কুরআন মজীদ সূরা আত তাওবাহ আয়াত ৯০
Qur'an Surah At-Tawbah Verse 90
আত তাওবাহ [৯]: ৯০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَجَاۤءَ الْمُعَذِّرُوْنَ مِنَ الْاَعْرَابِ لِيُؤْذَنَ لَهُمْ وَقَعَدَ الَّذِيْنَ كَذَبُوا اللّٰهَ وَرَسُوْلَهٗ ۗسَيُصِيْبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ (التوبة : ٩)
- wajāa
- وَجَآءَ
- And came
- এবং আসলো
- l-muʿadhirūna
- ٱلْمُعَذِّرُونَ
- the ones who make excuses
- অজুহাত পেশকারীরা
- mina
- مِنَ
- of
- মধ্যে হতে
- l-aʿrābi
- ٱلْأَعْرَابِ
- the bedouins
- বেদুঈনদের
- liyu'dhana
- لِيُؤْذَنَ
- that permission be granted
- অব্যাহতি দেয়া হয়
- lahum
- لَهُمْ
- to them
- জন্যে তাদের
- waqaʿada
- وَقَعَدَ
- and sat
- এবং (এভাবে) বসে থাকলো
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- those who
- (এসব লোক) যারা
- kadhabū
- كَذَبُوا۟
- lied
- মিথ্যা বলেছিলো (ঈমানের ওয়াদায়)
- l-laha
- ٱللَّهَ
- (to) Allah
- আল্লাহকে
- warasūlahu
- وَرَسُولَهُۥۚ
- and His Messenger
- ও তাঁর রাসূলকে
- sayuṣību
- سَيُصِيبُ
- Will strike
- শীঘ্রই পৌঁছবে
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- those who
- (তাদের) যারা
- kafarū
- كَفَرُوا۟
- disbelieved
- অস্বীকার করেছিলো
- min'hum
- مِنْهُمْ
- among them
- মধ্য হতে তাদের
- ʿadhābun
- عَذَابٌ
- a punishment
- শাস্তি
- alīmun
- أَلِيمٌ
- painful
- নিদারুণ
Transliteration:
Wa jaaa'al mu'az ziroona minal A'raabi liyu'zana lahum wa qa'adal lazeena kazabul laaha wa Rasoolah; sayuseebul lazeena kafaroo minhum 'azaabun aleem(QS. at-Tawbah:90)
English Sahih International:
And those with excuses among the bedouins came to be permitted [to remain], and they who had lied to Allah and His Messenger sat [at home]. There will strike those who disbelieved among them a painful punishment. (QS. At-Tawbah, Ayah ৯০)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
বেদুইনদের মধ্যেও ওজর-আপত্তি পেশকারীরা এসে অব্যাহতির আবেদন জানালো। যারা (নিজেদের ঈমান থাকার ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নিকট মিথ্যা বলেছিল তারাও পিছনে রয়ে গেল। তাদের (অর্থাৎ বেদুইনদের) মধ্যে যারা কুফুরী করেছে শীঘ্রই এক ভয়ঙ্কর ‘আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে। (আত তাওবাহ, আয়াত ৯০)
Tafsir Ahsanul Bayaan
মরুবাসী কিছু (বেদুঈন) লোক অজুহাত পেশ করে অনুমতি চাওয়ার উদ্দেশ্যে এল। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে মিথ্যা বলেছিল, তারা বসে রইল। তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে, অতি নিকটেই তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসবে।[১]
[১] উক্ত অজুহাত পেশকারীদের ব্যাপারে তফসীরবিদদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এরা শহর থেকে দূরে বসবাসকারী সেই লোক, যারা মিথ্যা ওজর পেশ করে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি নিয়েছিল। এদের দ্বিতীয় প্রকার ছিল তারা, যারা এসে ওজর পেশ করার কোন প্রয়োজন মনে না করেই বসে রইল। আলোচ্য আয়াতে মুনাফিক্বদের উক্ত দুই শ্রেণীর লোকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিতে উভয় ধরনের লোকেরাই শামিল। আর 'তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে' বলে মিথ্যা ওজর পেশকারী ও বসে থাকা উভয় প্রকার ব্যক্তিদেরকে বুঝানো হয়েছে। পক্ষান্তরে অন্যান্য তফসীরবিদরা 'অজুহাত পেশকারীদল' বলতে এমন মরুবাসী বেদুঈন মুসলিমদেরকে বুঝিয়েছেন, যারা সঠিক ও সত্য ওজর পেশ করে অনুমতি নিয়েছিল। আর مُعَذِّرُوْنَ আসলে তাদের নিকটে مُعْتَذِرُوْنَ ছিল। ت হরফটিকে ذ হরফে পরিবর্তন করে সমীকরণ করা হয়েছে। আর 'مُعْتَذِر'এর অর্থ হল আসলেই যাদের ওজর আছে। এই হিসাবে আয়াতের পরবর্তী বাক্যতে মুনাফিক্বদের কথা উল্লেখ আছে এবং আয়াতে উভয় দলের কথা বর্ণনা হয়েছে। এর প্রথম অংশে সেই সব মুসলিমদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের সত্যিকার ওজর ছিল। আর দ্বিতীয় অংশে সেই মুনাফিক্বদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ওজর পেশ না করেই বসে ছিল। আর আয়াতের শেষাংশে যে ধমক এসেছে, তা হল এই দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদের জন্যই। আর আল্লাহই অধিক জানেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর মরুবাসীদের মধ্যে কিছু লোক অজুহাত পেশ করতে আসল যেন এদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সাথে মিথ্যা বলেছিল, তারা বসে রইল, তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে অচিরেই তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পাবে [১]
[১] আয়াতের অর্থ থেকে বুঝা যায় যে, এসব বেদুইন যাযাবরদের মধ্যে দু'রকম লোক ছিল। প্রথমত, যারা ছল-ছুতা পেশ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয় যাতে তাদেরকে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে অব্যাহতি দান করা হয়। আর কিছু লোক ছিল এমন উদ্ধত যারা অব্যাহতি লাভের তোয়াক্কা না করেই নিজ নিজ অবস্থানে নিজের মতেই বসে থাকে। এতে বাতলে দেয়া হয়েছে যে, তাদের ওযর গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে তাদেরকে বেদনাদায়ক আযাবের দুঃসংবাদ শুনিয়ে দেয়া হয়। [ইবন কাসীর]
আল্লামা সা’দী বলেন, আয়াতের অর্থ, যারা রাসূলের সাথে বের হওয়ার ব্যাপারটি গুরুত্বহীন মনে করেছে এবং বের হতে কসুর করেছে, তাদের অসভ্যতা ও লজ্জাহীনতার কারণে এবং তাদের দুর্বল ঈমানের কারণে, রাসূলের কাছে এসে জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি চাইতে লাগল। কিন্তু যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা মনে করেছিল তারা সম্পূর্ণ বেপরোয়া হয়ে বসে রইল, অব্যাহতি নেয়াও ছেড়ে দিল। অথবা আয়াতে ‘ওজর পেশকারীরা বলে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যাদের সত্যিকার অর্থেই ওজর ছিল। তারা রাসূলের কাছে ওজর পেশ করার জন্য এসেছিল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল যে, কেউ ওজর পেশ করলে তিনি তা গ্রহণ করতেন। আর যারা অভিযানে বের হওয়ার আবশ্যকতা সংক্রান্ত ঈমানের দাবীতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা বলেছিল তারা বসেই রইল, বের হওয়ার ব্যাপারে কোন কাজ করল না। [সা’দী]
Tafsir Bayaan Foundation
আর গ্রামবাসীদের থেকে ওযর পেশকারীরা আসল, যেন তাদের অনুমতি দেয়া হয় এবং (জিহাদ না করে) বসে থাকল তারা, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে মিথ্যা বলেছিল। তাদের মধ্য থেকে যারা কুফরী করেছে, তাদেরকে অচিরেই যন্ত্রণাদায়ক আযাব আক্রান্ত করবে।
Muhiuddin Khan
আর ছলনাকারী বেদুঈন লোকেরা এলো, যাতে তাদের অব্যাহতি লাভ হতে পারে এবং নিবৃত্ত থাকতে পারে তাদেরই যারা আল্লাহ ও রসূলের সাথে মিথ্যা বলে ছিল। এবার তাদের উপর শীগ্রই আসবে বেদনাদায়ক আযাব যারা কাফের।
Zohurul Hoque
আর বেদুইনদের মধ্যের ওজর প্রদর্শনকারীরা এসেছিল যেন তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়, আর যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের কাছে মিথ্যাকথা বলেছিল তারা বসে রইল। তাদের মধ্যের যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের অচিরেই মর্মন্তুদ শাস্তি দেয়া হবে।