কুরআন মজীদ সূরা আল মায়িদাহ আয়াত ৪৫
Qur'an Surah Al-Ma'idah Verse 45
আল মায়িদাহ [৫]: ৪৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيْهَآ اَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْاَنْفَ بِالْاَنْفِ وَالْاُذُنَ بِالْاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّۙ وَالْجُرُوْحَ قِصَاصٌۗ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهٖ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهٗ ۗوَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَآ اَنْزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰۤىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ (المائدة : ٥)
- wakatabnā
- وَكَتَبْنَا
- And We ordained
- এবং বিধান দিয়েছি আমরা
- ʿalayhim
- عَلَيْهِمْ
- for them
- উপর তাদের
- fīhā
- فِيهَآ
- in it
- মধ্যে তার (অর্থাৎ তাওরাতে)
- anna
- أَنَّ
- that
- যে
- l-nafsa
- ٱلنَّفْسَ
- the life
- প্রাণ
- bil-nafsi
- بِٱلنَّفْسِ
- for the life
- বদলে প্রাণের
- wal-ʿayna
- وَٱلْعَيْنَ
- and the eye
- ও চোখ
- bil-ʿayni
- بِٱلْعَيْنِ
- for the eye
- বদলে চোখের
- wal-anfa
- وَٱلْأَنفَ
- and the nose
- ও নাক
- bil-anfi
- بِٱلْأَنفِ
- for the nose
- বদলে নাকের
- wal-udhuna
- وَٱلْأُذُنَ
- and the ear
- ও কান
- bil-udhuni
- بِٱلْأُذُنِ
- for the ear
- বদলে কানের
- wal-sina
- وَٱلسِّنَّ
- and the tooth
- ও দাঁত
- bil-sini
- بِٱلسِّنِّ
- for the tooth
- বদলে দাঁতের
- wal-jurūḥa
- وَٱلْجُرُوحَ
- and (for) wounds
- ও জখমগুলোর
- qiṣāṣun
- قِصَاصٌۚ
- (is) retribution
- (কিসাস)অনুরূপ জখম
- faman
- فَمَن
- But whoever
- তবে যে
- taṣaddaqa
- تَصَدَّقَ
- gives charity
- ক্ষমা করে
- bihi
- بِهِۦ
- with it
- দিয়ে তা (অর্থাৎ কিসাসের)
- fahuwa
- فَهُوَ
- then it is
- তবে তা
- kaffāratun
- كَفَّارَةٌ
- an expiation
- পাপ মোচন
- lahu
- لَّهُۥۚ
- for him
- জন্যে তার
- waman
- وَمَن
- And whoever
- এবং যে
- lam
- لَّمْ
- (does) not
- না
- yaḥkum
- يَحْكُم
- judge
- বিচার করে
- bimā
- بِمَآ
- by what
- দিয়ে তা(যা)
- anzala
- أَنزَلَ
- has revealed
- অবতীর্ণ করেছেন
- l-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah
- আল্লাহ
- fa-ulāika
- فَأُو۟لَٰٓئِكَ
- then those
- তবে ঐসব লোক
- humu
- هُمُ
- [they]
- তারাই
- l-ẓālimūna
- ٱلظَّٰلِمُونَ
- (are) the wrongdoers
- সীমালঙ্ঘনকারী
Transliteration:
Wa katabnaa 'alaihim feehaaa annan nafsa binnafsi wal'aina bil'aini wal anfa bilanfi wal uzuna bil uzuni wassinna bissinni waljurooha qisaas; faman tasaddaqa bihee fahuwa kaffaaratul lah; wa mal lam yahkum bimaaa anzalal laahu fa ulaaa'ika humuz zalimoon(QS. al-Māʾidah:45)
English Sahih International:
And We ordained for them therein a life for a life, an eye for an eye, a nose for a nose, an ear for an ear, a tooth for a tooth, and for wounds is legal retribution. But whoever gives [up his right as] charity, it is an expiation for him. And whoever does not judge by what Allah has revealed – then it is those who are the wrongdoers [i.e., the unjust]. (QS. Al-Ma'idah, Ayah ৪৫)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আমি তাদের জন্য তাতে বিধান দিয়েছিলাম যে, জানের বদলে জান, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, আর দাঁতের বদলে দাঁত। আর জখমের বদলে অনুরূপ জখম। কেউ ক্ষমা করে দিলে তাতে তারই পাপ মোচন হবে। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই যালিম। (আল মায়িদাহ, আয়াত ৪৫)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আর তাদের জন্য ওতে (তওরাতে) বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদল প্রাণ, চোখের বদল চোখ, নাকের বদল নাক, কানের বদল কান, দাঁতের বদল দাঁত এবং জখমের বদল অনুরূপ জখম।[১] অতঃপর কেউ তা ক্ষমা করলে ওতে তারই পাপ মোচন হবে। আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই অত্যাচারী। [২]
[১] যখন তাওরাতে জানের বদলে জান এবং ক্ষতের ব্যাপারে ক্বিসাসের বিধান ছিল; তখন ইয়াহুদীদের এক গোত্র (বানু নাযীর)এর অন্য গোত্র (বানু কুরায়যাহ)এর সাথে তার বিপরীত আচরণ করা এবং স্বগোত্রীয় লোকের রক্তপণ অপর গোত্রের লোকের দ্বিগুণ নেওয়ার বৈধতা কোথায়? যেমন এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে হয়েছে।
[২] এ আয়াত ইঙ্গিত করে যে, যে গোত্র আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বিপরীত ফায়সালা করেছিল তারা যুলুম ও স্বেচ্চাচারিতায় লিপ্ত হয়েছিল। আসলে মানুষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করে, সেই মোতাবেক বিচার-ফায়সালা করে এবং নিজেদের জীবনের সকল কর্মকান্ডে ঐ বিধান থেকে পথনির্দেশ গ্রহণ করে। আর যদি তারা তা না করে, তাহলে আল্লাহর দরবারে তারা যালেম (অত্যাচারী ও সীমালঙ্ঘনকারী), ফাসেক (পাপী) ও কাফের বিবেচিত হবে। আর এই ধরনের লোকেদের জন্য আল্লাহ তিন রকম শব্দ ব্যবহার করে নিজের ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির কথা পূর্ণরূপে ব্যক্ত করে দিয়েছেন। এর পরেও যদি মানুষ নিজেদের জীবনে নিজসব মনগড়া বিধান এবং নিজেদের ইচ্ছা ও খেয়ালখুশীকে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে এর থেকে বেশী দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে ?
নোটঃ- উসূল (ফিকহী মৌলনীতির) উলামাগণ লিখেছেন যে, বিগত শরীয়তের বিধান যদি আল্লাহ অব্যাহত রাখেন, তাহলে তার উপর আমল করা আমাদের জন্যও জরুরী। আর উক্ত আয়াতের বিধান রহিত হয়নি। সুতরাং এটাই ইসলামী শরীয়তের একটা বিধান, যা হাদীস থেকেও প্রমাণিত। অনুরূপভাবে হাদীস দ্বারা أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ জানের বদলে জানের ব্যাপক বিধান থেকে দুটি অবস্থা বহির্ভূত। (ক) যদি কোন মুসলিম কোন কাফেরকে হত্যা করে ফেলে, তাহলে কাফেরের পরিবর্তে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। (খ) অনুরূপভাবে কোন স্বাধীন ব্যক্তি যদি কোন ক্রীতদাসকে হত্যা করে ফেলে, তাহলে তাকে তার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না। (বিস্তারিত দেখুনঃ ফাতহুল বারী, নায়নূল আওতার ইত্যাদি)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর আমরা তাদের উপর তাতে অত্যাবশ্যক করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম। তারপর কেউ তা ক্ষমা করলে তা তার জন্য কাফফারা হবে [১]। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই যালিম।
[১] এ আয়াতে তাওরাতের বরাত দিয়ে কেসাসের বিধান বর্ণনা করে বলা হয়েছে, “আমি ইয়াহুদীদের জন্য তাওরাতের এ বিধান নাযিল করেছিলাম যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং বিশেষ জখমেরও বিনিময় আছে”। এ উম্মতের জন্যও কিসাসের উক্ত বিধান পুরোপুরি প্রযোজ্য। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, বনী ইসরাঈলের জন্য আল্লাহ্ তা’আলা তাওরাতে মূসা ‘আলাইহিস সালামকে যে বিধান দিয়েছিলেন, তাতে হত্যা, জখম, দাঁত, চোখ, কান ইত্যাদির বিপরীতে দিয়াত দেয়ার কোন সুযোগ ছিল না। হয় কিসাস নিতে হবে, না হয় তাকে ক্ষমা করে দিতে হবে। [তাবারী] এ উম্মতের জন্য তিনটি সুযোগ রয়েছে। তন্মধ্যে কিসাসের ব্যাপারটি এ আয়াতসহ অন্য আয়াত ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আর দিয়াতের ব্যাপারটি হাদীসে এসেছে, আনাস ইবন মালেকের ফুফী রুবাই আনসারী এক মেয়ের দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। রাসূলের কাছে যখন এ মোকদ্দমা আসল, তখন তিনি তারও দাঁত ভেঙ্গে ফেলতে নির্দেশ দিলেন। তখন আনাস ইবন মালেকের চাচা আনাস ইবন নদর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি রুবাইয়ার দাঁত ভেঙ্গে ফেলবেন না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাব কিসাসের কথাই বলছে। সবশেষে আনসারী মহিলার অভিভাবকরা দিয়াত গ্রহণে রাজী হয়েছিল। [বুখারী ৪৬১১; মুসলিম; ১৬৭৫]
এ হাদীসে কিসাস ও দিয়াত উভয় বিধানই প্রমানিত হলো। আর ক্ষমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “যে অংশের কেসাস ওয়াজিব হয়েছে সে অংশের কেসাস না নিয়ে সদকা করে দিলে আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য সে পরিমাণ গোনাহর কাফফারা করে দেবেন। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৩১৬]
Tafsir Bayaan Foundation
আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফ্ফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই যালিম।
Muhiuddin Khan
আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।
Zohurul Hoque
আর আমরা তাদের জন্য তাতে বিধান করেছিলাম -- প্রাণের বদলে প্রাণ, আর চোখের বদলে চোখ, আর নাকের বদলে নাক, আর কানের বদলে কান, আর দাঁতের বদলে দাঁত, আর জখমেরও বদলাই। আর যে কেউ এটি দিয়ে দান করে দেয়, সেটি তা হলে তার জন্য হবে প্রায়শ্চিত্ত। আর যে বিচার করে না আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দ্বারা, তাহলে তারা নিজেরাই হচ্ছে অন্যায়কারী।