কুরআন মজীদ সূরা আত তাওবাহ আয়াত ১০২
Qur'an Surah At-Tawbah Verse 102
আত তাওবাহ [৯]: ১০২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَاٰخَرُوْنَ اعْتَرَفُوْا بِذُنُوْبِهِمْ خَلَطُوْا عَمَلًا صَالِحًا وَّاٰخَرَ سَيِّئًاۗ عَسَى اللّٰهُ اَنْ يَّتُوْبَ عَلَيْهِمْۗ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ (التوبة : ٩)
- waākharūna
- وَءَاخَرُونَ
- And others
- এবং আরো কিছু লোক (আছে)
- iʿ'tarafū
- ٱعْتَرَفُوا۟
- (who have) acknowledged
- তারা স্বীকার করেছে
- bidhunūbihim
- بِذُنُوبِهِمْ
- their sins
- অপরাধ তাদের
- khalaṭū
- خَلَطُوا۟
- They had mixed
- তারা মিশিয়ে ফেলেছে
- ʿamalan
- عَمَلًا
- a deed
- (কিছু) কাজ
- ṣāliḥan
- صَٰلِحًا
- righteous
- ভালো
- waākhara
- وَءَاخَرَ
- (with) other
- ও অন্য কিছু
- sayyi-an
- سَيِّئًا
- (that was) evil
- (কাজ) মন্দ
- ʿasā
- عَسَى
- Perhaps
- আশা করা যায়
- l-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah
- আল্লাহ
- an
- أَن
- [that]
- যে
- yatūba
- يَتُوبَ
- will turn (in mercy)
- ক্ষমা করবেন
- ʿalayhim
- عَلَيْهِمْۚ
- to them
- প্রতি তাদের
- inna
- إِنَّ
- Indeed
- নিশ্চয়ই
- l-laha
- ٱللَّهَ
- Allah
- আল্লাহ
- ghafūrun
- غَفُورٌ
- (is) Oft-Forgiving
- ক্ষমাশীল
- raḥīmun
- رَّحِيمٌ
- Most Merciful
- পরম দয়ালু
Transliteration:
Wa aakharoona' tarafoo bizunoobihim khalatoo 'amalan saalihanw wa aakhara saiyi'an 'asal laahu ai yatooba 'alaihim; innal laaha Ghafoorur Raheem(QS. at-Tawbah:102)
English Sahih International:
And [there are] others who have acknowledged their sins. They had mixed [i.e., polluted] a righteous deed with another that was bad. Perhaps Allah will turn to them in forgiveness. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful. (QS. At-Tawbah, Ayah ১০২)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর অন্য কতক লোক তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে, তারা একটি সৎ কাজের সাথে আরেকটি মন্দ কাজকে মিশ্রিত করেছে, আশা করা যায় আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন, অবশ্যই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু। (আত তাওবাহ, আয়াত ১০২)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আরো কতক লোক আছে যারা নিজেদের অপরাধসমূহ স্বীকার করেছে,[১] যারা সৎকর্মের সাথে অসৎকর্ম মিশ্রিত করেছে।[২] আশা রয়েছে যে, আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন।[৩] নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
[১] এরা সেই সকল একনিষ্ঠ মুসলিম, যারা কোন ওজর আপত্তি ছাড়াই শুধু শৈথিল্যের কারণে তাবুক অভিযানে নবী (সাঃ)-এর সাথে শরীক হয়নি। তবে পরে তারা আপন ভুল বুঝতে পারে এবং তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করে নেয়।
[২] 'সৎকর্ম' বলতে ঐ সকল নেক আমল, যা তারা জিহাদে না যাওয়ার পূর্বে করেছিল। এর ভিতর কিছু যুদ্ধে তাদের অংশ গ্রহণের আমলও ছিল। আর 'অসৎকর্ম' থেকে উদ্দেশ্য হল তাবুকের যুদ্ধে তাদের পিছিয়ে থাকা।
[৩] আল্লাহর পক্ষ থেকে আশা ও সম্ভাবনার অর্থই হল, তা নিশ্চিত। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাদের দিকে ফিরে তাকিয়ে তাদের অপরাধের স্বীকারোক্তিকে তওবার স্থানে রেখে তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর অপর কিছু লোক আছে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে, তারা এক সৎকাজের সাথে অন্য অসৎকাজ মিশিয়ে ফেলেছে; আল্লাহ্ হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করবেন [১]; নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[১] যে দশজন মুমিন বিনা ওযরে তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণে বিরত ছিলেন তাঁদের সাত জন মসজিদের খুঁটির সাথে নিজেদের বেঁধে নিয়ে মনের অনুতাপ অনুশোচনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এদের উল্লেখ রয়েছে এ আয়াতে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, দশজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এদের মধ্যে সাতজন নিজেদেরকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রেখেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে এসে জিজ্ঞেস করলেন, এরা কারা, যারা নিজেদেরকে খুঁটির সাথে বেঁধেছে? সাহাবায়ে কিরাম বললেন, এরা আবু লুবাবা ও তার কিছু সার্থী। যারা আপনার সাথে যাওয়া থেকে পিছনে ছিল। তারা নিজেদেরকে নিজেরা বেঁধে নিয়েছে এ বলে যে, যে পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে আমাদের বাঁধন খুলে দিবেন এবং আমাদের ওযর কবুল করবেন, ততক্ষণ আমাদেরকে যেন কেউ না খুলে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমিও তাদের বাঁধন খুলব না, তাদের ওযর গ্রহণ করবো না, যতক্ষণ না আল্লাহ নিজেই তাদের ছেড়ে দেন বা ওযর গ্রহণ করেন। তারা আমার থেকে বিমুখ ছিল, মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করতে যায়নি। যখন তাদের কাছে এ কথা পৌছল তারাও বলল, আমরাও আল্লাহর শপথ নিজেদেরকে ছাড়িয়ে নেব না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা না করেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছে লোক পাঠিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ] ঘটনা যদিও সুনির্দিষ্ট তথাপি এর দাবী ব্যাপক। যারাই ভাল ও মন্দ আমলের মধ্যে সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই এ আয়াত প্রযোজ্য। যেমন হাদীসে এসেছে, সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, গত রাত্রে আমার কাছে দুজন এসেছেন, তারা আমাকে উঠালেন, তারপর আমাকে নিয়ে এমন এক নগরীতে নিয়ে গেলেন যার একটি ইট স্বর্ণের অপরটি রৌপ্যের। সেখানে আমরা কিছু লোক দেখলাম, যাদের শরীরের একাংশ এত সুন্দর যত সুন্দর তুমি মনে করতে পার। আর অপর অংশ এত বিশ্রী যত বিশ্রী তুমি মনে করতে পার। তারা দু'জন তাদেরকে বলল, তোমরা ঐ নালাতে গিয়ে পতিত হও। তারা সেখানে পড়ল। তারপর যখন তারা আমাদের কাছে আসল, দেখলাম যে, তাদের খারাপ অংশ চলে গেছে, অতঃপর ভীষণ সুন্দর হয়ে গেছে। তারা দু’জন আমাকে বলল, এটা হলো জান্নাতে আদন। আর ওখানেই আপনার স্থান। তারা দু’জন বলল, আর যাদেরকে আপনি অর্ধেক সুন্দর আর বাকী অর্ধেক বিশ্রী দেখেছেন, তারা হচ্ছেন, যারা এক সৎকাজের সাথে অন্য অসৎকাজ মিশিয়ে ফেলেছে।' [বুখারী ৪৬৭৪]
Tafsir Bayaan Foundation
আর অন্য কিছু লোক তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে, সৎকর্মের সঙ্গে তারা অসৎকর্মের মিশ্রণ ঘটিয়েছে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাদের তাওবা কবূল করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Muhiuddin Khan
আর কোন কোন লোক রয়েছে যারা নিজেদের পাপ স্বীকার করেছে, তারা মিশ্রিত করেছে একটি নেককাজ ও অন্য একটি বদকাজ। শীঘ্রই আল্লাহ হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। নিঃঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।
Zohurul Hoque
আর অন্যরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে, তারা এক ভালো কাজের সাথে মন্দ অপরটি মিশিয়ে ফেলেছে। হতে পারে আল্লাহ্ তাদের দিকে ফিরবেন। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।