Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল-আনফাল আয়াত ৪১

Qur'an Surah Al-Anfal Verse 41

আল-আনফাল [৮]: ৪১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

۞ وَاعْلَمُوْٓا اَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَاَنَّ لِلّٰهِ خُمُسَهٗ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِى الْقُرْبٰى وَالْيَتٰمٰى وَالْمَسٰكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ اِنْ كُنْتُمْ اٰمَنْتُمْ بِاللّٰهِ وَمَآ اَنْزَلْنَا عَلٰى عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعٰنِۗ وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (الأنفال : ٨)

wa-iʿ'lamū
وَٱعْلَمُوٓا۟
And know
আর তোমরা জেনে রাখো
annamā
أَنَّمَا
that what
মূলতঃ
ghanim'tum
غَنِمْتُم
you obtain (as) spoils of war
গণীমত পেয়েছো তোমরা
min
مِّن
of
থেকে
shayin
شَىْءٍ
anything
(যা) কিছু
fa-anna
فَأَنَّ
then that
তা নিশ্চয়ই
lillahi
لِلَّهِ
for Allah
জন্যে আল্লাহর
khumusahu
خُمُسَهُۥ
(is) one fifth of it
এক পঞ্চমাংশ তার
walilrrasūli
وَلِلرَّسُولِ
and for the Messenger
এবং জন্যে রাসূলের
walidhī
وَلِذِى
and for the
ও জন্যে সম্পন্ন
l-qur'bā
ٱلْقُرْبَىٰ
near relatives
নৈকট্য
wal-yatāmā
وَٱلْيَتَٰمَىٰ
and the orphans
ও ইয়াতিমদের
wal-masākīni
وَٱلْمَسَٰكِينِ
and the needy
ও দরিদ্রদের
wa-ib'ni
وَٱبْنِ
and the
ও পুত্র
l-sabīli
ٱلسَّبِيلِ
wayfarer
পথের
in
إِن
if
যদি
kuntum
كُنتُمْ
you
তোমরা থাকো
āmantum
ءَامَنتُم
believe
তোমরা ঈমান এনে
bil-lahi
بِٱللَّهِ
in Allah
উপর আল্লাহর
wamā
وَمَآ
and (in) what
এবং যা
anzalnā
أَنزَلْنَا
We sent down
আমরা অবতীর্ণ করেছি
ʿalā
عَلَىٰ
to
উপর
ʿabdinā
عَبْدِنَا
Our slave
আমাদের দাসদের (অর্থাৎ রাসূলের)
yawma
يَوْمَ
(on the) day
দিন
l-fur'qāni
ٱلْفُرْقَانِ
(of) the criterion
মীমাংসার
yawma
يَوْمَ
(the) day
(অর্থাৎ) দিন
l-taqā
ٱلْتَقَى
(when) met
সাক্ষাতের
l-jamʿāni
ٱلْجَمْعَانِۗ
the two forces
দু'দলের (বদরের যুদ্ধে)
wal-lahu
وَٱللَّهُ
And Allah
এবং আল্লাহ
ʿalā
عَلَىٰ
(is) on
উপর
kulli
كُلِّ
every
সব
shayin
شَىْءٍ
thing
কিছুরই
qadīrun
قَدِيرٌ
All-Powerful
শক্তিশালী

Transliteration:

Wa'lamooo annamaa ghanimtum min sha'in fa anna lillaahi khumusahoo wa lir Rasooli wa lizil qurba walyataamaa walmasaakeeni wabnis sabeeli in kuntum aamantum billaahi wa maaa anzalnaa 'ala 'abdinaa yawmal Furqaani yawmaltaqal jam'aan; wal laahu 'alaa kulli shai'in Qadeer (QS. al-ʾAnfāl:41)

English Sahih International:

And know that anything you obtain of war booty – then indeed, for Allah is one fifth of it and for the Messenger and for [his] near relatives and the orphans, the needy, and the [stranded] traveler, if you have believed in Allah and in that which We sent down to Our Servant on the day of criterion [i.e., decisive encounter] – the day when the two armies met [at Badr]. And Allah, over all things, is competent. (QS. Al-Anfal, Ayah ৪১)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

তোমরা জেনে রেখ যে, যুদ্ধে যা তোমরা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ হচ্ছে আল্লাহ, তাঁর রসূল, রসূলের আত্মীয়স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য যদি তোমরা আল্লাহর উপর আর চূড়ান্ত ফায়সালার দিন অর্থাৎ দু’পক্ষের (মুসলমান ও কাফের বাহিনীর) মিলিত হওয়ার দিন আমি যা আমার বান্দাহর উপর অবতীর্ণ করেছিলাম তার উপর বিশ্বাস করে থাক। আর আল্লাহ হলেন সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। (আল-আনফাল, আয়াত ৪১)

Tafsir Ahsanul Bayaan

আরো জেনে রাখ যে, যুদ্ধে যা কিছু তোমরা (গনীমত) লাভ কর[১] তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তাঁর রসূলের, রসূলের নিকটাত্মীয়, পিতৃহীন এতীম, দরিদ্র এবং পথচারীদের জন্য;[২] যদি তোমরা আল্লাহতে ও সেই জিনিসে বিশ্বাসী হও যা ফায়সালার দিন[৩] (বদরে) আমি আমার দাসের প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম;[৪] যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল[৫] এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।

[১] 'গনীমতের মাল' থেকে সেই মাল উদ্দেশ্য যা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর লাভ হয়। পূর্বের উম্মতে এই মাল বিতরণের পদ্ধতি এই ছিল যে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কাফেরদের নিকট হতে লাভ করা সমস্ত মাল-সম্পদকে এক জায়গায় জমা করা হত, আর আসমান হতে আগুন এসে তাকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিত। কিন্তু মুসলিম উম্মতের জন্য এই গনীমতের মাল আল্লাহ হালাল করে দিয়েছেন। আর যে মাল দুই দলের সন্ধি চুক্তির ভিত্তিতে বিনা যুদ্ধে অথবা জিযিয়া কর ও খাজনা আদায়ের মাধ্যমে লাভ হয় তাকে 'ফাই-এর মাল' বলা হয়। কখনো কখনো গনীমতের মালকেও ফাই-এর মাল বলা হয়ে থাকে। من شيءٍ অর্থঃ যা কিছু। অর্থাৎ, কম হোক অথবা বেশী, মূল্যবান হোক অথবা সামান্য মূল্যের, সমস্তকে জমা করে তা যথারীতি বণ্টন করা হবে। কোন সৈন্যের জন্য তা হতে বণ্টনের পূর্বে কোন বস্তু রেখে নেওয়ার অনুমতি নেই।

[২] এখানে 'আল্লাহ' শব্দটি বরকতস্বরূপ। পরন্তু এই জন্যও যে, প্রত্যেক জিনিসের প্রকৃত পক্ষে মালিক হলেন তিনিই। আর আদেশও তাঁরই চলে। আল্লাহ ও তদীয় রসূলের ভাগ থেকে উদ্দেশ্য একটাই। অর্থাৎ, সমস্ত গনীমতের মালকে পাঁচ ভাগ করে চার ভাগ সেই মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করা হবে, যাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যেও পদাতিক (পায়ে হাঁটা ব্যক্তিদের)-কে এক ভাগ এবং অশ্বারোহীকে তিন ভাগ দেওয়া হবে। আর পঞ্চম ভাগটাকে পুনরায় পাঁচ ভাগ করা হবে, তার মধ্যে রসূল (সাঃ)-এর জন্য এক ভাগ। অতঃপর বাকী ভাগগুলি মুসলিমদের সাধারণ কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। যেমন, নবী (সাঃ) নিজেও এই ভাগগুলি মুসলিমদের উপরেই খরচ করতেন। বরং তিনি বলেছেনও, الخمسُ مَردودٌ عليكم (সুনানে নাসাঈ, সহীহ নাসাঈ ৩৮৫৮নং, আহমাদ ৫/৩১৯) অর্থাৎ, আমার ভাগে যে পঞ্চম অংশ রয়েছে সেটাও মুসলিমদের উপকারে ব্যয় করা হবে। দ্বিতীয় ভাগ রসূল (সাঃ)-এর আত্মীয়-স্বজনের জন্য। অতঃপর এতীম ও মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য। আরো বলা হয় যে, এই পঞ্চম ভাগটি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় করা হবে।

[৩] 'ফায়সালার দিন' বলতে হক ও বাতিলের মাঝে চূড়ান্ত ফায়সালার দিন, বদর যুদ্ধের দিন। এ যুদ্ধ সন ২ হিজরী, রমযানের ১৭ তারীখে ঘটেছিল। সেই দিনটিকে 'ফায়সালার দিন' এই জন্য বলা হয় যে, এটা ছিল কাফের ও মুসলিমদের মাঝে প্রথম যুদ্ধ এবং তাতে মুসলিমদেরকে বিজয়ী করে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, ইসলাম ধর্মই হল সত্য ধর্ম আর কুফর ও শিরক হল বাতিল ধর্ম।

[৪] এখানে 'যা অবতীর্ণ' বলতে ফিরিশতা এবং অলৌকিক কিছু বিষয় ইত্যাদি অবতীর্ণ করাকে বুঝানো হয়েছে, যা বদর যুদ্ধের দিন ঘটেছিল।

[৫]অর্থাৎ, মুসলিম ও কাফিরদের সৈনদল।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর জেনে রাখ, যুদ্ধে যা তোমরা গনীমত হিসেবে লাভ করেছ ,তার এক-পঞ্চামাংশ আল্লাহ্‌র [১] , রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীনদের এবং সফরকারীদের [২] যদি তোমারা ঈমান রাখ আল্লাহ্‌তে এবং তাতে যা মীমাংসার দিন আমারা আমাদের বান্দার প্রতি নাযিল করেছিলাম [৩], যে দিন দু দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল।আর আল্লাহ্‌ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

[১] এ আয়াতে গনীমতের বিধান ও তার বন্টননীতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অভিধানে গনীমত বলা হয় সে সমস্ত মাল-সামানকে যা শক্রর নিকট থেকে লাভ করা হয়। শরীআতের পরিভাষা অনুযায়ী অমুসলিমদের নিকট থেকে যুদ্ধ-বিগ্রহে বিজয়ার্জনের মাধ্যমে যে মালামাল অর্জিত হয়, তাকেই বলা হয় ‘গনীমতী’ [ফাতহুল কাদীর] আর যা কিছু আপোষ, সন্ধি-সম্মতির মাধ্যমে অর্জিত হয়, তাকে বলা হয় ’ফাই’। [ইবন কাসীর] কুরআনুল কারামে এতদুভয় শব্দের মাধ্যমে (অর্থাৎ ‘গনীমত’ ও ‘ফাই’) এতদুভয় প্রকার মালামালের হুকুম-আহকাম তথা বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আনফালের প্রথম আয়াতে এবং এ আয়াতে শুধুমাত্র গনীমতের মালামালের কথাই আলোচিত হয়েছে যা যুদ্ধকালে অমুসলিমদের কাছ থেকে লাভ হয়েছে। ‘ফাই’-এর আলোচনা সূরা হাশর-এ আসবে।

[২] এখানে জিহাদের পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ গণীমতের হকদারদের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সমস্ত সম্পদ পাঁচ ভাগে ভাগ করা হবে। এর চার ভাগ যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টন করা হবে। আর বাকী এক পঞ্চমাংশ পাঁচভাগে ভাগ করা হবে। প্রথমভাগ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। এ অংশ মুসলিমদের সাধারণ স্বার্থ সংরক্ষনে ব্যয় হবে। দ্বিতীয়ভাগ রাসূলের স্বজনদের জন্য নির্ধারিত। তারা হলেন ঐ সমস্ত লোক যাদের উপর সদকা খাওয়া হারাম। অর্থাৎ বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব। কারণ তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব রাসূলের ছিল। তিনি তার নবুওয়াতের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকায় তাদের জন্য এ গণীমতের মাল থেকে দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। তৃতীয়ভাগ ইয়াতিমদের জন্য
সুনির্দিষ্ট। চতুর্থভাগ ফকীর ও মিসকিনদের জন্য, আর পঞ্চম ভাগ মুসাফিরদের জন্য। [ইবন কাসীর] ইবন তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, পুরো এক পঞ্চমাংশই বর্তমানে ইমামের কর্তৃত্বে থাকবে। তিনি মুসলিমদের অবস্থা অনুযায়ী কল্যাণকর কাজে ব্যয় করবেন। [ইবন কাসীর] সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, গণীমতের মাল যদিও পূর্বে সূরা আনফালের প্রথম আয়াতে শুধু আল্লাহ ও তার রাসূলের বলা হয়েছে তবুও তা মূলতঃ মুসলিমদের মধ্যেই পুনরায় বন্টন হয়ে গেছে। রাসূল তার জন্য তার জীবদ্দশায় যা কিছু পেতেন তাও বর্তমানে সাধারণ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে।

[৩] অর্থাৎ সে সাহায্য ও সহায়তা, যার বদৌলতে তোমরা জয়লাভ করেছ। [মুয়াসসার] এখানে মীমাংসার দিন বলে বদরের দিনকে বুঝানো হয়েছে। কারণ এ দিন তিনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করেছেন, ঈমানের কালেমাকে কুফরীর কালেমার উপর বিজয়ী করেছেন এবং তার দ্বীন, তার নবী ও অনুসারীদেরকে উপরে উঠিয়েছেন। [ইবন কাসীর]

Tafsir Bayaan Foundation

আর তোমরা জেনে রাখ, তোমরা যা কিছু গনীমতরূপে পেয়েছ, নিশ্চয় আল্লাহর জন্যই তার এক পঞ্চমাংশ ও রাসূলের জন্য, নিকট আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরের জন্য, যদি তোমরা ঈমান এনে থাক আল্লাহর প্রতি এবং হক ও বাতিলের ফয়সালার দিন আমি আমার বান্দার উপর যা নাযিল করেছি তার প্রতি, যেদিন* দু’টি দল মুখোমুখি হয়েছে, আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

* অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন।

Muhiuddin Khan

আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোন বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনীমত হিসাবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্নীয়-স্বজনের জন্য এবং এতীম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর উপর এবং সে বিষয়ের উপর যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার দিনে, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল।

Zohurul Hoque

আর জেনে রেখো যা কিছু তোমরা যুদ্ধক্ষেত্রে লাভ করো তার পঞ্চমাংশ তাহলে আল্লাহ্‌র, জন্য যথা রসূলের জন্য, আর নিকটা‌ত্মীয়ের জন্য, আর এতীমদের, মিসকিনদের, ও পথচারীদের জন্য, যদি তোমরা বিশ্বাস করো আল্লাহ্‌তে আর তাতে যা আমরা আমাদের বান্দার কাছে অবতারণ করেছি সেই ফুরকানের দিনে, যেদিন দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। আর আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।