কুরআন মজীদ সূরা আল আ'রাফ আয়াত ৭৮
Qur'an Surah Al-A'raf Verse 78
আল আ'রাফ [৭]: ৭৮ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
فَاَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَاَصْبَحُوْا فِيْ دَارِهِمْ جٰثِمِيْنَ (الأعراف : ٧)
- fa-akhadhathumu
- فَأَخَذَتْهُمُ
- So seized them
- অতঃপর গ্রাস করলো তাদেরকে
- l-rajfatu
- ٱلرَّجْفَةُ
- the earthquake
- ভূমিকম্প
- fa-aṣbaḥū
- فَأَصْبَحُوا۟
- then they became
- অতঃপর তারা হয়ে গেলো
- fī
- فِى
- in
- মধ্যে
- dārihim
- دَارِهِمْ
- their homes
- ঘরের তাদের
- jāthimīna
- جَٰثِمِينَ
- fallen prone
- উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় অর্থাৎ মৃত পড়ে রইলো)
Transliteration:
Fa akhazat humur rajftu fa asbahoo fee daarihim jaasimmeen(QS. al-ʾAʿrāf:78)
English Sahih International:
So the earthquake seized them, and they became within their home [corpses] fallen prone. (QS. Al-A'raf, Ayah ৭৮)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতঃপর ভূমিকম্প তাদেরকে হঠাৎ পাকড়াও করল আর তারা তাদের ঘরগুলোতে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল। (আল আ'রাফ, আয়াত ৭৮)
Tafsir Ahsanul Bayaan
অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল,[১] ফলে তারা নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় ধ্বংস হয়ে গেল।
[১] এখানে رَجْفَةٌ (ভূমিকম্প) এর কথা উল্লেখ হয়েছে। অন্যত্র صَيْحَةٌ (বিকট শব্দ)এর কথা উল্লেখ হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই উভয় ধরনের আযাব তাদের উপর এসেছিল। উপর থেকে প্রচন্ড শব্দ এবং নীচে থেকে ভূমিকম্প। উভয় ধরনের এই আযাব তাদেরকে ধূলিসাৎ করে ছাড়ল।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
অতঃপর ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করল, ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে (মরে) রইল [১]।
[১] পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে, সালেহু ‘আলাইহিস সালামের দো’আয় পাহাড়ের একটি বিরাট প্রস্তর খণ্ড বিস্ফোরিত হয়ে আশ্চর্য ধরনের এক উষ্ট্রী বের হয়ে এসেছিল। আল্লাহ তা'আলা এ উষ্ট্রীকেই এ সম্প্রদায়ের জন্য সর্বশেষ পরীক্ষার বিষয় করে দিয়েছিলেন। সেমতে সে জনপদের সব মানুষ ও জীব-জন্তু যে কৃপ থেকে পানি পান করত, উষ্ট্রী তার সব পানি পান করে ফেলত। তাই সালেহ আলাইহিস সালাম তাদের জন্য পানির পালা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন যে, একদিন উষ্ট্রী পানি পান করবে এবং অন্য দিন জনপদের অধিবাসীরা। সুতরাং এ উষ্ট্রীর কারণে জাতির বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। ফলে তারা এর ধ্বংস কামনা করত। কিন্তু আযাবের ভয়ে নিজেরা একে ধ্বংস করতে উদ্যোগী হত না। কিন্তু তাদের সম্প্রদায়ের এক যুবক উষ্ট্রীকে হত্যা করার জন্য বেরিয়ে পড়ল। সে তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করল এবং তরবারীর আঘাতে তার পা কেটে হত্যা করল। কুরআনুল কারীম তাকেই সামূদ জাতির সর্ববৃহৎ হতভাগ্য লোক বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেঃ (اِذِ انْۢبَعَثَ اَشْقٰىهَا) [সূরা আস-শামসঃ ১২] কেননা, তার কারণেই গোটা সম্প্রদায় আযাবে পতিত হয়। উষ্ট্ৰী হত্যার ঘটনা জানার পর সালেহ ‘আলাইহিস সালাম স্বীয় সম্প্রদায়কে আল্লাহর নির্দেশ জানিয়ে দিলেন যে, এখন থেকে তোমাদের জীবন কাল মাত্র তিন দিন অবশিষ্ট রয়েছে। এরপরই আযাব নেবে আসবে। এ ওয়াদা সত্য, এর ব্যতিক্রম হওয়া সম্ভবপর নয়। কিন্তু যে জাতির দুঃসময় ঘনিয়ে আসে, তার জন্য কোন উপদেশ ও হুশিয়ারী কার্যকর হয় না। হতভাগ্য জাতি একথা শুনেও ক্ষমা ও প্রার্থনা করার পরিবর্তে স্বয়ং সালেহ আলাইহিস সালামকেই হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। তারা ভাবল, যদি সে সত্যবাদী হয় এবং আমাদের উপর আযাব আসেই, তবে আমরা নিজেদের পূর্বে তার ভবলীলাই সাঙ্গ করে দেই না কেন? পক্ষান্তরে যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে মিথ্যার সাজা ভোগ করুক। সামূদ জাতির এ সংকল্পের বিষয় কুরআনুল কারীমের অন্যত্র বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। এ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু লোক রাতের বেলা সালেহ আলাইহিস সালামকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার গৃহপানে রওয়ানা হল। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা পথিমধ্যেই প্রস্তর বর্ষণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিলেন। আল্লাহ বলেনঃ “তারাও গোপন ষড়যন্ত্র করল এবং আমিও প্রত্যুত্তরে এমন কৌশল অবলম্বন করলাম যে, তারা তা জানতেই পারল না " [সূরা আন-নমলঃ ৫০] শেষপর্যন্ত ভীষণ ভূমিকম্প শুরু হল এবং উপর থেকে বিকট ও ভয়াবহ চিৎকার শোনা গেল। ফলে সবাই একযোগে বসা অবস্থায় অধঃমুখী হয়ে ভূশায়ী হল। আলোচ্য আয়াতসমূহে ভূমিকম্পের কথা উল্লেখিত রয়েছে। অন্যান্য আয়াতে ভীষণ চিৎকার ও বিকট শব্দের কথা এসেছে। উভয় আয়াতদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের উপর উভয় প্রকার আযাবই এসেছিল; নীচের দিক থেকে ভূমিকম্প আর উপর দিক থেকে বিকট চিৎকার।
বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত আছে, তাবুক তাবুক যুদ্ধের সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজর নামক সে স্থানটি অতিক্রম করেন, যেখানে সামূদ জাতির উপর আযাব এসেছিল। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে নির্দেশ দেন, কেউ যেন এ আযাব বিধ্বস্ত এলাকার ভেতরে প্রবেশ কিংবা এর কূপের পানি ব্যবহার না করে। আর যদি ঢুকতেই হয় তবে যেন ক্ৰন্দনরত অবস্থায় ঢুকে [দেখুন, বুখারীঃ ৪৩৩, ৩৩৭৮, ৩৩৭৯, ৩৩৮১, ৪৭০২, ৪৪২০, মুসলিমঃ ২৯৮০, ২৯৮১, মুসনাদে আহমাদঃ ২/৬৬, ১১৭, ৭২, ৯১]
কোন কোন হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সামূদ জাতির উপর আপতিত আযাব থেকে আবু রেগাল নামক এক ব্যক্তি ছাড়া কেউ প্রাণে বাঁচতে পারেনি। এ ব্যক্তি তখন মক্কায় এসেছিল। মক্কার হারামের সম্মানার্থে আল্লাহ তা’আলা তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। অবশেষে যখন সে হারাম থেকে বাইরে যায়, তখন সামূদ জাতির আযাব তার উপরও পতিত হয় এবং সেও মৃত্যুমুখে পতিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে
মক্কার বাইরে আবু রেগালের কবরের চিহ্নও দেখান এবং বলেনঃ তার সাথে স্বর্ণের একটি ছড়িও দাফন হয়ে গিয়েছিল। সাহাবায়ে কেরাম কবর খনন করলে ছড়িটি পাওয়া যায়। [দেখুন, মুসনাদে আহমাদঃ ৩/২৯৬, মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৩৪০, ৩৪১, সহীহ ইবন হিব্বানঃ ৬১৯৭]
এসব আযাব-বিধ্বস্ত সম্প্রদায়ের বস্তিগুলোকে আল্লাহ্ তা'আলা ভবিষ্যৎলোকদের জন্য শিক্ষাস্থল হিসেবে সংরক্ষিত রেখেছেন। কুরআনুল কারম আরবদেরকে বার বার হুশিয়ার করেছে যে, তোমাদের সিরিয়া গমনের পথে এসব স্থান আজো শিক্ষার কাহিনী হয়ে বিদ্যমান রয়েছে।
Tafsir Bayaan Foundation
ফলে তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল, তাই সকালে তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে মরে রইল।
Muhiuddin Khan
অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকাল বেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।
Zohurul Hoque
সুতরাং তাদের পাকড়াও করল ভূমিকম্প, কাজেই তারা হয়ে গেল আপন বাড়িঘরেই নিথরদেহী।