কুরআন মজীদ সূরা আল আনআম আয়াত ৫
Qur'an Surah Al-An'am Verse 5
আল আনআম [৬]: ৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
فَقَدْ كَذَّبُوْا بِالْحَقِّ لَمَّا جَاۤءَهُمْۗ فَسَوْفَ يَأْتِيْهِمْ اَنْۢبـٰۤؤُا مَا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِءُوْنَ (الأنعام : ٦)
- faqad
- فَقَدْ
- Then indeed
- সুতরাং নিশ্চয়ই
- kadhabū
- كَذَّبُوا۟
- they denied
- তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে
- bil-ḥaqi
- بِٱلْحَقِّ
- the truth
- প্রতি সত্যের
- lammā
- لَمَّا
- when
- যখনই
- jāahum
- جَآءَهُمْۖ
- it came to them
- কাছে তা এসেছে তাদের
- fasawfa
- فَسَوْفَ
- but soon
- সুতরাং শীঘ্রই
- yatīhim
- يَأْتِيهِمْ
- will come to them
- কাছে আসবে তাদের
- anbāu
- أَنۢبَٰٓؤُا۟
- news
- সংবাদ
- mā
- مَا
- (of) what
- ঐ বিষয়ের
- kānū
- كَانُوا۟
- they used to
- তারা ছিলো
- bihi
- بِهِۦ
- [at it]
- নিয়ে যা
- yastahziūna
- يَسْتَهْزِءُونَ
- mock
- ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো
Transliteration:
Faqad kazzaboo bilhaqqi lammaa jaaa'ahum fasawfa yaateehim ambaaa'u maa kaanoo bihee yastahzi'oon(QS. al-ʾAnʿām:5)
English Sahih International:
For they had denied the truth when it came to them, but there is going to reach them the news of what they used to ridicule. (QS. Al-An'am, Ayah ৫)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
(এখন) যে সত্য তাদের কাছে এসেছে তারা তা অস্বীকার করেছে। শীঘ্রই তাদের কাছে সে খবর আসবে যে সম্পর্কে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। (আল আনআম, আয়াত ৫)
Tafsir Ahsanul Bayaan
সত্য যখনই তাদের কাছে এসেছে, তারা তা মিথ্যাজ্ঞান করেছে। যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, তার (পরিণাম) সংবাদ তারা অবহিত হবে। [১]
[১] অর্থাৎ, এই বিমুখতা এবং মিথ্যা ভাবার শাস্তি তারা পাবে। তখন তাদের মধ্যে এই অনুভূতির সৃষ্টি হবে যে, হায়! এই সত্য কিতাবকে মিথ্যাজ্ঞান এবং তার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ যদি না করতাম!
Tafsir Abu Bakr Zakaria
সুতরাং সত্য যখন তাদের কাছে এসেছে তারা তো তাতে মিথ্যারোপ করেছে [১]। অতএব যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত তার যথার্থ সংবাদ অচিরেই তাদের কাছে পৌঁছবে [২]।
[১] এ আয়াতে বলা হচ্ছে যে, সত্য যখন তাদের সামনে প্রতিভাত হল, তখন তারা সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। এখানে সত্য’র অর্থ কুরআন হতে পারে এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও হতে পারে। [তাবারী, কুরতুবী, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]কেননা, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজীবন আরব গোত্রসমূহের মধ্যেই অবস্থান করেন। তার শৈশব থেকে যৌবন এবং যৌবন থেকে বার্ধক্য তাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা এ কথা পুরোপুরিই জানত যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন মানুষের কাছে এক অক্ষরও শিক্ষা লাভ করেননি। এমনকি তিনি নিজ হাতে নিজের নামও লিখতে পারতেন না। সারা আরবে তিনি উম্মি বা নিরক্ষর উপাধিতে খ্যাত ছিলেন। চল্লিশ বছর পূর্ণ হয়ে যেতেই অকস্মাৎ তার মুখ দিয়ে নিগূঢ় তত্ত্ব সম্পন্ন বাণীসমূহের এমন স্রোতধারা প্রবাহিত হতে লাগল, যা জগতের যাবতীয় জ্ঞানী-গুণীদেরকেও বিস্ময়াভিভূত করে দেয়। তিনি আল্লাহর কালাম কুরআনের মোকাবেলা করার জন্য আরবের স্বনামখ্যাত, প্রাঞ্জলভাষী কবি-সাহিত্যিক ও অলঙ্কারবিদদেরকে চ্যালেঞ্জ করেন। তারা মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য স্বীয় জান-মাল, মান-সন্ত্রম, সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজন বিসর্জন দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকত। কিন্তু এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কুরআনের একটি আয়াতের অনুরূপ বাক্য রচনা করার সামর্থ্য তাদের কারো হল না। এভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং কুরআনের অস্তিত্ব ছিল সত্যের এক বিরাট নিদর্শন। এছাড়া মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে হাজারো মু'জিযা ও খোলাখুলি নিদর্শন প্রকাশ পায়, যে কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ যা অস্বীকার করতে পারত না। কিন্তু কাফেররা এসব নিদর্শনকে সুস্পষ্ট মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিল।
[২] আয়াতের শেষে কাফেরদের অস্বীকৃতি ও মিথ্যারোপের অশুভ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত
করে বলা হয়েছে যে, আজ তো এসব অপরিণামদর্শী লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মু'জিযা, তার আনীত হেদায়াত, কেয়ামত ও আখেরাত সবকিছু নিয়েই হাস্যোপহাস করছে, কিন্তু সে সময় দূরে নয়, যখন এগুলোর স্বরূপ তাদের দৃষ্টিতে প্রতিভাত হবে আর যদি তা না করা হয় তবে যা নিয়ে তারা ঠাট্টাবিদ্রুপ করছে তা দলীল-প্রমাণসহ তাদের সামনে উপস্থিত হবে। এত সাবধানবাণীর পরও কাফেররা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে নি। তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরে আসেনি। শেষপর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা তার এ ওয়াদা সত্য করে দেখিয়েছেন। বদরের দিন তিনি তাদের উপর তরবারীর মাধ্যমে সে ফয়সালা করে দেন। [তাবারী]
তাছাড়া তাদের বিচারের আরেক ব্যবস্থা রয়েছেই। তা কেয়ামতদিবসে প্রতিষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রত্যেককে তার ঈমান ও আমলের হিসাব দিতে হবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ কর্মের পুরস্কার ও শাস্তি পাবে। তখন এগুলোকে বিশ্বাস ও অস্বীকার করলেও কোন উপকার বা ক্ষতি হবে না। কেননা, সেটা কর্মজগত নয় প্রতিদান দিবস। আল্লাহ তা'আলা এখনো চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ দিয়েছেন। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আল্লাহর নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস স্থাপন করলেই দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ সাধিত হবে। যদি তা না করে, তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা মিথ্যারোপকারীদের বলবেন, “এটাই সে আগুন যাকে তোমরা মিথ্যা মনে করতে " সূরা আত-তুর;১৪] কিয়ামতের দিন কাফেরদের সামনে কিভাবে এ সত্যকে উপস্থাপন করা হবে তার বর্ণনায় আল্লাহ আরও বলেন, "আর তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর শপথ করে বলে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনজীবিত করবেন না। কেন নয়? তিনি তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেনই। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই এটা জানে না-- তিনি পুনরুথিত করবেন যে বিষয়ে তাদের মতানৈক্য ছিল তা তাদেরকে স্পষ্টভাবে দেখানোর জন্য এবং যাতে কাফিররা জানতে পারে যে, তারাই ছিল মিথ্যাবাদী" [সূরা আন-নাহল;৩৮, ৩৯] [সা’দী]
Tafsir Bayaan Foundation
অতঃপর অবশ্যই তারা সত্যকে অস্বীকার করেছে, যখন তা তাদের কাছে এসেছে। সুতরাং অচিরেই তাদের কাছে সে বিষয়ের সংবাদ আসবে যা নিয়ে তারা উপহাস করত।
Muhiuddin Khan
অতএব, অবশ্য তারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে যখন তা তাদের কাছে এসেছে। বস্তুতঃ অচিরেই তাদের কাছে ঐ বিষয়ের সংবাদ আসবে, যার সাথে তারা উপহাস করত।
Zohurul Hoque
সুতরাং তারা নিশ্চয়ই সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে যখনই তা তাদের কাছে এসেছে, কাজেই অচিরেই তাদের কাছে বার্তা আসবে যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো।