Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আত তাওবাহ আয়াত ৩৪

Qur'an Surah At-Tawbah Verse 34

আত তাওবাহ [৯]: ৩৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

۞ يٰٓاَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوْٓا اِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ الْاَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ ۗوَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ ۙفَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍۙ (التوبة : ٩)

yāayyuhā
يَٰٓأَيُّهَا
O you who believe!
হে
alladhīna
ٱلَّذِينَ
O you who believe!
যারা
āmanū
ءَامَنُوٓا۟
O you who believe!
ঈমান এনেছো
inna
إِنَّ
Indeed
নিশ্চয়ই
kathīran
كَثِيرًا
many
অধিকাংশ
mina
مِّنَ
of
মধ্য হতে
l-aḥbāri
ٱلْأَحْبَارِ
the rabbis
(আহলে কিতাব) পন্ডিতদের
wal-ruh'bāni
وَٱلرُّهْبَانِ
and the monks
ও সংসার-বিরাগীদের (অবস্থা এই যে)
layakulūna
لَيَأْكُلُونَ
surely eat
অবশ্যই তারা খায়
amwāla
أَمْوَٰلَ
(the) wealth
ধনসম্পদ
l-nāsi
ٱلنَّاسِ
(of) the people
মানুষের
bil-bāṭili
بِٱلْبَٰطِلِ
in falsehood
ভাবে অন্যায়
wayaṣuddūna
وَيَصُدُّونَ
and hinder
ও তারা বাধা দেয়
ʿan
عَن
from
হতে
sabīli
سَبِيلِ
(the) way
পথ
l-lahi
ٱللَّهِۗ
(of) Allah
আল্লাহর
wa-alladhīna
وَٱلَّذِينَ
And those who
এবং যারা
yaknizūna
يَكْنِزُونَ
hoard
জমা করে রাখে
l-dhahaba
ٱلذَّهَبَ
the gold
সোনা
wal-fiḍata
وَٱلْفِضَّةَ
and the silver
ও রূপা
walā
وَلَا
and (do) not
এবং না
yunfiqūnahā
يُنفِقُونَهَا
spend it
তারা ব্যয় করে তা
فِى
in
মধ্যে
sabīli
سَبِيلِ
(the) way
পথের
l-lahi
ٱللَّهِ
(of) Allah
আল্লাহর
fabashir'hum
فَبَشِّرْهُم
[so] give them tidings
তাই সুসংবাদ দাও তাদেরকে
biʿadhābin
بِعَذَابٍ
of a punishment
সম্পর্কে শাস্তি
alīmin
أَلِيمٍ
painful
অতি কষ্টদায়ক

Transliteration:

Yaaa aiyuhal lazeena aamanooo inna kaseeramminal ahbaari warruhbaani la yaakuloona amwaalan naasi bil baatili wa yasuddoona 'an sabeelil laah; wallazeena yaknizoonaz zahaba wal fiddata wa laayunfiqoonahaa fee sabeelil laahi fabashshirhum bi'azaabin aleem (QS. at-Tawbah:34)

English Sahih International:

O you who have believed, indeed many of the scholars and the monks devour the wealth of people unjustly and avert [them] from the way of Allah. And those who hoard gold and silver and spend it not in the way of Allah – give them tidings of a painful punishment. (QS. At-Tawbah, Ayah ৩৪)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

হে বিশ্বাসীগণ! অবশ্যই ‘আলিম ও দরবেশদের অনেকেই ভুয়ো কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষদের সম্পদ গ্রাস করে থাকে আর আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে আর আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ দাও। (আত তাওবাহ, আয়াত ৩৪)

Tafsir Ahsanul Bayaan

হে মুমিনগণ! নিশ্চয় অনেক পন্ডিত-পুরোহিত মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায় উপায়ে ভক্ষণ করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।[১] আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। [২]

[১] أحبَار শব্দটি حِبْر এর বহুবচন। এটা এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে কথাকে খুব সুন্দর করে পেশ করার দক্ষতা রাখে। আর সুন্দর ও নকশাদার পোশাককেও ثَوبٌ مُحَبِّر বলা হয়ে থাকে। এখানে উদ্দেশ্য ইয়াহুদী উলামা। رُهبَان শব্দটি رَاهِب এর বহুবচন যার উৎপত্তি رهبنة শব্দ থেকে। এ থেকে উদ্দেশ্য নাসারা উলামা। কারো কারো নিকটে এ থেকে উদ্দেশ্য হল, নাসারাদের সুফীগণ। উলামার জন্য তাদের নিকট বিশেষ শব্দ قسّيسين রয়েছে। এই উভয় শ্রেণীর ধর্মধ্বজীরা এক তো আল্লাহর কালামকে বিকৃত ও পরিবর্তিত করে লোকদেরকে তাদের ইচ্ছা মোতাবেক ফতোয়া ও বিধান দিত এবং এইভাবে তাদেরকে আল্লাহর পথ হতে বাধা প্রদান করত। আর দ্বিতীয়তঃ এই পন্থায় তারা তাদের নিকট হতে অর্থ উপার্জন করত; যা তাদের জন্য হারাম ও বাতিল ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, বহু সংখ্যক মুসলিম উমালাদের অবস্থাও ওদের মতই। আর এ হল নবী (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতার প্রমাণ। যাতে তিনি বলেছিলেন لتتّبعن سنن من كان قبلكم অর্থাৎ, "তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী উম্মতদের তরীকা অনুসরণ করবে।" (বুখারীঃ ই'তিসাম অধ্যায়)

[২] আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন যে, এটা যাকাত ফরয হওয়ার পূর্বের আদেশ। যাকাতের হুকুম অবতীর্ণ হওয়ার পর যাকাত দ্বারা আল্লাহ তাআলা মাল-ধনকে পবিত্র করার মাধ্যম বানিয়েছেন। এই জন্য উলামাগণ বলেন, যে মাল থেকে যাকাত বের করা হবে সে মাল (আয়াতে নিন্দনীয়) 'জমা করে রাখা' মাল নয়। আর যে মাল থেকে যাকাত বের করা হবে না, সে মালই হবে 'জমা করে রাখা' ধনভান্ডার; যার জন্য রয়েছে এই কুরআনী ধমক। সুতরাং সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, "প্রত্যেক সোনা ও চাঁদীর অধিকারী ব্যক্তি যে তার হক (যাকাত) আদায় করে না, যখন কিয়ামতের দিন আসবে তখন তার জন্য ঐ সমুদয় সোনা-চাঁদীকে আগুনে দিয়ে বহু পাত তৈরী করা হবে। অতঃপর সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগা হবে। যখনই সে পাত ঠান্ডা হয়ে যাবে তখনই তা পুনরায় গরম করে অনুরূপ দাগার শাস্তি সেই দিনে চলতেই থাকবে যার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বছরের সমান; যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দাদের মাঝে বিচার-নিষ্পত্তি শেষ করা হয়েছে। অতঃপর সে তার পথ দেখতে পাবে; হয় জান্নাতের দিকে না হয় দোযখের দিকে।" (মুসলিম যাকাত অধ্যায়) বলাই বাহুল্য যে, পূর্বোক্ত শ্রেণীর ভ্রষ্ট উলামা ও সূফীদের পরে ভ্রষ্ট ধনবানরাই সাধারণ মানুষদের ভ্রষ্টতার জন্য অধিকাংশে দায়ী। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের মন্দ থেকে হিফাযতে রাখুন। আমীন।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

হে ঈমানদারগণ! পণ্ডিত এবং সংসার-বিরাগীদের মধ্যে অনেকেই তো জনসাধারণের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায় এবং মানুষকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে নিবৃত্ত করে [১]। আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করে না [২] আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন [৩]।

[১] এ আয়াতে মুসলিমদের সম্বোধন করে ইয়াহুদী নাসারা সম্প্রদায়ের পণ্ডিত ও পাদ্রীদের কুকীর্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে, যা লোকসমাজে গোমরাহী প্রসারের অন্যতম কারণ। ইয়াহুদী-নাসারাদের আলোচনায় মুসলিমদের হয়তো এ উদ্দেশ্যে সম্বোধন করা হয় যে, তাদের অবস্থাও যেন ওদের মত না হয়। আয়াতে ইয়াহুদী-নাসারা সম্প্রদায়ের পণ্ডিত ও পাদীদের সম্পর্কে বলা হয় যে, তাদের অধিকাংশই গৰ্হিত পস্থায় লোকদের মালামাল গলধঃকরণ করে চলছে এবং আল্লাহর সরল পথ থেকে মানুষকে নিবৃত রাখছে। এ বাতিল পন্থা সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, তারা গীর্জা ও ধর্মের নামে মানুষদের থেকে কর আদায় করত। এতে তারা মানুষদেরকে বোঝাত যে, এগুলো আল্লাহর নৈকট্যের জন্যই গ্রহণ করছে। অথচ তারা এ সম্পদগুলো কুক্ষিগত করত। [কুরতুবী] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, তারা বিচারকার্য ঘুষের উপর করত। [কুরতুবী] এভাবে তারা পয়সা নিয়ে তওরাতের শিক্ষাবিরোধী ফতোয়া দান করত। আবার কখনো তওরাতের বিধি নিষেধকে গোপন রেখে কিংবা তাতে নানা হীলা বাহানা সৃষ্টি করে নিজেরাই শুধু পথভ্রষ্ট হতোনা বরং সত্যপথ অন্বেষণকারীদের বিভ্রান্ত হওয়ারও কারণ হয়ে দাড়াতো। [সা’দী] কেননা, যেখানে নেতাদের এ অবস্থা, সেখানে অনুসারীদের সত্য সন্ধানের স্পৃহাও আর বাকী থাকে না। তাছাড়া তাদের বাতিল ফতোয়ার দরুন সরল জনগণ মিথ্যাকেও সত্যরূপে বিশ্বাস করে নেয়। অথবা আল্লাহর দ্বীন বলে এখানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] অর্থাৎ তারা নিজেরা তো পথভ্রষ্ট হয়েছেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান না এনে অর্থলোভে পড়ে আছে। অন্যদেরকেও তেমনি ইসলামে প্রবেশ করা ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ থেকে বাঁধা দিচ্ছে। [কুরতুবী]

[২] ইয়াহুদী নাসারা গোষ্ঠীর আলেম সম্প্রদায়ের মিথ্যা ফতোয়া দানের ব্যাধি সৃষ্টি হয় অর্থের লোভ লালসা থেকে। এজন্যে আয়াতে অর্থালন্সার করুণ পরিণতি ও কঠোর সাজার কথা বর্ণিত হয়। এরশাদ হয়েছেঃ “যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে, তা খরচ করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ দিন"। এখানে ‘আর তা খরচ করে না আল্লাহর পথে’ বাক্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যারা বিধানমতে আল্লাহর ওয়াস্তে খরচ করে, তাদের পক্ষে তাদের অবশিষ্ট অর্থ সম্পদ ক্ষতিকর নয়। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে মালামালের যাকাত দেয়া হয়, তা জমা রাখা সঞ্চিত ধন-রত্রের শামিল নয়।’ [আবুদাউদ; ১৫৬৪]। এ থেকে বোঝা যায় যে, যাকাত আদায়ের পর যা অবশিষ্ট থাকে , তা জমা রাখা গোনাহ নয়।

[৩] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, তারপর সে যে সম্পদের যাকাত দিবে না, কিয়ামতের দিন তার সম্পদ তার জন্য চক্ষুর পাশে দুটি কালো দাগবিশিষ্ট বিষাক্ত সাপে পরিণত হবে, তারপর সেটি তার চোয়ালের দু’পাশে আক্রমন করবে এবং বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার গচ্ছিত ধন। [বুখারী; ১৪০৩] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোন ব্যক্তি তাঁর উটের যাকাত দিবে না সে যেভাবে দুনিয়াতে ছিল তার থেকে উত্তমভাবে এসে তাকে পা দিয়ে মাড়াতে থাকবে, অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ছাগলের যাকাত দিবে না সে যেভাবে দুনিয়াতে ছিল তার থেকেও উত্তমভাবে এসে তাকে তার খুর ও শিং দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকবে... আর তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন তাঁর কাধে ছাগল নিয়ে উপস্থিত না হয়, যে ছাগল চিৎকার করতে থাকবে, তখন সে বলবে, হে মুহাম্মাদ! আর আমি বলব, আমি তোমার জন্য কোন কিছুরই মালিক নই, আমি তো তোমার কাছে বাণী পৌছিয়েছি। আর তোমাদের কেউ যেন তাঁর কাধে কোন উট নিয়ে উপস্থিত না হয়, যা শব্দ করছে। তখন সে বলবে, হে মুহাম্মাদ! আমি বলব, আমি তোমার জন্য কোন কিছুর মালিক নই, আমি তো তোমাদেরকে পৌছিয়েছি। [বুখারী; ১৪০২; মুসলিম; ৯৮৮]

Tafsir Bayaan Foundation

হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় পন্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও।

Muhiuddin Khan

হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।

Zohurul Hoque

ওহে যারা ঈমান এনেছ! নিঃসন্দেহ পন্ডিতদের ও সন্ন্যাসীদের মধ্যের অনেকে লোকের ধনসম্পত্তি অন্যায়ভাবে গলাধঃকরণ করে আর আল্লাহ্‌র পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে। বস্তুতঃ যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে অথচ আল্লাহ্‌র পথে খরচ করে না, তাদের তাহলে সংবাদ দাও মর্মন্তুদ শাস্তির, --