Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব আয়াত ৬

Qur'an Surah At-Talaq Verse 6

আত্ব-ত্বালাক্ব [৬৫]: ৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

اَسْكِنُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِّنْ وُّجْدِكُمْ وَلَا تُضَاۤرُّوْهُنَّ لِتُضَيِّقُوْا عَلَيْهِنَّۗ وَاِنْ كُنَّ اُولَاتِ حَمْلٍ فَاَنْفِقُوْا عَلَيْهِنَّ حَتّٰى يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّۚ فَاِنْ اَرْضَعْنَ لَكُمْ فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّۚ وَأْتَمِرُوْا بَيْنَكُمْ بِمَعْرُوْفٍۚ وَاِنْ تَعَاسَرْتُمْ فَسَتُرْضِعُ لَهٗٓ اُخْرٰىۗ (الطلاق : ٦٥)

askinūhunna
أَسْكِنُوهُنَّ
Lodge them
তাদের বাস করতে দাও
min
مِنْ
from
মধ্য হতে
ḥaythu
حَيْثُ
where
যেখানে
sakantum
سَكَنتُم
you dwell
তোমরা বাস কর
min
مِّن
(out) of
থেকে
wuj'dikum
وُجْدِكُمْ
your means
তোমাদের সামর্থ
walā
وَلَا
and (do) not
এবং না
tuḍārrūhunna
تُضَآرُّوهُنَّ
harm them
তাদের তোমরা কষ্ট দিও
lituḍayyiqū
لِتُضَيِّقُوا۟
to distress
সঙ্কটে ফেলবার জন্যে
ʿalayhinna
عَلَيْهِنَّۚ
[on] them
তাদেরকে
wa-in
وَإِن
And if
এবং যদি
kunna
كُنَّ
they are
তারা হয়
ulāti
أُو۟لَٰتِ
those (who are)
যারা
ḥamlin
حَمْلٍ
pregnant
গর্ভবতী
fa-anfiqū
فَأَنفِقُوا۟
then spend
তোমরা খরচ তবে কর
ʿalayhinna
عَلَيْهِنَّ
on them
তাদের উপর
ḥattā
حَتَّىٰ
until
যতক্ষণ না
yaḍaʿna
يَضَعْنَ
they deliver
প্রসব করে
ḥamlahunna
حَمْلَهُنَّۚ
their burden
তাদের গর্ভ
fa-in
فَإِنْ
Then if
যদি অতঃপর
arḍaʿna
أَرْضَعْنَ
they suckle
তারা দুধপান করায়
lakum
لَكُمْ
for you
তোমাদের (বাচ্চাদের)কে
faātūhunna
فَـَٔاتُوهُنَّ
then give them
তাদের দাও তবে তোমরা
ujūrahunna
أُجُورَهُنَّۖ
their payment
তাদের পারিশ্রমিকাদি
watamirū
وَأْتَمِرُوا۟
and consult
ও তোমরা পরামর্শ কর
baynakum
بَيْنَكُم
among yourselves
তোমাদের মাঝে
bimaʿrūfin
بِمَعْرُوفٍۖ
with kindness
সংগতভাবে
wa-in
وَإِن
but if
এবং যদি
taʿāsartum
تَعَاسَرْتُمْ
you disagree
তোমরা পরস্পরে কঠোরতা কর
fasatur'ḍiʿu
فَسَتُرْضِعُ
then may suckle
স্তন্য দিবে তবে
lahu
لَهُۥٓ
for him
তার জন্যে্যে
ukh'rā
أُخْرَىٰ
another (women)
অন্য (নারী)

Transliteration:

Askinoohunna min haisu sakantum minw wujdikum wa laa tudaaarroohunna litudaiyiqoo 'alaihinn; wa in kunna ulaati hamlin fa anfiqoo 'alihinna hattaa yada'na hamlahunn; fain arda'na lakum fa aatoo hunna ujoorahunna waatamiroo bainakum bima'roofinw wa in ta'aasartum fasaturdi'u lahooo ukhraa (QS. aṭ-Ṭalāq̈:6)

English Sahih International:

Lodge them [in a section] of where you dwell out of your means and do not harm them in order to oppress them. And if they should be pregnant, then spend on them until they give birth. And if they breastfeed for you, then give them their payment and confer among yourselves in the acceptable way; but if you are in discord, then there may breastfeed for him [i.e., the father] another woman. (QS. At-Talaq, Ayah ৬)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

(‘ইদ্দাতকালে) নারীদেরকে সেভাবেই বসবাস করতে দাও যেভাবে তোমরা বসবাস কর তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী, তাদেরকে সংকটে ফেলার জন্য তাদেরকে জ্বালাতন করো না। তারা যদি গর্ভবতী হয়ে থাকে, তবে তারা সন্তান প্রসব না করা পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন কর। অতঃপর তারা যদি তোমাদের সন্তানকে দুধ পান করায়, তবে তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিক দাও। (দুধ পান করানোর ব্যাপারে) ন্যায়সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে লও। আর (দুধ পান করানোর ব্যাপার নিয়ে) তোমরা যদি একে অপরের প্রতি কড়াকড়ি করতেই থাক, তাহলে (এ অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য) অপর কোন স্ত্রীলোক সন্তানকে দুধ পান করাবে। (আত্ব-ত্বালাক্ব, আয়াত ৬)

Tafsir Ahsanul Bayaan

তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যে স্থানে বাস কর, তাদেরকেও সে স্থানে বাস করতে দাও।[১] সংকটে ফেলার উদ্দেশ্যে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করো না।[২] তারা গর্ভবতী থাকলে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় কর।[৩] অতঃপর যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তাহলে তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিক প্রদান কর।[৪] (সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে) তোমরা সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ কর।[৫] তোমরা যদি নিজ নিজ দাবীতে অনমনীয় হও, তাহলে অন্য নারী তার পক্ষে স্তন্য দান করবে। [৬]

[১] অর্থাৎ, রজয়ী তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদেরকে (যাদেরকে তালাক দেওয়ার পর ফিরিয়ে নেওয়ার অবকাশ থাকে)। কারণ, 'বায়েনাহ তালাকপ্রাপ্তা' (যাদেরকে তালাকের পর ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না সেই মহিলা)-দের জন্য বাসস্থান এবং ভরণপোষণ জরুরী নয়। এ কথা পূর্বে আলোচিত হয়েছে। 'সামর্থ্য অনুযায়ী --- বাস করতে দাও' এর অর্থ হল, যদি বাড়ী এমন প্রশস্ত হয় যাতে কয়েকটি কামরা আছে, তাহলে একটি কামরা নির্দিষ্ট করে দাও। অন্যথা নিজের কামরা তার জন্য খালি করে দাও। এতে যে যৌক্তিকতা ও কৌশলগত দিক রয়েছে তা হল এই যে, যখন সে কাছে থেকে ইদ্দত পালন করবে, তখন হতে পারে স্বামীর অন্তরে দয়া (প্রেম বা যৌনকামনা) সৃষ্টি হবে এবং 'রুজু' করার (ফিরিয়ে নেওয়ার) উৎসাহ তার অন্তরে সৃষ্টি হয়ে যাবে। বিশেষ করে যদি সন্তানাদি থাকে, তবে ফিরিয়ে নেওয়ার উৎসাহ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অতি প্রবল থাকে। কিন্তু অনুতাপের বিষয় যে, বহু মুসলিম এই নির্দেশ অনুযায়ী আমল করে না। যার কারণে এই নির্দেশের উপকারিতা থেকে এবং তার কৌশলগত সুফল হতে সে বঞ্চিত হয়। আমাদের সমাজে তালাক দেওয়ার সাথে সাথেই মহিলাকে অচ্ছুত (অস্পৃশ্য) বানিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় (অথবা মহিলা নিজেই দুঃখে অথবা ক্ষোভে গৃহত্যাগ করে) অথবা কখনো মেয়ের পক্ষের কেউ এসে তাকে তাদের ঘরে নিয়ে যায়। বলাই বাহুল্য যে, এই প্রচলন কুরআন কারীমের স্পষ্ট শিক্ষার পরিপন্থী।

[২] অর্থাৎ, খোরপোশ অথবা বাসস্থানের ব্যাপারে তাদের উপর সংকীর্ণতা সৃষ্টি করা এবং তাদের মানহানি করা, যাতে তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। ইদ্দতের মধ্যে এ রকম আচরণ যেন না করা হয়। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, ইদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি পর্যায়ে তোমরা আবার 'রুজু' করে (ফিরিয়ে) নাও এবং বারংবার এ রকম কর। যেমন, জাহেলিয়াতের যুগে ছিল। সুতরাং সে পথ বন্ধ করার জন্য শরীয়ত তালাক দেওয়ার পর ফিরিয়ে নেওয়ার সময় নির্দিষ্ট করে দিল। যাতে আগামীতে কেউ এইভাবে মহিলার উপর সংকীর্ণতার সৃষ্টি না করে। এখন একজন কেবল দু'বার এ রকম করতে পারে। অর্থাৎ, তালাক দিয়ে ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বেই ফিরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু তৃতীয়বার আবার তালাক দিলে, তার ফিরিয়ে নেওয়ার মোটেই অধিকার থাকবে না।

[৩] অর্থাৎ, তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যদি গর্ভবতী হয়, তবে তার ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান দেওয়া জরুরী, যদিও এ তালাক 'বায়েনাহ' (যে তালাকের পর ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার থাকে না তা) হয়। এ কথা পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে।

[৪] অর্থাৎ, তালাক দেওয়ার পর তারা যদি তোমাদের শিশুদেরকে দুধ পান করায়, তাহলে তার পারিশ্রমিক তোমাদেরকেই দিতে হবে। (তখন 'সম্পর্ক নেই বলে কোন অর্থ ব্যয় করব না' বলা চলবে না।)

[৫] অর্থাৎ, আপোসে পরামর্শ করে পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সমস্ত বিষয় ঠিক করে নেবে। যেমন, শিশুর বাপ প্রচলিত নিয়মে পারিশ্রমিক দেবে এবং বাপের সামর্থ্য অনুযায়ী মা তার পারিশ্রমিক চাইবে ইত্যাদি।

[৬] অর্থাৎ, পারিশ্রমিক ইত্যাদির ব্যাপারে যদি তাদের আপোসে মতের মিল না হয়, তবে অন্য কোন দুধ দানকারিণী মহিলার সাথে চুক্তি করে নেবে। সে তার শিশুকে দুধ পান করাবে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ ঘরে তোমরা বাস কর তাদেরকেও সেরূপ ঘরে বাস করতে দেবে ; তাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে না সংকটে ফেলার জন্য ; আর তারা গর্ভবতী হয়ে থাকলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে। অতঃপর যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্য দান করেন তবে তাদেরকে পারিশ্রমিক দেবে এবং (সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে) তোমরা সংগতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ কর। আর তোমরা যদি নিজ নিজ দাবীতে অনমনীয় হও তাহলে অন্য নারী পিতার পক্ষে স্তন্য দান করবে।

Tafsir Bayaan Foundation

তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও, তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না। আর তারা গর্ভবতী হলে তাদের সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য তোমরা ব্যয় কর; আর তারা তোমাদের জন্য সন্তানকে দুধ পান করালে তাদের পাওনা তাদেরকে দিয়ে দাও এবং (সন্তানের কল্যাণের জন্য) সংগতভাবে তোমাদের মাঝে পরস্পর পরামর্শ কর। আর যদি তোমরা পরস্পর কঠোর হও তবে পিতার পক্ষে অন্য কোন নারী দুধপান করাবে।

Muhiuddin Khan

তোমরা তোমাদের সামর্থ?2437;নুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তানপ্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পর জেদ কর, তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে।

Zohurul Hoque

তাদের বাস করতে দাও যেখানে তোমরা বাস করছ, তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী, আর তাদের কষ্ট দিয়ো না তাদের অবস্থা সংকটময় করে তোলার জন্যে। আর যদি তারা গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে তাদের জন্য খরচ করো যে পর্যন্ত না তারা তাদের গর্ভভার নামিয়ে ফেলে, তারপর যদি তারা তোমাদের জন্য স্তন্যদান করে তাহলে তাদের মজুরি তাদের প্রদান করবে, আর তোমাদের মধ্যে ভালোভাবে কাজ করতে বলো, আর যদি তোমরা অমত হও তবে তার জন্য অন্যজনে স্তন্য দিক।