কুরআন মজীদ সূরা আন-নূর আয়াত ৩৯
Qur'an Surah An-Nur Verse 39
আন-নূর [২৪]: ৩৯ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْٓا اَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍۢ بِقِيْعَةٍ يَّحْسَبُهُ الظَّمْاٰنُ مَاۤءًۗ حَتّٰٓى اِذَا جَاۤءَهٗ لَمْ يَجِدْهُ شَيْـًٔا وَّوَجَدَ اللّٰهَ عِنْدَهٗ فَوَفّٰىهُ حِسَابَهٗ ۗ وَاللّٰهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ ۙ (النور : ٢٤)
- wa-alladhīna
- وَٱلَّذِينَ
- But those who
- আর যারা
- kafarū
- كَفَرُوٓا۟
- disbelieve
- অস্বীকার করেছে
- aʿmāluhum
- أَعْمَٰلُهُمْ
- their deeds
- তাদের কর্মসমূহ
- kasarābin
- كَسَرَابٍۭ
- (are) like a mirage
- মতো মরীচিকার
- biqīʿatin
- بِقِيعَةٍ
- in a lowland
- মধ্যে মরুভূমির
- yaḥsabuhu
- يَحْسَبُهُ
- thinks it
- তাকে মনে করে
- l-ẓamānu
- ٱلظَّمْـَٔانُ
- the thirsty one
- পিপাসার্ত লোক
- māan
- مَآءً
- (to be) water
- পানি (হিসেবে)
- ḥattā
- حَتَّىٰٓ
- until
- এমনকি
- idhā
- إِذَا
- when
- যখন
- jāahu
- جَآءَهُۥ
- he comes to it
- সেখানে পৌঁছলো
- lam
- لَمْ
- not
- না
- yajid'hu
- يَجِدْهُ
- he finds it
- সেখানে পেলো
- shayan
- شَيْـًٔا
- (to be) anything
- কিছুই
- wawajada
- وَوَجَدَ
- but he finds
- বরং পেলো
- l-laha
- ٱللَّهَ
- Allah
- আল্লাহ্কে
- ʿindahu
- عِندَهُۥ
- before him
- তার কাছে
- fawaffāhu
- فَوَفَّىٰهُ
- He will pay him in full
- তখন তাকে পূর্ণ করে দিলেন
- ḥisābahu
- حِسَابَهُۥۗ
- his due
- তার হিসাব
- wal-lahu
- وَٱللَّهُ
- And Allah
- আর আল্লাহ্
- sarīʿu
- سَرِيعُ
- (is) swift
- দ্রুত
- l-ḥisābi
- ٱلْحِسَابِ
- (in) the account
- হিসাবগ্রহণে
Transliteration:
Wallazeena kafarooo a'maaluhum kasaraabim biqee'atiny yahsabuhuz zamaanu maaa'an hattaaa izaa jaaa'ahoo lam yajid hu shai'anw wa wajadal laaha 'indahoo fa waffaahu hisaabah; wallaahu saree'ul hisaab(QS. an-Nūr:39)
English Sahih International:
But those who disbelieved – their deeds are like a mirage in a lowland which a thirsty one thinks is water until, when he comes to it, he finds it is nothing but finds Allah before him, and He will pay him in full his due; and Allah is swift in account. (QS. An-Nur, Ayah ৩৯)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর যারা কুফুরী করে তাদের কাজকর্ম হল বালুকাময় মরুভূমির মরীচিকার মত। পিপাসার্ত ব্যক্তি সেটাকে পানি মনে করে অবশেষে সে যখন তার নিকটে আসে, সে দেখে ওটা কিছুই না, সে সেখানে পায় আল্লাহকে, অতঃপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণ করে থাকেন। (আন-নূর, আয়াত ৩৯)
Tafsir Ahsanul Bayaan
যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে, তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকার ন্যায়; পিপাসার্ত যাকে পানি মনে করে থাকে। কিন্তু সে ওর নিকট উপস্থিত হলে দেখে তা কিছুই নয় এবং সেখানে সে আল্লাহকে পায়। অতঃপর তিনি তার কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দান করেন।[১] আর আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর ।
[১] কর্ম বা আমল বলতে এমন আমলকে বুঝানো হয়েছে, যা কাফের মুশরিকরা নেকী ভেবে করে থাকে। যেমন দান-খয়রাত, জ্ঞাতি-বন্ধন বজায়, আল্লাহর ঘর নির্মাণ, হাজীদের খিদমত ইত্যাদি। سراب (মরীচিকা), চকচকে বালিরাশির উপর সূর্যকিরণ পড়লে দূর হতে যা দেখে পানির মত মনে হয়। سراب এর মূল অর্থঃ চলা। যেহেতু ঐ বালিরাশিকে দূর হতে পানি মনে হয়; যদিও তা বালি ছাড়া কিছুই নয়। অনুরূপ কাফেরদের আমল ঈমান না থাকার কারণে আল্লাহর নিকট মূল্যহীন হবে। তারা কোন নেক কাজের প্রতিদান পাবে না। হ্যাঁ যখন তারা আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে, তখন তিনি তাদের প্রতিটি আমলের হিসাব পূর্ণভাবে চুকিয়ে দেবেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর যারা কুফরী করে [১] তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকার মত, পিপাসা কাতর ব্যাক্তি যাকে পানি মনে করে থাকে, কিন্তু যখন সে সেটার কাছে আসে তখন দেখে সেটা কিছুই নয় এবং সে পাবে সেখানে [২] আল্লাহ্কে, অতঃপর তিনি তাকে তার হিসাব পূর্ণমাত্রায় দেবেন। আর আল্লাহ্ দ্রুত হিসেব গ্রহণকারী।
[১] অর্থাৎ আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তাঁর নবীগণ এবং সে সময় আল্লাহ্র নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সত্যের শিক্ষা দিচ্ছিলেন সরল মনে তা মেনে নিতে অস্বীকার করে। [দেখুন-মুয়াসসার]
[২] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ আয়াতে ‘সেখানে’ বলে দুনিয়াই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। কারণ, আল্লাহ্র পক্ষ থেকে কাফেরদের কর্মকাণ্ডের যাবতীয় প্রতিফল দুনিয়াতেই দিয়ে দেয়া হবে। যেমনিভাবে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “যে কেউ পার্থিব জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমি ওদের কাজের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। ওদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া অন্য কিছুই নেই এবং ওরা যা করে আখিরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং ওরা যা করে থাকে তা নিরর্থক।” [সূরা হুদঃ ১৫-১৬] অন্যত্র এসেছে, “যে কেউ আখিরাতের ফসল কামনা করে তার জন্য আমি তার ফসল বাড়িয়ে দেই এবং যে কেউ দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে তা থেকে কিছু দেই, আখিরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না।” [সূরা আশ-শূরাঃ ২০] তবে অধিকাংশ আলেমদের নিকট এ আয়াতে ‘সেখানে’ বলে আখেরাতে মহান আল্লাহ্র দরবারে উপস্থিতির কথা বুঝানো হয়েছে। সেখানে তারা দুনিয়াতে যা করেছে সেটার প্রতিফল যদি প্রাপ্য হতো তবে তা দেয়া হতো। কিন্তু যেহেতু তাদের কৃত যাবতীয় কর্ম বিনষ্ট হয়েছে সেহেতু তারা সেখানে কিছুই পাবে না। যেমন, অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ “আর আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, তারপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।” [সূরা আল-ফুরকানঃ ২৩]
Tafsir Bayaan Foundation
আর যারা কুফরী করে, তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরিচিকার মত, পিপাসিত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে। অবশেষে যখন সে তার কাছে আসবে, তখন সে দেখবে সেটা কিছুই নয়। আর সে সেখানে আল্লাহকে দেখতে পাবে। অতঃপর তিনি তাকে তার হিসাব পরিপূর্ণ করে দেবেন। আর আল্লাহ অতি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
Muhiuddin Khan
যারা কাফের, তাদের কর্ম মরুভুমির মরীচিকা সদৃশ, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। এমনকি, সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অতঃপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
Zohurul Hoque
পক্ষান্তরে যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের ক্রিয়াকর্ম মরুভূমির মরীচিকার ন্যায়, পিপাসার্ত তাকে পানি বলে মনে করে যে পর্যন্ত না সে তার কাছে আসে সে ঐটির কিছুই দেখতে পায় না, বরং সে আল্লাহকে তার সামনে দেখতে পাবে, সুতরাং তিনি তার হিসাব চুকিয়ে দেবেন। আর আল্লাহ্ হিসাব-নিকাশে তৎপর।