Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আন-নাজম আয়াত ২০

Qur'an Surah An-Najm Verse 20

আন-নাজম [৫৩]: ২০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَمَنٰوةَ الثَّالِثَةَ الْاُخْرٰى (النجم : ٥٣)

wamanata
وَمَنَوٰةَ
And Manat
এবং মানাত
l-thālithata
ٱلثَّالِثَةَ
the third
তৃতীয়
l-ukh'rā
ٱلْأُخْرَىٰٓ
the other?
অপর (একটি দেবী)

Transliteration:

Wa manaatas saalisatal ukhraa (QS. an-Najm:20)

English Sahih International:

And Manat, the third – the other one? (QS. An-Najm, Ayah ২০)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

আর তৃতীয় আরেকটি মানাৎ সম্পর্কে? (এ সব অক্ষম, বাকশক্তিহীন, নড়া-চড়ার শক্তিহীন মূর্তিগুলোর পূজা করা কতটা যুক্তিযুক্ত) (আন-নাজম, আয়াত ২০)

Tafsir Ahsanul Bayaan

এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে? [১]

[১] এ কথা মুশরিকদেরকে তিরস্কার করে বলা হচ্ছে যে, এই হল আল্লাহর মাহাত্ম্য, যা উল্লেখ হয়েছে। তিনি হলেন জিবরীল (আঃ)-এর মত মহান ফিরিশতার স্রষ্টা। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষটি হল তাঁর রসূল। তাঁকে তিনি আসমানে ডেকে নিয়ে স্বীয় বড় বড় নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন। তাঁর উপর অহীও অবতীর্ণ করেন। বল তো, তোমরা যেসব উপাস্যের উপাসনা কর, তাদের মধ্যেও কি এই বা এই ধরনের গুণাবলী আছে? এই কথার ভিত্তিতে আরবের প্রসিদ্ধ তিনটি প্রতিমার নাম উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করেছেন। لاَتٌ (লাত) কারো কারো নিকট এটা الله থেকে উদ্ভূত। আবার কারো নিকট এটা لاَتَ يَلِيْتُ থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ ফিরানো। পূজারীরা তাদের গর্দান তার দিকে ফিরাতো এবং তার তাওয়াফ করত তাই তার এই নাম হয়ে যায়। কেউ বলেন যে, لات এর تا অক্ষরটি তাশদীদ (ّ ) যুক্ত। لَتَّ يَلُتُّ থেকে 'ইস্ম ফায়েল' বা কর্তৃকারকপদ (যে ছাতু ঘুলে)। সে একজন নেক মানুষ ছিল। হাজীদেরকে ছাতু ঘুলে ঘুলে খাওয়াতো। যখন সে মারা গেল, তখন লোকেরা তার কবরকে ইবাদতগাহ বানিয়ে নিল। তারপর তার মূর্তি তৈরী করা হল। এটা ত্বায়েফের বানূ সাক্বীফ গোত্রের সব চাইতে বড় প্রতিমা ছিল। عُزَّى সম্পর্কে বলা হয় যে, এটা আল্লাহর গুণবাচক নাম عَزِيْزٌ থেকে উদ্ভূত। আর এটা أَعَزَّ এর স্ত্রীলিঙ্গ। যার অর্থ, عَزِيْزَةٌ (প্রিয়তমা)। কেউ কেউ বলেছেন, এটা গাত্বফানে একটি গাছ ছিল, যার পূজা করা হত। কেউ বলেছেন, এটি শয়তান জিন্নী (পেতনী) ছিল, যা কোন কোন গাছে দেখা দিত। আবার কারো মতে এটি একটি সাদা পাথর ছিল, লোকেরা যার পূজা করত। এটি কুরাইশ ও বনী কিনানাহ গোত্রের লোকদের নিজসব উপাস্য ছিল। مَنَاةٌ হল, مَنَى يَمْنِى ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ হল, صَبَّ (বহানো)। এর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য লোকেরা তার নিকট প্রচুর পরিমাণে পশু জবাই করত এবং তাদের রক্ত বহাতো। এটা ছিল মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত একটি মূর্তি। (ফাতহুল ক্বাদীর) এই মূর্তিটি 'কুদাইদ'এর সামনে 'মুশাল্লাল' নামক স্থানে স্থাপিত ছিল। বনী খুযাআহ গোত্রের লোকেদের এটি নিজস্ব মূর্তি ছিল। জাহেলিয়্যাতের যুগে 'আউস ও খাযরাজ' গোত্রের লোকেরা এখান থেকেই ইহরাম বাঁধত এবং ঐ মূর্তির তাওয়াফও করত। (আয়সারুত তাফাসীর ও ইবনে কাসীর) এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন স্থানে বহু প্রতিমা ও প্রতিমালয় স্থাপিত ছিল। মক্কা বিজয়ের পর এবং আরো অন্যান্য সময়-সুযোগে নবী করীম (সাঃ) ঐ সমস্ত মূর্তিসহ আরো অন্যান্য সকল মূর্তির মূলোৎপাটন করেন। ঐগুলোর উপর নির্মিত গম্বুজ ও গৃহাদি ভেঙ্গে ফেলান। যে গাছগুলোর তা'যীম (সম্মান প্রদর্শন) করা হত, সেগুলো সব কেটে ফেলান এবং মূর্তিপূজার সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন মিটিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। আর এ কাজের জন্য তিনি খালেদ, আলী, আমর ইবনে আস এবং জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী (রাঃ)-দের সেই সেই স্থানে প্রেরণ করেন, যেখানে এ মূর্তিগুলো স্থাপিত ছিল। তাঁরা সেখানে গিয়ে সেসব ভেঙ্গে ফেলে আরব ভূভাগ থেকে শিরকের নাম পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করে দেন। (ইবনে কাসীর) প্রথম শতাব্দীর বহু পরে আরবের মাটিতে আবার একবার উক্ত শ্রেণীর শিরকীয় কার্যকলাপ ব্যাপক হয়ে ওঠে। এ সময় মহান আল্লাহ দাওয়াতের পতাকাবাহী শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল অহ্হাব নামক একজন সংস্কারক আলেমকে তওফীক দেন। তিনি 'দিরইয়্যাহ'র শাসকের সহযোগিতায় শাসন ও ক্ষমতা বলে শিরকের এই সমস্ত কার্যকলাপের পরিসমাপ্তি ঘটান। তারপর বাদশাহ আব্দুল আযীয; নাজদ ও হিজাযের শাসক (বর্তমান সউদী শাসকবর্গের পিতা ও এই দেশের প্রতিষ্ঠাতা) তাঁর সেই দাওয়াত পুনরায় নবায়ন ও সংস্কার করেন। তিনি সমস্ত পাকা কবর ও গম্বুজকে ভেঙ্গে ফেলে নবী করীম (সাঃ)-এর সুন্নতকে পুনর্জীবিত করেন। এইভাবেই আল-হামদুলিল্লাহ বর্তমানে পূরো সঊদী আরবে ইসলামী বিধি-বিধান অনুসারে না কোন পাকা কবর আছে, আর না কোন মাযার।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্পর্কে [১]?

[১] অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের যে শিক্ষা দিচ্ছেন তোমরা তো তাকে গোমরাহী ও কুপথগামিতা বলে আখ্যায়িত করছে। অথচ এ জ্ঞান তাকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে। আর আল্লাহ তা’আলা তাকে চাক্ষুষভাবে এমন সব সত্য ও বাস্তবতা দেখিয়েছেন যার সাক্ষ্য তিনি তোমাদের সামনে পেশ করছেন। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে মুশরিক আরবদের তিনজন দেবীর কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে যাদেরকে মক্কা, তায়েফ, মদীনা এবং হিজাজের আশে পাশের লোক জন বেশী বেশী পূজা করত। এ তিনজন দেবীর মধ্যে (লাত) এর আস্তানা ছিল তায়েফে। বনী সাকীফ গোত্র তার পুজারী ছিল। লাত শব্দের অর্থ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। ইবনে জারীর তাবারীর জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ হচ্ছে। এ শব্দটি আল্লাহ শব্দের স্ত্রীলিংগ। এর অর্থ ঘুরা বা কারো প্রতি ঝুঁকে পড়া। মুশরিকরা যেহেতু ইবাদাতের জন্য তার প্রতি মনযোগী হতো, তার সামনে কুঁকতো এবং তার তাওয়াফ করতো তাই তাকে ‘লাত’ আখ্যা দেয়া শুরু হলো। এর আরেক অর্থ মন্থন করা বা লেপন করা। ইবনে আব্বাস বলেন যে, “মুলত সে ছিল একজন মানুষ, যে তায়েফের সন্নিকটে এক কঙ্করময় ভূমিতে বাস করতো এবং হজের উদ্দেশ্যে গমনকারীদের ছাতু ও অন্যান্য খাদ্য খাওয়াতো।” [বুখারী; ৪৮৫৯]

সে মারা গেলে লোকেরা ঐ কঙ্করময় ভূমিতে তার নামে একটা আস্তানা গড়ে তোলে এবং তার উপাসনা করতে শুরু করে। (উযযা) শব্দটির উৎপত্তি ‘আযীয' শব্দ থেকে। এর অর্থ সম্মানিতা। এটা ছিল কুরাইশদের বিশেষ দেবী। এর আস্তানা ছিল মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী “নাখলা” উপত্যকায়। বনী হাশেমের মিত্র বনী শায়বান গোত্রের লোক এর প্রতিবেশী ছিল। কুরাইশ এবং অন্যান্য গোত্রের লোকজন এর যিয়ারতের জন্য আসতো, এর উদ্দেশ্যে মানত করতো এবং বলি দান করতো। কা'বার মত এ স্থানটিতেও কুরবানী বা বলির জন্তু নিয়ে যাওয়া হতো এবং এটিকে সমস্ত মূর্তির চেয়ে অধিক সম্মান দেয়া হতো। (মানাত) এর আস্তানা ছিল মক্কা ও মদীনার মাঝে লোহিত সাগরের তীরবর্তী কুদাইদের মুশাল্লাল নামক স্থানে। বিশেষ করে খুযাআ, আওস এবং খাযরাজ গোত্রের লোকেরা এর খুব ভক্ত ছিল। তার হাজ ও তাওয়াফ করা হতো এবং তার উদ্দেশ্যে মানতের বলি দেয়া হতো। হজের মওসুমে হাজীরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং আরাফাতে ও মিনায় অবস্থানের পর সেখান থেকে মানাতের যিয়ারত তথা দর্শনালাভের জন্য লাব্ববায়কা লাব্ববায়কা ধ্বনি দিতে শুরু করতো। যারা এ দ্বিতীয় হজ্জের নিয়ত করতো তারা সাফা এবং মারওয়ার মাঝে সাঈ করতো না। [দেখুন, বুখারী; ৪৮৬১] [ফাতহুল কাদীর; তাবারী, কুরতুবী; ইবন কাসীর]

Tafsir Bayaan Foundation

আর মানাত সম্পর্কে, যা তৃতীয় আরেকটি?

Muhiuddin Khan

এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে?

Zohurul Hoque

এবং মানাত, -- তৃতীয় আরেকটি?