Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল আ'রাফ আয়াত ১৮৮

Qur'an Surah Al-A'raf Verse 188

আল আ'রাফ [৭]: ১৮৮ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

قُلْ لَّآ اَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَاۤءَ اللّٰهُ ۗوَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِۛ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْۤءُ ۛاِنْ اَنَا۠ اِلَّا نَذِيْرٌ وَّبَشِيْرٌ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ ࣖ (الأعراف : ٧)

qul
قُل
Say
বলো
لَّآ
"Not
"না
amliku
أَمْلِكُ
"I have power
"ক্ষমতা রাখি আমি
linafsī
لِنَفْسِى
for myself
জন্যে আমার নিজের
nafʿan
نَفْعًا
(to) benefit
কোনো লাভের
walā
وَلَا
and no
আর না
ḍarran
ضَرًّا
(power to) harm
কোনো ক্ষতির
illā
إِلَّا
except
এ ছাড়া
مَا
what
যা
shāa
شَآءَ
wills
ইচ্ছে করেন
l-lahu
ٱللَّهُۚ
Allah
আল্লাহ
walaw
وَلَوْ
And if
এবং যদি
kuntu
كُنتُ
I would
আমি ছিলাম
aʿlamu
أَعْلَمُ
know
আমি জানি
l-ghayba
ٱلْغَيْبَ
(of) the unseen
অদৃশ্যকে
la-is'takthartu
لَٱسْتَكْثَرْتُ
surely I could have multiplied
অবশ্যই আমি অনেক নিতাম
mina
مِنَ
of
হতে
l-khayri
ٱلْخَيْرِ
the good
কল্যাণ
wamā
وَمَا
and not
এবং না
massaniya
مَسَّنِىَ
(could) have touched me
আমাকে স্পর্শ করতো
l-sūu
ٱلسُّوٓءُۚ
the evil
কোনো অকল্যাণ
in
إِنْ
Not
(প্রকৃতপক্ষে) নই
anā
أَنَا۠
(am) I
আমি
illā
إِلَّا
except
এ ছাড়া
nadhīrun
نَذِيرٌ
a warner
একজন সতর্ককারী
wabashīrun
وَبَشِيرٌ
and a bearer of good tidings
ও সুসংবাদদাতা
liqawmin
لِّقَوْمٍ
to a people
জন্যে ঐ সম্প্রদায়ের
yu'minūna
يُؤْمِنُونَ
who believe"
(যারা) ঈমান আনে"

Transliteration:

Qul laaa amliku linafsee naf'anw wa laa darran illaa maa shaaa'al laah; wa law kuntu a'alamul ghaiba lastaksartu minal khairi wa maa massaniyas soo'; in ana illaa nazeerunw wa basheerul liqawminy yu'minoon (QS. al-ʾAʿrāf:188)

English Sahih International:

Say, "I hold not for myself [the power of] benefit or harm, except what Allah has willed. And if I knew the unseen, I could have acquired much wealth, and no harm would have touched me. I am not except a warner and a bringer of good tidings to a people who believe." (QS. Al-A'raf, Ayah ১৮৮)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

বল, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল বা মন্দ করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তাহলে নিজের জন্য অনেক বেশি ফায়দা হাসিল করে নিতাম, আর কোন প্রকার অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। যারা ঈমান আনবে আমি সেই সম্প্রদায়ের প্রতি সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া অন্য কিছু নই। (আল আ'রাফ, আয়াত ১৮৮)

Tafsir Ahsanul Bayaan

বল, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরই আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম, তাহলে তো আমি প্রভূত কল্যাণ লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদবাহী।’[১]

[১] এই আয়াত এ বিষয়টিকে কত স্পষ্ট করে যে, নবী (সাঃ) গায়বের খবর জানতেন না। গায়েবের জ্ঞান কেবল মহান আল্লাহর আছে। কিন্তু অন্যায় ও অজ্ঞতা এমন সীমা ছাড়িয়ে গেছে যে, এ সত্ত্বেও বিদআতীরা নবী (সাঃ)-কে গায়বের খবর জানতেন বলে মনে করে! যুদ্ধে তাঁর দাঁত মুবারক শহীদ হয়েছে, তাঁর মুখ মন্ডলও রক্তাক্ত হয়েছে। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, "সেই জাতি কিভাবে সফল হতে পারে, যে জাতি তার নবীর মাথা যখম করে দেয়!" (হাদীস গ্রন্থে উক্ত ঘটনা ও নিমেনর ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে,) আয়েশা (রাঃ) র চরিত্রে যখন কলঙ্ক দেওয়া হয়, তখন পূর্ণ একমাস নবী (সাঃ) অত্যন্ত অস্থিরতা ও পেরেশানী ভোগ করেন। একটি ইয়াহুদী মহিলা তাঁকে দাওয়াত দিয়ে খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়; যা তিনি ও সাহাবাগণও খেয়ে ফেলেন। এমন কি ঐ বিষাক্ত খাবার খেয়ে একজন সাহাবীর মৃত্যুও ঘটে। আর খোদ নবী (সাঃ) জীবনভোর বিষের প্রতিক্রিয়া ভোগ করেন। এই ঘটনা ও অন্যান্য বহু ঘটনা প্রমাণ করে যে, গায়বের খবর না জানার ফলেই তাঁকে এরূপ কষ্ট যাতনা ভোগ করতে হয়েছিল। যাতে কুরআনের এই সত্যতাই প্রমাণিত হয় যে, "যদি আমি গায়ব জানতাম, তাহলে আমার কোন অমঙ্গল হত না।"

Tafsir Abu Bakr Zakaria

বলুন, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভালো মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম তবে তো আমি অনেক কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া আমি তো আর কিছুই নই [১]।’

[১] এ আয়াতে মুশরিক ও সাধারণ মানুষের সেই ভ্রান্ত আকীদার খণ্ডন করা হয়েছে; যা তারা নবী-রাসূলগণের ব্যাপারে পোষণ করত যে, তারা গায়েবী বিষয়েও অবগত রয়েছেন। তাদের এই শির্কী আকীদার খণ্ডন উপলক্ষে বলা হয়েছে যে, ইলমে-গায়েব এবং সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণুর ব্যাপক ইলম শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলারই রয়েছে। এটা তাঁরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এতে কোন সৃষ্টিকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, তা ফিরিশতাই হোক আর নবী ও রাসূলগণই হোক, শির্ক এবং মহাপাপ। তেমনিভাবে প্রত্যেক লাভ-ক্ষতি কিংবা মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক হওয়াও এককভাবে আল্লাহ তা'আলারই গুণ। এতে কাউকে অংশীদার দাঁড় করানোও শির্ক। বস্তুতঃ এই শির্ক বা আল্লাহ রাববুল আলামীনের সাথে কোন অংশীদারিত্বের আকীদাকে খণ্ডন করার জন্যই কুরআন নাযিল হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব ঘটেছে। তাই এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনি ঘোষণা করে দিন যে, আমি আলেমুল-গায়েব নই যে, যাবতীয় পূর্ণ জ্ঞান আমার থাকা অনিবার্য হবে। তাছাড়া আমার যদি গায়বী জ্ঞান থাকতই, তবে আমি প্রত্যেকটি লাভজনক বস্তুই হাসিল করে নিতাম, কোন একটি লাভও আমার হাতছাড়া হতে পারত না। আর প্রতিটি ক্ষতিকর বিষয় থেকে সর্বদা রক্ষিত থাকতাম। কখনো কোন ক্ষতি আমার ধারে-কাছে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারত না। অথচ এতদুভয় বিষয়ের কোনটিই বাস্তব নয়। বহু বিষয় রয়েছে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়ত্ত করতে চেয়েছেন, কিন্তু তা করতে পারেননি। তাছাড়া বহু দুঃখ-কষ্ট রয়েছে যা থেকে আত্মরক্ষার জন্য তিনি ইচ্ছা করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে পতিত হতে হয়েছে। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বেঁধে সাহাবায়ে কেরামের সাথে উমরা করার উদ্দেশ্যে হারাম শরীফের সীমানা পর্যন্ত এগিয়ে যান, কিন্তু হারাম শরীফে প্রবেশ কিংবা উমরা করা তখনো সম্ভব হতে পারেনি; সবাইকে ইহরাম খুলে ফিরে আসতে হয়েছে। তেমনিভাবে ওহুদ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহত হন এবং মুসলিমদেরকে সাময়িক পরাজয় বরণ করতে হয়। এমনি আরো বহু অতি প্রসিদ্ধ ঘটনা রয়েছে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে সংঘটিত হয়েছে। এ সবগুলো থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, তিনি গায়েবের জ্ঞান রাখেন না। শুধু ততটুকুই জানেন, যতটুকু আল্লাহ তাদের জানিয়েছেন। আর আল্লাহ তাদেরকে জানিয়ে দেয়ার পর সেটা জানাকে আর গায়েবের জ্ঞান বলা যাবে না।

Tafsir Bayaan Foundation

বল, ‘আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্য, যারা বিশ্বাস করে’।

Muhiuddin Khan

আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।

Zohurul Hoque

বলো -- ''আমার কোনো অধিকার নেই আমার নিজেরই কোনো লাভ বা ক্ষতি করবার -- আল্লাহ্ যা চান তা-ব্যতীত। আর যদি আমি অদৃশ্যের সম্যক্ জ্ঞান রাখতাম তবে কল্যাণের প্রাচুর্য বানিয়ে নিতাম, আর কোনো অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করতো না। আমি তো একজন সতর্ককারী বই নই, আর একজন সুসংবাদদাতা সেই লোকদের জন্য যারা ঈমান এনেছে।