Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল মায়িদাহ আয়াত ৬৬

Qur'an Surah Al-Ma'idah Verse 66

আল মায়িদাহ [৫]: ৬৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَلَوْ اَنَّهُمْ اَقَامُوا التَّوْرٰىةَ وَالْاِنْجِيْلَ وَمَآ اُنْزِلَ اِلَيْهِمْ مِّنْ رَّبِّهِمْ لَاَكَلُوْا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ اَرْجُلِهِمْۗ مِنْهُمْ اُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌ ۗ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ سَاۤءَ مَا يَعْمَلُوْنَ ࣖ (المائدة : ٥)

walaw
وَلَوْ
And if
এবং যদি
annahum
أَنَّهُمْ
that they
যে তারা
aqāmū
أَقَامُوا۟
had stood fast
প্রতিষ্ঠা করতো
l-tawrāta
ٱلتَّوْرَىٰةَ
(by) the Taurat
তাওরাত
wal-injīla
وَٱلْإِنجِيلَ
and the Injeel
ও ইনজীল
wamā
وَمَآ
and what
এবং যা
unzila
أُنزِلَ
was revealed
অবতীর্ণ করা হয়েছে
ilayhim
إِلَيْهِم
to them
প্রতি তাদের
min
مِّن
from
পক্ষ হতে
rabbihim
رَّبِّهِمْ
their Lord
তাদের রবের
la-akalū
لَأَكَلُوا۟
surely they (would have) eaten
অবশ্যই তারা খাবার পেতো
min
مِن
from
থেকে
fawqihim
فَوْقِهِمْ
above them
উপর তাদের
wamin
وَمِن
and from
ও থেকে
taḥti
تَحْتِ
beneath
নিচ
arjulihim
أَرْجُلِهِمۚ
their feet
পায়ের তাদের
min'hum
مِّنْهُمْ
Among them
মধ্য থেকে তাদের
ummatun
أُمَّةٌ
(is) a community
একদল (আছে)
muq'taṣidatun
مُّقْتَصِدَةٌۖ
moderate
সত্যপন্থী
wakathīrun
وَكَثِيرٌ
but many
কিন্তু অধিকাংশই
min'hum
مِّنْهُمْ
of them -
মধ্য থেকে তাদের
sāa
سَآءَ
evil
নিকৃষ্ট
مَا
(is) what
যা
yaʿmalūna
يَعْمَلُونَ
they do
তারা কাজ করছে

Transliteration:

Wa law annahum aqaamut Tawraata wal Injeela wa maaa unzila ilaihim mir Rabbihim la akaloo min fawqihim wa min tahti arjulihim; minhum ummatum muqta sidatunw wa kaseerum minhum saaa'a maa ya'maloon (QS. al-Māʾidah:66)

English Sahih International:

And if only they had upheld [the law of] the Torah, the Gospel, and what has been revealed to them from their Lord [i.e., the Quran], they would have consumed [provision] from above them and from beneath their feet. Among them are a moderate [i.e., acceptable] community, but many of them – evil is that which they do. (QS. Al-Ma'idah, Ayah ৬৬)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

তারা যদি তাওরাত ইঞ্জিল আর তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তার নিয়ম-বিধান প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তাদের উপর থেকে আর তাদের পায়ের নীচ থেকে আহার্য পেত। তাদের মধ্যে একটি সত্যপন্থী দল আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই যা করে তা খারাপ। (আল মায়িদাহ, আয়াত ৬৬)

Tafsir Ahsanul Bayaan

আর যদি তারা তওরাত, ইঞ্জীল ও যা তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে প্রতিষ্ঠিত থাকত,[১] তাহলে তারা তাদের উপর দিক (আকাশ) ও পায়ের নিচের দিক (পৃথিবী) হতে খাদ্য লাভ করত।[২] তাদের মধ্যে এক দল রয়েছে যারা মধ্যপন্থী, কিন্তু তাদের অধিকাংশ যা করে, তা নিকৃষ্ট! [৩]

[১] তাওরাত ও ইঞ্জীলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার বিধানের অনুসরণ করা, যা তাদেরকে প্রদান করা হয়েছে। আর সেই বিধানের মধ্যে একটা এও ছিল যে, শেষ নবীর প্রতি তারা ঈমান আনয়ন করবে। وما أنزل এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, সমস্ত আসমানী গ্রন্থের উপর ঈমান আনয়ন করা; আর এর মধ্যে কুরআন কারীমও শামিল। সুতরাং আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা যেন ইসলাম গ্রহণ করে।

[২] 'উপর-নীচের' কথা অতিশয়োক্তি রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, বেশী বেশী এবং বিভিন্ন ধরনের রুযী আল্লাহ তাদেরকে দান করতেন। অথবা 'উপর' বলতে আসমানকে বুঝানো হয়েছে, আর তার অর্থ হচ্ছে, সময় মত আসমান হতে বৃষ্টি বর্ষণ করতেন। আর 'পায়ের নিচে' বলতে যমীনকে বুঝানো হয়েছে, আর তার অর্থ হচ্ছে; যমীন এই পানি নিজের মধ্যে শোষণ করে বিভিন্ন ধরনের ফসলাদি উৎপাদন করত। পরিণামে তাদের জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যেত। যেমন মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, {وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُواْ وَاتَّقَواْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ} অর্থাৎ, জনপদবাসীরা যদি ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের উপর আসমান ও যমীনের বরকত নাযিল করতাম। (সূরা আ'রাফ ৭;৯৬ আয়াত)

[৩] কিন্তু তাদের বেশীর ভাগ মানুষ ঈমানের রাস্তা অবলম্বন করল না এবং তারা কুফরীর উপরেই অটল থাকল, আর রিসালাতে মুহাম্মাদীকে অস্বীকার করার ব্যাপারে অবিচল থাকল। এই অটল থাকা ও অস্বীকার করাকে 'নিকৃষ্ট কর্ম' বলে আখ্যায়ন করা হয়েছে। মধ্যপন্থী দল থেকে উদ্দেশ্য হচ্ছে, আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) এর মত ৮-৯ জন সাহাবা, যাঁরা মদীনার ইয়াহুদীদের মধ্য হতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর তারা যদি তাওরাত, ইঞ্জীল ও তাদের রবের কাছ থেকে তাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত [১], তাহলে তারা অবশ্যই তাদের উপর থেকে ও পায়ের নীচ থেকে আহারাদী লাভ করত [২]। তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা মধ্যপন্থী; এবং তাদের অধিকাংশ যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট [৩]।

[১] যিয়াদ ইবনে লাবীদ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা ব্যাপার উল্লেখ করে বললেনঃ ‘এটা ঐ সময়ই হবে যখন দ্বীনের জ্ঞান চলে যাবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, কিভাবে জ্ঞান চলে যাবে অথচ আমরা কুরআন পড়ছি, আমাদের সন্তানদেরকে কুরআন পড়াচ্ছি, তারা তাদের সন্তানদেরকে পড়াবে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত? তিনি বললেন, তোমার আম্মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক যিয়াদ! (আরবি ভাষায় ভর্ৎসনামূলক বাক্য) আমি তো মনে করেছিলাম তুমি মদীনার ফকীহদের অন্যতম। এই ইয়াহুদী এবং নাসারারা কি তাওরাত ও ইঞ্জীল পড়ে না, অথচ তারা এর থেকে কিছুই আমল করে না। [ইবন মাজাহঃ ৪০৪৮]

[২] এর সারমর্ম এই যে, যদি ইয়াহুদীরা আজও তাওরাত, ইঞ্জল ও কুরআনুল কারীমের নির্দেশাবলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সেগুলো পুরোপুরি পালন করে- ক্রটি এবং মনগড়া বিষয়াদিকে দ্বীন বলে আখ্যা দিয়ে বাড়াবাড়ি না করে, তবে তারা আখেরাতে প্রতিশ্রুত নেয়ামতরাজির যোগ্য হবে এবং দুনিয়াতেও তাদের সামনে রিযকের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ফলে উপর-নীচ সবদিক থেকে তাদের উপর রিযক বর্ষিত হবে। আল্লাহ্ তা’আলা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করতেন। ফলে যমীন হতে ফসল উৎপাদিত হতো। আর এভাবেই তাদেরকে আসমান ও যমীনের বরকত প্রদান করা হতো। [ইবন কাসীর]

[৩] আয়াতের শেষাংশে ইনসাফ প্রদর্শনার্থে এ কথা বলা হয়েছে যে, ইয়াহুদীদের যেসব বক্রতা ও কুকর্ম বর্ণনা করা হয়েছে, তা সমস্ত ইয়াহুদীদের অবস্থা নয়; বরং তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি দল সৎপথের অনুসারীও রয়েছে। সৎ পথের অনুসারী বলে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা পূর্বে ইয়াহুদী অথবা নাসারা ছিল, এরপর কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান এনেছে। অথবা তাদেরকে যারা ঈসা ‘আলাইহিস সালাম সম্পর্কে সঠিক মত পোষণ করে যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ছিলেন। তিনি ইলাহ বা ইলাহের সন্তান ছিলেন না। [তাবারী]

তারপর বলা হয়েছে যে, যদিও তাদের অধিকাংশই কুকর্মী’। কারণ, তাদের অধিকাংশই ঈসা ‘আলাইহিস সালাম সম্পর্কে হয় বাড়াবাড়ি নতুবা মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করে থাকে। অনুরূপভাবে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরও ঈমান আনে না। [তাবারী]

Tafsir Bayaan Foundation

আর যদি তারা তাওরাত, ইনজীল ও তাদের নিকট তাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা কায়েম করত, তবে অবশ্যই তারা আহার করত তাদের উপর থেকে এবং তাদের পদতল থেকে। তাদের মধ্য থেকে সঠিক পথের অনুসারী একটি দল রয়েছে এবং তাদের অনেকেই যা করছে, তা কতইনা মন্দ!

Muhiuddin Khan

যদি তারা তওরাত, ইঞ্জিল এবং যা প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, পুরোপুরি পালন করত, তবে তারা উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে ভক্ষণ করত। তাদের কিছুসংখ্যক লোক সৎপথের অনুগামী এবং অনেকেই মন্দ কাজ করে যাচ্ছে।

Zohurul Hoque

আর যদি তারা প্রতিষ্ঠিত রাখতো তওরাত ও ইনজীল, আর তাদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তাদের প্রভুর কাছ থেকে তবে তারা নিশ্চয়ই আহার করতো তাদের উপর থেকে আর তাদের পায়ের নিচে থেকে। তাদের মধ্যেও একটি নরমপন্থী দল রয়েছে, কিন্তু তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই -- তারা যা করে তা হচ্ছে গর্হিত।