Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল আ'রাফ আয়াত ৪৬

Qur'an Surah Al-A'raf Verse 46

আল আ'রাফ [৭]: ৪৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌۚ وَعَلَى الْاَعْرَافِ رِجَالٌ يَّعْرِفُوْنَ كُلًّا ۢ بِسِيْمٰىهُمْۚ وَنَادَوْا اَصْحٰبَ الْجَنَّةِ اَنْ سَلٰمٌ عَلَيْكُمْۗ لَمْ يَدْخُلُوْهَا وَهُمْ يَطْمَعُوْنَ (الأعراف : ٧)

wabaynahumā
وَبَيْنَهُمَا
And between them
এবং মাঝে উভয়ের
ḥijābun
حِجَابٌۚ
(will be) a partition
পর্দা
waʿalā
وَعَلَى
and on
এবং উপর (থাকবে)
l-aʿrāfi
ٱلْأَعْرَافِ
the heights
আ'রাফের
rijālun
رِجَالٌ
(will be) men
কিছু লোক
yaʿrifūna
يَعْرِفُونَ
recognizing
তারা চিনবে
kullan
كُلًّۢا
all
প্রত্যেককে
bisīmāhum
بِسِيمَىٰهُمْۚ
by their marks
মাধ্যমে চিহ্নগুলো তাদের
wanādaw
وَنَادَوْا۟
And they will call out
এবং তারা ডেকে বলবে
aṣḥāba
أَصْحَٰبَ
(to the) companions
অধিবাসীদেরকে
l-janati
ٱلْجَنَّةِ
(of) Paradise
জান্নাতের
an
أَن
that
যে
salāmun
سَلَٰمٌ
"Peace
"শান্তি
ʿalaykum
عَلَيْكُمْۚ
(be) upon you"
উপর তোমাদের (বর্ষিত হোক)"
lam
لَمْ
Not
নি
yadkhulūhā
يَدْخُلُوهَا
they have entered it
তাতে প্রবেশ করেন (তারা এখনও)
wahum
وَهُمْ
but they
কিন্তু তারা
yaṭmaʿūna
يَطْمَعُونَ
hope
তারা আশা করে

Transliteration:

Wa bainahumaa hijaab; wa 'alal A'raafi rijaaluny ya'rifoona kullam biseemaahum; wa naadaw Ashaabal jannati an salaamun 'alaikum; lam yadkhuloohaa wa hum yatma'oon (QS. al-ʾAʿrāf:46)

English Sahih International:

And between them will be a partition [i.e., wall], and on [its] elevations are men who recognize all by their mark. And they call out to the companions of Paradise, "Peace be upon you." They have not [yet] entered it, but they long intensely. (QS. Al-A'raf, Ayah ৪৬)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

উভয় দলের মাঝে আছে পর্দা আর আ‘রাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী অংশ) কিছু লোক থাকবে যারা প্রত্যেক লোককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে (যে সে জান্নাতের বাসিন্দা না জাহান্নামের)। জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে তারা বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম’। তারা (আ‘রাফবাসীরা) তখনও জান্নাতে প্রবেশ করেনি কিন্তু তারা আশা করছে। (আল আ'রাফ, আয়াত ৪৬)

Tafsir Ahsanul Bayaan

(জান্নাতী ও জাহান্নামী অথবা জান্নাত ও জাহান্নাম) উভয়ের মধ্যে পর্দা থাকবে[১] এবং আ’রাফে কিছু লোক থাকবে[২] যারা প্রত্যেককে তার লক্ষণ দ্বারা চিনবে[৩] এবং তারা বেহেশ্তবাসীদেরকে আহবান করে বলবে, ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ তারা তখনও বেহেশ্তে প্রবেশ করেনি, কিন্তু প্রবেশের আকাঙ্ক্ষা করে। [৪]

[১] 'উভয়ের মধ্যে' বলতে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে অথবা কাফের ও মু'মিনদের মাঝখানে। حِجَابٌ (পর্দা বা আড়াল) বলতে সেই প্রাচীরকে বুঝানো হয়েছে, যার কথা সূরা হাদীদ ৫৭;১৩ নং আয়াতে এসেছে।{فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ بِسُورٍ لَهُ بَابٌ} "অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে।" এটাই হল আ'রাফের দেওয়াল।

[২] আ'রাফ বেহেশ্ত ও দোযখের মধ্যবর্তী জায়গা। আ'রাফবাসী কারা হবে? এদের নির্দিষ্টীকরণের ব্যাপারে মুফাসসেরদের মাঝে রয়েছে বিরাট মতভেদ। অধিকাংশ মুফাসসেরদের নিকট এরা হবে সেই লোক, যাদের পুণ্য ও পাপ সমান সমান হবে। এদের পুণ্যরাশি জাহান্নামে যাওয়ার পথে এবং পাপরাশি জান্নাতে যাওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করবে। আর এইভাবে আল্লাহর পক্ষ হতে চূড়ান্ত ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে আটকে থাকবে।

[৩] سِيْمَاءٌ এর অর্থ, নিদর্শন, চিহ্ন। জান্নাতীদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল এবং সতেজ হবে। পক্ষান্তরে জাহান্নামীদের চেহারা কালো ও চোখ নীলবর্ণ হবে। এইভাবে তারা উভয় প্রকারের মানুষকে চিনে নেবে।

[৪] এখানে يَطْمَعُوْنَ এর অর্থ কেউ কেউ يَعْلَمُوْنَ করেছেন। অর্থাৎ, তারা জানে যে, তাদেরকে অচিরেই জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর তাদের উভয়ের মধ্যে পর্দা থাকবে। আর আ’রাফে [১] কিছু লোক থাকবে , যারা প্রত্যেককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনবে [২]। আর তারা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘তোমাদের উপর সালাম [৩]।’ তারা তখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু আকাংখা করে।

[১] আরাফ কি?;

সূরা হাদীদের ১২ থেকে ১৯নং আয়াতে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হাশরের ময়দানে তিনটি দল হবে। (এক) সুস্পষ্ট কাফের ও মুশরিক। (দুই) মুমিনের দল। তাদের সাথে ঈমানের আলো থাকবে। (তিন) মুনাফেকের দল। এরা দুনিয়াতে মুসলিমদের সাথে মিলে থাকত। হাশরের ময়দানেও প্রথম দিকে সাথে মিলে থাকবে এবং পুলসেরাত চলতে শুরু করবে। তখন একটি ভীষণ অন্ধকার সবাইকে ঘিরে ফেলবে। মুমিনরা ঈমানের আলোর সাহায্যে সামনে এগিয়ে যাবে। মুনাফেকরা ডেকে ডেকে তাদেরকে বলবেঃ একটু আস। আমরাও তোমাদের আলো দ্বারা
উপকৃত হই। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ফিরিশতা বলবেঃ পেছনে ফিরে যাও এবং সেখানেই আলো তালাশ কর। এ আলো হচ্ছে ঈমান ও সৎকর্মের। এ আলো হাসিল করার স্থান পেছনে চলে গেছে। যারা সেখানে ঈমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে এ আলো অর্জন করেনি, তারা আজ আলো দ্বারা উপকৃত হবে না। এমতাবস্থায় মুমিন ও মুনাফেকদের মধ্যে একটি প্রাচীর বেষ্টনী দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে। এতে একটি দরজা থাকবে। দরজার বাইরে কেবলই আযাব দৃষ্টিগোচর হবে এবং ভেতরে মুমিনরা থাকবে। তাদের সামনে আল্লাহর রহমত এবং জান্নাতের মনোরম পরিবেশ বিরাজ করবে। ইবন জারীর ও অন্যান্য তাফসীরবিদের মতে এ আয়াতে উল্লেখিত (اعراف) বলে ঐ প্রাচীর বেষ্টনীকেই বুঝানো হয়েছে। এ প্রাচীর বেষ্টনীর উপরিভাগের নামই আরাফ। কেননা, (اعراف) শব্দটি (عرف) এর বহুবচন। এর অর্থ প্রত্যেক বস্তুর উপরিভাগ। এ ব্যাখ্যা থেকে জানা গেল, জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী প্রাচীরবেষ্টনীর উপরিভাগকে আরাফ বলা হয়। আয়াতে বলা হয়েছে যে, হাশরে এ স্থানে কিছুসংখ্যাক লোক থাকবে। তারা জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় দিকের অবস্থা নিরীক্ষণ করবে এবং উভয়পক্ষের লোকদের সাথে প্রশ্নোত্তর ও কথাবার্তা বলবে।

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আরাফ উঁচু টাওয়ারের মত যা জান্নাত এবং জাহান্নামের মাঝখানে থাকবে। গোনাহগার কিছু বান্দাকে সেখানে রেখে দেয়া হবে।’ কেউ কেউ বলেনঃ আ'রাফ নামকরণ এজন্য করা হয়েছে যে, এখান থেকে তারা একে অপরকে চিনতে পারবে।

আরাফবাসী কারাঃ

বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, আরাফবাসী ঐ সমস্ত লোকেরা যাদের সৎ এবং অসৎকর্ম সমান হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেনঃ কিছু লোক এমনও থাকবে, যারা জাহান্নাম থেকে তো মুক্তি পাবে, কিন্তু তখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করার আশা পোষণ করবে। তাদেরকেই আরাফবাসী বলা হয়। ইবন জারীর বলেন, তাদের সম্পর্কে এটা বলাই বেশী সঠিক যে, তারা হচ্ছে এমন কিছু লোক যারা জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে তাদের নিদর্শনের মাধ্যমে চিনতে পারবে। [তাবারী]

[২] এ আয়াতে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের চিহ্ন কেমন হবে তা বর্ণনা করা হয়নি। অন্য আয়াতে তাদের কিছু চিহ্ন বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “সেদিন কিছু মুখ উজ্জল হবে এবং কিছু মুখ কালো হবে; যাদের মুখ কালো হবে (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর, যেহেতু তোমরা কুফরী করতে " [সূরা আলে-ইমরান ১০৬] “আপনি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবেন" [সূরা আল-মুতাফফিফীন; ২৪] আরও বলেন, “সেদিন কোন কোন মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে" [সূরা আল-কিয়ামাহ ২২] আরও বলেন, “অনেক চেহারা সেদিন হবে উজ্জ্বল" [সূরা আবাসা; ৩৮] সুতরাং চেহারা শুভ্র ও সুন্দর হওয়া জান্নাতীদের চিহ্ন। আর চেহারা কালো, বিকট ও নীলচক্ষুবিশিষ্ট হওয়া জাহান্নামীদের চিহ্ন। আল্লাহ বলেন, “তাদের মুখমন্ডল যেন রাতের অন্ধকারের আস্তরণে আচ্ছাদিত।” তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।" [সূরা ইউনুস ২৭] আরও বলেন, “আর অনেক চেহারা সেদিন হবে ধূলিধূসর" [সূরা আবাসাঃ ৪০] আরও বলেন, "যেদিন শিংগায় ফুক দেয়া হবে এবং যেদিন আমরা অপরাধীদেরকে নীলচক্ষু তথা দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব।” [সূরা ত্বা-হা; ১০২] আর এ জন্যই ইবন আব্বাস বলেন, জাহান্নামীদের চেনা যাবে তাদের কালো চেহারায়; আর জান্নাতীদের চেনা যাবে তাদের চেহারার শুভ্রতায়। [তাবারী]

[৩] আ’রাফবাসীরা জান্নাতীদের ডেকে বলবেঃ ‘সালামুন আলাইকুম’। এ বাক্যটি দুনিয়াতেও পারস্পরিক সাক্ষাতের সময় সম্মান প্রদর্শনার্থে বলা হয় এবং বলা সুন্নাত। মৃত্যুর পর কবর যিয়ারতের সময় এবং হাশর ও কেয়ামতেও বলা হবে। অনুরূপভাবে ফিরিশতাগণও জান্নাতীদেরকে এ বাক্য দ্বারা সালাম করবে। [সূরা আর-রা'আদঃ ২৪, সূরা আয-যুমারঃ ৭৩] [তাবারী]। কিন্তু আয়াত ও হাদীসদৃষ্টে জানা যায় যে, দুনিয়াতে 'আসসালামু 'আলাইকুম' বলা সুন্নাত।

Tafsir Bayaan Foundation

আর তাদের মধ্যে থাকবে পর্দা এবং আ‘রাফের* উপর থাকবে কিছু লোক, যারা প্রত্যেককে তাদের চি‎‎হ্ন দ্বারা চিনবে। আর তারা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে,‘তোমাদের উপর সালাম’। তারা (এখনো) তাতে প্রবেশ করেনি তবে তারা আশা করবে।

* জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী প্রাচীরকে আ‘রাফ বলে।

Muhiuddin Khan

উভয়ের মাঝখানে একটি প্রাচীর থাকবে এবং আরাফের উপরে অনেক লোক থাকবে। তারা প্রত্যেককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনে নেবে। তারা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবেঃ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তারা তখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না, কিন্তু প্রবেশ করার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।

Zohurul Hoque

আর এই দুয়ের মধ্যে থাকবে একটি পর্দা। আর উঁচু স্থানসমূহে থাকবে কিছু লোক যাঁরা সবাইকে চেনেন তাদের চিহ্নের দ্বারা। আর তাঁরা বেহেশতের আগন্তক বাসিন্দাদের ডেকে বলবেন -- ''সালামুন আলাইকুম।’’ তারা এখনও তাতে প্রবেশ করে নি, তবে তারা আশা রাখে।