কুরআন মজীদ সূরা আল মায়িদাহ আয়াত ৬
Qur'an Surah Al-Ma'idah Verse 6
আল মায়িদাহ [৫]: ৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْٓا اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِۗ وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْاۗ وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰٓى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَاۤءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَاۤىِٕطِ اَوْ لٰمَسْتُمُ النِّسَاۤءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاۤءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُ ۗمَا يُرِيْدُ اللّٰهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ (المائدة : ٥)
- yāayyuhā
- يَٰٓأَيُّهَا
- O you
- হে
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- who
- যারা
- āmanū
- ءَامَنُوٓا۟
- believe!
- ঈমান এনেছো
- idhā
- إِذَا
- When
- যখন
- qum'tum
- قُمْتُمْ
- you stand up
- দাঁড়াবে তোমরা
- ilā
- إِلَى
- for
- জন্যে
- l-ṣalati
- ٱلصَّلَوٰةِ
- the prayer
- সালাতের
- fa-igh'silū
- فَٱغْسِلُوا۟
- then wash
- তখন তোমরা ধু'বে
- wujūhakum
- وُجُوهَكُمْ
- your faces
- মুখমণ্ডলগুলো তোমাদের
- wa-aydiyakum
- وَأَيْدِيَكُمْ
- and your hands
- ও হাতগুলো তোমাদের
- ilā
- إِلَى
- till
- পর্যন্ত
- l-marāfiqi
- ٱلْمَرَافِقِ
- the elbows
- কনুইগুলো
- wa-im'saḥū
- وَٱمْسَحُوا۟
- and wipe
- ও তোমরা মাসেহ করবে
- biruūsikum
- بِرُءُوسِكُمْ
- your heads
- মাথাগুলো তোমাদের
- wa-arjulakum
- وَأَرْجُلَكُمْ
- and your feet
- ও পাগুলো তোমাদের
- ilā
- إِلَى
- till
- পর্যন্ত
- l-kaʿbayni
- ٱلْكَعْبَيْنِۚ
- the ankles
- দুই গিঁট
- wa-in
- وَإِن
- But if
- এবং যদি
- kuntum
- كُنتُمْ
- you are
- হও তোমরা
- junuban
- جُنُبًا
- (in) a state of ceremonial impurity
- অপবিত্র
- fa-iṭṭahharū
- فَٱطَّهَّرُوا۟ۚ
- then purify yourselves
- তবে তোমরা পবিত্র হবে
- wa-in
- وَإِن
- But if
- এবং যদি
- kuntum
- كُنتُم
- you are
- হও তোমরা
- marḍā
- مَّرْضَىٰٓ
- ill
- অসুস্থ
- aw
- أَوْ
- or
- বা
- ʿalā
- عَلَىٰ
- on
- উপর
- safarin
- سَفَرٍ
- a journey
- সফরে (থাকো)
- aw
- أَوْ
- or
- বা
- jāa
- جَآءَ
- has come
- আসে
- aḥadun
- أَحَدٌ
- any one
- কেউ
- minkum
- مِّنكُم
- of you
- মধ্যে তোমাদের
- mina
- مِّنَ
- from
- হতে
- l-ghāiṭi
- ٱلْغَآئِطِ
- the toilet
- পায়খানা (মলমূত্র ত্যাগ করে)
- aw
- أَوْ
- or
- বা
- lāmastumu
- لَٰمَسْتُمُ
- has (had) contact
- স্পর্শ করো তোমরা (সহবাস করো)
- l-nisāa
- ٱلنِّسَآءَ
- (with) the women
- স্ত্রীদের
- falam
- فَلَمْ
- and not
- অত:পর না
- tajidū
- تَجِدُوا۟
- you find
- তোমরা পাও
- māan
- مَآءً
- water
- পানি
- fatayammamū
- فَتَيَمَّمُوا۟
- then do tayyammum
- তবে তোমরা তায়াম্মুম করবে
- ṣaʿīdan
- صَعِيدًا
- (with) earth
- (দিয়ে) মাটি
- ṭayyiban
- طَيِّبًا
- clean
- পবিত্র
- fa-im'saḥū
- فَٱمْسَحُوا۟
- then wipe
- তাই তোমরা মাসেহ করবে
- biwujūhikum
- بِوُجُوهِكُمْ
- your faces
- মুখমণ্ডলকে তোমাদের
- wa-aydīkum
- وَأَيْدِيكُم
- and your hands
- ও হাতকে তোমাদের
- min'hu
- مِّنْهُۚ
- with it
- দ্বারা তা
- mā
- مَا
- Does not
- না
- yurīdu
- يُرِيدُ
- intend
- চান
- l-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah
- আল্লাহ
- liyajʿala
- لِيَجْعَلَ
- to make
- যেন তিনি দেন
- ʿalaykum
- عَلَيْكُم
- for you
- উপর তোমাদের
- min
- مِّنْ
- any
- কোনো
- ḥarajin
- حَرَجٍ
- difficulty
- কষ্ট
- walākin
- وَلَٰكِن
- but
- কিন্তু
- yurīdu
- يُرِيدُ
- He intends
- তিনি চান
- liyuṭahhirakum
- لِيُطَهِّرَكُمْ
- to purify you
- যেন তিনি পবিত্র করেন তোমাদেরকে
- waliyutimma
- وَلِيُتِمَّ
- and to complete
- এবং পূর্ণ করেন
- niʿ'matahu
- نِعْمَتَهُۥ
- His Favor
- অনুগ্রহ তাঁর
- ʿalaykum
- عَلَيْكُمْ
- upon you
- উপর তোমাদের
- laʿallakum
- لَعَلَّكُمْ
- so that you may
- যাতে তোমরা
- tashkurūna
- تَشْكُرُونَ
- (be) grateful
- কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো
Transliteration:
Yaaa aiyuhal lazeena aamanoo izaa qumtum ilas Salaati faghsiloo wujoohakum wa Aidiyakum ilal maraafiqi wamsahoo biru'oosikum wa arjulakum ilal ka'bayn; wa in kuntum junuban fattahharoo; wain kuntum mardaaa aw'alaa safarin aw jaaa'a ahadum minkum minal ghaaa'iti aw laamastumunnisaaa'a falam tajidoo maaa'an fatayammamoo sa'eedan taiyiban famsahoo biwujoohikum wa aideekum minh; ma yureedul laahu liyaj'ala 'alaikum min harajinw wa laakidy yureedu liyutahhirakum wa liyutimma m'matahoo 'alaikum la'allakum tashkuroon(QS. al-Māʾidah:6)
English Sahih International:
O you who have believed, when you rise to [perform] prayer, wash your faces and your forearms to the elbows and wipe over your heads and wash your feet to the ankles. And if you are in a state of janabah, then purify yourselves. But if you are ill or on a journey or one of you comes from the place of relieving himself or you have contacted women and do not find water, then seek clean earth and wipe over your faces and hands with it. Allah does not intend to make difficulty for you, but He intends to purify you and complete His favor upon you that you may be grateful. (QS. Al-Ma'idah, Ayah ৬)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন সলাতের জন্য উঠবে, তখন তোমাদের মুখমন্ডল এবং কনুই পর্যন্ত হস্তদ্বয় ধৌত করবে। আর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করবে। তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাক তবে বিধিমত পবিত্রতা অর্জন করবে। আর যদি পীড়িত হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ যদি মলত্যাগ করে আসে অথবা যদি তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর আর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের উপর সংকীর্ণতা চাপিয়ে দিতে চান না, তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান আর তোমাদের প্রতি তাঁর নি‘আমাত পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (আল মায়িদাহ, আয়াত ৬)
Tafsir Ahsanul Bayaan
হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর[১] এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর[২] এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত কর।[৩] আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তাহলে বিশেষভাবে (গোসল করে) পবিত্র হও।[৪] যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা হতে আগমন করে, অথবা তোমরা স্ত্রী-সহবাস কর এবং পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর; তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর।[৫] আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে চান না,[৬] বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান,[৭] যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
[১] 'মুখমন্ডল ধৌত কর' অর্থাৎ, একবার, দুইবার অথবা তিনবার করে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা, কুল্লী করা বা কুলকুচা করা অতঃপর নাকের ভিতরে পানি টেনে নিয়ে নাক ঝাড়ার পর -- যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। মুখমন্ডল ধৌত করার পর দুই হাত (আঙ্গুলের ডগা হতে) কনুইসহ ধৌত করতে হবে।
[২] পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। যেমনটি হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, (দুই হাতকে ভিজিয়ে আঙ্গুলগুলিকে মুখোমুখি করে) মাথার সামনের দিক থেকে (যেখান থেকে চুল গজানো শুরু হয়েছে সেখান) থেকে পিছন দিক (গর্দানের চুল যেখানে শেষ হয়েছে সেখান) পর্যন্ত, তারপর সেখান থেকে শুরু করে সামনের দিকে নিয়ে এসে যেখান থেকে শুরু করেছিল সে পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে। ঐ সঙ্গে কানও মাসাহ করতে হবে। যদি মাথার উপর পাগড়ি বা শিরস্ত্রাণ থাকে, তাহলে হাদীসের নির্দেশানুসারে মোজার উপর মাসাহর মত তার উপরেও মাসাহ বৈধ। (মুসলিমঃ পবিত্রতা অধ্যায়) মাসাহ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীসে একবার মাসাহ করাই যথেষ্ট বলা হয়েছে।
[৩] أَرْجُلَكُمْ এর সংযোগ وُجُوهَكُمْ এর সঙ্গে, যার ভাবার্থ হচ্ছে; পায়ের গাঁট বা গোড়ালির উপরের হাড় পর্যন্ত ধৌত কর। পক্ষান্তরে পায়ে যদি চামড়া বা কাপড়ের মোজা থাকে (এবং তা যদি ওযু থাকা অবস্থায় পরিধান করা হয়), তাহলে হাদীসের নির্দেশানুসারে পা ধোয়ার পরিবর্তে মোজার উপর নিয়মিত মাসাহ করা বৈধ।
আনুষঙ্গিক বিষয়াবলীঃ (ক) ওযু থাকলে পুনরায় ওযু করা জরুরী নয়। তবে প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুনভাবে ওযু করা উত্তম। (খ) ওযু করার পূর্বে নিয়ত করা ফরয। (গ) ওযু করার পূর্বে 'বিসমিল্লাহ' বলা জরুরী। (ঘ) দাঁড়ি ঘন বা জমাট হলে তা খেলাল করতে হবে। (ঙ) ওযুর অঙ্গগুলিকে পর্যায়ক্রমে ধৌত করতে হবে। (চ) একটি অঙ্গ ধোয়ার পর দ্বিতীয় অঙ্গ ধোওয়ায় যেন দেরী না হয়; বরং একের পর এক যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে ধৌত করা হয়। (ছ) ওযুর অঙ্গগুলির মধ্যে কোন অঙ্গ যেন শুষ্ক না থেকে যায়, কেননা শুষ্ক থাকলে ওযু হবে না। (জ) ওযুর কোন অঙ্গকে তিনবারের বেশী যেন ধোওয়া না হয়, কারণ এটা সুন্নতের পরিপন্থী। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ফাতহুল ক্বাদীর ও আইসারুত তাফাসীর)
[৪] অপবিত্রতা; ঐ অপবিত্রতাকে বুঝানো হয়েছে, যা স্বপ্নদোষ অথবা স্ত্রী সহবাস (বা যৌনতৃপ্তির সাথে বীর্যপাতের) ফলে হয়। আর একই বিধান মহিলাদের মাসিক ও (প্রসবোত্তর) নিফাসজনিত অপবিত্রতারও। যখন মহিলার মাসিক বা নিফাস বন্ধ হয়ে যাবে, তখন পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করা জরুরী। গোসলের পানি না পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করা বিধেয়; যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর ও আইসারুতর তাফাসীর)
[৫] আয়াতের এই অংশের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং তায়াম্মুমের পদ্ধতি সূরা নিসার ৪;৪৩ নং আয়াতে উল্লেখ হয়েছে। সহীহ বুখারীতে এই আয়াতের শানে নুযূল (অবতীর্ণ হওয়ার কারণ) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, কোন এক সফরে আয়েশা (রাঃ) এর গলার হার বাইদা নামক স্থানে হারিয়ে যায়। তা খোঁজার জন্য তাঁদেরকে সেখানে থামতে হয়। ফজরের নামাযের জন্য তাঁদের নিকট পানি ছিল না এবং অনুসন্ধান করার পরও তাঁরা পানি সংগ্রহ করতে পারলেন না। এমতাবস্থায় (আল্লাহ তাআলা) এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন, যাতে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেওয়া হল। উসাইদ বিন হুযাইর (রাঃ) এই আয়াত শুনে বললেন, 'হে আবু বাকরের বংশধর! তোমাদের কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য বরকত অবতীর্ণ করেছেন। আর এটা তোমাদের প্রথম বরকত নয়। (বরং তোমরা মানুষের জন্য সর্বদাই বরকতময়)।' (বুখারীঃ সূরা মায়েদার তাফসীর)
[৬] এই জন্যই তিনি তায়াম্মুমের অনুমতি প্রদান করেছেন।
[৭] এই জন্যই হাদীসে ওযু করার পর দু'আ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। দু'আর বই-পুস্তক থেকে এই দু'আ মুখস্থ করে নিন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথায় মাসেহ কর [১] এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও [২]; এবং যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে, বা তোমরা স্ত্রীর সাথে সংগত হও [৩] এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে। সুতরাং তা দ্বারা মুখমণ্ডলে ও হাতে মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা করতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
দ্বিতীয় রুকূ‘
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হুকুমটির যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা থেকে জানা যায়, কুলি করা ও নাক পরিস্কার করাও মুখমণ্ডল ধোয়ার অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া মুখমণ্ডল ধোয়ার কাজটি কখনোই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। আর কান যেহেতু মাথার একটি অংশ, তাই মাথা মাসেহ করার মধ্যে কানের ভেতরের ও বাইরের উভয় অংশও শামিল হয়ে যায়। তাছাড়া অযু শুরু করার আগে দু’হাত ধুয়ে নেয়া উচিত। কারণ, যে হাত দিয়ে অযু করা হচ্ছে, তা পূর্ব থেকেই পবিত্র থাকার প্রয়োজন রয়েছে। সর্বোপরি অযু করার সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অঙ্গসমূহ ধোয়ার মধ্যে বিলম্ব না করা উচিত। এসবের জন্যও হাদীসে বর্ণনা এসেছে। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিধি-বিধানের জন্য তাফসীরে ইবন কাসীর ও তাফসীর কুরতুবী দেখা যেতে পারে]
[২] নু’আইম আল-মুজমির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি ওযু করে বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মতদেরকে কেয়ামতের দিন তাদেরকে ‘গুররান-মুহাজ্জালীন’ বলে ডাকা হবে। (অর্থাৎ ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো উজ্জ্বল অবস্থায় উপস্থিত হবে) কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করতে সক্ষম, সে যেন তা (বৃদ্ধি) করে। [বুখারী ১৩৬]
[৩] স্ত্রী সহবাসের কারণে জানাবাত হোক বা স্বপ্নে বীর্য স্থলনের কারণে হোক উভয় অবস্থায়ই গোসল ফরয। এ অবস্থায় গোসল ছাড়া সালাত আদায় করা ও কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নয়। কিন্তু যদি পানি না পাওয়া যায়, তবে তায়াম্মুমই যথেষ্ট। [সা’দী]
Tafsir Bayaan Foundation
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিআমত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
Muhiuddin Khan
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।
Zohurul Hoque
ওহে যারা ঈমান এনেছ! যখন তোমরা নামাযে খাড়া হও তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত তোমাদের হাত ধোও, আর তোমাদের মাথা ও গোড়ালি পর্যন্ত তোমাদের পা মূসেহ্ করো। আর যদি তোমরা যৌন সম্ভোগের পরবর্তী অবস্থায় থাকো তবে ধৌত করো। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও, অথবা সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে এসেছ, অথবা স্ত্রীদের স্পর্শ করেছ, আর যদি পানি না পাও তবে তৈয়ম্মুম করো বিশুদ্ধ মাটি নিয়ে, আর তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও তোমাদের হাত মূসেহ্ করো। আল্লাহ্ চান না তোমাদের উপরে কষ্টের কিছু আরোপ করতে, কিন্তু তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে, আর যাতে তাঁর নিয়ামত তোমাদের উপরে পরিপূর্ণ করেন, যেন তোমরা ধন্যবাদ দিতে পারো।