Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল ওয়াক্বিয়া আয়াত ১৪

Qur'an Surah Al-Waqi'ah Verse 14

আল ওয়াক্বিয়া [৫৬]: ১৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَقَلِيْلٌ مِّنَ الْاٰخِرِيْنَۗ (الواقعة : ٥٦)

waqalīlun
وَقَلِيلٌ
And a few
এবং অল্পসংখ্যক (হবে)
mina
مِّنَ
of
মধ্য হতে
l-ākhirīna
ٱلْءَاخِرِينَ
the later people
পরবর্তীদের

Transliteration:

Wa qaleelum minal aa khireen (QS. al-Wāqiʿah:14)

English Sahih International:

And a few of the later peoples, (QS. Al-Waqi'ah, Ayah ১৪)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

আর পরবর্তীদের মধ্য হতে কম সংখ্যক। (আল ওয়াক্বিয়া, আয়াত ১৪)

Tafsir Ahsanul Bayaan

এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে[১]

[১] ثُلَّةٌ এমন বড় দলকে বলা হয়, যার গণনা সম্ভব নয়। বলা হয় যে, أوَّلِين (পূববর্তীগণ) থেকে উদ্দেশ্য হল, আদম (আঃ) থেকে নিয়ে নবী করীম (সাঃ) পর্যন্ত উম্মতের লোক। আর آخِرِين (পরবর্তীগণ) থেকে উদ্দেশ্য হল, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের ব্যক্তিবর্গ। অর্থ হল এই যে, পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে অগ্রবর্তী একটি বড় দল হবে। কেননা, তাদের যুগ সুদীর্ঘ, যাতে হাজার হাজার নবীদের অগ্রবর্তীগণ শামিল আছেন। এঁদের তুলনায় মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের যুগ কিয়ামত পর্যন্ত অল্পই। তাই এদের মধ্যে অগ্রবর্তীদের সংখ্যা তুলনামূলক পূর্ববর্তীদের চাইতে কম হবে। কিন্তু একটি হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন যে, "আমি আশা করি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে।" (মুসলিম ২০০নং) তবে এটা আয়াতে উল্লিখিত অর্থের পরিপন্থী নয়। কারণ, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের অগ্রবর্তীদেরকে এবং সাধারণ মু'মিনদেরকে মিলিয়ে জান্নাতে প্রবেশকারীদের সংখ্যা অন্যান্য সমস্ত উম্মতের অর্ধেক হয়ে যাবে। অতএব পূর্ববর্তী উম্মতের কেবল অগ্রবর্তীদের সংখ্যা বেশী হয়ে যাওয়া হাদীসে বর্ণিত সংখ্যার বিপরীত নয়। তবে এই উক্তি (সঠিক কি না তা) যাচাই সাপেক্ষ। পক্ষান্তরে কেউ কেউ أوَّلِين এবং آخِرِين থেকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের লোকদেরই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, এই উম্মতের পূর্ববর্তীদের মধ্যে অগ্রবর্তীদের সংখ্যা বেশী এবং পরবর্তীদের মধ্যে অগ্রবর্তীদের সংখ্যা কম হবে। ইমাম ইবনে কাসীর এই দ্বিতীয় উক্তিটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আর এটাকেই সর্বাধিক সঠিক মনে হচ্ছে। এই বাক্যটি فِيْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ এবং عَلَى سُرُرٍ مَّوْضُوْنَةٍ এর মধ্যস্থলে একটি 'মু'তারিযাহ' (পূর্বাপরের সাথে সম্পর্কহীন বিচ্ছিন্ন) বাক্য।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে [১]।

[১] ثلة শব্দের অর্থ দল অথবা বড় দল। আলোচ্য আয়াতসমূহে দু’ জায়গায় পূর্ববর্তীও পরবর্তীর বিভাগ উল্লেখিত হয়েছে – নৈকট্যশীলদের বর্ণনায় এবং সাধারণ মুমিনদের বর্ণনায়। নৈকট্যশীলদের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, অগ্রবর্তী নৈকট্যশীলদের একটি বড় দল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে হবে এবং অল্প সংখ্যক পরবর্তীদের মধ্য থেকে হবে। সাধারণ মুমিনদের বর্ণনায় পূর্ববতী ও পরবতী উভয় জায়গায় ثلة শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ এই যে, সাধারণ মুমিনদের একটি বড় দল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে হবে এবং একটি বড় দল পরবর্তীদের মধ্য থেকেও হবে। এখন চিন্তা সাপেক্ষ বিষয় এই যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বলে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তফসীরবিদগণ দুরকম উক্তি করেছেন।

(এক) আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্ব পর্যন্ত সব মানুষ পূর্ববর্তী এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষ পরবর্তী।

(দুই) তফসীরবিদগণের দ্বিতীয় উক্তি এই যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বলে এই উম্মতেরই দুটি স্তর বোঝানো হয়েছে। পূর্ববর্তী বলে কুরুনে-উলা তথা সাহাবী, তাবেয়ী প্রমুখদের যুগকে এবং পরবর্তী বলে তাদের পরবর্তী কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী মুসলিম সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়েছে। অধিকাংশ মুফাসসির এই দ্বিতীয় উক্তিকেই অগ্ৰাধিকার দিয়েছেন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

এ পক্ষের যুক্তির সমর্থনে বলা যায় যে, পবিত্র কুরআন থেকে সুস্পষ্টরূপে বোঝা যায়, উম্মতে মুহাম্মদী পূর্ববতী সকল উম্মতের চাইতে শ্রেষ্ঠ। [সা'দী] বলাবাহুল্য কোন উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব তার ভিতরকার উচ্চস্তরের লোকদের সংখ্যাধিক্য দ্বারাই হয়ে থাকে। তাই শ্রেষ্ঠতম উম্মতের মধ্যে অগ্রবর্তী নৈকট্যশীলদের সংখ্যা কম হবে - এটা সুদূর পরাহত। যেসব আয়াত দ্বারা উম্মতে মুহাম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়, সেগুলো এইঃ

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ [সূরা আলে ইমরান; ১১০]

এবং

وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ [সূরা আল-বাকারাহ; ১৪৩]

তাছাড়া এক হাদীসে বলা হয়েছে, “তোমরা সত্তরটি উম্মতের পরিশিষ্ট হবে। তোমরা সর্বশেষে এবং আল্লাহ তা’আলার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ হবে।” [তিরমিয়ী; ৩০০১] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “তোমরা জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ হবে - এতে তোমরা সন্তুষ্ট আছ কি? আমরা বললামঃ নিশ্চয় আমরা এতে সন্তুষ্ট। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, আমি আশা করি তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হবে।” [বুখারী; ৩৩৪৮, মুসলিম;২২২]

অন্য হাদীসে এসেছে, জান্নাতীগণ মোট একশ বিশ কাতারে থাকবে তন্মধ্যে আশি কাতার এই উম্মতের মধ্য থেকে হবে এবং অবশিষ্ট চল্লিশ কাতারে সমগ্র উম্মত শরীক হবে। [তিরমিয়ী; ২৫৪৬, ইবনে মাজাহঃ ৪২৮৯, মুসনাদে আহমাদ; ১/৪৫৩, ৫/৩৪৭, ৫/৩৫৫] উপরোক্ত বর্ণনাসমূহে অন্যান্য উম্মতের তুলনায় এই উম্মতের জান্নাতীদের পরিমাণ কোথাও এক চতুর্থাংশ, কোথাও অর্ধেক এবং শেষ বর্ণনায় দুই তৃতীয়াংশ বলা হয়েছে। এতে বুঝা গেল যে, এ নৈকট্যপ্রাপ্তদের সংখ্যা এ উম্মতের মধ্যে কম হবার নয়।

Tafsir Bayaan Foundation

আর অল্পসংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।

Muhiuddin Khan

এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্যে থেকে।

Zohurul Hoque

আর পরবর্তীকালীনদের থেকে অল্প সংখ্যায়।