কুরআন মজীদ সূরা আত তাওবাহ আয়াত ১১৮
Qur'an Surah At-Tawbah Verse 118
আত তাওবাহ [৯]: ১১৮ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَّعَلَى الثَّلٰثَةِ الَّذِيْنَ خُلِّفُوْاۗ حَتّٰٓى اِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْاَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ اَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوْٓا اَنْ لَّا مَلْجَاَ مِنَ اللّٰهِ اِلَّآ اِلَيْهِۗ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوْبُوْاۗ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ ࣖ (التوبة : ٩)
- waʿalā
- وَعَلَى
- And on
- এবং উপর
- l-thalāthati
- ٱلثَّلَٰثَةِ
- the three
- (ঐ) তিনজনের (ক্ষমা করলেন)
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- (of) those who
- যারা
- khullifū
- خُلِّفُوا۟
- were left behind
- (তাদের সিদ্ধান্ত)স্হগিত রাখা হয়েছিলো
- ḥattā
- حَتَّىٰٓ
- until
- এমনকি
- idhā
- إِذَا
- when
- যখন
- ḍāqat
- ضَاقَتْ
- (was) straitened
- সংকুচিত হয়ে গেলো
- ʿalayhimu
- عَلَيْهِمُ
- for them
- জন্যে তাদের
- l-arḍu
- ٱلْأَرْضُ
- the earth
- পৃথিবী
- bimā
- بِمَا
- though
- এ সত্ত্বেও যা
- raḥubat
- رَحُبَتْ
- it was vast
- বিস্তৃত
- waḍāqat
- وَضَاقَتْ
- And (was) straitened
- এবং সংকীর্ণ হলো
- ʿalayhim
- عَلَيْهِمْ
- for them
- জন্যে তাদের
- anfusuhum
- أَنفُسُهُمْ
- their own souls
- জীবন তাদের
- waẓannū
- وَظَنُّوٓا۟
- and they were certain
- এবং তারা ভাবলো
- an
- أَن
- that
- যে
- lā
- لَّا
- (there is) no
- নেই
- malja-a
- مَلْجَأَ
- refuge
- কোনো আশ্রয় (বাঁচার)
- mina
- مِنَ
- from
- হতে
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- Allah
- আল্লাহ (শাস্তি)
- illā
- إِلَّآ
- except
- এ ছাড়া
- ilayhi
- إِلَيْهِ
- to Him
- দিকে তাঁর(প্রত্যাবর্তন)
- thumma
- ثُمَّ
- Then
- এরপর
- tāba
- تَابَ
- He turned (in mercy)
- তিনি ক্ষমা করলেন
- ʿalayhim
- عَلَيْهِمْ
- to them
- প্রতি তাদের
- liyatūbū
- لِيَتُوبُوٓا۟ۚ
- that they may repent
- যেন তারা ফিরে আসে
- inna
- إِنَّ
- Indeed
- নিশ্চয়ই
- l-laha
- ٱللَّهَ
- Allah
- আল্লাহ
- huwa
- هُوَ
- He
- তিনিই
- l-tawābu
- ٱلتَّوَّابُ
- (is) the Acceptor of repentance
- বড় ক্ষমাশীল
- l-raḥīmu
- ٱلرَّحِيمُ
- the Most Merciful
- পরম দয়ালু
Transliteration:
Wa 'alas salaasatil lazeena khullifoo hattaaa izaa daaqat 'alaihimul ardu bimaa rahubat wa daaqat 'alaihim anfusuhum wa zannnooo al laa malja-a minal laahi illaaa ilaihi summa taaba 'alaihim liyatooboo; innal laaha Huwat Tawwaabur Raheem(QS. at-Tawbah:118)
English Sahih International:
And [He also forgave] the three who were left alone [i.e., boycotted, regretting their error] to the point that the earth closed in on them in spite of its vastness and their souls confined [i.e., anguished] them and they were certain that there is no refuge from Allah except in Him. Then He turned to them so they could repent. Indeed, Allah is the Accepting of Repentance, the Merciful. (QS. At-Tawbah, Ayah ১১৮)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর (তিনি অনুগ্রহ করলেন) ঐ তিনজনের প্রতিও যারা (তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে) পিছনে থেকে গিয়েছিল [কা‘ব ইবনে মালিক, মুরারা ইবনে রাবী‘আ ও হিলাল ইবনে উমাইয়্যা (রাযি।)] তাঁরা অনুশোচনার আগুনে এমনি দগ্ধীভূত হয়েছিলেন যে] শেষ পর্যন্ত পৃথিবী তার পূর্ণ বিস্তৃতি নিয়েও তাদের প্রতি সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল আর তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল আর তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই তাঁর পথে ফিরে যাওয়া ব্যতীত। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন যাতে তারা অনুশোচনায় তাঁর দিকে ফিরে আসে। আল্লাহ অতিশয় তাওবাহ কবূলকারী, বড়ই দয়ালু। (আত তাওবাহ, আয়াত ১১৮)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আর ঐ তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছিল;[১] পরিশেষে পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল[২] আর তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও হতে বাঁচার অন্য কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তওবা করে।[৩] নিশ্চয় আল্লাহই হচ্ছেন তওবা গ্রহণকারী, পরম করুণাময়।
[১] خُلِّفٌوْا আর مُرْجَوْنَ এর অর্থ একই; অর্থাৎ যাঁদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল এবং পঞ্চাশ দিন পর তাদের তওবা কবুল হয়েছিল। তাঁরা তিন জন সাহাবী ছিলেন। কা'ব বিন মালেক, মুরারাহ বিন রাবী' ও হিলাল বিন উমাইয়াহ (রাঃ)। এঁরা তিনজনই ছিলেন অতি মুখলেস (খাঁটি) ব্যক্তি। যাঁরা ইতিপূর্বে মহানবী (সাঃ)-এর সাথে সকল জিহাদে শরীক হয়েছিলেন। শুধু তাবুক যুদ্ধে অবহেলাবশতঃ শরীক হননি। পরে তাঁরা আপন ভুল বুঝতে পারলেন ও ভাবলেন যে, জিহাদে শরীক না হয়ে পিছিয়ে থাকায় অপরাধ তো করেছি; কিন্তু পুনরায় মুনাফিকদের ন্যায় রসূল (সাঃ)-এর নিকট মিথ্যা অজুহাত পেশ করার মত ভুল আর করব না। সুতরাং তাঁরা নবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে পরিষ্কারভাবে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিলেন এবং তার শাস্তির জন্য নিজেদেরকে পেশ করলেন। নবী (সাঃ) তাঁদের বিষয় আল্লাহকে সোপর্দ করে দিলেন যে, আল্লাহ তাদের বিষয়ে কোন ফায়সালা পাঠাবেন। এরপরেও নবী (সাঃ) সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)গণকে সেই তিন ব্যক্তির সাথে কোন সামাজিক সম্পর্ক রাখতে, এমনকি কথাবার্তা বলতেও নিষেধ করে দেন এবং চল্লিশ দিন পর তাঁদেরকে নিজ নিজ স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার আদেশ দেন। সুতরাং তাই করা হয়। আরো দশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তাঁদের তওবা কবুল করা হয় এবং উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। (উক্ত ঘটনা বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ বুখারী, কিতাবুল মাগাযী ও মুসলিম, কিতাবুত তাওবাহ)
[২] সামাজিক বয়কটের ফলে তাঁদেরকে যে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছিল এটা তারই বর্ণনা ।
[৩] অর্থাৎ পঞ্চাশ দিন পর আল্লাহ তাআলা তাঁদের কাকুতি-মিনতি শোনেন এবং তওবা কবুল করেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তিনি তাওবা কবুল করলেন অন্য তিনজনেরও [১], যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না যমীন বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সেটা সংকুচিত হয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিল আর তারা নিশ্চিত উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য তিনি ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই। তারপর তিনি তাদের তাওবাহ্ কবুল করলেন যাতে তারা তাওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ্ অধিক তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
[১] এরা তিন জন হলেন কা'আব ইবন মালেক, মুরারা ইবন রবি এবং হেলাল ইবন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুম তাঁরা তিনজনই ছিলেন আনসারদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। যাঁরা ইতিপূর্বে বাই’আতে আকাবা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিভিন্ন জিহাদে শরীক হয়েছিলেন। কিন্তু এ সময় ঘটনাচক্রে তাঁদের বিচ্যুতি ঘটে যায়। অন্যদিকে যে মুনাফিকরা কপটতার দরুন এ যুদ্ধে শরীক হয়নি, তারা তাঁদের কুপরামর্শ দিয়ে দুর্বল করে তুললো তারপর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদ থেকে ফিরে আসলেন, তখন মুনাফিকরা নানা অজুহাত দেখিয়ে ও মিথ্যা শপথ করে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে চাইল আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদের গোপন অবস্থাকে আল্লাহর সোপর্দ করে তাদের মিথ্যা শপথেই আশ্বস্ত হলেন, ফলে তারা দিব্যি আরামে সময় অতিবাহিত করে চলে আর ঐ তিন সাহাবীকে পরামর্শ দিতে লাগল যে, আপনারা ও মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশ্বস্ত করুন। কিন্তু তাঁদের বিবেক সায় দিল না। কারণ, প্রথম অপরাধ ছিল জিহাদ থেকে বিরত থাকা, দ্বিতীয় অপরাধ আল্লাহর নবীর সামনে মিথ্যা বলা, যা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই তাঁরা, পরিস্কার ভাষায় তাদের অপরাধ স্বীকার করে নিলেন যে অপরাধের সাজা স্বরূপ তাদের সমাজ চ্যুতির আদেশ দেয়া হয়। আর এদিকে কুরআন মাজীদ সকল গোপন রহস্য উদঘাটন এবং মিথ্যা শপথ করে অজুহাত সৃষ্টিকারীদের প্রকৃত অবস্থাও ফাস করে দেয়। অত্র সুরার ৯৪ থেকে ৯৮ আয়াত পর্যন্ত রয়েছে এদের অবস্থাও নির্মম পরিণতির বর্ণনা। কিন্তু যে তিন জন সাহাবী মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে অপরাধ স্বীকার করেছেন, এ আয়াতটি তাঁদের তাওবাহ কবুল হওয়ার ব্যাপারে নাযিল হয়। ফলে দীর্ঘ পঞ্চাশ দিন এহেন দুৰ্বিসহ অবস্থা ভোগের পর তারা আবার আনন্দিত মনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সাথে মিলিত হন। [এ ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তাবারী; বাগভী; ইবন কাসীর প্রমূখগণ বর্ণনা করেছেন]।
Tafsir Bayaan Foundation
আর সে তিন জনের (তাওবা কবূল করলেন), যাদের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এমনকি পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের নিকট তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। আর তারা নিশ্চিত বুঝেছিল যে, আল্লাহর আযাব থেকে তিনি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। তারপর তিনি তাদের তাওবা কবুল করলেন, যাতে তারা তাওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু।
Muhiuddin Khan
এবং অপর তিনজনকে যাদেরকে পেছনে রাখা হয়েছিল, যখন পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্বেও তাদের জন্য সঙ্কুচিত হয়ে গেল এবং তাদের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠলো; আর তারা বুঝতে পারলো যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন আশ্রয়স্থল নেই-অতঃপর তিনি সদয় হলেন তাদের প্রতি যাতে তারা ফিরে আসে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দয়াময় করুণাশীল।
Zohurul Hoque
আর তিনজনের প্রতি যাদের পিছনে ছেড়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন কিন্তু পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের কাছে তা সংকুচিত হয়েছিল, আর তাদের অন্তরাত্মাও তাদের জন্য হয়েছিল সংকুচিত, আর তারা বুঝতে পেরেছিল যে আল্লাহ্ থেকে কোনো আশ্রয় নেই তাঁর দিকে ছাড়া। অতঃপর তিনি তাদের দিকে ফিরলেন যেন তারাও ফেরে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ -- তিনি বারবার ফেরেন, অফুরন্ত ফলদাতা।