Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল-আনফাল আয়াত ৩০

Qur'an Surah Al-Anfal Verse 30

আল-আনফাল [৮]: ৩০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَاِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ اَوْ يَقْتُلُوْكَ اَوْ يُخْرِجُوْكَۗ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللّٰهُ ۗوَاللّٰهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ (الأنفال : ٨)

wa-idh
وَإِذْ
And when
এবং (স্বরণ করো) যখন
yamkuru
يَمْكُرُ
plotted
ষড়যন্ত্র করেছিলো
bika
بِكَ
against you
বিরুদ্ধে তোমার
alladhīna
ٱلَّذِينَ
those who
যারা
kafarū
كَفَرُوا۟
disbelieved
অস্বীকার করেছে
liyuth'bitūka
لِيُثْبِتُوكَ
that they restrain you
জন্যে তোমাকে তারা বন্দি করার
aw
أَوْ
or
বা
yaqtulūka
يَقْتُلُوكَ
kill you
তোমাকে তারা হত্যা করবে
aw
أَوْ
or
বা
yukh'rijūka
يُخْرِجُوكَۚ
drive you out
তোমাকে তারা নির্বাসিত করবে
wayamkurūna
وَيَمْكُرُونَ
And they were planning
এবং তারা ষড়যন্ত্র করবে
wayamkuru
وَيَمْكُرُ
and (also) was planning
আর পরিকল্পনা করেন
l-lahu
ٱللَّهُۖ
Allah
আল্লাহ
wal-lahu
وَٱللَّهُ
And Allah
এবং আল্লাহ
khayru
خَيْرُ
is (the) Best
উত্তম
l-mākirīna
ٱلْمَٰكِرِينَ
(of) the Planners
পরিকল্পনাকারীদের

Transliteration:

Wa iz yamkuru bikal lazeena kafaroo liyusbitooka aw yaqtulooka aw yukhrijook; wa yamkuroona wa yamkurul laahu wallaahu khairul maakireen (QS. al-ʾAnfāl:30)

English Sahih International:

And [remember, O Muhammad], when those who disbelieved plotted against you to restrain you or kill you or evict you [from Makkah]. But they plan, and Allah plans. And Allah is the best of planners. (QS. Al-Anfal, Ayah ৩০)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

স্মরণ কর, সেই সময়ের কথা যখন কাফিরগণ তোমাকে বন্দী করার কিংবা হত্যা করার কিংবা দেশ থেকে বের করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করে। তারা চক্রান্ত করে আর আল্লাহও কৌশল করেন। আল্লাহই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। (আল-আনফাল, আয়াত ৩০)

Tafsir Ahsanul Bayaan

স্মরণ কর, যখন অবিশ্বাসীরা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা অথবা নির্বাসিত করার জন্য।[১] তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন। আর ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে আল্লাহ শ্রেষ্ঠ।[২]

[১] এটি সেই ষড়যন্ত্রের বর্ণনা যা মক্কার নেতারা এক রাত্রে 'দারুন নাদ্ওয়া'য় বসে করেছিল। আর শেষ পর্যন্ত তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে, বিভিন্ন গোত্রের যুবকদেরকে মহানবী (সাঃ)-কে হত্যার জন্য নিযুক্ত করা হোক। যাতে তাঁর খুনের বদলে কোন একজনকে হত্যা না করা হয়; বরং মুক্তিপণ দিয়ে বাঁচা যায়।

[২] সুতরাং সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক রাতে যুবকগণ তাঁর বাড়ির সামনে এমন প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে যে, তিনি বের হলেই মেরে ফেলা হবে। আল্লাহ তাআলা উক্ত ষড়যন্ত্রের সংবাদ নবী (সাঃ)-কে পৌঁছে দিলেন এবং তিনি এক মুঠো বালি নিয়ে তাদের মাথায় ছড়িয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলেন। কেউ নবী (সাঃ)-এর বের হওয়ার টের পর্যন্তও পায়নি। অতঃপর তিনি সওর গিরিগুহায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন। এটিই ছিল মহান আল্লাহর কাফেরদের বিরুদ্ধে কৌশল বা ষড়যন্ত্র। আর তাঁর থেকে উত্তম ষড়যন্ত্র আর কেউ করতে পারে না। مكر এর অর্থ দেখার জন্য আল ইমরানের ৫৪নং আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর স্মরণ করুন , যখন কাফেররা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আপনাকে বন্দী করার জন্য , বা হত্য করার অথবা নির্বাসিত করার জন্য। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও (তাদের ষড়যন্ত্রের বিপক্ষে) ষড়যন্ত্র করেন; আর আল্লাহ্‌ সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী [১]

[১] হিজরত-পূর্বকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাফের পরিবেষ্টিত ছিলেন এবং তারা তাকে হত্যা কিংবা বন্দী করার ব্যাপারে সলা-পরামর্শ করছিল, তখন আল্লাহ রাববুল আলামীন তাদের এ অপবিত্র হীন চক্রান্তকে ধূলিস্মাৎ করে দেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিরাপদে মদীনায় পৌছে দেন। ঘটনা এই যে, মদীনা থেকে আগত আনসারদের মুসলিম হওয়ার বিষয়টি যখন মক্কায় জানাজানি হয়ে যায়, তখন মক্কার কুরাইশরা চিন্তান্বিত হয়ে পড়ে যে, এ পর্যন্ত তো তার ব্যাপারটি মক্কার ভেতরেই সীমিত ছিল, যেখানে সর্বপ্রকার ক্ষমতাই ছিল আমাদের হাতে। কিন্তু এখন যখন মদীনাতেও ইসলাম বিস্তার লাভ করছে এবং বহু সাহাবী হিজরত করে মদীনায় চলে গেছেন, তখন এদের একটি কেন্দ্র মদীনাতেও স্থাপিত হয়েছে। এমতাবস্থায় এরা যেকোন রকম শক্তি আমাদের বিরুদ্ধে সংগ্রহ করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের উপর আক্রমণও করে বসতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে তারা এ কথাও উপলব্ধি করতে পারে যে, এ পর্যন্ত সামান্য কিছু সাহাবীই হিজরত করে মদীনায় গিয়েছেন, কিন্তু এখন প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে, স্বয়ং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সেখানে চলে যেতে পারেন। সে কারণেই মক্কার নেতৃবর্গ এ বিষয়ে সলা-পরামর্শ করার উদ্দেশ্যে মসজিদুল হারাম সংলগ্ন দারুন-নাদওয়াতে এক বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করে। যাতে আবু জাহল, নযর ইবন হারেস, উমাইয়া ইবন খালফ, আবু সুফিয়ান প্রমূখসহ সমগ্র বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির মোকাবেলার উপায় ও ব্যবস্থা সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা হয়। এখানে বসেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। [এর জন্য দেখুনঃ মুসনাদে আহমাদঃ ১/৩৪৮]

পরামর্শ অনুযায়ী কাফেররা সন্ধ্যা থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিস ওয়সাল্লামের বাড়িটি
অবরোধ করে ফেলে। আল্লাহর নির্দেশক্রমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমুঠো মাটি হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং তিনি তা সবার দিকে লক্ষ্য করে ছিটিয়ে দিয়ে তাদের বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে আসেন। [সা’দী] কুরাইশ সর্দারদের পরামর্শে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক যে তিনটি মত উপস্থাপিত হয়েছিল সে সবকটিই কুরআনের এ আয়াতে উল্লেখ করে বলা হয়েছে “সে সময়টি স্মরণ করুন, যখন কাফেররা আপনার বিরুদ্ধে নানা রকম ব্যবস্থা নেয়ার বিষয় চিন্তাভাবনা করছিল যে, আপনাকে বন্দী করে রাখবে না হত্যা করবে, নাকি দেশ থেকে বের করে দেবে। কিন্তু আল্লাহ্ তাদের সমস্ত পরিকল্পনা ধূলিস্মাৎ করে দিয়েছেন। সুতরাং আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে "

(وَاللهُ خَيْرُ الْمٰكِرِيْنَ)

অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা সবচাইতে উত্তম ব্যবস্থাপক, যা যাবতীয় ব্যবস্থা ও পরিকল্পনাকে চাপিয়ে যায়। যেমনটি এ ঘটনার সাথে পরিলক্ষিত হয়েছে।

Tafsir Bayaan Foundation

আর যখন কাফিররা তোমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল, তোমাকে বন্দী করতে অথবা তোমাকে হত্যা করতে কিংবা তোমাকে বের করে দিতে। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে উত্তম।

Muhiuddin Khan

আর কাফেরেরা যখন প্রতারণা করত আপনাকে বন্দী অথবা হত্যা করার উদ্দেশ্যে কিংবা আপনাকে বের করে দেয়ার জন্য তখন তারা যেমন ছলনা করত তেমনি, আল্লাহও ছলনা করতেন। বস্তুতঃ আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম।

Zohurul Hoque

আর স্মরণ করো! যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল যে তারা তোমাকে আটক করবে, অথবা তারা তোমাকে হত্যা করবে, অথবা তারা তোমাকে নির্বাসিত করবে। আর তারা ষড়যন্ত্র করেছিল, আর আল্লাহ্‌ও পরিকল্পনা করেছিলেন। আর পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে আল্লাহ্‌ই শ্রেষ্ঠ।