Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল-আনফাল আয়াত ৭৫

Qur'an Surah Al-Anfal Verse 75

আল-আনফাল [৮]: ৭৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْۢ بَعْدُ وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا مَعَكُمْ فَاُولٰۤىِٕكَ مِنْكُمْۗ وَاُولُوا الْاَرْحَامِ بَعْضُهُمْ اَوْلٰى بِبَعْضٍ فِيْ كِتٰبِ اللّٰهِ ۗاِنَّ اللّٰهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ ࣖ (الأنفال : ٨)

wa-alladhīna
وَٱلَّذِينَ
And those who
এবং যারা
āmanū
ءَامَنُوا۟
believed
ঈমান এনেছে
min
مِنۢ
from
থেকে
baʿdu
بَعْدُ
afterwards
পর
wahājarū
وَهَاجَرُوا۟
and emigrated
এবং হিজরত করেছে
wajāhadū
وَجَٰهَدُوا۟
and strove hard
ও জিহাদ করেছে
maʿakum
مَعَكُمْ
with you
সাথে তোমাদের
fa-ulāika
فَأُو۟لَٰٓئِكَ
then those
তবে ঐসবলোকও
minkum
مِنكُمْۚ
(are) of you
অন্তর্ভুক্ত তোমাদের
wa-ulū
وَأُو۟لُوا۟
But those
এবং সম্পন্নরা
l-arḥāmi
ٱلْأَرْحَامِ
(of) blood relationship
গর্ভ
baʿḍuhum
بَعْضُهُمْ
some of them
একে তাদের
awlā
أَوْلَىٰ
(are) nearer
অধিক অধিকারী
bibaʿḍin
بِبَعْضٍ
to another
ক্ষেত্রে অপরের
فِى
in
অনুযায়ী
kitābi
كِتَٰبِ
(the) Book
বিধান
l-lahi
ٱللَّهِۗ
(of) Allah
আল্লাহর
inna
إِنَّ
Indeed
নিশ্চয়ই
l-laha
ٱللَّهَ
Allah
আল্লাহ
bikulli
بِكُلِّ
of every
সম্পর্কে সব
shayin
شَىْءٍ
thing
কিছুরই
ʿalīmun
عَلِيمٌۢ
(is) All-Knower
খুব অবহিত

Transliteration:

Wallazeena aamanoo mim ba'du wa haajaroo wa jaahadoo ma;akum faulaaa'ika minkum; wa ulul arhaami baduhum awlaa biba'din fee Kitaabil laah; innal laaha bikulli shai'in 'Aleem (QS. al-ʾAnfāl:75)

English Sahih International:

And those who believed after [the initial emigration] and emigrated and fought with you – they are of you. But those of [blood] relationship are more entitled [to inheritance] in the decree of Allah. Indeed, Allah is Knowing of all things. (QS. Al-Anfal, Ayah ৭৫)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরাত করেছে আর তোমাদের সাথে মিলিত হয়ে জিহাদ করেছে, এসব লোক তোমাদেরই মধ্যে গণ্য। কিন্তু আল্লাহর বিধানে রক্ত সম্পর্কীয়গণ পরস্পর পরস্পরের নিকট অগ্রগণ্য। আল্লাহ সকল বিষয়ে সবচেয়ে বেশী অবগত। (আল-আনফাল, আয়াত ৭৫)

Tafsir Ahsanul Bayaan

যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে ও তোমাদের সঙ্গে থেকে জিহাদ করেছে, তারাও তোমাদের অন্তর্ভুক্ত।[১] আর আল্লাহর বিধানে নিকটাত্মীয়গণ একে অন্যের (অন্য অপেক্ষা) অধিক হকদার।[২] নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।

[১] এটা এক চতুর্থ দলের বিবরণ; যাঁরা ফযীলতে প্রথম দুই দলের পরবর্তী এবং তৃতীয় দলের (যাঁরা হিজরত করেননি তাঁদের) পূর্ববর্তী স্তরের সাহাবা ছিলেন।

[২] সাহাবীগণ ভ্রাতৃত্ব ও মিত্রতার ভিত্তিতে উত্তরাধিকারীরূপে পরস্পর যে অংশীদার হতেন এই আয়াতে তা রহিত করা হল। এখন ওয়ারেস (উত্তরাধিকারী) কেবল সেই হবে, যে বংশ অথবা বৈবাহিকসূত্রে নিকটাত্মীয় হবে। আল্লাহর কিতাব কিম্বা আল্লাহর বিধান থেকে উদ্দেশ্য হল, 'লাওহে মাহ্ফূযে' মূল নির্দেশ এটাই ছিল। কিন্তু ভ্রাতৃত্বের খাতিরে কেবলমাত্র সাময়িকভাবে এককে অপরের ওয়ারেস বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যা এখন প্রয়োজন না থাকার কারণে রহিত করা হল এবং মূল নির্দেশ বহাল করে দেওয়া হল।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সাথে থেকে জিহদ করেছে [১] তারাও তোমাদের অন্তর্ভুক্ত এবং আত্মিয়ার আল্লাহ্‌র বিধানে একে অন্যের জন্য বেশি হকদার। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সবকিছু সম্যক আবগত [২]।

[১] এ আয়াতে মুহাজিরদের বিভিন্ন শ্রেণীর নির্দেশাবলী বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, যদিও তাদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন প্রাথমিক পর্যায়ের মুহাজির, যারা হুদাইবিয়ার সন্ধির পূর্বে হিজরত করেছেন এবং কেউ কেউ রয়েছেন দ্বিতীয় পর্যায়ের মুহাজির, যারা হুদাইবিয়ার সন্ধির পরে হিজরত করেছেন। এর ফলে তাদের পরকালীন মর্যাদায় পার্থক্য হলেও পার্থিব বিধান মতে তাদের অবস্থা প্রাথমিক পর্যায়ের মুহাজিরদেরই অনুরূপ। তারা সবাই পরস্পরের ওয়ারিস তথা উত্তরাধিকারী হবেন। সুতরাং প্রথম পর্যায়ের মুহাজিরদেরকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে যে, দ্বিতীয় পর্যায়ের এই মুহাজিররাও তোমাদেরই পর্যায়ভুক্ত। সে কারণেই উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধিতেও তাদের হুকুম সাধারণ মুহাজিরদের মতই। [বাগভী; সা’দী]

[২] এটি সূরা আনফালের সর্বশেষ আয়াত। এর শেষাংশে উত্তরাধিকার আইনের একটি ব্যাপক মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। এরই মাধ্যমে সেই সাময়িক বিধানটি বাতিল করে দেয়া হয়েছে, যেটি হিজরতের প্রথম পর্বের মুহাজির ও আনসারদের মাঝে পারস্পরিক ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপনের মাধ্যমে একে অপরের উত্তরাধিকারী হওয়ার ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল।

এ আয়াত এই মূলনীতি বাতলে দিয়েছে যে, মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তি আত্মীয়তার মান অনুসারে বন্টন করা কর্তব্য। আর (وَ اُولُوا الۡاَرۡحَامِ) সাধারণভাবে সমস্ত আত্মীয়স্বজন অর্থেই বলা হয়। [ইবন কাসীর] তাদের মধ্যে বিশেষ বিশেষ আর্তীয়ের অংশ স্বয়ং কুরআনুল কারম সূরা আন-নিসায় নির্ধারিত করে দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, “যাবিল ফুরূযে”র অংশ দিয়ে দেয়ার পর যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে, তা মৃত ব্যক্তির আসাবাগণ অর্থাৎ পিতামহ সম্পকীয় আতীয়দের মধ্যে পর্যায়ক্রমিকভাবে দেয়া হবে। [বুখারী; ৬৭৩২] অর্থাৎ নিকটবর্তী আসাবাকে দূরবর্তী আসাবা অপেক্ষ অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং নিকটবর্তী আসাবার বর্তমানে দূরবর্তীকে বঞ্চিত করা হবে। আর ‘আসাবা'-এর মধ্যে আর কেউ জীবিত না থাকলে অন্যান্য আতীয়দের মধ্যে বন্টন করা হবে। আসাবা ছাড়াও অন্যান্য যেসব লোক আত্মীয় হতে পারে, ফরায়েয শাস্ত্রের পরিভাষায় তাদের বোঝাবার জন্য যওয়িল আরহাম’ শব্দ নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই পরিভাষাটি পরবর্তীকালে হয়েছে। কুরআনুল কারমে বর্ণিত উলুল আরহাম আভিধানিক অর্থ অনুযায়ী সমস্ত আত্মীয়-স্বজনের ক্ষেত্রেই ব্যাপক। এতে যওয়িল ফরূয, আসাবা এবং যওয়িল আরহাম সবাই মোটামুটিভাবে অন্তর্ভুক্ত। [ইবন কাসীর]।

সূরা আনফালের শেষ আয়াতের সর্বশেষ বাক্যাংশটি দ্বারা ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের সে ধারাটি বাতিল করা হয়েছে, যা ইতিপূর্বে বর্ণিত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যার ভিত্তিতে মুহাজিরীন ও আনসারগণ আত্মীয়তার কোন বন্ধন না থাকলেও পরস্পরের ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী হয়ে গিয়েছিলেন। [বাগভী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] মূলতঃ এ হুকুমটি ছিল একটি সাময়িক হুকুম যা হিজরতের প্রাথমিক পর্যায়ে দেয়া হয়েছিল। সে সাময়িক প্রয়োজন শেষ হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ্ তা'আলা মীরাসের ব্যাপারে তাঁর স্থায়ী বিধান নাযিল করেন যা সুরা আন-নিসায় বর্ণিত হয়েছে।

Tafsir Bayaan Foundation

আর যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সাথে জিহাদ করেছে, তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত, আর আত্মীয়-স্বজনরা একে অপরের তুলনায় অগ্রগণ্য, আল্লাহর কিতাবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে মহাজ্ঞানী।

Muhiuddin Khan

আর যারা ঈমান এনেছে পরবর্তী পর্যায়ে এবং ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং তোমাদের সাথে সম্মিলিত হয়ে জেহাদ করেছে, তারাও তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। বস্তুতঃ যারা আত্নীয়, আল্লাহর বিধান মতে তারা পরস্পর বেশী হকদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ে সক্ষম ও অবগত।

Zohurul Hoque

আর যারা পরে ঈমান এনেছে এবং গৃহত্যাগ করেছে ও তোমাদের সঙ্গে থেকে সংগ্রাম করেছে, তারাও তোমাদের মধ্যেকার। আর রক্তসম্পর্কের লোকেরা -- তারা আল্লাহ্‌র বিধানে পরস্পর পরস্পরের অধিকতর নিকটা‌ত্মীয়। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞাতা।