কুরআন মজীদ সূরা আল আ'রাফ আয়াত ৩২
Qur'an Surah Al-A'raf Verse 32
আল আ'রাফ [৭]: ৩২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللّٰهِ الَّتِيْٓ اَخْرَجَ لِعِبَادِهٖ وَالطَّيِّبٰتِ مِنَ الرِّزْقِۗ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَّوْمَ الْقِيٰمَةِۗ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الْاٰيٰتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ (الأعراف : ٧)
- qul
- قُلْ
- Say
- (হে নাবী) বলো
- man
- مَنْ
- "Who
- "কে
- ḥarrama
- حَرَّمَ
- has forbidden
- নিষেধ করেছে
- zīnata
- زِينَةَ
- (the) adornment
- শোভার বস্তুকে
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- (from) Allah
- আল্লাহর (দেওয়া)
- allatī
- ٱلَّتِىٓ
- which
- যা
- akhraja
- أَخْرَجَ
- He has brought forth
- তিনি সৃষ্টি করেছেন
- liʿibādihi
- لِعِبَادِهِۦ
- for His slaves
- জন্যে তাঁর দাসদের
- wal-ṭayibāti
- وَٱلطَّيِّبَٰتِ
- and the pure things
- ও পবিত্র বস্তুসমূহকে
- mina
- مِنَ
- of
- হতে
- l-riz'qi
- ٱلرِّزْقِۚ
- sustenance?"
- জীবিকা"
- qul
- قُلْ
- Say
- বলো
- hiya
- هِىَ
- "They
- "তা
- lilladhīna
- لِلَّذِينَ
- (are) for those who
- (তাদের) জন্যে যারা
- āmanū
- ءَامَنُوا۟
- believe
- ঈমান আনে
- fī
- فِى
- during
- মধ্যে (প্রতি)
- l-ḥayati
- ٱلْحَيَوٰةِ
- the life
- জীবনের
- l-dun'yā
- ٱلدُّنْيَا
- (of) the world
- পার্থিব
- khāliṣatan
- خَالِصَةً
- exclusively (for them)
- বিশেষ করে
- yawma
- يَوْمَ
- (on the) Day
- দিনে
- l-qiyāmati
- ٱلْقِيَٰمَةِۗ
- (of) Resurrection
- ক্বিয়ামাতের
- kadhālika
- كَذَٰلِكَ
- Thus
- এভাবে
- nufaṣṣilu
- نُفَصِّلُ
- We explain
- বিস্তারিত বর্ণনা করি আমরা
- l-āyāti
- ٱلْءَايَٰتِ
- the Signs
- নিদর্শনাবলী
- liqawmin
- لِقَوْمٍ
- for (the) people
- জন্যে জাতির
- yaʿlamūna
- يَعْلَمُونَ
- who know"
- (যারা) জ্ঞান রাখে"
Transliteration:
Qul man harrama zeenatal laahil lateee akhraja li'ibaadihee wattaiyibaati minar rizq; qul hiya lillazeena aamanoo fil hayaatid dunyaa khaalisatany Yawmal Qiyaamah; kazaalika nufassihul Aayaati liqawminy ya'lamoon(QS. al-ʾAʿrāf:32)
English Sahih International:
Say, "Who has forbidden the adornment of [i.e., from] Allah which He has produced for His servants and the good [lawful] things of provision?" Say, "They are for those who believed during the life of this world, exclusively [for them] on the Day of Resurrection." Thus do We detail the verses for a people who know. (QS. Al-A'raf, Ayah ৩২)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
বল, ‘যে সব সৌন্দর্য-শোভামন্ডিত বস্তু ও পবিত্র জীবিকা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কে তা হারাম করল’? বল, ‘সে সব হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য দুনিয়ার জীবনে বিশেষতঃ ক্বিয়ামাতের দিনে। এভাবে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি।’ (আল আ'রাফ, আয়াত ৩২)
Tafsir Ahsanul Bayaan
বল, ‘আল্লাহ স্বীয় দাসদের জন্য যে সব সুশোভন বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, তা কে নিষিদ্ধ করেছে?’ বল, ‘পার্থিব জীবনে বিশেষ করে কিয়ামতের দিনে এ সমস্ত তাদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে।’[১] এরূপে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি।
[১] মুশরিকরা যেভাবে তাওয়াফ করার সময় পোশাক পরিধান করাকে অপছন্দনীয় মনে করেছিল, অনুরূপ কিছু হালাল জিনিসকেও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হারাম করে নিয়েছিল। (যেমন, অনেক সূফীবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিরাও করে থাকে)। আর অনেক হালাল জিনিসকে নিজেদের প্রতিমাদের নামে উৎসর্গ করার কারণে সেগুলোকেও হারাম মনে করত। মহান আল্লাহ বললেন, মানুষের সাজ-সজ্জার জন্য (যেমন, পোশাক ইত্যাদি) এবং পানাহারের জন্য অনেক উৎকৃষ্ট জিনিস বানিয়েছি, সেগুলোকে কে হারাম করেছে? অর্থ হল, মানুষের হারাম করে নেওয়ার কারণে আল্লাহর হালাল করা জিনিস হারাম হয়ে যাবে না। বরং সেগুলো হালালই থাকবে। এই হালাল ও পবিত্র জিনিসগুলো আসলে আল্লাহ ঈমানদারদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, যদিও কাফেররাও তা থেকে উপকারিতা এবং তৃপ্তি লাভ করে থাকে। বরং অনেক সময় পার্থিব সম্পদ এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করার ব্যাপারে তাদেরকে মুসলিমদের চেয়েও বেশী সফল দেখা যায়। তবে তা অপরের অসীলায় এবং সাময়িকভাবে। এতে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিগত ইচ্ছা ও হিকমতও আছে। কিয়ামতের দিন এ নিয়ামতসমূহ কেবল ঈমানদারদের জন্য হবে। কেননা, কাফেরদের উপর যেভাবে জান্নাত হারাম হবে, অনুরূপভাবে জান্নাতের যাবতীয় খাদ্য-পানিও তাদের জন্য হারাম হবে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
বলুন, 'আল্লাহ নিজের বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু ও বিশুদ্ধ জীবিক সৃষ্টি করেছেন তা কে হারাম করেছে [১]?’ বলুন, ‘পার্থিব জীবনে, বিশেষ করে কেয়ামতের দিনে এ সব তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে [২]।’ এভাবে আমারা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি।
চতুর্থ রুকূ’
[১] কোন বস্তু হালাল অথবা হারাম করা একমাত্র সে সত্তারই কাজ যিনি এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন। এতে অন্যের হস্তক্ষেপ বৈধ নয়। কাজেই সেসব লোক দণ্ডনীয়, যারা আল্লাহর হালালকৃত উৎকৃষ্ট পোষাক অথবা পবিত্র ও সুস্বাদু খাদ্যকে হারাম মনে করে। সংগতি থাকা সত্ত্বেও জীর্ণাবস্থায় থাকা ইসলামের শিক্ষা নয় এবং ইসলামের দৃষ্টিতে পছন্দনীয়ও নয়। খোরাক ও পোষাক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী ও তাবেয়ীগণের সুন্নাতের সারকথা এই যে, ‘এসব ব্যাপারে লৌকিকতা পরিহার করতে হবে। যেরূপ পোষাক ও খোরাক সহজলভ্য তাই কৃতজ্ঞতা সহকারে ব্যবহার করতে হবে। ’আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, আরবরা জাহিলিয়াতে কাপড়-চোপড় সহ বেশ কিছু জিনিস হারাম করত। অথচ এগুলো আল্লাহ হারাম করেননি। যেমন যে রিযক দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ বলুন, ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করছ?" [সূরা ইউনুস; ৫৯] তখন আল্লাহ্ তা'আলা আলোচ্য এ আয়াত নাযিল করেন। [তাবারী] কাতাদা বলেন, “এ আয়াত দ্বারা জাহেলিয়াতের কাফেররা বাহীরা, সায়েবা, ওসীলা, হাম ইত্যাদি নামে যে সমস্ত প্রাণী হারাম করত সেগুলোকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে।' [তাবারী]
[২] আয়াতের এ বাক্যে একটি বিশেষ তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, দুনিয়ার সব নেয়ামত উৎকৃষ্ট পোষাক ও সুস্বাদু খাদ্য প্রকৃতপক্ষে আনুগত্যশীল মুমিনদের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের কল্যাণেই অন্যেরা ভোগ করতে পারছে। কিন্তু আখেরাতে সমস্ত নেয়ামত ও সুখ কেবলমাত্র আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। আয়াতের এ বাক্যে বলা হয়েছে, “আপনি বলে দিনঃ সব পার্থিব নেয়ামত প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবনেও মুমিনদেরই প্রাপ্য এবং কেয়ামতের দিন তো এককভাবে তাদের জন্যই নির্দিষ্ট হবে।” [তাবারী ইবন আব্বাস হতে] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার অপর মতে এ বাক্যটির অর্থ এই যে, পার্থিব সব নেয়ামত ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আখেরাতে শাস্তির কারণ হবে না- এ বিশেষ অবস্থাসহ তা একমাত্র অনুগত মুমিন বান্দাদেরই প্রাপ্য। কাফের ও পাপাচারীর অবস্থা এরূপ নয়। পার্থিব নেয়ামত তারাও পায় বরং আরো বেশী পায়; কিন্তু এসব নেয়ামত আখেরাতে তাদের জন্য শাস্তি ও স্থায়ী আযাবের কারণ হবে। কাজেই পরিণামের দিক দিয়ে এসব নেয়ামত তাদের জন্য সম্মান ও সুখের বস্তু নয়। [কুরতুবী] কোন কোন তাফসীরবিদের মতে এর অর্থ এই যে, পার্থিব সব নেয়ামতের সাথে পরিশ্রম, কষ্ট, হস্তচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা ও নানারকম দুঃখ-কষ্ট লেগে থাকে, নির্ভেজাল নেয়ামত ও অনাবিল সুখের অস্তিত্ব এখানে নেই। তবে কেয়ামতে যারা এসব নেয়ামত লাভ করবে, তারা নির্ভেজাল অবস্থায় লাভ করবে। এগুলোর সাথে কোনরূপ পরিশ্রম, কষ্ট, হস্তচু্যত হওয়ার আশংকা এবং কোন চিন্তা-ভাবনা থাকবে না। [বাগভী] উপরোক্ত তিন প্রকার অর্থই আয়াতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই সাহাবী ও তাবেয়ী তাফসীরবিদগণ এসব অর্থই গ্রহণ করেছেন।
Tafsir Bayaan Foundation
বল, ‘কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্যোপকরণ, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র রিয্ক’? বল, ‘তা দুনিয়ার জীবনে মুমিনদের জন্য, বিশেষভাবে কিয়ামত দিবসে’। এভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি এমন কওমের জন্য, যারা জানে।
Muhiuddin Khan
আপনি বলুনঃ আল্লাহর সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্রবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে? আপনি বলুনঃ এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে।
Zohurul Hoque
বলো -- ''কে নিষিদ্ধ করেছে আল্লাহ্র শোভা, -- যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, আর জীবিকা থেকে বিশুদ্ধ বস্তুসমূহ?’’ বলো -- ''এ-সব এই দুনিয়ার জীবনে তাদের জন্য যারা ঈমান এনেছে, -- পুনর্জাগরণের দিনে বিশেষভাবে।’’ এইভাবে আমরা আমাদের নির্দেশাবলী বিশদভাবে ব্যাখ্যা করি তেমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে।