Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল আ'রাফ আয়াত ৫৬

Qur'an Surah Al-A'raf Verse 56

আল আ'রাফ [৭]: ৫৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَلَا تُفْسِدُوْا فِى الْاَرْضِ بَعْدَ اِصْلَاحِهَا وَادْعُوْهُ خَوْفًا وَّطَمَعًاۗ اِنَّ رَحْمَتَ اللّٰهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ (الأعراف : ٧)

walā
وَلَا
And (do) not
এবং না
tuf'sidū
تُفْسِدُوا۟
cause corruption
তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করো
فِى
in
মধ্যে
l-arḍi
ٱلْأَرْضِ
the earth
পৃথিবীর
baʿda
بَعْدَ
after
পরেও
iṣ'lāḥihā
إِصْلَٰحِهَا
its reformation
তা সংস্কারের
wa-id'ʿūhu
وَٱدْعُوهُ
And call Him
এবং তোমরা ডাকে তাঁকে
khawfan
خَوْفًا
(in) fear
ভয়
waṭamaʿan
وَطَمَعًاۚ
and hope
ও আশার (সাথে)
inna
إِنَّ
Indeed
নিশ্চয়ই
raḥmata
رَحْمَتَ
(the) Mercy
অনুগ্রহ
l-lahi
ٱللَّهِ
(of) Allah
আল্লাহর
qarībun
قَرِيبٌ
(is) near
নিকটে
mina
مِّنَ
for
থেকে
l-muḥ'sinīna
ٱلْمُحْسِنِينَ
the good-doers
সৎকর্মশীলদের

Transliteration:

Wa laa tufsidoo fil ardi ba'da islaahihaa wad'oohu khawfanw wa tama'aa; inna rahmatal laahi qareebum minal muhsineen (QS. al-ʾAʿrāf:56)

English Sahih International:

And cause not corruption upon the earth after its reformation. And invoke Him in fear and aspiration. Indeed, the mercy of Allah is near to the doers of good. (QS. Al-A'raf, Ayah ৫৬)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপিত হওয়ার পর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, আর তাঁকে ভয়-ভীতি ও আশা-ভরসা নিয়ে ডাকতে থাক, আল্লাহর দয়া তো (সব সময়) তাদের নিকটে আছে যারা সৎ কাজ করে। (আল আ'রাফ, আয়াত ৫৬)

Tafsir Ahsanul Bayaan

পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর ওতে বিপর্যয় ঘটায়ো না এবং তাঁকে ভয় ও আশার সঙ্গে আহবান কর। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী। [১]

[১] এই আয়াতগুলোতে চারটি জিনিসের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। (ক) আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি সহকারে এবং গোপনে দু'আ করা। যেমন, হাদীসেও এসেছে যে, "হে লোক সকল! তোমরা নিজের উপর দয়ার্দ্র হও। কেননা, তোমরা কোন বধির ও অনুপস্থিতকে ডাকছ না, বরং তোমরা ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি সব কিছু শোনেন এবং দেখেন।" (বুখারীঃ দু'আ অধ্যায়, মুসলিমঃ জান্নাত অধ্যায়) (খ) দু'আতে বাড়াবাড়ি না করা। অর্থাৎ, নিজের যোগ্যতা ও মর্যাদার ঊর্ধ্বে যেন দু'আ না করা হয়। (অনুপযুক্ত কিছু চাওয়া না হয়।) (গ) শান্তি প্রতিষ্ঠার পর ফাসাদ বা অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করা। অর্থাৎ, আল্লাহর অবাধ্যতা করে ফাসাদ সৃষ্টি করার কাজে যেন অংশ না নেওয়া হয়। (ঘ) আল্লাহর শাস্তির ভয় যেন অন্তরে থাকে এবং তাঁর দয়ার আশাও। এইভাবে যারা দু'আ করে, তারাই হল সৎকর্মশীল। আর অবশ্যই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতি নিকটবর্তী।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর যমীনে শান্তি স্থাপনের পর তোমরা সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না [১]। আর আল্লাহকে ভয় ও আশার সাথে ডাক [২]। নিশ্চয় আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ মুহসিনদের খুব নিকটে [৩]

[১] এখানে - (صلاح) ও (فساد) শব্দ দুটি পরস্পর বিরোধী। (صلاح) শব্দের অর্থ সংস্কার আর (اصلاح) শব্দের অর্থ সংস্কার করা এবং (فساد) শব্দের অর্থ অনর্থ ও গোলযোগ আর (افساد) শব্দের অর্থ অনর্থ সৃষ্টি করা। মূলতঃ সমতা থেকে বের হয়ে যাওয়াকে ‘ফাসাদ’ বলা হয়; তা সামান্য হোক কিংবা বেশী। কম বের হলে কম ফাসাদ এবং বেশী বের হলে বেশী ফাসাদ হবে। কাজেই আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় এই যে, পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না, আল্লাহ্ তা'আলা কর্তৃক সংস্কার করার পর।

আল্লাহ্ তা'আলার সংস্কার কয়েক প্রকার হতে পারে। (এক) প্রথমেই জিনিসটি সঠিকভাবে সৃষ্টি করা। যেমন, সূরা মুহাম্মাদের ২নং আয়াতে বলা হয়েছে; (وَاَصْلَحَ بَالَهُمْ) (দুই) অনর্থ আসার পর তা দূর করা। যেমন, সূরা আল-আহযাবের ৭১নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ

(يُّصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ)

(তিন) সংস্কারের নির্দেশ দান করা। যেমন, এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ “যখন আল্লাহ্ তা'আলা পৃথিবীর সংস্কার সাধন করেছেন, তখন তোমরা তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না।" এখানে পৃথিবীর সংস্কার সাধন করার দুটি অর্থ হতে পারে। (এক) বাহ্যিক সংস্কার; অর্থাৎ পৃথিবীকে চাষাবাদ ও বৃক্ষ রোপনের উপযোগী করেছেন, তাতে মেঘের সাহায্যে পানি বর্ষণ করে মাটি থেকে ফল-ফুল উৎপন্ন করেছেন এবং মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর জন্য মাটি থেকে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্ৰী সৃষ্টি করেছেন। (দুই) পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ ও অর্থগত সংস্কার করেছেন। নবী-রাসূল, গ্রন্থ ও হেদায়াত প্রেরণ করে পৃথিবীকে কুফর, শির্ক, পাপাচার ইত্যাদি থেকে পবিত্র করেছেন। সৎ আমল দিয়ে পূর্ণ করেছেন। আয়াতে উভয় অর্থ, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সংস্কারও উদ্দিষ্ট হতে পারে। অতএব আয়াতের অর্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে পৃথিবীর সংস্কার সাধন করেছেন। এখন তোমরা এতে গোনাহ ও অবাধ্যতার মাধ্যমে গোলযোগ ও অনর্থ সৃষ্টি করো না। [কুরতুবী ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

[২] অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় ও আশা সহকারে ডাক। একদিকে দো’আ অগ্রাহ্য হওয়ার ভয় থাকবে এবং অপরদিকে তাঁর করুণা লাভের পূর্ণ আশাও থাকবে। এ আশা ও ভয়ই দৃঢ়তার পথে মানবাত্মার দুটি বাহু। এ বাহুদ্বয়ের সাহায্যে সে উধ্বলোকে আরোহণ করে এবং সুউচ্চ পদ মর্যাদা অর্জন করে। এ বাক্য থেকে বাহ্যতঃ প্রতীয়মান হয় যে, আশা ও ভয় সমান সমান হওয়া উচিত। কোন কোন আলেম বলেন, জীবিতাবস্থায় ও সুস্থতার সময় ভয়কে প্রবল রাখা প্রয়োজন, যাতে আনুগত্যে ক্রটি না হয়, আর যখন মৃত্যু নিকটবর্তী হয়, তখন আশাকে প্রবল রাখবে। কেননা, এখন কাজ করার শক্তি বিদায় নিয়েছে। করুণা লাভের আশা করাই এখন তার একমাত্র কাজ। [কুরতুবী] মোটকথা, দো’আর দুটি আদব হল- বিনয় ও নম্রতা এবং আস্তে ও সংগোপনে দো’আ করা। এ দুটি গুণই মানুষের বাহ্যিক দেহের সাথে সম্পৃক্ত। কেননা, বিনয়ের অর্থ হল দো’আর সময় দৈহিক আকার-আকৃতিকে অপারগ ও ফকীরের মত করে নেয়া, অহংকারী ও বেপরোয়ার মত না হওয়া। দো’আ সংগোপনে করার সম্পর্কও জিহবার সাথে যুক্ত। এ আয়াতে দো’আর আরো দুটি আভ্যন্তরীণ আদব বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর সম্পর্ক মানুষের মনের সাথে। আর তা হল এই যে, দো'আকারীর মনে এ ভয় ও আশংকা থাকা উচিত যে, সম্ভবতঃ দো’আটি গ্রাহ্য হবে না এবং এ আশাও থাকা উচিত যে, দো’আ কবুল হতে পারে। তবে দো'আকারীর মনে এটা প্রবল থাকতে হবে যে, তার দো’আ কবুল হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমরা আল্লাহকে এমনভাবে ডাকবে যে, তোমাদের দৃঢ় বিশ্বাস তিনি তা কবুল করবেন। “ [তিরমিয়ীঃ ৩৪৭৯, হাকেমঃ ১/৪৯৩, মুসনাদে আহমাদঃ ২/১৭৭]

[৩] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলার করুণা সৎকর্মীদের নিকটবর্তী। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যদিও দো’আর সময় ভয় ও আশা উভয় অবস্থাই থাকা বাঞ্চনীয়, কিন্তু এতদুভয়ের মধ্যে আশার দিকটিই থাকবে প্রবল। কেননা, বিশ্ব প্রতিপালক পরম দয়ালু আল্লাহর দান ও অনুগ্রহে কোন ক্রটি ও কৃপণতা নেই। তিনি মন্দ লোকের দো’আও কবুল করতে পারেন। কবুল না হওয়ার আশংকা স্বীয় কুকর্ম ও গোনাহর অকল্যাণেই থাকতে পারে। কারণ, আল্লাহর রহমতের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সৎকর্মী হওয়া প্রয়োজন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "কেউ কেউ সুদীর্ঘ সফর করে, স্বীয় বেশভূষা ফকীরের মত করে এবং আল্লাহর সামনে দো’আর হস্ত প্রসারিত করে; কিন্তু তার খাদ্য, পানীয় ও পোষাক সবই হারাম- এরূপ লোকের দো'আ কিরূপে কবুল হতে পারে?” [মুসলিমঃ ১০১৫) অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “বান্দা যতক্ষণ কোন গোনাহ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদের দো’আ না করে এবং তড়িঘড়ি না করে, ততক্ষণ তার দো'আ কবুল হতে থাকে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ তড়িঘড়ি দোআ করার অর্থ কি? তিনি বলেনঃ এর অর্থ হল এরূপ ধারণা করে বসা যে, আমি এত দীর্ঘ দিন থেকে দোআ করছি, অথচ এখনো পর্যন্ত কবুল হল না। অতঃপর নিরাশ হয়ে দো’আ ত্যাগ করা। [মুসলিমঃ ২৭৩৫] অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “যখনই আল্লাহর কাছে দো'আ করবে তখনই কবুল হওয়ার ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হয়ে দো’আ করবে মুসনাদ” [আহমাদঃ ২/১৭৭, তিরমিয়ীঃ ৩৪৭৯) অর্থাৎ আল্লাহর রহমতের ভাণ্ডারের বিস্তৃতিকে সামনে রেখে দোআ করলে অবশ্যই দোআ কবুল হবে বলে মনকে মজবুত কর। এমন মনে করা, গোনাহর কারণে দোআ কবুল না হওয়ার আশংকা অনুভব করা এর পরিপন্থী নয়।

Tafsir Bayaan Foundation

আর তোমরা যমীনে ফাসাদ করো না তার সংশোধনের পর এবং তাঁকে ডাক ভয় ও আশা নিয়ে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।

Muhiuddin Khan

পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। তাঁকে আহবান কর ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।

Zohurul Hoque

আর দুনিয়াতে গন্ডগোল সৃষ্টি করো না তার মধ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠার পরে, আর তাঁকে ডাকো ভয়ে ও আশায়। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।