কুরআন মজীদ সূরা আল আ'রাফ আয়াত ২৮
Qur'an Surah Al-A'raf Verse 28
আল আ'রাফ [৭]: ২৮ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَاِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً قَالُوْا وَجَدْنَا عَلَيْهَآ اٰبَاۤءَنَا وَاللّٰهُ اَمَرَنَا بِهَاۗ قُلْ اِنَّ اللّٰهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاۤءِۗ اَتَقُوْلُوْنَ عَلَى اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ (الأعراف : ٧)
- wa-idhā
- وَإِذَا
- And when
- এবং যখন
- faʿalū
- فَعَلُوا۟
- they do
- তারা করে
- fāḥishatan
- فَٰحِشَةً
- immorality
- অশ্লীল কাজ
- qālū
- قَالُوا۟
- they say
- তারা বলে
- wajadnā
- وَجَدْنَا
- "We found
- "পেয়েছি আমরা
- ʿalayhā
- عَلَيْهَآ
- on it
- উপর এসবের
- ābāanā
- ءَابَآءَنَا
- our forefathers
- বাপ-দাদাদেরকে আমাদের
- wal-lahu
- وَٱللَّهُ
- and Allah
- এবং আল্লাহ
- amaranā
- أَمَرَنَا
- (has) ordered us
- নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের
- bihā
- بِهَاۗ
- of it"
- সম্পর্কে এর"
- qul
- قُلْ
- Say
- তুমি বলো
- inna
- إِنَّ
- "Indeed
- "নিশ্চয়ই
- l-laha
- ٱللَّهَ
- Allah
- আল্লাহ
- lā
- لَا
- (does) not
- না
- yamuru
- يَأْمُرُ
- order
- নির্দেশ দেন
- bil-faḥshāi
- بِٱلْفَحْشَآءِۖ
- immorality
- ব্যাপারে অশ্লীলতার
- ataqūlūna
- أَتَقُولُونَ
- Do you say
- কি তোমরা বলছো
- ʿalā
- عَلَى
- about
- সম্পর্কে
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- Allah
- আল্লাহর
- mā
- مَا
- what
- যা
- lā
- لَا
- not?"
- না"
- taʿlamūna
- تَعْلَمُونَ
- you know?"
- তোমরা জানো"
Transliteration:
Wa izaa fa'aloo faahishatan qaaloo wajadnaa 'alaihaaa aabaaa'ana wallaahu amaranaa bihaa; qul innal laaha laa yaamuru bilfahshaaa'i a-taqooloona 'alal laahi mmaa laa ta'lamoon(QS. al-ʾAʿrāf:28)
English Sahih International:
And when they commit an immorality, they say, "We found our fathers doing it, and Allah has ordered us to do it." Say, "Indeed, Allah does not order immorality. Do you say about Allah that which you do not know?" (QS. Al-A'raf, Ayah ২৮)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তারা যখন কোন অশ্লীল কাজ করে তখন তারা বলে- ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এ কাজই করতে দেখেছি, আর আল্লাহ আমাদেরকে এসব কাজ করার আদেশ দিয়েছেন।’ বল, ‘আল্লাহ অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না, আল্লাহর সম্বন্ধে তোমরা কি এমন কথা বলছ যা তোমরা জান না?’ (আল আ'রাফ, আয়াত ২৮)
Tafsir Ahsanul Bayaan
যখন তারা কোন অশ্লীল আচরণ করে, তখন বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষগণকে এটা করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন।’ বল, ‘আল্লাহ অশ্লীল আচরণের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ, যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই?’ [১]
[১] ইসলামের পূর্বে মুশরিকরা উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করত এবং বলত যে, আমরা সেই সময়ের অবস্থাকে অবলম্বন করে তাওয়াফ করি, যে অবস্থায় আমাদের মায়েরা আমাদেরকে প্রসব করেছিল। কেউ কেউ বলেছেন, তারা এর (উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করার) ব্যাখ্যা এই করত যে, আমরা যে পোশাক পরে থাকি তাতে আমরা আল্লাহর অবাধ্যতার কাজ অনেক করি। অতএব, এই পোশাকে তাওয়াফ করা উচিত নয়। তাই পোশাক খুলে তাওয়াফ করত এবং মহিলারাও উলঙ্গ তাওয়াফ করত। কেবল নিজেদের লজ্জাস্থানের উপর কাপড়ের অথবা চামড়ার কোন টুকরা রেখে নিত। নিজেদের এই লজ্জাকর কাজের জন্য আরো দু'টি ওজুহাত তারা পেশ করত। একটি হল, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এইভাবে করতে দেখেছি। আর দ্বিতীয়টি হল, আল্লাহই আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের কথা খন্ডন করে বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব যে, তিনি নির্লজ্জতার নির্দেশ দেবেন? অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর উপর এমন কথা চাপিয়ে দিচ্ছ, যা তিনি বলেননি। এই আয়াতে সেই অন্ধ অনুকরণকারীদেরকে কঠোরভাবে তিরস্কার করা হয়েছে, যারা বাপ-দাদা ও পীর-বুযুর্গদের অন্ধ অনুকরণ এবং ব্যক্তিপূজায় ডুবে রয়েছে। তাদেরকেও যখন হক কথা শুনানো হয়, তখন তারাও এই ওজুহাত পেশ করে বলে যে, আমাদের বুযর্গরা এইভাবেই করেছেন অথবা আমাদের ইমাম, পীর বা শায়খের এটাই নির্দেশ। আর এটাই হল এমন অভ্যাস, যার কারণে ইয়াহুদীরা ইয়াহুদী ধর্মের উপর, খ্রিষ্টানরা খ্রিষটধর্মের উপর এবং বিদআতীরা তাদের বিদআতী কার্যকলাপের উপর কায়েম রয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর যখন তারা কোন অশ্লীল আচরণ করে [১] তখন বলে, ‘আমারা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এতে পেয়েছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এরই নির্দেশ দিয়েছেন।’ বলুন, ‘আল্লাহ্ অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না।তোমারা কি আল্লাহ্ সম্বদ্ধে এমন কিছু বলছ যা তোমারা জান না [২]?’
[১] (فحش، فحشاء) ও (فاحشة) এমন প্রত্যেক মন্দ কাজকে বলা হয়, যা চূড়ান্ত পর্যায়ের মন্দ এবং যুক্তি, বুদ্ধি ও সুস্থ বিবেকের কাছে পূর্ণমাত্রায় সুস্পষ্ট। [ ফাতহুল কাদীর]
[২] ইসলামের পূর্বে জাহেলিয়াত যুগে শয়তান মানুষকে যেসব লজ্জাজনক ও অর্থহীন কুপ্রথায় লিপ্ত করেছিল, তন্মধ্যে একটি ছিল এই যে, কুরাইশ ছাড়া কোনো ব্যক্তি নিজ বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় কা'বা গৃহের তাওয়াফ করতে পারত না। তাকে হয় কোন কুরাইশীর কাছ থেকে বস্ত্র ধার করতে হত, না হয় উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতে হত। এটা জানা কথা যে, আরবের সব মানুষকে বস্ত্র দেয়া কুরাইশদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। তাই পুরুষ মহিলা অধিকাংশ লোক উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করত। মহিলারা সাধারণতঃ রাতের অন্ধকারে তাওয়াফ করত। তাদের নিকট এ শয়তানী কাজের যুক্তি হলো, যেসব পোষাক পরে আমরা পাপকাজ করি, সেগুলো পরিধান করে আল্লাহর ঘর প্রদক্ষিণ করা বেআদবী। এ জ্ঞানপাপীরা এ বিষয়টি বুঝত না যে, উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা আরো বেশী বেআদবীর কাজ। হারামের সেবক হওয়ার সুবাদে শুধু কুরাইশ গোত্র এ উলঙ্গতা আইনের ব্যতিক্রম ছিল। এ নির্লজ্জ প্রথা ও তার অনিষ্ট বর্ণনা করার জন্য এ আয়াত নাযিল হয়। [তাবারী] এতে বলা হয়েছেঃ তারা যখন কোন অশ্লীল কাজ করত, তখন কেউ নিষেধ করলে তারা উত্তরে বলতঃ আমাদের বাপ-দাদা ও মুরুবিবরা তাই করে এসেছেন। তাদের তরিকা ত্যাগ করা লজ্জার কথা। তারা আরো বলত আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। প্রথমটি সত্য হলেও দ্বিতীয়টি নিঃসন্দেহে মিথ্যা।
Tafsir Bayaan Foundation
আর যখন তারা কোন অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, ‘আমরা এতে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন’। বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না’?
Muhiuddin Khan
তারা যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন বলে আমরা বাপ-দাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না। এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জান না।
Zohurul Hoque
আর যখন তারা কোনো অশ্লীল আচরণ করে তখন বলে -- ''আমরা আমাদের পিতৃপুরুষকে এতে পেয়েছি, আর আল্লাহ্ আমাদের এতে আদেশ করেছেন।’’ বলো -- ''নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ অশ্লীলতাতে আদেশ করেন না। তোমরা কি আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বলো যা তোমরা জানো না?’’