কুরআন মজীদ সূরা আল আনআম আয়াত ১০৪
Qur'an Surah Al-An'am Verse 104
আল আনআম [৬]: ১০৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
قَدْ جَاۤءَكُمْ بَصَاۤىِٕرُ مِنْ رَّبِّكُمْۚ فَمَنْ اَبْصَرَ فَلِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ عَمِيَ فَعَلَيْهَاۗ وَمَآ اَنَا۠ عَلَيْكُمْ بِحَفِيْظٍ (الأنعام : ٦)
- qad
- قَدْ
- Verily
- নিশ্চয়ই
- jāakum
- جَآءَكُم
- has come to you
- কাছে এসেছে তোমাদের
- baṣāiru
- بَصَآئِرُ
- enlightenment
- প্রত্যক্ষ প্রমাণ (অন্তর্দৃষ্টির আলো)
- min
- مِن
- from
- পক্ষ হতে
- rabbikum
- رَّبِّكُمْۖ
- your Lord
- তোমাদের রবের
- faman
- فَمَنْ
- Then whoever
- অতএব যে
- abṣara
- أَبْصَرَ
- sees
- দেখবে
- falinafsihi
- فَلِنَفْسِهِۦۖ
- then (it is) for his soul
- (তা) তবে জন্যে নিজের তার
- waman
- وَمَنْ
- and whoever
- এবং যে
- ʿamiya
- عَمِىَ
- (is) blind
- অন্ধ হবে
- faʿalayhā
- فَعَلَيْهَاۚ
- then (it is) against himself
- (তার ক্ষতি) তবে তার বিরুদ্ধে যাবে
- wamā
- وَمَآ
- And not
- এবং নই
- anā
- أَنَا۠
- (am) I
- আমি
- ʿalaykum
- عَلَيْكُم
- over you
- উপর তোমাদের
- biḥafīẓin
- بِحَفِيظٍ
- a guardian
- কোন রক্ষক
Transliteration:
Qad jaaa'akum basaaa'iru mir Rabbikum faman absara falinafsihee wa man 'amiya fa'alaihaa; wa maaa ana 'alaikum bihafeez(QS. al-ʾAnʿām:104)
English Sahih International:
There has come to you enlightenment from your Lord. So whoever will see does so for [the benefit of] his soul, and whoever is blind [does harm] against it. And [say], "I am not a guardian over you." (QS. Al-An'am, Ayah ১০৪)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে (অন্তরের) আলো এসে পৌঁছেছে, যে লোক (এই আলো দিয়ে) দেখবে তাতে তার নিজেরই কল্যাণ হবে, আর যে অন্ধ থাকবে, তার অকল্যাণ তার ঘাড়েই পড়বে। (বাণী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে) আমি তোমাদেরকে পাহারা দেয়ার জন্য দায়িত্বপাপ্ত হইনি। (আল আনআম, আয়াত ১০৪)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই এসেছে। সুতরাং কেউ তা দেখলে, তা দিয়ে সে নিজেই লাভবান হবে। আর কেউ অন্ধ হলে, তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।[১] আর আমি তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক নই।[২]
[১] بَصَائِرُ হল بَصِيْرَةٌ এর বহুবচন। আর তা আসলে হল অন্তরের জ্যোতির নাম। তবে এখানে তা থেকে সেই প্রমাণাদিকে বুঝানো হয়েছে, যেগুলোকে কুরআন একাধিক স্থানে বারংবার বর্ণনা করেছে এবং যেগুলোকে নবী করীম (সাঃ)ও তাঁর বহু হাদীসে তুলে ধরেছেন। যে এই প্রমাণাদিকে দেখে হিদায়াতের পথ অবলম্বন করবে, তাতে তারই লাভ হবে। আর অবলম্বন না করলে ক্ষতিও তারই হবে। যেমন, (আল্লাহ) বলেন, {مَنِ اهْتَدَى فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا} (الإسراء; ১৫) আলোচ্য আয়াতের যে অর্থ এই আয়াতের অর্থও তা-ই।
[২] বরং আমি কেবল মুবাল্লিগ (যার কাজ পৌঁছে দেওয়া), দায়ী (আহবানকারী) এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। পথ দেখিয়ে দেওয়া আমার দায়িত্ব, কিন্তু সে পথে পরিচালনা করা আল্লাহর এখতিয়ারাধীন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
অবশ্যই তোমাদের রব–এর কাছ থেকে তোমাদের কাছে চাক্ষুষ প্রমাণাদি এসেছে। অতঃপর কেউ চক্ষুষ্মান হলে সেটা দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে, আর কেউ অন্ধ সাজলে তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে [১]। আর আমি তোমাদের উপর সংরক্ষক নই [২]।
[১] এ আয়াতের (بصائِر) শব্দটি (بصيرة) এর বহুবচন। এর অর্থ বুদ্ধি ও জ্ঞান। অর্থাৎ যে শক্তি দ্বারা মানুষ অতিন্দ্রীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। আয়াতে (بصائِر) বলে ঐসব যুক্তি-প্রমাণ ও উপায়াদিকে বোঝানো হয়েছে, যেগুলো দ্বারা মানুষ সত্য ও বাস্তব রূপকে জানতে পারে। আয়াতের অর্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সত্য দর্শনের উপায়-উপকরণ পৌঁছে গেছে। [আল-মানার] অর্থাৎ কুরআন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও বিভিন্ন মু'জিযা আগমন করেছে ইবন কাসীর। তাছাড়া তোমরা রাসূলের চরিত্র, কাজকর্ম ও শিক্ষা প্রত্যক্ষ করছ। এগুলোই হচ্ছে সত্য দর্শনের উপায়। অতএব, যে ব্যক্তি এসব উপায় ব্যবহার করে চক্ষুষ্মান হয়ে যায়, সে নিজেরই উপকার সাধন করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এসব উপায় পরিত্যাগ করে সত্য সম্পর্কে অন্ধ হয়ে থাকে, সে নিজেরই ক্ষতি সাধন করে। [আল-মানার; আইসারুত তাফসীর, মুয়াসসার]
[২] অর্থাৎ মানুষকে জবরদস্তিমূলকভাবে অশোভনীয় কাজ থেকে বিরত রাখা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব নয়, যেমন সংরক্ষকের দায়িত্ব হয়ে পৌছার পরও। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা ও বিশ্বাস। এর সপক্ষে দলীল প্রমাণাদি অনেক, নীচে তার কিছু উল্লেখ করা হলোঃ
কুরআন থেকেঃ
আল্লাহর বাণীঃ
(وُجُوْهٌ يَّوْمَىِٕذٍ نَّاضِرَةٌ - اِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ)
“সেদিন কিছু চেহারা হবে সজীব ও প্রফুল্ল। তারা স্বীয় রবকে দেখতে থাকবে। [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ২২-২৩]
আল্লাহর বাণীঃ
(لَهُمْ مَّا يَشَاءُوْنَ فِيْهَا وَلَدَيْنَا مَزِيْدٌ)
“তারা তাতে যা চাইবে তাই পাবে, আর আমাদের কাছে আছে আরো কিছু বাড়তি" [সূরা ক্বাফঃ ৩৫]। এ আয়াতের তাফসীরে আলী ও আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ ‘বাড়তি বিষয় হলোঃ আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানোর সৌভাগ্য’।
আল্লাহ তা'আলা কুরআনের অন্যত্র বলেছেনঃ
(كَلَّآ اِنَّهُمْ عَنْ رَّبِّهِمْ يَوْمَىِٕذٍ لَّمَحْجُوْبُوْنَ)
“কাফেররা সেদিন স্বীয় রব-এর সাক্ষাত থেকে বঞ্চিত থাকবে" [সূরা আল-মুতাফফেফীনঃ ১৫]। এর দ্বারা কাফের ও অবিশ্বাসীরা সেদিনও সাজা হিসেবে আল্লাহকে দেখার গৌরব থেকে বঞ্চিত থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ আয়াতের দ্বারা এটা স্পষ্ট হলো যে, যারা ঈমানদার তাদের এ শাস্তি হবে না। অর্থাৎ তারা আল্লাহকে দেখতে পাবে।
আল্লাহর বাণীঃ
(لِلَّذِيْنَ اَحْسَـنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌ)
“যারা সৎ কাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত,তদুপরি তার উপর রয়েছে কিছু বাড়তি”। [সূরা ইউনুসঃ২৬]। এ আয়াতের তাফসীরে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সরাসরি আল্লাহকে দেখা বলে সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে। যার আলোচনা পরবর্তী বর্ণনায় হাদীস থেকে আসছে।
সহীহ হাদীস থেকেঃ
বিভিন্ন সহীহ হাদীসে ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ তা'আলাকে দেখার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, সে সমস্ত হাদীস মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌছেছে। ইমাম দারকুতনী এ সংক্রান্ত বিশটির মত হাদীস বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে ইমাম আবুল কাসেম লালাকা’য়ী ত্রিশটির মত হাদীস বর্ণনা করেছেন। নীচে এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা যেসব নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েছ, এগুলোর চাইতে বৃহৎ আরো কোন নেয়ামতের প্রয়োজন হলে বল, আমি তাও দেব। জান্নাতীরা নিবেদন করবেঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং জান্নাতে স্থান দিয়েছেন। এর বেশী আমরা আর কি চাইব। তখন মধ্যবর্তী পর্দা সরিয়ে নেয়া হবে এবং সবার সাথে আল্লাহর সাক্ষাত হবে। এটিই হবে জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। [সহীহ মুসলিমঃ ১৮১] জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর সাক্ষাতই হবে সর্ববৃহৎ নেয়ামত।
অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক চন্দ্রালোকিত রাতে সাহাবীদের সমভিব্যাহারে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি চাঁদের দিকে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশাবলী পৌঁছে দেয়া ও বুঝিয়ে দেয়া। এরপর স্বেচ্ছায় সেগুলো অনুসরণ করা না করা মানুষের দায়িত্ব। [সা'দী]
Tafsir Bayaan Foundation
নিশ্চয় তোমাদের কাছে চাক্ষুষ নিদর্শনাবলী এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। অতএব যে চক্ষুষ্মান হবে, তবে সে তার নিজের জন্যই হবে। আর যে অন্ধ সাজবে, তবে তা তার উপরই (বর্তাবে)। আর আমি তোমাদের উপর সংরক্ষক নই।
Muhiuddin Khan
তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই।
Zohurul Hoque
''নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে জ্ঞান দৃষ্টি এসেছে, কাজেই যে কেউ দেখতে পায়, সেটি তার নিজের আত্মার জন্যে, আর যে কেউ অন্ধ হবে, সেটি তার বিরুদ্ধে যাবে। আর আমি তোমাদের উপরে তত্ত্বাবধায়ক নই।’’