Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আত তাওবাহ আয়াত ১

Qur'an Surah At-Tawbah Verse 1

আত তাওবাহ [৯]: ১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

بَرَاۤءَةٌ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُوْلِهٖٓ اِلَى الَّذِيْنَ عَاهَدْتُّمْ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَۗ (التوبة : ٩)

barāatun
بَرَآءَةٌ
Freedom from obligations
সম্পর্কচ্ছেদ (ঘোষণা)
mina
مِّنَ
from
পক্ষ হতে
l-lahi
ٱللَّهِ
Allah
আল্লাহর
warasūlihi
وَرَسُولِهِۦٓ
and His Messenger
ও রাসূলের তাঁর
ilā
إِلَى
to
প্রতি
alladhīna
ٱلَّذِينَ
those (with) whom
তাদের (যাদের সাথে)
ʿāhadttum
عَٰهَدتُّم
you made a treaty
চুক্তি করেছিলে তোমরা
mina
مِّنَ
from
মধ্য হতে
l-mush'rikīna
ٱلْمُشْرِكِينَ
the polytheists
মুশরিকদের

Transliteration:

Baraaa'atum minal laahi wa Rasooliheee ilal lazeena 'anhattum minal mushrikeen (QS. at-Tawbah:1)

English Sahih International:

[This is a declaration of] disassociation, from Allah and His Messenger, to those with whom you had made a treaty among the polytheists. (QS. At-Tawbah, Ayah ১)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

মুশরিকদের মধ্যেকার যাদের সঙ্গে তোমরা সন্ধিচুক্তি করেছিলে তাদের সাথে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হতে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হল। (আত তাওবাহ, আয়াত ১)

Tafsir Ahsanul Bayaan

তোমরা যে অংশীবাদীদের সাথে সন্ধি স্থাপন করেছিলে, আল্লাহ ও রসূলের পক্ষ হতে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হল। [১]

[১] মক্কা বিজয়ের পর ৯ হিজরীতে রসূল (সাঃ) আবু বাকর, আলী এবং অন্যান্য সাহাবা (রাঃ)গণকে কুরআনের এই আয়াতসমূহ ও বিধান দিয়ে মক্কা পাঠালেন, যাতে তাঁরা তা প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করে দেন। তাঁরা নবীর আদেশ মোতাবেক ঘোষণা করলেন যে, কোন ব্যক্তি উলঙ্গ হয়ে কা'বা ঘরের তাওয়াফ করবে না। বরং আগামী বছর থেকে কোন মুশরিককে বাইতুল্লাহর হজ্জের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে না। (বুখারীঃ নামায ও হজ্জ অধ্যায়, মুসলিমঃ হজ্জ অধ্যায়)

Tafsir Abu Bakr Zakaria

এটা সম্পর্কচ্ছেদ আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে, সে সব মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা পারস্পারিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে [১]

সূরা সংক্রান্ত আলোচনাঃ

সূরা নাযিল হওয়ার স্থানঃ

সূরাটি সর্বসম্মতভাবে মাদানী সূরা। বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ সূরা বারা’আত সবশেষে অবতীর্ণ সূরা। [বুখারীঃ ৪৬৫৪, মুসলিমঃ ১৬১৮]

আয়াত সংখ্যাঃ ১২৯।

সূরার নামকরণঃ

তাফসীরে এ সূরার ১৩ টি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে বিখ্যাত হলোঃ সূরা আত-তাওবাহ, সূরা আল-বারাআহ বা বারাআত। বরাআত বলা হয় এ জন্য যে, এতে কাফেরদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও তাদের ব্যাপারে দায়িত্ব মুক্তির উল্লেখ রয়েছে। আর "তাওবাহ’ বলা হয় এজন্য যে, এতে মুসলিমদের তাওবাহ কবুল হওয়ার বর্ণনা রয়েছে। এ ছাড়াও এ সূরার আরও কয়েকটি নাম উল্লেখ করা হয়, যেমন- সূরা আল-ফাদিহা বা গোপন বিষয় প্রকাশ করে লজ্জা দিয়ে মাথা হেটকারী। [বুখারীঃ ৪৮৮২, মুসলিমঃ ৩০৩১, মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৩২৭৪] এ সূরার আরেক নামঃ সূরা আল-আযাব। এ ছাড়াও এ সূরার অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে, ‘আল মুকাশকেশাহ’ ‘আল বুহুস’ ‘আল-মুনাক্কেরাহ’ ‘আল মুনাক্কিলাহ’ ‘আল মুশাররিদাহ’। পরবর্তী নামগুলোর অধিকাংশই মুনাফেকদের অবস্থা বর্ণনাকারী। [আসমাউ সুওয়ারিল কুরআন ]

সূরাটির প্রথমে বিসমিল্লাহ পড়া না পড়ার হুকুমঃ

সূরাটির একটি বৈশিষ্ট্য হল, কুরআন মজীদে এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখা হয় না, অথচ অন্যান্য সকল সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখা হয়। কুরআন সংগ্রাহক উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় শাসনামলে যখন কুরআনকে গ্রন্থের রূপ দেন, তখন অন্যান্য সূরার মত করে সূরা তাওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ' লিখা হয়নি। ইবনে আব্বাস বলেন, আমি উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলাম, কি কারণে আপনারা আল-আনফালকে মাসানী বা শতের চেয়েও ছোট হওয়া সত্বেও সূরা বারাআত এর সাথে রাখলেন, অথচ বারাআত হচ্ছে, শত আয়াত সম্পন্ন সূরা? আবার এ দু’সূরার মাঝখানে কেনইবা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লাইনটি লিখলেন না? তারপরও সেটাকে লম্বা সাতটি সূরার অন্তর্ভুক্ত কেন করলেন? তখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কুরআনে মজীদ বিভিন্ন সময় ধরে অল্প অল্প করে নাযিল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন আয়াত নাযিল হত, তখনই যারা ওহী লিখত তাদের কাউকে ডেকে বলতেন, এটাকে ঐ সূরার মধ্যে সন্নিবেশিত করে দিবে যাতে অমুক অমুক বিষয় লিখা আছে। সুতরাং যখনই কোন সূরা নাযিল হত, তখনই তিনি তাদেরকে বলতেন, এটাকে অমুক অমুক বিষয় যে সূরায় আলোচনা আছে তোমরা সেখানে স্থান দাও। আর সূরা আল-আনফাল ছিল মদীনায় নাযিল হওয়া প্রাথমিক সূরাগুলোর অন্যতম ৷ পক্ষান্তরে বারাআত ছিল কুরআনের শেষে নাযিল হওয়া সূরা। কিন্তু এ দুটির ঘটনা একই ধরনের। তাই আমি মনে করেছি যে, এটা পূর্বের সূরারই অংশ। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়। অথচ তিনি আমাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দেননি যে, এটি পূর্বের সূরার অংশ। এজন্যই আমি এ দু'টিকে একসাথে লিখেছি এবং এ দু’য়ের মাঝখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লিখিনি। তারপর সেটাকে প্রাথমিক সাতটি লম্বা সূরার মধ্যে স্থান দিলাম। [তিরমিযী ৩০৮৬; মুসনাদে আহমাদ ১/৫৭; আবু দাউদ; ৭৮৬; নাসায়ী ফিল কুবরা ৮০০৭; মুস্তাদরাকে হাকিম; ২/৩৩০]

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অপর একটি বর্ণনায় সূরা তাওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ না লেখার কারণ দর্শানো হয় যে, বিসমিল্লাহতে আছে শান্তি ও নিরাপত্তার পয়গম, কিন্তু সূরা তাওবায় কাফেরদের জন্যে শান্তি ও নিরাপত্তা চুক্তিগুলো নাকচ করে দেয়া হয়। [কুরতুবী আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

---------------

[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবম হিজরীতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠালেন। তিনি কুরবানীর দিন এগুলোকে মানুষের মধ্যে ঘোষণা করলেন। এর সাথে আরও ঘোষণা ছিল যে, এরপর আর কোন লোক উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করবে না। কোন মুশরিক হজ করবে না। মুমিন ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না। এভাবে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা বলতেন, যখন অপারগ হতেন, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন। [ইবন কাসীর]


Tafsir Bayaan Foundation

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা সে সব লোকের প্রতি মুশরিকদের মধ্য থেকে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।

*সাধারণ নিয়ম অনুসারে অন্য সূরা হতে পৃথক করার জন্য সূরার প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ লিপিবদ্ধ করার কথা। কিন্তু এই সূরায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহা লিখেননি এবং এই সূরা কোন্ সূরার অংশ তাও বলেননি। সুতরাং মাসহাফ-ই উসমানীতেও (তৃতীয় খলীফা উসমান (রাঃ) কর্তৃক প্রকাশিত কুরআন) এর প্ররাম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ লিখা হয়নি। সূরা আনফালের পূর্বে অবতীর্ণ হওয়ায় উহা এর পূর্বে সন্নিবিষ্ট হয়েছে। সূরাটি আনফালের সাথে পঠিত হলে এর পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করতে হয়না, অন্যথায় পাঠ করতে হয়। সূরাটির আর একটি নাম ‘বারাআ’। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত তরজমা কুরআনুল কারীম দ্রষ্টব্য)

Muhiuddin Khan

সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।

Zohurul Hoque

এক অব্যাহতি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের তরফ থেকে সেইসব বহুখোদাবাদীদের প্রতি যাদের সঙ্গে তোমরা সন্ধি করেছিলে।