Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল জুমুআহ আয়াত ৯

Qur'an Surah Al-Jumu'ah Verse 9

আল জুমুআহ [৬২]: ৯ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْٓا اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللّٰهِ وَذَرُوا الْبَيْعَۗ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ (الجمعة : ٦٢)

yāayyuhā
يَٰٓأَيُّهَا
O!
ওহে
alladhīna
ٱلَّذِينَ
(you) who!
যারা
āmanū
ءَامَنُوٓا۟
believe!
ঈমান এনেছো
idhā
إِذَا
When
যখন
nūdiya
نُودِىَ
(the) call is made
ডাকা হয়
lilṣṣalati
لِلصَّلَوٰةِ
for (the) prayer
নামাজের জন্যে
min
مِن
on
মধ্য হতে
yawmi
يَوْمِ
(the) day
দিনে
l-jumuʿati
ٱلْجُمُعَةِ
(of) Friday
জুমুয়া'র
fa-is'ʿaw
فَٱسْعَوْا۟
then hasten
তখন তোমরা ধাবিত হও
ilā
إِلَىٰ
to
দিকে
dhik'ri
ذِكْرِ
(the) remembrance
স্মরণের
l-lahi
ٱللَّهِ
(of) Allah
আল্লাহর
wadharū
وَذَرُوا۟
and leave
ও ত্যাগ করো
l-bayʿa
ٱلْبَيْعَۚ
the business
কেনাবেচা
dhālikum
ذَٰلِكُمْ
That
এটা
khayrun
خَيْرٌ
(is) better
উত্তম
lakum
لَّكُمْ
for you
তোমাদের জন্যে
in
إِن
if
যদি
kuntum
كُنتُمْ
you
তোমরা
taʿlamūna
تَعْلَمُونَ
know
জানো

Transliteration:

Yaaa ayyuhal lazeena aamanoo izaa noodiya lis-Salaati miny yawmil Jumu'ati fas'aw ilaa zikril laahi wa zarul bai'; zaalikum khayrul lakum in kuntum ta'lamoon (QS. al-Jumuʿah:9)

English Sahih International:

O you who have believed, when [the adhan] is called for the prayer on the day of Jumu’ah [Friday], then proceed to the remembrance of Allah and leave trade. That is better for you, if you only knew. (QS. Al-Jumu'ah, Ayah ৯)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

হে মু’মিনগণ! জুমু‘আহর দিনে যখন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে শীঘ্র ধাবিত হও, ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (আল জুমুআহ, আয়াত ৯)

Tafsir Ahsanul Bayaan

হে বিশ্বাসীগণ! জুমুআর দিনে যখন নামাযের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জন্য ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। [১] এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।

[১] এই আযান কিভাবে দেওয়া হবে, তার শব্দাবলী কি হবে? কুরআন মাজীদে কোথাও তার উল্লেখ নেই। অবশ্য হাদীসে আছে। এ থেকে জানা যায় যে, হাদীস ছাড়া কুরআন বোঝাও সম্ভব নয় এবং তার উপর আমল করাও সম্ভব নয়। 'জুমআহ'কে জুমআহ এই জন্য বলা হয় যে, এই দিনে আল্লাহ তাআলা সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত করেন। যেন সকল সৃষ্টি এই দিন 'জমা' (একত্রিত) হয়েছে। অথবা নামাযের জন্য মানুষ জমা ও সমবেত হয়, তাই এই দিনকে জুমআহর দিন বলা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) فَاسْعَوْا (ধাবিত হও) এর অর্থ এই নয় যে, দৌড়ে এস। বরং অর্থ হল, আযানের পর সত্বর চলে এস এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ কর। কেননা, হাদীসে নামাযের জন্য দৌড়ে আসতে নিষেধ এবং ধীর-স্থিরতার সাথে আসতে তাকীদ করা হয়েছে। (বুখারী, আযান অধ্যায়, মুসলিমঃ মাসজিদ অধ্যায়) কেউ কেউ وَذَرُوا الْبَيِعَ (ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর বা কেনাবেচা বন্ধ কর)-কে দলীল বানিয়ে বলেছেন যে, জুমআহ কেবল শহরেই ফরয, গ্রামবাসীদের উপর ফরয নয়। কেননা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় কেবল শহরেই হয়, গ্রাম-গঞ্জে হয় না। অথচ প্রথমতঃ দুনিয়াতে কোন গ্রাম এমন নেই, যেখানে কেনাবেচা এবং কোন ব্যবসা হয় না। অতএব এ দাবীই হল বাস্তবতার বিপরীত। দ্বিতীয়তঃ বেচাকেনা ও ব্যবসা বলতে বুঝানো হয়েছে, যাবতীয় পার্থিব ব্যস্ততাকে; তা যেমন এবং যে প্রকারেরই হোক না কেন, জুমআর আযানের পর তা ত্যাগ করতে হবে। গ্রামবাসীদের বৈষয়িক ব্যস্ততা থাকে না কি? চাষাবাদ, ঘর-সংসারের নানা ব্যস্ততা দুনিয়া থেকে ভিন্ন জিনিস নাকি?

Tafsir Abu Bakr Zakaria

হে ঈমানদারগণ ! জুমু’আর দিনে [১] যখন সালাতের জন্য ডাকা হয় [২] তখন তোমারা আল্লাহর স্বরণে ধাবিত হও [৩] এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমারা জানতে।

[১] এই দিনটি মুসলিমদের সমাবেশের দিন। তাই এই দিনকে "ইয়াওমুল জুম'আ' বলা হয়। এই দিনের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন হাদীসে এসেছে; যেমন, "আল্লাহ তা'আলা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও সমস্ত জগৎকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয়দিনের শেষদিন ছিল জুম'আর দিন [মুসলিম; ২৭৮৯]

আরও এসেছে, “যে দিনগুলোতে সূৰ্য উদিত হয় তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে, জুম'আর দিন। এই দিনেই আদম আলাইহিস সালাম সৃজিত হন, এই দিনেই তাকে জান্নাতে দাখিল করা হয় এবং এই দিনেই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। আর কেয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে।” [মুসলিম; ৮৫৪] আরও এসেছে, “এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যাতে মানুষ যে দো'আই করে, তাই কবুল হয় [বুখারী;১৯৩৫, মুসলিম; ৮৫২]

আল্লাহ তা'আলা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্যে এই দিন রেখেছিলেন। কিন্তু পূৰ্ববতীর্ণ উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইয়াহুদীরা "ইয়াওমুস সাব্‌ত” তথা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারিত করে নেয় এবং নাসারারা রবিবারকে। আল্লাহ তা'আলা এই উম্মতকে তওফীক দিয়েছেন যে, তারা শুক্রবারকে মনোনীত করেছে। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমরা সবশেষে এসেও কিয়ামতের দিন অগ্রণী হব। আমরাই প্রথম জান্নাতে প্ৰবেশ করব। যদিও তাদেরকে আমাদের আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল, আর আমাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পরে। কিন্তু তারা এতে মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে তাদের মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ দিয়েছেন। এই যে দিনটি, তারা এতে মতভেদ করেছে। অত;পর আল্লাহ আমাদেরকে এ দিনের সঠিক হেদায়াত করেছেন। তা হলো, জুম'আর দিন। সুতরাং আজ আমাদের, কাল ইয়াহুদীদের। আর পরশু নাসারাদের।” [বুখারী; ৮৭৬, মুসলিম; ৮৫৫]

সম্ভবত ইয়াহুদীদের আলোচনার পর পবিত্র কুরআনের জুম'আর আলোচনার কারণ এটাই যে, তাদের ইবাদতের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন কেবলমাত্র মুসলিমদের ইবাদতের দিনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে জুম'আর দিন। মূর্খতাযুগে শুক্রবারকে "ইয়াওমে আরূবা’ বলা হত। বলা হয়ে থাকে যে, আরবে কা'ব ইবনে লুয়াই সর্বপ্রথম এর নাম "ইয়াওমুল জুমুআ’ রাখেন। কারণ, জুম'আ শব্দটির অর্থ একত্রিত করা। এই দিনে কুরাইশদের সমাবেশ হত এবং কাব ইবনে লুয়াই ভাষণ দিতেন। সারকথা এই যে, ইসলাম পূর্বকালেও ক’ব ইবনে লুয়াই-এর আমলে শুক্রবার দিনকে গুরুত্ব দান করা হত। তিনিই এই দিনের নাম জুমআর দিন রেখেছিলেন। কিন্তু সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় যে, “আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টিকে এই দিন একত্রিত করা হয়েছিল বলেই এই দিনকে জুম'আ নামকরণ করা হয়েছে।” [মুস্তাদরাকে হাকিম; ১/৪১২, নং; ১০২৮, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ ৩/১১৮, নং; ১৭৩২, ত্বাবরানী; মুজামুল কাবীর ৬/২৩৭ নং ৬০৯২, মুজামুল আওসাত্ম; ১/২৫০, নং ৮২১, মাজমাউয যাওয়ায়িদ; ২/৩৯০]

[২] نودي অর্থ যখন ডাকা হয়। এখানে খোতবার আযান বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর, বাগভী] সায়েব ইবনে ইয়াযীদ বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ, আবু বকর এবং উমরের যুগে জুম'আর দিনে ইমাম যখন মিম্বরে বসত তখন প্রথম আযান দেয়া হত। তারপর যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগ আসল এবং মানুষ বেড়ে গেল তখন তৃতীয় আহবানটি তিনি বাড়িয়ে দেন” [বুখারী; ৯১২]

[৩] আয়াতে বর্ণিত فاسْعَوْا শব্দের এক অর্থ দৌঁড়ানো এবং অপর অর্থ কোন কাজ গুরুত্ব সহকারে করা। এখানে এই অর্থ উদ্দেশ্য। কারণ, সালাতের জন্যে দৌড়ে আসতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “প্রশাস্তি ও গাম্ভীৰ্য সহকারে সালাতের জন্যে গমন কর।” [বুখারী; ৬৩৬, মুসলিম; ৬০২]

আয়াতের অর্থ এই যে, জুমআর দিনে জুমআর আযান দেয়া হলে আল্লাহর যিকিরের দিকে গুরুত্বসহকারে যাও। অর্থাৎ সালাত ও খোতবার জন্যে মসজিদে যেতে যত্নবান হও। যে ব্যক্তি দৌঁড় দেয়, সে যেমন অন্য কোন কাজের প্রতি মনোযোগ দেয় না, তোমরাও তেমনি আযানের পর সালাত ও খোতবা ব্যতীত অন্য কাজের দিকে মনোযোগ দিও না। এখানে যিকার’ বলে জুম'আর সালাত এবং এই সালাতের অন্যতম শর্ত খোতবাও বোঝানো হয়েছে। বহু হাদীসে জুম'আর দিনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে হাযির হওয়ার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে জুম'আর দিনে জানাবত তথা অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার মত গোসল করবে, তারপর (প্রথম ঘণ্টায়) মসজিদে হাজির হবে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেল সে যেন গরু কুরবানী করল। যে তৃতীয় ঘন্টায় গেল সে যেন শিংওয়ালা ছাগল কুরবানী করল। যে চতুর্থ ঘন্টায় গেল সে যেন মুরগী উৎসর্গ করল। যে পঞ্চম ঘন্টায় গেল সে যেন ডিম উৎসর্গ করল। তারপর যখন ইমাম বের হয়ে যায় তখন ফেরেশতারা (লিখা বন্ধ করে) ইমামের কাছে হাযির হয়ে যিকর (খুতবা) শুনতে থাকে।” [বুখারী; ৮৮১]

তাছাড়া এটা অনেকের নিকট দো'আ কবুল হওয়ার সময়। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জুম'আর দিনে এমন একটি সময় আছে কোন মুসলিম যদি সে সময়ে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ চায় তবে অবশ্যই তিনি তাকে সেটা দিবেন”। [বুখারী; ৬৪০০]

Tafsir Bayaan Foundation

হে মুমিনগণ, যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।

Muhiuddin Khan

মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।

Zohurul Hoque

ওহে যারা ঈমান এনেছ! যখন জুমু'আর দিনে নামাযের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহ্‌র স্মরণে তাড়াতাড়ি করবে ও বেচা-কেনা বন্ধ রাখবে। এইটিই হচ্ছে তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে।