Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল-আনফাল আয়াত ৪৮

Qur'an Surah Al-Anfal Verse 48

আল-আনফাল [৮]: ৪৮ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَاِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطٰنُ اَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَاِنِّيْ جَارٌ لَّكُمْۚ فَلَمَّا تَرَاۤءَتِ الْفِئَتٰنِ نَكَصَ عَلٰى عَقِبَيْهِ وَقَالَ اِنِّيْ بَرِيْۤءٌ مِّنْكُمْ اِنِّيْٓ اَرٰى مَا لَا تَرَوْنَ اِنِّيْٓ اَخَافُ اللّٰهَ ۗوَاللّٰهُ شَدِيْدُ الْعِقَابِ ࣖ (الأنفال : ٨)

wa-idh
وَإِذْ
And when
এবং যখন
zayyana
زَيَّنَ
made fair-seeming
শোভন করেছিলো
lahumu
لَهُمُ
to them
জন্যে তাদের
l-shayṭānu
ٱلشَّيْطَٰنُ
the Shaitaan
শয়তান
aʿmālahum
أَعْمَٰلَهُمْ
their deeds
কাজগুলোকে তাদের
waqāla
وَقَالَ
and he said
এবং বলেছিলো
لَا
"No (one)
"না
ghāliba
غَالِبَ
(can) overcome
বিজয়ী হবে
lakumu
لَكُمُ
[to] you
উপর তোমাদের
l-yawma
ٱلْيَوْمَ
today
আজ
mina
مِنَ
from
মধ্য থেকে (কেউ)
l-nāsi
ٱلنَّاسِ
the people
মানুষদের
wa-innī
وَإِنِّى
and indeed, I am
এবং নিশ্চয়ই আমি
jārun
جَارٌ
a neighbor
প্রতিবেশী
lakum
لَّكُمْۖ
for you"
তোমাদের"
falammā
فَلَمَّا
But when
অতঃপর যখন
tarāati
تَرَآءَتِ
came in sight
পরস্পরে সম্মুখীন হলো
l-fi-atāni
ٱلْفِئَتَانِ
the two forces
দু'দল
nakaṣa
نَكَصَ
he turned away
সে সড়ে পড়লো
ʿalā
عَلَىٰ
on
উপর
ʿaqibayhi
عَقِبَيْهِ
his heels
দু'গোড়ালীর (অর্থাৎ পেছন দিকে)
waqāla
وَقَالَ
and said
এবং বললো
innī
إِنِّى
"Indeed, I am
"নিশ্চয়ই আমি
barīon
بَرِىٓءٌ
free
দায়িত্বমুক্ত
minkum
مِّنكُمْ
of you
থেকে তোমাদের
innī
إِنِّىٓ
Indeed, I
নিশ্চয়ই আমি
arā
أَرَىٰ
see
দেখছি (ফেরেশতাদের)
مَا
what
যা
لَا
not
না
tarawna
تَرَوْنَ
you see
তোমরা দেখতে পাচ্ছো
innī
إِنِّىٓ
indeed, I
নিশ্চয়ই আমি
akhāfu
أَخَافُ
[I] fear
ভয় করি
l-laha
ٱللَّهَۚ
Allah
আল্লাহকে
wal-lahu
وَٱللَّهُ
And Allah
এবং আল্লাহ
shadīdu
شَدِيدُ
(is) severe
কঠোর
l-ʿiqābi
ٱلْعِقَابِ
(in) the penalty"
দন্ডদানে"

Transliteration:

Wa iz zaiyana lahumush shaitaanu a'ma alahum wa qaala laa ghaaliba lakumul yawma minan naasi wa innee jaarul lakum falammaa taraaa'atil fi'ataani nakasa 'alaa aqibaihi wa qaala innee bareee'um minkum innee araa maa laa tarawna inneee akhaaful laah; wallaahu shadeedul 'iqaab (QS. al-ʾAnfāl:48)

English Sahih International:

And [remember] when Satan made their deeds pleasing to them and said, "No one can overcome you today from among the people, and indeed, I am your protector." But when the two armies sighted each other, he turned on his heels and said, "Indeed, I am disassociated from you. Indeed, I see what you do not see; indeed, I fear Allah. And Allah is severe in penalty." (QS. Al-Anfal, Ayah ৪৮)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

স্মরণ কর, যখন শয়ত্বান তাদের কার্যকলাপকে তাদের দৃষ্টিতে খুবই চাকচিক্যময় করে দেখিয়েছিল আর তাদেরকে বলেছিল, ‘আজ তোমাদেরকে পরাজিত করতে পারে মানুষের মাঝে এমন কেউই নাই, আমি তোমাদের পাশেই আছি।’ অতঃপর দল দু’টি যখন পরস্পরের দৃষ্টির গোচরে আসলো তখন সে পিছনে সরে পড়ল আর বলল, ‘তোমাদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই, আমি তো দেখি (কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহর নাযিলকৃত ফেরেশতা) যা তোমরা দেখতে পাও না, আমি অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করি কেননা আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।’ (আল-আনফাল, আয়াত ৪৮)

Tafsir Ahsanul Bayaan

স্মরণ কর, শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হবে না, আর আমি অবশ্যই তোমাদের সহযোগী (প্রতিবেশী)। অতঃপর দু’ দল যখন পরস্পরের সম্মুখীন হল, তখন সে পিছু হটে সরে পড়ল ও বলল, ‘নিশ্চয় তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। নিশ্চয় আমি তা দেখি, যা তোমরা দেখতে পাও না।[১] নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি।’[২] আর আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। [৩]

[১] মুশরিকরা যখন মক্কা থেকে রওনা দিল তখন তাদের দুশমন গোত্র বানী বাকার বিন কিনানার পক্ষ থেকে তাদের আশঙ্কা ছিল যে, তাদেরকে পিছন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সুতরাং শয়তান বানী বাকার বিন কিনানার একজন সর্দার সুরাকা বিন মালেকের রূপ ধরে এল এবং সে তাদেরকে শুধু বিজয়ের সুসংবাদই দিল না; বরং তাদের সহযোগিতা করার পূর্ণ আস্থা দিল। কিন্তু যখন মুসলিমদের পক্ষে ফিরিশতা দ্বারা আল্লাহর মদদ তার পরিদৃষ্ট হল, তখন সে সকলকে ছেড়ে পিছন ফিরে পলায়ন করল।

[২] আল্লাহর ভয় তার অন্তরে আর কি সৃষ্টি হবে? তবে তার দৃঢ়-বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে, মুসলিমদের জন্য আল্লাহর বিশেষ সাহায্য রয়েছে; মুশরিকরা তাদের সামনে টিঁকে থাকতে পারবে না।

[৩] হতে পারে এটা শয়তানের কথার একাংশ। আর এটাও হতে পারে যে, এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পৃথকভাবে নতুন বাক্য ছিল।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর স্মরণ কর, যখন শয়তান তাদের জন্য তাদের কার্যাবলীকে শোভন করেছিল এবং বলেছিল, ‘আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয় আর্জনকারী নেই, আর নিশ্চয় আমি তোমাদের পাশে অবস্থানকারী।’ অতঃপর দু দল যখন পরস্পর দৃশ্যমান হল তখন সে পিছনে সারে পড়ল এবং বলল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে সম্পর্কমুক্ত, নিশ্চয় আমি এমন কিছু দেখেছি যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌কে ভয় করি,’ আর আল্লাহ্‌ শাস্তি দানে কঠোর [১]।

[১] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, মক্কার কুরাইশ বাহিনী যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে মোকাবেলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, তখন তাদের মনে এমন এক আশংকা চেপে ছিল যে, আমাদের প্রতিবেশী বনু-বকর গোত্রও আমাদের শত্রু; আমরা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করতে চলে গেলে সেই সুযোগে শত্রু গোত্র না আবার আমাদের বাড়ী-ঘর এবং নারী-শিশুদের উপর হামলা করে বসে। সুতরাং কাফেলার নেতা আবু সুফিয়ানের ভয়াত আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ী থেকে তারা বেরিয়ে গেল বটে, কিন্তু মনের এ আশংকা তাদের পায়ের বেড়ী হয়ে রইল। এমনি সময়ে শয়তান সোরাকাহ ইবন মালেকের রূপে এমনভাবে সামনে এসে উপস্থিত হল যে, তার হাতে রয়েছে একটি পতাকা আর তার সাথে রয়েছে বীর সৈনিকদের একটি খণ্ড দল। সুরাকাহ ইবন মালিক ছিল সে এলাকার এবং গোত্রের বড় সর্দার। কুরাইশদের মনে তারই আক্রমণের আশংকা ছিল। সে এগিয়ে গিয়ে কুরাইশ জওয়ানদের বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক ভাষণ দিয়ে বলল, আজকের দিনে এমন কেউ নেই যারা তোমাদের উপর জয়লাভ করতে পারে। আর বনূ-বকর প্রভৃতি গোত্রের ব্যাপারে তোমাদের মনে যে আশংকা চেপে আছে যে, তোমাদের অবর্তমানে তারা মক্কা আক্রমণ করে বসবে, তার দায়-দায়িত্ব আমি নিয়ে নিচ্ছি। আমি তোমাদের সমর্থনে রয়েছি। [তাবারী] মক্কার কুরাইশরা সুরাকাহ ইবন মালেক এবং তার বিরাট ব্যক্তিত্ব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অবগত ছিল। কাজেই তার বক্তব্য শোনামাত্র তাদের মন বসে গেল এবং বনু-বকর গোত্রের আক্রমণাশংকা মুক্ত হয়ে মুসলিমদের মোকাবেলায় উদ্বুদ্ধ হল। এ দ্বিবিধ প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান তাদেরকে নিজেদের বধ্যভূমির দিকে দাবড়ে দিল। কিন্তু যখন মক্কার মুশরিক ও মুসলিম উভয় দল (বদর প্রাঙ্গণে) সম্মুখ সমরে লিপ্ত হল, তখন শয়তান পিছন ফিরে পালিয়ে গেল। বদর যুদ্ধে যেহেতু মক্কার মুশরিকদের সহায়তায় একটি শয়তানী বাহিনীও এসে উপস্থিত হয়েছিল, কাজেই আল্লাহ্ তাআলা তাদের মোকাবেলায় জিবরাঈল ও মিকাঈল আলাইহিমাস সালাম-এর নেতৃত্বে রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, শয়তান যখন সুরাকাহ ইবন মালেকের রূপে স্বীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তখন সে জিবরাঈল-আমীন এবং তার সাথী ফিরিশতা বাহিনী দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে সময় তার হাত এক কুরাইশী যুবক হারেস ইবন হিশামের হাতে ধরা ছিল। সঙ্গে সঙ্গে সে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে চাইল। হারেস তিরস্কার করে বললঃ এ কি করছ? তখন সে বুকের উপর এক প্রবল ঘা মেরে হারেসকে ফেলে দিল এবং নিজের বাহিনী নিয়ে পালিয়ে গেল। হারেস তাকে সোরাকাহ মনে করে বললঃ হে আরব সর্দার সোরাকাহ! তুমি তো বলেছিলে আমি তোমাদের সমর্থনে রয়েছি। অথচ ঠিক যুদ্ধের ময়দানে এমন আচরণ করছ! তখন শয়তান সুরাকাহর বেশেই উত্তর দিল, আমি কৃত চুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছি। কারণ, আমি এমন জিনিস দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না। অর্থাৎ ফিরিশতা বাহিনী। আর আমি আল্লাহকে ভয় করি। কাজেই তোমাদের সঙ্গ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। [তাবারী] শয়তান যখন ফিরিশতা বাহিনী দেখতে পেল এবং সে যেহেতু তাদের শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিল, তখন বুঝল যে, এবার আর পরিত্রাণ নেই। তবে তার বাক্য ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি সম্পর্কে তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম কাতাদাহ বলেন যে, কথাটি সে মিথ্যে বলেছিল। [ইবন কাসীর] ইবন ইসহাক বলেন, আর যখন সে বলেছিল যে, আমি এমন জিনিস দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না।’ এ কথাটি সত্যি বলেছে। [ইবন কাসীর]

Tafsir Bayaan Foundation

আর যখন শয়তান তাদের জন্য তাদের আমলসমূহ সুশোভিত করল এবং বলল, ‘আজ মানুষের মধ্য থেকে তোমাদের উপর কোন বিজয়ী নেই এবং নিশ্চয় আমি তোমাদের পার্শ্বে অবস্থানকারী’। অতঃপর যখন দু’দল একে অপরকে দেখল, তখন সে পিছু হটল এবং বলল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে মুক্ত, নিশ্চয় আমি এমন কিছু দেখছি, যা তোমরা দেখছ না। অবশ্যই আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং আল্লাহ কঠিন আযাবদাতা’।

Muhiuddin Khan

আর যখন সুদৃশ্য করে দিল শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে এবং বলল যে, আজকের দিনে কোন মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না আর আমি হলাম তোমাদের সমর্থক, অতঃপর যখন সামনাসামনী হল উভয় বাহিনী তখন সে অতি দ্রুত পায়ে পেছনে দিকে পালিয়ে গেল এবং বলল, আমি তোমাদের সাথে না-আমি দেখছি, যা তোমরা দেখছ না; আমি ভয় করি আল্লাহকে। আর আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠিন।

Zohurul Hoque

আর স্মরণ করো! শয়তানটি তাদের কার্যাবলী তাদের কাছে চিত্তাকর্ষক করেছিল ও বলেছিল -- ''আজকের দিনে লোকদের মধ্যে কেউই তোমাদের উপরে বিজয়ী হতে পারবে না, আর নিঃসন্দেহ আমি তো রয়েছি তোমাদের সাহায্যকারী।’’ কিন্তু তারপর যখন দুই সৈন্যদলে দেখাদেখি হলো, সে তার গোড়ালির উপরে মোড় ফেরালো আর বললে -- ''আমি আলবৎ তোমাদের থেকে বিদায়, আমি নিঃসন্দেহ দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখছো না, আমি অবশ্যই আল্লাহ্‌কে ভয় করি, আর আল্লাহ্ প্রতিফল দানে অতি কঠোর।’’