কুরআন মজীদ সূরা আত তাওবাহ আয়াত ১১২
Qur'an Surah At-Tawbah Verse 112
আত তাওবাহ [৯]: ১১২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اَلتَّاۤىِٕبُوْنَ الْعٰبِدُوْنَ الْحَامِدُوْنَ السَّاۤىِٕحُوْنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحٰفِظُوْنَ لِحُدُوْدِ اللّٰهِ ۗوَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ (التوبة : ٩)
- al-tāibūna
- ٱلتَّٰٓئِبُونَ
- Those who turn in repentance
- (তারা) তওবাকারী
- l-ʿābidūna
- ٱلْعَٰبِدُونَ
- those who worship
- ইবাদতকারী
- l-ḥāmidūna
- ٱلْحَٰمِدُونَ
- those who praise
- (আল্লাহর) প্রশংসাকারী
- l-sāiḥūna
- ٱلسَّٰٓئِحُونَ
- those who go out
- সিয়াম পালনকারী
- l-rākiʿūna
- ٱلرَّٰكِعُونَ
- those who bow down
- রুকুকারী
- l-sājidūna
- ٱلسَّٰجِدُونَ
- those who prostrate
- সিজদাকারী
- l-āmirūna
- ٱلْءَامِرُونَ
- those who enjoin
- নির্দেশদানকারী
- bil-maʿrūfi
- بِٱلْمَعْرُوفِ
- the right
- ব্যাপারে ভালো কাজের
- wal-nāhūna
- وَٱلنَّاهُونَ
- and those who forbid
- ও নিষেধকারী
- ʿani
- عَنِ
- [on]
- হতে
- l-munkari
- ٱلْمُنكَرِ
- the wrong
- মন্দকাজ
- wal-ḥāfiẓūna
- وَٱلْحَٰفِظُونَ
- and those who observe
- এবং সংরক্ষণকারী
- liḥudūdi
- لِحُدُودِ
- (the) limits
- প্রতি সীমারেখার
- l-lahi
- ٱللَّهِۗ
- (of) Allah
- আল্লাহর
- wabashiri
- وَبَشِّرِ
- And give glad tidings
- আর তুমি সুসংবাদ দাও
- l-mu'minīna
- ٱلْمُؤْمِنِينَ
- (to) the believers
- (ঐসব) মু'মিনদেরকে
Transliteration:
At taaa'iboonal 'aabidoonal haamidoonas saaa'ihoonar raaki'oonas saajidoonal aamiroona bilma'roofi wannaahoona 'anil munkari walhaafizoona lihudoodil laah; wa bashshiril mu'mineen(QS. at-Tawbah:112)
English Sahih International:
[Such believers are] the repentant, the worshippers, the praisers [of Allah], the travelers [for His cause], those who bow and prostrate [in prayer], those who enjoin what is right and forbid what is wrong, and those who observe the limits [set by] Allah. And give good tidings to the believers. (QS. At-Tawbah, Ayah ১১২)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তারা অনুশোচনাভরে (আল্লাহর দিকে) প্রত্যাবর্তনকারী, ‘ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোযা পালনকারী, রুকু‘কারী, সাজদাহকারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী, অন্যায় কাজ হতে নিষেধকারী, আল্লাহর নির্ধারিত সীমা সংরক্ষণকারী, কাজেই (এসব) মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও। (আত তাওবাহ, আয়াত ১১২)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তারা হচ্ছে তওবাকারী, ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী, রোযা পালনকারী, রুকু ও সিজদাকারী, সৎকাজে আদেশ এবং মন্দ কাজে বাধা প্রদানকারী, আল্লাহর বিধি-সীমাসমূহের সংরক্ষণকারী।[১] আর তুমি বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও।[২]
[১] এখানে ঐ সকল মু'মিন ব্যক্তিদের আরো কিছু গুণ বর্ণনা করা হচ্ছে, যাদের জান ও মাল আল্লাহ তাআলা জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে তওবাকারী হবে, নিয়মিত আপন প্রভূর ইবাদতকারী হবে, আর মুখে আল্লাহর প্রশংসা বর্ণনাকারী এবং এই আয়াতে বর্ণিত সকল গুণের অধিকারী হবে। অধিকাংশ তফসীরবিদদের মতে سَائحُون এর অর্থ রোযাপালনকারী। এই অর্থকেই ইবনে কাসীর (রহঃ) সহীহ ও প্রসিদ্ধ মত বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। অনেকে তার অর্থ আল্লাহর পথে জিহাদ বলেছেন। এরপরেও 'সিয়াহাত' এর অর্থ দেশ-ভ্রমণ নয় যেমন অনেকে এই অর্থ নিয়েছেন। অনুরূপ ইবাদতের জন্য পাহাড়ের চূড়া, গুহা এবং নির্জন মরুভূমিতে গিয়ে বসবাস করাও এর অর্থ নয়। কারণ তা বৈরাগ্যবাদের একটা অংশ যা ইসলাম ধর্মে নেই। তবে হ্যাঁ, ফিতনার সময় নিজের দ্বীন বাঁচানোর তাগীদে শহর ও জনবসতি ত্যাগ করে জঙ্গল ও মরুভূমিতে গিয়ে বাস করার অনুমতি হাদীসে দেওয়া হয়েছে। (বুখারী)
[২] উদ্দেশ্য হল যে, বিশ্বাসী বা পূর্ণ মু'মিন ঐ ব্যক্তি; যে কথা ও কর্মে ইসলামী শিক্ষার উত্তম নমুনা হয় এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারী নয় বরং তার সংরক্ষণকারী হয়। এরূপ পূর্ণ মু'মিনরাই সুসংবাদের অধিকারী। এটা সেই কথাই, যা কুরআনে (آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَات) শব্দ দ্বারা বার বার উক্ত হয়েছে। এখানে কিছু নেক আমলের কথা কিঞ্চিৎ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
তারা [১] তাওবাহকারী, ‘ইবাদাতকারী, আল্লাহ্র প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী [২] , রুকূ’কারী, সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশদাতা, অসৎকাজের নিষেধকারী এবং আল্লাহ্র নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী [৩]; আর আপনি মুমিনদেরকে শুভ সংবাদ দিন।
[১] এ গুণাবলী হলো সেসব মুমিনের যাদের সম্পর্কে পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে- আল্লাহ্ জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জান-মাল খরিদ করে নিয়েছেন’। আল্লাহ্র রাহে জিহাদকারী সবাই এ আয়াতের মর্মভুক্ত। তবে এখানে যে সমস্ত গুণাবলীর উল্লেখ হয়েছে, তা শর্তরূপে নয়। কারণ, আল্লাহর রাহে কেবল জিহাদের বিনিময়েই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তবে এ গুণাবলী উল্লেখের উদ্দেশ্য এই যে, যারা জান্নাতের উপযুক্ত, তারা এ সকল গুণের অধিকারী হয়। [কুরতুবী]
[২] অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে আয়াতে উল্লেখিত (السائحون) দ্বারা উদ্দেশ্য সাওম পালনকারীগণ। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ ও আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বলেন, কুরআন মাজীদে ব্যবহৃত (سائحون) শব্দের অর্থ রোযাদার। [বাগভী; কুরতুবী] তাছাড়া (سائح) বলে জিহাদকারীদেরকেও বুঝায়। তবে মূল শব্দটি (سياحة) যার অর্থঃ দেশ ভ্রমণ। বিভিন্ন ধর্মের লোক দেশ ভ্রমণকে ইবাদাত মনে করতো। অর্থাৎ মানুষ পরিবার পরিজন ও ঘর-বাড়ী ত্যাগ করে ধর্ম প্রচার করার উদ্দেশ্যে দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াত। ইসলাম একে বৈরাগ্যবাদ বলে অভিহিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে [ইবন কাসীর] এর পরিবর্তে সিয়াম পালনের ইবাদতকে এর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। আবার কতিপয় বর্ণনায় জিহাদকেও দেশ ভ্রমনের অনুরূপ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘আমার উম্মতের দেশভ্রমণ হলো জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ।’ [আবুদাউদ; ২৪৮৬]
[৩] আলোচ্য আয়াতে মুমিন মুজাহিদের আটটি গুণ উল্লেখ করে নবম গুণ হিসেবে বলা হয়েছে “আর আল্লাহর দেয়া সীমারেখার হেফাযতকারী" মূলতঃ এতে রয়েছে উপরোক্ত সাতটি গুণের সমাবেশ অর্থাৎ সাতটি গুণের মধ্যে যে তাফসীল রয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত সার হলো যে, এরা নিজেদের প্রতিটি কর্ম ও কথায় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা তথা শরী’আতের হুকুমের অনুগত ও তার হেফাযতকারী। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
Tafsir Bayaan Foundation
তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজ্দাকারী, সৎকাজের আদেশদাতা, অসৎকাজের নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হেফাযতকারী। আর মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।
Muhiuddin Khan
তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে।
Zohurul Hoque
তওবাকারীরা, উপাসনাকারীরা, মহিমাকীর্তনকারীরা, রোযা পালনকারীরা, রুকুকারীরা, সিজদাকারীরা, সৎকর্মে নিদের্শ- দানকারীরা ও অসৎকর্মে নিষেধকারীরা, এবং আল্লাহ্র চৌহদ্দি রক্ষাকারীরা। আর মুমিনদের তুমি সুসংবাদ দাও।