কুরআন মজীদ সূরা আত তাওবাহ আয়াত ১১
Qur'an Surah At-Tawbah Verse 11
আত তাওবাহ [৯]: ১১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ ۗوَنُفَصِّلُ الْاٰيٰتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ (التوبة : ٩)
- fa-in
- فَإِن
- But if
- অতঃপর যদি
- tābū
- تَابُوا۟
- they repent
- তারা তওবা করে
- wa-aqāmū
- وَأَقَامُوا۟
- and establish
- ও প্রতিষ্ঠা করে
- l-ṣalata
- ٱلصَّلَوٰةَ
- the prayer
- সালাত
- waātawū
- وَءَاتَوُا۟
- and give
- ও আদায় করে
- l-zakata
- ٱلزَّكَوٰةَ
- the zakah
- যাকাত
- fa-ikh'wānukum
- فَإِخْوَٰنُكُمْ
- then (they are) your brothers
- তবে ভাই তোমাদের
- fī
- فِى
- in
- ভিত্তিতে
- l-dīni
- ٱلدِّينِۗ
- [the] religion
- দীনের
- wanufaṣṣilu
- وَنُفَصِّلُ
- And We explain in detail
- এবং বিস্তারিত বর্ণনা করছি আমরা
- l-āyāti
- ٱلْءَايَٰتِ
- the Verses
- বিধানাবলী
- liqawmin
- لِقَوْمٍ
- for a people
- জন্যে সম্প্রদায়ের
- yaʿlamūna
- يَعْلَمُونَ
- (who) know
- (যারা) জ্ঞান রাখে
Transliteration:
Fa in taaboo wa aqaamus Salaata wa aatawuz Zakaata fa ikhwaanukum fid deen; wa nufassilul Aayaati liqawminy ya'lamoon(QS. at-Tawbah:11)
English Sahih International:
But if they repent, establish prayer, and give Zakah, then they are your brothers in religion; and We detail the verses for a people who know. (QS. At-Tawbah, Ayah ১১)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
এখন যদি তারা তাওবাহ করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেদের জন্য আমি স্পষ্ট করে নিদর্শন বলে দিলাম। (আত তাওবাহ, আয়াত ১১)
Tafsir Ahsanul Bayaan
অতঃপর তারা যদি তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত দেয়, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। [১] আর জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শনসমূহ স্পষ্টরূপে বিবৃত করি।
[১] নামায হল তাওহীদ ও রিসালতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার পর ইসলামের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা আল্লাহর হক। তাতে আল্লাহর ইবাদতের বিভিন্ন দিক রয়েছে। এতে রয়েছে হাত বেঁধে কিয়াম, রুকূ ও সিজদা। এতে রয়েছে দু'আ ও মুনাজাত, আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা এবং নিজের মিনতি ও অসহায়তার প্রকাশ। ইবাদতের এই সমস্ত প্রকার ও ধরন কেবল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। নামাযের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও ফরযকৃত রুকন হল যাকাত। যাতে আল্লাহর ইবাদতের সাথে সাথে বান্দারও হক শামিল রয়েছে। যাকাতের অর্থ দ্বারা সমাজের ও বিশেষ করে যাকাতদাতার আত্মীয় গরীব-মিসকীন ও অক্ষম লোকদের প্রয়োজন মিটে থাকে। এই জন্য হাদীসে দুই সাক্ষ্য দানের পর উক্ত দু'টি বিষয়কে পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেছেন, "আমাকে আদেশ করা হয়েছে যে, লোকদের বিরুদ্ধে আমি যেন ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাকি, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষী দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রসূল। আর নামায কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে।" (বুখারী ঈমান অধ্যায়, মুসলিম ঈমান অধ্যায়) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ বলেছেন, 'যে ব্যক্তি যাকাত প্রদান করে না, তার নামাযও গ্রহণযোগ্য নয়।' (ঐ)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
অতএব তারা যদি তাওবাহ্ করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে দ্বীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই [১]; আর আমরা আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে [২]।
[১] মুশরিকদের উপরোক্ত ঘৃণ্য চরিত্রের প্রেক্ষিতে মুসলিমদের জন্যে তাদের সাথে চিরতরে সম্পর্কচ্ছেদ করে নেয়াই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু না কুরআন যে আদর্শ ও ন্যায় নীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তার আলোকে মুসলিমদের হেদায়াত দেয়ঃ “তবে, তারা যদি তাওবাহ করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই"। এখানে বলা হয় যে, কাফেররা যত শক্রতা করুক, যত নিপীড়ন চালাক, যখন সে মুসলিম হয়, তখন আল্লাহ যেমন তাদের কৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করেন, তেমনি সকল তিক্ততা ভুলে তাদের ভ্রাতৃ-বন্ধনে আবদ্ধ করা এবং ভ্রাতৃত্বের সকল দাবী পূরণ করা মুসলিমদের কর্তব্য। এ শর্ত পূরণ করার ফলে তাদের উপর হাত তোলা ও তাদের জান-মাল নষ্ট করাই শুধু তোমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে না, বরং তার অধিক ফায়েদা এই হবে যে, তারা অন্যান্য মুসলিমদের সমান হতে পারবে। কোনরূপ বৈষম্য ও পার্থক্য থাকবে না। এ আয়াত প্রমাণ করে যে, ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথম, কুফর ও শির্ক থেকে তাওবাহ। দ্বিতীয় সালাত কায়েম করা, তৃতীয় যাকাত আদায় করা। আইসারুত তাফসীর কারণ, ঈমান ও তাওবাহ হল গোপন বিষয় এর যথার্থতা সাধারণ মুসলিমের জানার কথা নয়। তাই ঈমান ও তাওবাহর দুই প্রকাশ্য আলামতের উল্লেখ করা হয়, আর তা হল, সালাত ও যাকাত। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ এ আয়াত সকল কেবলানুসারী মুসলিমের রক্তকে হারাম করে দিয়েছে। [তাবারী; ফাতহুল কাদীর] অথাৎ যারা নিয়মিত সালাত কায়েম ও যাকাত আদায় করে এবং ইসলামের বরখেলাফ কথা ও কর্মের প্রমাণ পাওয়া যায় না, সর্বক্ষেত্রে তারা মুসলিমরূপে গণ্য, তাদের অন্তরে সঠিক ঈমান বা মুনাফিকী যাই থাক না কেন। আবু বকর সিদীক রাদিয়াল্লাহু আনহু যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে এ আয়াত থেকে অস্ত্ৰধারনের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে সাহাবায়ে কেরামের সন্দেহ নিরসন করেছিলেন। [তাবারী]
[২] এখানে জ্ঞান সম্পন্ন লোক বলতে তাদের বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহ্র নাফরমানী করার পরিণাম জানে ও বুঝে এবং তার ভয়ও তাদের মনে জাগরুক রয়েছে। তাদের জন্যই আগের কথাগুলো বলা হলো, তাদের মাধ্যমেই আয়াত ও আহকাম জানা যাবে, আর তাদের মাধ্যমেই দ্বীন ইসলাম ও শরীআত জানা যাবে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে তাদের মধ্যে গণ্য করুন যারা জানে ও সে অনুসারে আমল করে [সা’দী]
Tafsir Bayaan Foundation
অতএব যদি তারা তাওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে দীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই। আর আমি আয়াতসমূহ যথাযথভাবে বর্ণনা করি এমন কওমের জন্য যারা জানে।
Muhiuddin Khan
অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে র্বণনা করে থাকি।
Zohurul Hoque
কিন্তু যদি তারা তওবা করে, আর নামায কায়েম করে, আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা ধর্মে তোমাদের ভাই। আর আমরা নির্দেশাবলী বিশদভাবে বিবৃত করি সেই লোকদের জন্য যারা জানে।