Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল-আনফাল আয়াত ৬০

Qur'an Surah Al-Anfal Verse 60

আল-আনফাল [৮]: ৬০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ وَّمِنْ رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُوْنَ بِهٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَعَدُوَّكُمْ وَاٰخَرِيْنَ مِنْ دُوْنِهِمْۚ لَا تَعْلَمُوْنَهُمْۚ اَللّٰهُ يَعْلَمُهُمْۗ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ يُوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ (الأنفال : ٨)

wa-aʿiddū
وَأَعِدُّوا۟
And prepare
এবং তোমরা প্রস্তুত রাখো
lahum
لَهُم
for them
জন্যে তাদের
مَّا
whatever
যা (কিছু)
is'taṭaʿtum
ٱسْتَطَعْتُم
you able (to)
তোমরা সমর্থ হও
min
مِّن
of
সব
quwwatin
قُوَّةٍ
force
শক্তি
wamin
وَمِن
and of
এবং সব
ribāṭi
رِّبَاطِ
tethered
সাজ-সরঞ্জাম
l-khayli
ٱلْخَيْلِ
horses
(যুদ্ধের) ঘোড়ার
tur'hibūna
تُرْهِبُونَ
(to) terrify
তোমরা সন্ত্রস্ত করবে
bihi
بِهِۦ
therewith
দিয়ে তা
ʿaduwwa
عَدُوَّ
(the) enemy
শত্রুকে
l-lahi
ٱللَّهِ
(the) enemy
আল্লাহর
waʿaduwwakum
وَعَدُوَّكُمْ
and your enemy
ও শত্রুকে তোমাদের
waākharīna
وَءَاخَرِينَ
and others
এবং অন্যদেরকে
min
مِن
from
থেকে
dūnihim
دُونِهِمْ
besides them
ছাড়া তাদের
لَا
not
না
taʿlamūnahumu
تَعْلَمُونَهُمُ
(do) you know them
তোমরা জানো তাদেরকে
l-lahu
ٱللَّهُ
(but) Allah
আল্লাহ
yaʿlamuhum
يَعْلَمُهُمْۚ
knows them
জানেন তাদেরকে
wamā
وَمَا
And whatever
এবং যা
tunfiqū
تُنفِقُوا۟
you spend
তোমরা ব্যয় করো
min
مِن
from
কোনো
shayin
شَىْءٍ
(any) thing
কিছু
فِى
in
মধ্যে
sabīli
سَبِيلِ
(the) way
পথের
l-lahi
ٱللَّهِ
(of) Allah
আল্লাহর
yuwaffa
يُوَفَّ
it will be fully repaid
পুর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে
ilaykum
إِلَيْكُمْ
to you
প্রতি তোমাদের
wa-antum
وَأَنتُمْ
and you
এবং তোমাদের (উপর)
لَا
(will) not
না
tuẓ'lamūna
تُظْلَمُونَ
be wronged
অন্যায় করা হবে

Transliteration:

Wa a'iddoo lahum mastata'tum min quwwatinw wa mirribaatil khaili turhiboona bihee 'aduwwal laahi wa 'aduwwakum wa aakhareena min doonihim laa ta'lamoo nahum Allaahu ya'lamuhum; wa maa tunfiqoo min shai'in fee sabeelil laahi yuwaf failaikum wa antum laa tuzlamoon (QS. al-ʾAnfāl:60)

English Sahih International:

And prepare against them whatever you are able of power and of steeds of war by which you may terrify the enemy of Allah and your enemy and others besides them whom you do not know [but] whom Allah knows. And whatever you spend in the cause of Allah will be fully repaid to you, and you will not be wronged. (QS. Al-Anfal, Ayah ৬০)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

আর তাদেরকে মুকাবালা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী সদা প্রস্তুত রাখবে যদ্বারা তোমরা ভয় দেখাতে থাকবে আল্লাহর শত্রু আর তোমাদের শত্রুকে, আর তাদের ছাড়াও অন্যান্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জান না কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। তোমরা আল্লাহর পথে যা খরচ কর তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে, আর তোমাদের সাথে কক্ষনো যুলম করা হবে না। (আল-আনফাল, আয়াত ৬০)

Tafsir Ahsanul Bayaan

তোমরা তাদের (মোকাবিলার) জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সুসজ্জিত অশ্ব প্রস্তুত রাখ,[১] এ দিয়ে তোমরা আল্লাহর শত্রু তথা তোমাদের শত্রুকে সন্ত্রস্ত করবে এবং এ ছাড়া অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ জানেন। আর আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে, তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি অত্যাচার করা হবে না।

[১] قُوَّة (শক্তি) শব্দের ব্যাখ্যা নবী (সাঃ) হতে প্রমাণিত আছে। তিনি বলেছেন, শক্তি হল, (তীর) নিক্ষেপ। (মুসলিমঃ ইমারাহ অধ্যায় এবং আরো অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ) কেননা, সে যুগে তীরই ছিল যুদ্ধের বড় অস্ত্র এবং তীর মারায় দক্ষতা অর্জন ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যা। (যেহেতু তাতে দূর থেকেই শত্রু নিপাত করা যায়।) যেমন যুদ্ধের জন্য ঘোড়া ছিল অপরিহার্য ও অতীব প্রয়োজনীয় একটি মাধ্যম, যে কথা আলোচ্য আয়াতে ফুটে উঠেছে। কিন্তু বর্তমান যুগে যুদ্ধে তীর নিক্ষেপ ও ঘোড়ার সেই গুরুত্ব এবং উপকারিতা বাকী নেই। এই জন্য 'তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সাধ্যমত শক্তি প্রস্তুত কর' এই নির্দেশ পালনে অধুনা যুগের যুদ্ধাস্ত্র (যেমন, ক্ষেপণাস্ত্র; রকেট, মিসাইল, ট্যাঙ্ক, কামান, বোমারু বিমান এবং সামুদ্রিক যুদ্ধের জন্য সাবমেরিন প্রভৃতি) এর প্রস্তুতি অত্যাবশ্যক।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য প্রস্তুত রাখ শক্তি ও অশ্ব বাহিনী [১], তা দিয়ে তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ্‌র শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ্‌ তাদেরকে জানেন [২]। আল্লাহ্‌র পথে তোমার যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না [৩]।

[১] এতে সমর যুদ্ধোপকরণ, অস্ত্রশস্ত্র, যানবাহন প্রভৃতি এবং শরীরচর্চা ও সমর বিদ্যা শিক্ষা করাও অন্তর্ভুক্ত। কুরআনুল কারম এখানে তৎকালে প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্রের কোন উল্লেখ করেনি, বরং ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ শক্তি’ ব্যবহার করে ইঙ্গিত দিয়েছে, শক্তি' প্রত্যেক যুগ, দেশ ও স্থান অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হতে পারে। তৎকালীন সময়ের অস্ত্র ছিল তীর-তলোয়ার, বর্শা প্রভৃতি। তারপর বন্দুক-তোপের যুগ এসেছে। তারপর এখন চলছে বোমা, রকেট-এর যুগ। শক্তি’ শব্দটি এসব কিছুতেই ব্যাপক। সুতরাং যে কোন বিদ্যা ও কৌশল শিক্ষা করার প্রয়োজন হবে সেসবই যদি এই নিয়তে হয় যে, তার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের শক্রকে প্রতিহত করা এবং কাফেরদের মোকাবেলা করা হবে, তাহলে তাও জিহাদেরই শামিল [দেখুন, সাদী]

বিশুদ্ধ হাদীসসমূহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধোপকরণ সং করা এবং সেগুলো ব্যবহার করার কায়দা-কৌশল অনুশীলন করাকে বিরাট ইবাদাত ও মহাপূণ্য লাভের উপায় বলে সাব্যস্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তেলাওয়াত করে বললেনঃ জেনে রাখ, শক্তি হল, তীরন্দায়ী। শক্তি হলো তিরন্দাযী। [সহীহ মুসলিমঃ ১৯১৭] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ তোমরা তিরন্দাযী কর এবং ঘোড়সওয়ার হও, তবে তীরন্দাযী করা ঘোড়সওয়ারী হওয়ার চেয়ে উত্তম। [আবু দাউদঃ ২৫১৩, তিরমিযীঃ ১৬৩৭] এখানে তৈরী রাখার অর্থ, যুদ্ধের যাবতীয় সাজ-সরঞ্জাম ও এক স্থায়ী সৈন্যবাহিনী সব সময়ই মওজুদ ও প্রস্তুত করে রাখা। যেন যথা সময়ে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। বিপদ মাথার উপর ঘনীভূত হয়ে আসার পর ঘাবড়িয়ে গিয়ে ও তাড়াহুড়া করে স্বেচ্ছাসেবী, অস্ত্র-শস্ত্র ও রসদ সংগ্রহ করার চেষ্টা অর্থহীন। কেননা যতদিনে এ প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হবে ততদিনে শক্রপক্ষ তাদের কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলবে।

প্রতিরক্ষার বিষয়টি সর্বযুগে ও সব জাতিতে আলাদা রকম। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ‘মুশরিকদের বিরুদ্ধে জান-মাল ও মুখ এবং হাতের মাধ্যমে জিহাদ কর। [আবু দাউদঃ ২৫০৪, নাসায়ীঃ ৩০৯৮] এ হাদীসের দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, জিহাদ ও প্রতিরোধ যেমন অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে হয়ে থাকে, তেমনি কোন কোন সময় মুখেও হয়ে থাকে। তাছাড়া কলমও মুখেরই পর্যায়ভুক্ত। ইসলাম ও কুরআনের বিরুদ্ধে কাফের ও মুলহেদদের আক্রমণ এবং তার বিকৃতি সাধনের প্রতিরোধ মুখে কিংবা কলমের দ্বারা করাও এই সুস্পষ্ট নির্দেশের ভিত্তিতে জিহাদের অন্তর্ভুক্ত।

[২] যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে যাদেরকে প্রভাবিত করা উদ্দেশ্য তাদের অনেককে মুসলিমরা জানে। সেসব লোকদের সাথে মুসলিমদের মোকাবেলা চলছে। এছাড়াও কিছু লোক রয়েছে যাদেরকে এখনো মুসলিমরা জানে না। এর মর্ম হল সারা দুনিয়ার কাফের ও মুশরিক, যারা এখনো মুসলিমদের মোকাবেলায় আসেনি কিন্তু ভবিষ্যতে তাদের সাথেও সংঘর্ষ বাধতে পারে। কোন কোন মুফাসসির এটাকে বনু কুরাইযা বলে মত প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ বলেছেন, পারস্যবাসী। [তাবারী; ফাতহুল কাদীর] তবে এখানে সুনির্দিষ্ট করে না বলে কিয়ামত পর্যন্ত যত শক্রই মুসলিমদের মুকাবিলা করবে তাদের সবাইকে উদ্দেশ্য নেয়া যেতে পারে।

[৩] যুদ্ধোপকরণ সংগ্রহ করতে গিয়ে এবং যুদ্ধ পরিচালনার জন্য অর্থেরও প্রয়োজন হয়। সে জন্যই আয়াতের শেষাংশে আল্লাহর রাহে মাল বা অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার ফযীলত এবং তার মহা-প্রতিদানের বিষয়টি এভাবে বলা হয়েছে যে, এ পথে তোমরা যাই কিছু ব্যয় করবে তার বদলা পুরোপুরিভাবে তোমাদেরকে দেয়া হবে। কোন কোন সময় দুনিয়াতেই গনীমতের মালের আকারে এ বদলা মিলে যায়, না হয় আখেরাতের বদলা তো নির্ধারিত রয়েছেই। বলাবাহুল্য, সেটিই অধিকতর মূল্যবান। সেটি সাতশত গুণ ও আরও বেশী পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। [সা'দী]

Tafsir Bayaan Foundation

আর তাদের মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর, তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন। আর তোমরা যা আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ দেয়া হবে, আর তোমাদেরকে যুলম করা হবে না।

Muhiuddin Khan

আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

Zohurul Hoque

আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত রাখবে যা-কিছুতে তোমরা সমর্থ হও -- শৌর্য-বীর্যে ও হৃস্পুষ্ট ঘোড়াগুলোয়, -- তার দ্বারা ভীত-সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহ্‌র শত্রুদের তথা তোমাদের শত্রুদের, আর তাদের ছাড়া অন্যদেরও, তাদের তোমরা জানো না, আল্লাহ্ তাদের জানেন। আর যা-কিছু তোমরা আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করবে তা তোমাদের পুরোপুরি প্রতিদান দেওয়া হবে, আর তোমরা অত্যাচারিত হবে না।