছিঃ আগুন থেকে দূরে থাক। কিন্তু তোমরা আমাকে ছাড়িয়ে ছুটে গিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছ।” [বুখারীঃ ৬৪৮৩, মুসিলিমঃ ২২৮৪]

Tafsir Bayaan Foundation

তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।

Muhiuddin Khan

রসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরকে আহ্বানের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।

Zohurul Hoque

তোমাদের মধ্যে রসূলের আহ্বানকে তোমরা তোমাদের মধ্যের একে অন্যে আহ্বানের মতো গণ্য করো না। আল্লাহ্ অবশ্যই তাদের জানেন তোমাদের মধ্যের যারা চুপি চুপি সরে পড়ে, সেজন্য যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধে যায় তারা সাবধান হোক পাছে কোনো বিপর্যয় তাদের উপরে পতিত হয়, অথবা কোনো মর্মন্তদ শাস্তি তাদের উপরে আপতিত হয়।