Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল হাদীদ আয়াত ২৭

Qur'an Surah Al-Hadid Verse 27

আল হাদীদ [৫৭]: ২৭ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

ثُمَّ قَفَّيْنَا عَلٰٓى اٰثَارِهِمْ بِرُسُلِنَا وَقَفَّيْنَا بِعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَاٰتَيْنٰهُ الْاِنْجِيْلَ ەۙ وَجَعَلْنَا فِيْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُ رَأْفَةً وَّرَحْمَةً ۗوَرَهْبَانِيَّةَ ِۨابْتَدَعُوْهَا مَا كَتَبْنٰهَا عَلَيْهِمْ اِلَّا ابْتِغَاۤءَ رِضْوَانِ اللّٰهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا ۚفَاٰتَيْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْهُمْ اَجْرَهُمْ ۚ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فٰسِقُوْنَ (الحديد : ٥٧)

thumma
ثُمَّ
Then
এরপর
qaffaynā
قَفَّيْنَا
We sent
আমরা অনুগামী করেছি
ʿalā
عَلَىٰٓ
on
উপর
āthārihim
ءَاثَٰرِهِم
their footsteps
তাদের পদচিহ্নের
birusulinā
بِرُسُلِنَا
Our Messengers
আমাদের  রাসূলদেরকে
waqaffaynā
وَقَفَّيْنَا
and We followed
এবং আমরা এরপর অনুগামী করেছি
biʿīsā
بِعِيسَى
with Isa
ঈসাকে
ib'ni
ٱبْنِ
son
পুত্র
maryama
مَرْيَمَ
(of) Maryam
মারইয়ামের
waātaynāhu
وَءَاتَيْنَٰهُ
and We gave him
এবং আমরা তাকে দিয়েছি
l-injīla
ٱلْإِنجِيلَ
the Injeel
ইনজিল
wajaʿalnā
وَجَعَلْنَا
And We placed
এবং আমরা দিয়েছিলাম
فِى
in
মধ্যে
qulūbi
قُلُوبِ
(the) hearts
অন্তরসমূহের
alladhīna
ٱلَّذِينَ
(of) those who
(তাদের) যারা
ittabaʿūhu
ٱتَّبَعُوهُ
followed him
তা্র অনুসরণ করেছে
rafatan
رَأْفَةً
compassion
করুণা
waraḥmatan
وَرَحْمَةً
and mercy
ও দয়া
warahbāniyyatan
وَرَهْبَانِيَّةً
But monasticism
আর বৈরাগ্যবাদ/ সন্ন্যাসবাদ
ib'tadaʿūhā
ٱبْتَدَعُوهَا
they innovated -
তা তারা উদ্ভাবন করেছিল
مَا
not
না
katabnāhā
كَتَبْنَٰهَا
We prescribed it
তার আমরা বিধান দিয়েছি
ʿalayhim
عَلَيْهِمْ
for them -
তাদের উপর
illā
إِلَّا
only
কিন্তু
ib'tighāa
ٱبْتِغَآءَ
seeking
(তারা করেছিল) সন্ধানে
riḍ'wāni
رِضْوَٰنِ
(the) pleasure
সন্তুষ্টির
l-lahi
ٱللَّهِ
(of) Allah
আল্লাহ্‌র
famā
فَمَا
but not
কিন্তু না
raʿawhā
رَعَوْهَا
they observed it
তা পালন করেছিল
ḥaqqa
حَقَّ
(with) right
যথাযথ ভাবে
riʿāyatihā
رِعَايَتِهَاۖ
observance
তা পালন করা (উচিৎ যেমন)
faātaynā
فَـَٔاتَيْنَا
So We gave
অতঃপর আমরা দিয়েছিলাম
alladhīna
ٱلَّذِينَ
those who
(তাদেরকে) যারা
āmanū
ءَامَنُوا۟
believed
ঈমান এনেছিল
min'hum
مِنْهُمْ
among them
তাদের মধ্য হতে
ajrahum
أَجْرَهُمْۖ
their reward
তাদের পুরস্কার
wakathīrun
وَكَثِيرٌ
but most
এবং অধিকাংশ
min'hum
مِّنْهُمْ
of them
তাদের মধ্যকার
fāsiqūna
فَٰسِقُونَ
(are) defiantly disobediently
সত্যত্যাগী (ফাসেক)

Transliteration:

Summa qaffainaa 'alaa aasaarihim bi Rusulinaa wa qaffainaa be 'Eesab ni Maryama wa aatainaahul Injeela wa ja'alnaa fee quloobil lazeenat taba' oohu raafatanw wa rahmatanw wa rahbaaniyyatanib tada' oohaa maa katanaahaa 'alaihim illab tighaaa'a ridwaanil laahi famaa ra'awhaa haqqa ri'aayatihaa fa aatainal lazeena aamanoo minhum ajrahum wa kaseerum minhum faasiqoon (QS. al-Ḥadīd:27)

English Sahih International:

Then We sent following their footsteps [i.e., traditions] Our messengers and followed [them] with Jesus, the son of Mary, and gave him the Gospel. And We placed in the hearts of those who followed him compassion and mercy and monasticism, which they innovated; We did not prescribe it for them except [that they did so] seeking the approval of Allah. But they did not observe it with due observance. So We gave the ones who believed among them their reward, but many of them are defiantly disobedient. (QS. Al-Hadid, Ayah ২৭)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

অতঃপর তাদের পথ ধরে আমি আমার রসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম, অতঃপর তাদের পেছনে আমি মারইয়াম-পুত্র ‘ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে পাঠিয়েছিলাম আর তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জীল। আর যারা তাকে অনুসরণ করেছিল তাদের অন্তরে দিয়েছিলাম করুণা ও দয়ামায়া। আর বৈরাগ্যবাদ- তা তারা নিজেরাই নতুনভাবে চালু করেছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। আমি তাদের উপর এ বিধান অপরিহার্য করিনি। আর সেটাও তারা লালন করতে পারেনি যেভাবে তা লালন করা প্রয়োজন ছিল। তাদের মধ্যে যারা ঈমান গ্রহণ করেছিল তাদেরকে আমি তাদের প্রাপ্য পুরস্কার দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের অধিকাংশই ছিল পাপাচারী। (আল হাদীদ, আয়াত ২৭)

Tafsir Ahsanul Bayaan

অতঃপর আমি তাদের অনুগামী করেছিলাম আমার রসূলগণকে এবং অনুগামী করেছিলাম মারয়্যাম তনয় ঈসাকে, আর তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জীল এবং তার অনুসারীদের অন্তরে দিয়েছিলাম করুণা ও দয়া;[১] কিন্তু সন্ন্যাসবাদ এটা তো তারা নিজেরা প্রবর্তন করেছিল,[২] আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বিধান ছাড়া[৩] আমি তাদেরকে এ (সন্ন্যাসবাদে)র বিধান দিইনি;[৪] অথচ এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি।[৫] সুতরাং তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তাদেরকে আমি তাদের পুরস্কার দিয়েছিলাম।[৬] আর তাদের অনেকেই সত্যত্যাগী।

[১] رَأْفَةٌএর অর্থ নম্রতা, করুণা এবং رَحْمَةٌ এর অর্থ দয়া-দাক্ষিণ্য। অনুসারীদের বলতে ঈসা (আঃ)-এর 'হাওয়ারী' (শিষ্যগণ)। অর্থাৎ, তাদের অন্তরে পরস্পরের জন্য প্রেম-প্রীতির প্রেরণা সৃষ্টি করে দিয়েছিলাম। যেমন, সাহাবাবায়ে কিরাম (রাঃ) একে অপরের প্রতি দয়াশীল ও হিতার্থী ছিলেন। رُحْمَاءُ بَيْنَهُمْ ইয়াহুদীরা আপোসে এ রকম একে অপরের জন্য হিতাকাঙ্ক্ষী ও দরদী নয়, যে রকম ঈসা (আঃ)-এর অনুসারীরা ছিলেন।

[২] رَهْبَانِيَّةٌ হল رَهْبٌ (ভয়) ধাতু থেকে। অথবা رُهْبَانٌ (সন্ন্যাসী) এর সাথে সম্বদ্ধ। এই ক্ষেত্রে 'রা' হরফটির উপর পেশ হবে। কিংবা এটাকে رهبنة এর সাথে সম্বদ্ধ ধরে নেওয়া যায়। তবে এই ক্ষেত্রে 'রা' এর উপর যবর হবে। رَهبانية এর অর্থ হল, (বৈরাগ্যবাদ বা সন্ন্যাসবাদ) সংসার ত্যাগ করা (ফকীরী নেওয়া)। অর্থাৎ, দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে কোন জঙ্গলে বা মরুভূমিতে গিয়ে নির্জনে আল্লাহর উপাসনা-আরাধনা করা। এর পটভূমিকা হল, ঈসা (আঃ) এর পর এমন রাজাদের আগমন ঘটে, যারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের মধ্যে বহু পরিবর্তন সাধন করে। যে কাজকে একটি দল মেনে নিতে পারেনি। উক্ত দল রাজাদের ভয়ে পাহাড়ের চূড়া ও গুহায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। এখান থেকেই তার সূচনা হয়। যার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল পরিস্থিতির চাপে পড়ে। কিন্তু তাদের পরে আগত অনেক মানুষ তাদের বড়দের অন্ধ অনুকরণে দেশ ত্যাগ করাকে ইবাদতের একটি তরীকা বানিয়ে নেয় এবং নিজেকে গির্জা ও উপাসনালয়ে আবদ্ধ করে নেয়। আর এর জন্য দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে অত্যাবশ্যক গণ্য করে। এটাকেই আল্লাহ ابتداع (মনগড়া) বলে আখ্যায়িত করেছেন।

[৩] অর্থাৎ, আমি তো তাদের উপর কেবল আমার সন্তুষ্টি লাভের পথ খোঁজ করা অপরিহার্য করেছিলাম। এর দ্বিতীয় অনুবাদ হল, তারা এ কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ পরিষ্কার করে বলে দিলেন যে, দ্বীনে নিজের পক্ষ হতে বিদআত রচনা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় না। তাতে তা (এই বিদআত) দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি একমাত্র তাঁর আনুগত্যেই অর্জন হতে পারে।

[৪] এটা পূর্বের কথারই তাকীদ স্বরূপ বলা হচ্ছে যে, এই বৈরাগ্য তাদের নিজেরই আবিষ্কার করা, আমি এর নির্দেশ দিইনি।

[৫] অর্থাৎ, যদিও তারা উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই বলেছিল, কিন্তু তারা যথাযথভাবে তা পালন করেনি। যথাযথ তা পালন করলে বিদআত আবিষ্কার করার পরিবর্তে অনুসরণের পথ অবলম্বন করত। (এর দ্বিতীয় অনুবাদঃ কিন্তু সন্ন্যাসবাদ এটা তো তারা নিজেরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রবর্তন করেছিল, আমি তাদেরকে এর বিধান দিইনি অথচ এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি।)

[৬] এরা হল সেই লোক, যারা ঈসা (আঃ)-এর ধর্মে প্রতিষ্ঠিত ছিল।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

তারপর আমরা তাদের পিছনে অনুগামী করেছিলাম আমাদের রাসূলগণকে এবং অনুগামী করেছিলাম মারইয়াম-তনয় ঈসাকে, আর তাকে আমারা দিয়েছিলাম ইঞ্জীল এবং তার অনুসারীদের অন্তরে দিয়েছিলাম করুণা ও দয়া [১]। আর সন্ন্যাসবাদ [২]--- এটা তো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রবর্তন করেছিল। আমরা তাদেরকে এটার বিধান দেইনি ; অথছ এটাও ওরা যথাযথভাবে পালন করেনি [৩]। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল, তাদেরকে আমারা দিয়েছিলাম তাদের পুরস্কার। আর তাদের অধিকাংশই ছিল ফাসিক।

[১] এখানে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর প্রতি ঈমান আনয়নকারী হাওয়ারীগণের বিশেষ গুণ বৰ্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যারা ঈসা আলাইহিস সালাম অথবা ইঞ্জীলের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের অন্তরে স্নেহ ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছি। তারা একে অপরের প্রতি দয়া ও করুণাশীল কিংবা সমগ্র মানবমণ্ডলীর প্রতি তারা অনুগ্রহশীল। এখানে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সাহাবী তথা হাওয়ারিগণের দুটি বিশেষ গুণ উল্লেখ করা হয়েছে; তা হচ্ছে, দয়া ও করুণা। এরপর তাদের আরেকটি অভ্যাস বর্ণিত হয়েছে যা তারা আবিস্কার করে নিয়েছিল। আর যা আল্লাহ তাদের উপর আবশ্যিক করে দেন নি। আর সেটা হচ্ছে, সন্যাসবাদ। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

[২] رهبانية শব্দটি رهبان এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত। এর অর্থ যে অতিশয় ভয় করে। বলা হয়ে থাকে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম-এর পর বনী-ইসরাঈলের মধ্যে পাপাচার ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে পড়ে বিশেষতঃ রাজন্যবৰ্গও শাসকশ্রেণী ইঞ্জীলের বিধানাবলীর প্রতি প্রকাশ্যে বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। বনী-ইসরাঈলের মধ্যে কিছু সংখ্যক খাঁটি আলেম ও সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। তারা এই প্রবণতাকে রুখে দাঁড়ালে তাদেরকে হত্যা করা হয়। যে কয়েকজন প্ৰাণে বেঁচে গেলেন তারা দেখলেন যে, মোকাবেলার শক্তি তাঁদের নেই। কিন্তু এদের সাথে মিলে-মিশে থাকলে তাঁদের দ্বীন-ঈমান বরবাদ হয়ে যাবে। তাই তাঁরা স্বতঃ প্রণোদিত হয়ে নিজেদের জন্যে জরুরি করে নিলেন যে, তারা এখন থেকে বৈধ আরাম-আয়েশও বিসর্জন দিবেন, বিবাহ করবেন না, খাওয়া-পরা এবং ভোগ্যবস্তু সংগ্ৰহ করার চিন্তা করবেন না, বসবাসের জন্য গৃহ নির্মাণে যত্নবান হবেন না, লোকালয় থেকে দূরে কোন জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ে জীবন অতিবাহিত করবেন। অথবা যাযাবরদের ন্যায় ভ্ৰমণ ও পর্যটনে জীবন কাটিয়ে দিবেন যাতে দ্বীনের বিধিবিধান স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে পালন করা যায়। তারা আল্লাহর ভয়ে এই কর্ম পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, তাই তারা رهبان তথা সন্ন্যাসী নামে অভিহিত হলো এবং তাদের উদ্ভাবিত মতবাদ رهبانية তথা সন্ন্যাসবাদ নামে খ্যাতি লাভ করে। [কুরতুবী] আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাদের এ কাজের সমালোচনা করেছে; কারণ তারা নিজেরাই নিজেদের উপর ভোগ বিলাস বিসর্জন দেয়া অপরিহার্য করে নিয়েছিল-আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয করা হয়নি। এভাবে তারা নিজেদেরকে শরীয়ত প্রবর্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছিল। যা স্পষ্টত; পথভ্রষ্টতা। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]

মোটকথা; সন্ন্যাসবাদ কখনও আল্লাহর নৈকট্যের মাধ্যম ছিল না। এটা এ শরীয়তেও জায়েয নেই। হাদীসে এসেছে, একবার উসমান ইবনে মাযউন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী খাওলা বিনতে হাকীম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে খুব খারাপ বেশে প্রবেশ করলে তিনি বললেন, তোমার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, আমার স্বামী সারা রাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করে আর সারাদিন সাওম পালন করে, ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে প্রবেশ করলে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলের কাছে এ ঘটনা বিবৃত করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমানের সাথে সাক্ষাত করে তাকে বললেন, হে উসমান ! আমাদের উপর সন্যাসবাদ লিখিত হয়নি। তুমি কি আমাকে আদর্শ মনে কর না? আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি এবং তাঁর শরীয়তের সীমারেখার বেশী হেফাজতকারী। [মুসনাদে আহমাদ; ৬/২২৬]

[৩] অর্থাৎ তারা দ্বিবিধ ভ্ৰান্তিতে ডুবে আছে। একটি ভ্রান্তি হচ্ছে তারা নিজেদের ওপর এমন সব বাধ্যবাধকতা আরোপ করে নিয়েছিল যা করতে আল্লাহ কোন নির্দেশ দেননি। দ্বিতীয় ভ্ৰান্তি হচ্ছে নিজেদের ধারণা মতে যেসব বাধ্য বাধকতাকে তারা আল্লাহর সস্তুষ্টির উপায় বলে মনে করে নিজেদের ওপর আরোপ করে নিয়েছিলো তাঁর হক আদায় করেনি এবং এমন সব আচরণ করেছে যার দ্বারা আল্লাহর সস্তুষ্টির পরিবর্তে তাঁর গযব খরিদ করে নিয়েছে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীরঃ কুরতুবী]

Tafsir Bayaan Foundation

তারপর তাদের পিছনে আমি আমার রাসূলদেরকে অনুগামী করেছিলাম এবং মারইয়াম পুত্র ঈসাকেও অনুগামী করেছিলাম। আর তাকে ইনজীল কিতাব দিয়েছিলাম এবং যারা তার অনুসরণ করেছিল তাদের অন্তরসমূহে করুণা ও দয়ামায়া দিয়েছিলাম। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারাই বৈরাগ্যবাদের প্রবর্তন করেছিল। এটা আমি তাদের ওপর লিপিবদ্ধ করে দেইনি। তারপর তাও তারা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। আর তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমি তাদের প্রতিদান দিয়েছিলাম এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ফাসিক।

Muhiuddin Khan

অতঃপর আমি তাদের পশ্চাতে প্রেরণ করেছি আমার রসূলগণকে এবং তাদের অনুগামী করেছি মরিয়ম তনয় ঈসাকে ও তাকে দিয়েছি ইঞ্জিল। আমি তার অনুসারীদের অন্তরে স্থাপন করেছি নম্রতা ও দয়া। আর বৈরাগ্য, সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে; আমি এটা তাদের উপর ফরজ করিনি; কিন্তু তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে এটা অবলম্বন করেছে। অতঃপর তারা যথাযথভাবে তা পালন করেনি। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী ছিল, আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পুরস্কার দিয়েছি। আর তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।

Zohurul Hoque

তারপর আমাদের রসূলগণকে তাঁদের পদচিহ্নে চলতে দিয়েছিলাম, আর মরিয়ম-পুত্র ঈসাকে আমরা অনুসরণ করিয়েছিলাম ও তাঁকে আমরা ইনজীল দিয়েছিলাম, আর যারা তাঁর অনুসরণ করেছিল তাদের অন্তরে আমরা সদয়তা ও করুণা দিয়েছিলাম। কিন্ত সন্ন্যাসবাদ -- তারাই এটি আবিস্কার করেছিল, আমরা তাদের প্রতি এটি লিপিবদ্ধ করি নি, শুধু আল্লাহ্‌র সন্তষ্টির অনুসন্ধান করা, কিন্ত তারা এটি পালন করে নি যেমনটা এটি পালনের যোগ্য ছিল। ফলে তাদের মধ্যের যারা ঈমান এনেছিল তাদের আমরা দিয়েছিলাম তাদের প্রতিদান, কিন্ত তাদের অধিকাংশই ছিল সত্যত্যাগী।