কুরআন মজীদ সূরা আত তাওবাহ আয়াত ১০০
Qur'an Surah At-Tawbah Verse 100
আত তাওবাহ [৯]: ১০০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَالسّٰبِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهٰجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍۙ رَّضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَاَعَدَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ تَحْتَهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَآ اَبَدًا ۗذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ (التوبة : ٩)
- wal-sābiqūna
- وَٱلسَّٰبِقُونَ
- And the forerunners
- ও অগ্রগামীরা
- l-awalūna
- ٱلْأَوَّلُونَ
- the first
- প্রথম
- mina
- مِنَ
- among
- মধ্য হতে
- l-muhājirīna
- ٱلْمُهَٰجِرِينَ
- the emigrants
- মুহাজেরদের
- wal-anṣāri
- وَٱلْأَنصَارِ
- and the helpers
- ও আনসারদের
- wa-alladhīna
- وَٱلَّذِينَ
- and those who
- ও যারা
- ittabaʿūhum
- ٱتَّبَعُوهُم
- followed them
- অনুসরণ করেছে তাদের
- bi-iḥ'sānin
- بِإِحْسَٰنٍ
- in righteousness
- সাথে সততার
- raḍiya
- رَّضِىَ
- Allah is pleased
- সন্তুষ্ট হয়েছেন
- l-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah is pleased
- আল্লাহ
- ʿanhum
- عَنْهُمْ
- with them
- উপর তাদের
- waraḍū
- وَرَضُوا۟
- and they are pleased
- ও তারা খুশি হয়েছে
- ʿanhu
- عَنْهُ
- with Him
- উপর তাঁর
- wa-aʿadda
- وَأَعَدَّ
- And He has prepared
- ও প্রস্তুত করে তিনি রেখেছেন
- lahum
- لَهُمْ
- for them
- জন্যে তাদের
- jannātin
- جَنَّٰتٍ
- Gardens
- জান্নাত
- tajrī
- تَجْرِى
- flows
- প্রবাহিত হয়
- taḥtahā
- تَحْتَهَا
- underneath it
- নিচে তার
- l-anhāru
- ٱلْأَنْهَٰرُ
- the rivers
- ঝর্নাধারা
- khālidīna
- خَٰلِدِينَ
- will abide
- তারা স্হায়ী হবে
- fīhā
- فِيهَآ
- in it
- মধ্যে তার
- abadan
- أَبَدًاۚ
- forever
- চিরকাল
- dhālika
- ذَٰلِكَ
- That
- এটাই
- l-fawzu
- ٱلْفَوْزُ
- (is) the success
- সফলতা
- l-ʿaẓīmu
- ٱلْعَظِيمُ
- the great
- মহা
Transliteration:
Was saabiqoonal awwa loona minal Muhaajireena wal Ansaari wallazeenat taba'oo hum bi ihsaanir radiyal laahu 'anhum wa radoo 'anhu wa a'adda lahum jannnaatin tajree tahtahal anhaaru khaalideena feehaaa abadaa; zaalikal fawzul 'azeem(QS. at-Tawbah:100)
English Sahih International:
And the first forerunners [in the faith] among the Muhajireen and the Ansar and those who followed them with good conduct – Allah is pleased with them and they are pleased with Him, and He has prepared for them gardens beneath which rivers flow, wherein they will abide forever. That is the great attainment. (QS. At-Tawbah, Ayah ১০০)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী আর যারা তাদেরকে যাবতীয় সৎকর্মে অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তাদের জন্য তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হল মহান সফলতা। (আত তাওবাহ, আয়াত ১০০)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আর যেসব মুহাজির ও আনসার (ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যেসব লোক সরল অন্তরে তাদের অনুগামী,[১] আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁতে সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য এমন উদ্যানসমূহ প্রস্ত্তত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নদীমালা প্রবাহিত; যার মধ্যে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে,[২] এ হল বিরাট সফলতা।
[১] এই আয়াতে তিন শ্রেণীর লোকের বর্ণনা বিদ্যমান। প্রথমঃ মুহাজিরগণ, যাঁরা দ্বীনের খাতিরে আল্লাহ ও রসূলের আদেশ পালনার্থে মক্কা ও অন্যান্য এলাকা থেকে হিজরত করতঃ সকল কিছু ত্যাগ করে মদীনায় চলে যান। দ্বিতীয়ঃ আনসারগণ, এঁরা মদীনার অধিবাসী ছিলেন। এঁরা সর্বাবস্থায় রসূল (সাঃ)-এর সাহায্য ও সুরক্ষা বিধান করেছিলেন এবং মদীনায় আগত মুহাজিরদের যথাযথ সম্মান করেছিলেন এবং নিজেদের সবকিছু তাদের খিদমতে কুরবান করে দিয়েছিলেন। এখানে সেই উভয় শ্রেণীর 'আস্-সাবিক্বূনাল আওয়ালূন' (অগ্রবর্তী ও প্রথম) ব্যক্তিবর্গের কথা বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ সেই উভয় শ্রেণীর মধ্যে ঐ সকল ব্যক্তি যাঁরা সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। এরা কারা ছিলেন তা নির্ধারণ করণে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকের নিকট 'আস্-সাবিক্বূনাল আওয়ালূন' তাঁরা, যাঁরা উভয় ক্বিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়েছেন। অর্থাৎ ক্বিবলা পরিবর্তন হওয়ার পূর্বে যে সমস্ত মুহাজির ও আনস্বারগণ মুসলমান হয়েছিলেন তাঁরা। আবার অনেকের নিকট 'আস্-সাবিক্বূনাল আওয়ালূন' ঐ সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম, যাঁরা হুদাইবিয়ায় অনুষ্ঠিত বাইআতে-রিযওয়ানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আবার অনেকের নিকট ওঁরা হলেন তাঁরা, যাঁরা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইমাম শওকানী (রহঃ) বলেন, সকল অভিমতই সঠিক হতে পারে। তৃতীয়ঃ- ঐ সকল ব্যক্তি, যাঁরা একনিষ্ঠভাবে সেই মুহাজির ও আনস্বারদের অনুগামী ছিলেন। কেউ কেউ বলেন,তাঁরা হলেন পারিভাষিক অর্থে তাবেয়ীগণ, যাঁরা নবী (সাঃ)-এর দর্শন লাভ করতে পারেননি, কিন্তু সাহাবায়ে কিরামগণের সাথী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। আবার কেউ কেউ তা সাধারণ রেখেছেন, অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত যে সকল মুসলিম মুহাজির ও আনস্বারদের সাথে মহব্বত রাখবেন ও তাঁদের আদর্শের উপর চলবেন, তাঁরা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এতে পারিভাষিক অর্থে তাবেয়ীগণও এসে যাচ্ছেন।
[২] 'আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট' বাক্যটির অর্থ হল, আল্লাহ তাআলা তাঁদের সৎকর্ম গ্রহণ করেছেন, মানুষ হিসাবে তাঁদের কৃত ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তিনি তাঁদের উপর অসন্তুষ্ট নন। যদি তা না হত, তাহলে উক্ত আয়াতে তাঁদের জন্য জান্নাত ও জান্নাতের নিয়ামতের সুসংবাদ দেওয়া হল কেন? এই আয়াত দ্বারা এটাও জানা গেল যে, আল্লাহর এই সন্তুষ্টি সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী নয়, বরং চিরস্থায়ী। যদি রসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর সাহাবায়ে কিরামগণের মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত (যেমন এক বাতিল ফির্কার বিশ্বাস আছে), তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন না। এ থেকে এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, যখন আল্লাহ তাআলা তাঁদের সমস্ত ত্রুটি মার্জনা করে দিয়েছেন, তখন তাঁদের সমালোচনা করে তাঁদের ভুল-ত্রুটি বর্ণনা করা কোন মুসলিমের উচিত নয়। বস্তুতঃ এটাও জানা গেল যে, তাঁদের প্রতি মহব্বত রাখা এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কারণ। আর তাঁদের প্রতি শত্রুতা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষণ করা আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। {فَأَيُّ الْفَرِيقَيْنِ أَحَقُّ بِالأَمْنِ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ}
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী [১] এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে [২] আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন [৩]। আর তিনি তাদের জন্য তৈরী করেছেন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য।
[১] এ আয়াতে সাহাবাদের প্রশংসায় আল্লাহ্ তা'আলা “সাবেকীন আওয়ালীন" বা ‘প্রথম অগ্রগামী’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এ “সাবেকীন আওয়ালীন কারা তা নির্ধারণে বিভিন্ন মত পরিলক্ষিত হয়।
ক) কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ আয়াতে “সাবেকীন আওয়ালীন" এর পরে
(مِنَ الۡمُهٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ)
বাক্যে ব্যবহৃত (مِنْ) অব্যয়টি কারো কারো মতে (تبعيض) বা কিছু সংখ্যক বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ তাফসীর অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরামের দুটি শ্রেণী সাব্যস্ত হয়েছে। একটি হল সাবেকীনে আওয়ালীনের, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কেবলা পরিবর্তন কিংবা বদরযুদ্ধ অথবা বাইআতে রেদওয়ান অথবা মক্কা বিজয়ের পরে যারা মুসলিম হয়েছে তারা সবাই। তখন সাহাবাগণ দু’শ্রেণীতে বিভক্ত হবেন,
এক) মুহাজেরীন ও আনসারদের মধ্যে যারা “সাবেকীন আওয়ালীন” বা ঈমান গ্রহণে ও হিজরতে অগ্রবর্তী।
দুই) অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম। এ তাফসীর অনুসারে সাহাবাদের মধ্যে কারা “সাবেকীন আওয়ালীন’ বলে গণ্য হবেন এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি মত রয়েছেঃ
১) কোন কোন মনীষী সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে "সাবেকীন আওয়ালীন তাদেরকেই সাব্যস্ত করেছেন, যারা উভয় কেবল অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাস ও কাবার দিকে মুখ করে সালাত পড়েছেন। অর্থাৎ যারা কেবল পরিবর্তনের পূর্বে মুসলিম হয়েছে তাদেরকে “সাবেকীন আওয়ালীন" গণ্য করেছেন। এমনটি হল সাঈদ ইবন মুসাইয়োব ও কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু— এর মত [কুরতুবী]
২) আতা ইবন আবী রাবাহ বলেছেন যে, সাবেকীনে আওয়ালীন হলেন সে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। [কুরতুবী]
৩) ইমাম শা'বী রাহিমাহুল্লাহ এর মতে যেসব সাহাবী হুদায়বিয়ার বাইয়াতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারাই সাবেকীন আওয়ালীন। [কুরতুবী] লক্ষণীয় যে, সবার নিকটই যারা কিবলা পরিবর্তনের আগে হিজরত করেছেন তারা নিঃসন্দেহে সাবেকীন আওয়ালীন। আর যারাই বাই’আতে রিদওয়ান তথা হুদায়বিয়ার পরে হিজরত করেছেন তারা সবার মত অনুযায়ীই মুহাজির হোক বা আনসার সাবেকীনে আওয়ালীনের পর দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত। তবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হচ্ছে যে, হুদাইবিয়ার সন্ধির আগে যারা হিজরত করেছে তারা সবাই সাবেকীনে আওয়ালীন। [ইবন তাইমিয়্যাহ, মিনহাজুস সুন্নাহ; ১/১৫৪-১৫৫]
খ) কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ আয়াতে (مِنْ) অব্যয়টি আংশিক বুঝাবার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়নি বরং বিবরণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। তখন এর মর্ম হবে এই যে, সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম অন্যান্য সমস্ত উম্মতের তুলনায় সাবেকীনে আওয়ালীন। এ তাফসীরের মর্ম হল এই যে, সাহাবায়ে কেরামই হলেন মুসলিমদের মধ্যে সাবেকীনে আওয়ালীন। কারণ, ঈমান আনার ক্ষেত্রে তাঁরাই সমগ্র উম্মতের অগ্রবতী ও প্রথম। পরবর্তী কিয়ামত পর্যন্ত সবাই তাবেয়ীন বা তাদের অনুসারী [ফাতহুল কাদীর]
[২] অর্থাৎ যারা আমল ও চরিত্রের ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে অগ্রবর্তী মুসলিমদের অনুসরণ করেছে পরিপূর্ণভাবে। উপরোক্ত প্রথম তফসীর অনুযায়ী যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে বলে হুদায়বিয়ার সন্ধি পরবতী সে সমস্ত সাহাবা এবং মুসলিম, যারা কেয়ামত অবধি ঈমান গ্রহণ, সৎকর্ম ও সচ্চরিত্রের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের উপর চলবে এবং পরিপূর্ণভাবে তাদের অনুসরণ করবে। [কুরতুবী] আর উপরোক্ত দ্বিতীয় তফসীর অনুযায়ী এর দ্বারা সাহাবায়ে কেরামের পরবর্তী মুসলিমগণ অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে পারিভাষিকভাবে তাবেয়ী' বলা হয়। এরপর পরিভাষাগত এই তাবেয়ীগণের পর কেয়ামত অবধি আগত সে সমস্ত মুসলিমও এর অন্তর্ভুক্ত যারা ঈমান ও সৎকর্মের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে সাহাবায়ে কেরামের আনুগত্য ও অনুসরণ করবে। [ফাতহুল কাদীর]
[৩] সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। যদি দুনিয়াতে তাদের কারো দ্বারা কোন ক্রটি বিচ্যুতি হয়েও থাকে তবুও। এর প্রমাণ হলো কুরআন কারীমের এ আয়াত। এতে শর্তহীনভাবে সমস্ত সাহাবা সম্পর্কেই বলা হয়েছে যে,
(رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ)
অবশ্য তাবেয়ীনদের ব্যাপারে বলেছেনঃ
(وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡهُمۡ بِاِحۡسَانٍ)
“যারা সুন্দরভাবে তাদের অনুসরণ করেছে"। সুতরাং তাবেয়ীনদের ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের পরিপূর্ণ সুন্দর অনুসরণের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবায়ে কেরামের সবাই কোন রকম শর্তাশর্ত ছাড়াই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিধন্য। এ ব্যাপারে আরও প্রমাণ হলো, আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
(لَقَدۡ رَضِیَ اللّٰہُ عَنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ یُبَایِعُوۡنَکَ تَحۡتَ الشَّجَرَۃِ)
অবশ্যই আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন মুমিনদের থেকে, যখন তারা গাছের নীচে আপনার হাতে বাই’আত হচ্ছিল”। [সূরা আল-ফাতহঃ ১৮]। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা'আলা সূরা মুজাদালাহর ২২ নং আয়াতেও সাহাবাদের প্রশংসা করে তাদের উপর সন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও সাহাবায়ে কেরামের জান্নাতী হওয়ার ব্যাপারে আরো স্পষ্ট দলীলের মধ্যে রুয়েছে , আল্লাহ্র বাণীঃ
( لَا یَسۡتَوِی الۡقٰعِدُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ غَیۡرُ اُولِی الضَّرَرِ وَ الۡمُجٰهِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِاَمۡوَالِهِمۡ وَ اَنۡفُسِهِمۡ ؕ فَضَّلَ اللّٰہُ الۡمُجٰهِدِیۡنَ بِاَمۡوَالِهِمۡ وَ اَنۡفُسِهِمۡ عَلَی الۡقٰعِدِیۡنَ دَرَجَةً ؕ وَ کُلًّا وَّعَدَ اللّٰہُ الۡحُسۡنٰی)
মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধনপ্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; তাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ হুসনা’ বা সবচেয়ে ভাল পরিণামের ওয়াদা করেছেন”। [সূরা আন-নিসাঃ ৯৫]। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র আরো বলেনঃ
(لَا یَسۡتَوِیۡ مِنۡکُمۡ مَّنۡ اَنۡفَقَ مِنۡ قَبۡلِ الۡفَتۡحِ وَ قٰتَلَ ؕ اُولٰٓئِکَ اَعۡظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِیۡنَ اَنۡفَقُوۡا مِنۡۢ بَعۡدُ وَ قٰتَلُوۡا ؕ وَ کُلًّا وَّعَدَ اللّٰہُ الۡحُسۡنٰی)
“তোমাদের মধ্যে যারা ফাতহ তথা হুদায়বিয়ার সন্ধির আগে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে, তারা এবং পরবর্তীরা সমান নয়। তারা মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ ওদের চেয়ে, যারা পরবর্তী কালে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়ের জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। [সূরা আল-হাদীদঃ ১০]। এতে বিস্তারিত এভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, সাহাবায়ে কেরাম প্রাথমিক পর্যায়ের হোন কিংবা পরবতী পর্যায়ের, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁদের সবার জন্যই জান্নাতের ওয়াদা করেছেন।
Tafsir Bayaan Foundation
আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য।
Muhiuddin Khan
আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।
Zohurul Hoque
আর মুহাজিরদের ও আনসারদের মধ্যের অগ্রবর্তীরা -- প্রাথমিকরা, আর যারা তাদের অনুসরণ করেছিল কল্যাণকর্মের সাথে -- আল্লাহ্ তাদের উপরে সন্তষ্ট আর তারাও সন্তষ্ট তাঁর উপরে; আর তাদের জন্য তিনি প্রস্তুত করেছেন স্বর্গোদ্যানসমূহ, যাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলে ঝরনারাজি, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল, -- এই হচ্ছে মহাসাফল্য।