Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল মায়িদাহ আয়াত ৪

Qur'an Surah Al-Ma'idah Verse 4

আল মায়িদাহ [৫]: ৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

يَسْـَٔلُوْنَكَ مَاذَآ اُحِلَّ لَهُمْۗ قُلْ اُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبٰتُۙ وَمَا عَلَّمْتُمْ مِّنَ الْجَوَارِحِ مُكَلِّبِيْنَ تُعَلِّمُوْنَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللّٰهُ فَكُلُوْا مِمَّآ اَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللّٰهِ عَلَيْهِ ۖوَاتَّقُوا اللّٰهَ ۗاِنَّ اللّٰهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ (المائدة : ٥)

yasalūnaka
يَسْـَٔلُونَكَ
They ask you
তোমাকে তারা প্রশ্ন করে
mādhā
مَاذَآ
what
কি
uḥilla
أُحِلَّ
(is) made lawful
বৈধ করা হয়েছে
lahum
لَهُمْۖ
for them
জন্যে তাদের
qul
قُلْ
Say
বলো
uḥilla
أُحِلَّ
"Are made lawful
"বৈধ করা হয়েছে
lakumu
لَكُمُ
for you
জন্যে তোমাদের
l-ṭayibātu
ٱلطَّيِّبَٰتُۙ
the good things
পবিত্র জিনিসগুলো
wamā
وَمَا
and what
এবং যাদের
ʿallamtum
عَلَّمْتُم
you have taught
(শিকার) শিক্ষা দিয়েছো তোমরা
mina
مِّنَ
of
মধ্য হতে
l-jawāriḥi
ٱلْجَوَارِحِ
(your) hunting animals
শিকারি পশুপাখিদের
mukallibīna
مُكَلِّبِينَ
ones who train animals to hunt
শিকারের প্রশিক্ষণদাতা হিসেবে
tuʿallimūnahunna
تُعَلِّمُونَهُنَّ
you teach them
তোমরা শিখিয়ে থাকো তাদের
mimmā
مِمَّا
of what
তা হতে যা
ʿallamakumu
عَلَّمَكُمُ
has taught you
শিখিয়েছেন তোমাদের
l-lahu
ٱللَّهُۖ
Allah
আল্লাহ
fakulū
فَكُلُوا۟
So eat
অতএব তোমরা খাও
mimmā
مِمَّآ
of what
(তা) থেকে যা
amsakna
أَمْسَكْنَ
they catch
তারা ধরে আনবে
ʿalaykum
عَلَيْكُمْ
for you
জন্যে তোমাদের
wa-udh'kurū
وَٱذْكُرُوا۟
but mention
এবং (ছাড়ার সময়)স্মরণ করবে
is'ma
ٱسْمَ
(the) name
নাম
l-lahi
ٱللَّهِ
(of) Allah
আল্লাহর
ʿalayhi
عَلَيْهِۖ
on it
উপর তার
wa-ittaqū
وَٱتَّقُوا۟
and fear
এবং তোমরা ভয় করো
l-laha
ٱللَّهَۚ
Allah
আল্লাহকে
inna
إِنَّ
Indeed
নিশ্চয়ই
l-laha
ٱللَّهَ
Allah
আল্লাহ
sarīʿu
سَرِيعُ
is swift
দ্রুত
l-ḥisābi
ٱلْحِسَابِ
(in taking) account
হিসাব (গ্রহণে)

Transliteration:

Yas'aloonaka maazaaa uhilla lahum; qul uhilla lakumuttaiyibaatu wa maa'allamtum minal jawaarihi mukallibeena tu'allimoonahunnamimmaa 'allamakumul laahu fakuloo mimmaaa amsakna 'alaikum wazkurus mal laahi 'alaih; wattaqul laah; innal laaha saree'ul hisaab (QS. al-Māʾidah:4)

English Sahih International:

They ask you, [O Muhammad], what has been made lawful for them. Say, "Lawful for you are [all] good foods and [game caught by] what you have trained of hunting animals which you train as Allah has taught you. So eat of what they catch for you, and mention the name of Allah upon it, and fear Allah." Indeed, Allah is swift in account. (QS. Al-Ma'idah, Ayah ৪)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে তাদের জন্য কী কী হালাল করা হয়েছে। বল, যাবতীয় ভাল ও পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে, আর শিকারী পশু-পক্ষী- যাদেরকে তোমরা শিক্ষা দিয়েছ যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন- সুতরাং তারা যা তোমাদের জন্য ধরে রাখে তা তোমরা ভক্ষণ করবে আর তাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে, আর আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ হিসাব গ্রহণে ত্বরিৎগতি। (আল মায়িদাহ, আয়াত ৪)

Tafsir Ahsanul Bayaan

লোকে তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী কী বৈধ করা হয়েছে? বল, সমস্ত ভাল (পবিত্র) জিনিস তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে[১] এবং শিকারী পশুপক্ষী যেগুলোকে তোমরা শিকার শিক্ষা দিয়েছ; যেভাবে আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন[২] -ঐ (শিক্ষা দেওয়া পশুপক্ষী)গুলো যা তোমাদের জন্য ধরে আনে তা ভক্ষণ কর এবং (তাদেরকে শিকারের জন্য পাঠানোর সময়) আল্লাহর নাম নাও।[৩] আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।

[১] এখানে ঐ সমস্ত জিনিসের কথা উল্লেখ হয়েছে, যেগুলি বৈধ বা হালাল। শরীয়তের একটি মূলনীতি হল, প্রত্যেক হালাল জিনিস পবিত্র ও উপাদেয়। আর প্রত্যেক হারাম জিনিস নোংরা ও অপবিত্র।

[২] جَوَارِحٌ শব্দটি جاَرِحٌ শব্দের বহুবচন, যা উপার্জনকারী অর্থে ব্যবহার হয়। এখানে এর ভাবার্থ হল, শিকারী কুকুর, বাজপাখী, শিকরে পাখী, চিতা এবং অন্যান্য শিকারী পাখী ও হিংস্রজন্তু। مكلبين এর সারমর্ম হল; শিকারের উপর ছাড়ার পূর্বে যাকে শিকার সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যেমন, যখন শিকার করার জন্যে তাকে প্রেরণ করা হবে, তখন সে দৌড়ে যাবে। আবার যখন তাকে থামতে বলা হবে, তখন সে থেমে যাবে। যখন তাকে ডাকা হবে, তখন সে (কাল বিলম্ব না করে) ফিরে আসবে।

[৩] (উপরে উল্লিখিত) এই শিক্ষিত শিকারী জন্তুর শিকার করা পশু-পাখী দুটি শর্ত সাপেক্ষে খাওয়া হালাল বা বৈধ। (ক) শিকারে প্রেরণ করার পূর্বে 'বিসমিল্লাহ' বলতে হবে। (খ) শিকারী পশু শিকার করা জিনিস (পশু বা পাখী) মালিকের জন্য রেখে দিবে এবং তার অপেক্ষা করবে; নিজে তা ভক্ষণ করবে না। যদিও সে শিকারকৃত পশু বা পাখীকে মেরে ফেলেছে, তবুও তা খাওয়া হালাল এই শর্তে যে, সে যেন শিকারের ব্যাপারে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং তাকে প্রেরণ করার সময় তার সাথে অন্য কোন পশু শরীক না থাকে। (সহীহ বুখারী 'যবেহ' অধ্যায় ও মুসলিম 'শিকার' অধ্যায়)

Tafsir Abu Bakr Zakaria

মানুষ আপনাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কি কি হালাল করা হয়েছে? বলুন, ‘তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সমস্ত পবিত্র জিনিস [১]। আর শিকারী পশু-পাখি, যাদেরকে তোমরা শিকার শিখিয়েছ – আল্লাহ তোমাদেরকে যা শিখিয়েছেন তা থেকে সেগুলোকে তোমরা শিখিয়ে থাক –সুতরাং এই (শিকারী পশুপাখি)-গুলো যা কিছু তোমাদের জন্য ধরে আনে তা থেকে খাও। আর এতে আল্লাহর নাম স্মরণ কর [২] এবং আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রুত হিসেব গ্রহণকারী’।

[১] এ আয়াতে বর্ণিত (طيبات) শব্দের তিনটি অর্থ হয়ে থাকে। এক. যাবতীয় রুচিসম্পন্ন। দুই. যাবতীয় হালালকৃত। তিন. যাবতীয় যবাইকৃত প্রাণী। কারণ, যবাই করার কারণে সেগুলোতে পরিচ্ছন্নতা এসেছে। [ফাতহুল কাদীর]

[২] আয়াতে শিকারী কুকুর, বাজ ইত্যাদি দ্বারা শিকার করা জন্তু হালাল হওয়ার জন্যে কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম শর্তঃ কুকুর অথবা বাজ শিক্ষাপ্রাপ্ত হতে হবে। শিকার পদ্ধতি এই যে, আপনি যখন কুকুরকে শিকারের দিকে প্রেরণ করবেন, তখন সে শিকার ধরে আপনার কাছে নিয়ে আসবে- নিজে খাওয়া শুরু করবে না। বাজপাখীর বেলায় পদ্ধতি এই যে, আপনি ফেরৎ আসার জন্যে ডাক দেয়া মাত্রই সে কাল বিলম্ব না করে ফিরে আসবে- যদিও তখন কোন শিকারের পিছনে ধাওয়া করতে থাকে। শিকারী জন্তু এমনভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে গেলে বোঝা যাবে যে, সে আপনার জন্যে শিকার করে, নিজের জন্যে নয়। এমতাবস্থায় এগুলোর ধরে আনা শিকার স্বয়ং আপনারই শিকার বলে গন্য হবে। যদি শিকারী জন্তু কোন সময় এ শিক্ষার বিরুদ্ধাচরণ করে যেমন, কুকুর নিজেই খাওয়া আরম্ভ করে কিংবা বাজপাখী আপনার ডাকে ফেরৎ না আসে, তবে এ শিকার আপনার শিকার নয়। কাজেই তা খাওয়াও বৈধ নয়। দ্বিতীয় শর্তঃ আপনি নিজ ইচ্ছায় কুকুরকে অথবা বাজকে শিকারের পেছনে প্রেরণ করবেন। কুকুর অথবা বাজ যেন স্বেচ্ছায় শিকারের পেছনে দৌড়ে শিকার না করে। আলোচ্য আয়াতে এ শর্তটি (مكلبين) শব্দে বর্ণিত হয়েছে। এটি (تكليب) ধাতু থেকে উদ্ভুত। এর আসল অর্থ কুকুরকে শিক্ষা দেয়া। এরপর সাধারণ শিকার জন্তুকে শিক্ষা দেয়ার পর শিকারের দিকে প্রেরণ করা বা (ارسال) এর অর্থেও ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এর অর্থ শিকারের দিকে প্রেরণ করা। তৃতীয় শর্তঃ শিকার জন্তু নিজে শিকারকে খাবে না; বরং আপনার কাছে নিয়ে আসবে। এ শর্তটি (مِمَّا اَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ) বাক্যাংশে বর্ণিত হয়েছে। চতুর্থ শর্তঃ শিকারী কুকুর অথবা বাজকে শিকারের দিকে প্রেরণ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে। উপরে বর্ণিত চারটি শর্ত পূর্ণ হলে শিকার আপনার হাতে পৌঁছার পূর্বেই যদি মরে যায়, তবুও তা হালাল হবে; যবেহ্ করার প্রয়োজন হবে না। আর যদি জীবিত অবস্থায় হাতে আসে, তবে যবেহ্ ব্যতীত হালাল হবে না। তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, শিকার হিসেবে ঐসব বন্য জন্তুর ক্ষেত্রেই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে, যে গুলো কারও করতলগত নয়। পক্ষান্তরে কোন বন্য জন্তু কারও করতলগত হয়ে গেলে, তা নিয়মিত যবেহ করা ব্যতীত হালাল হবে না। [ইবন কাসীর ও কুরতুবী থেকে সংক্ষেপিত]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবী আদী ইবন হাতিমকে বললেন, যখন তুমি শিকারের উদ্দেশ্যে তোমার কুকুরকে পাঠাবে এবং পাঠানোর সময় আল্লাহর নাম নিবে, তারপর যদি সে কুকুর কোন শিকার পাকড়াও করে, তবে তা থেকে খাও, যদিও সে শিকারটিকে হত্যা করে ফেলে থাকে। তবে যদি কুকুর সেটা থেকে নিজে খেয়ে নেয় সেটা ভিন্ন। সেটা খেয়ো না। কারণ, সেটা সে নিজের জন্য শিকার করেছে এমন আশঙ্কা রয়েছে। অনুরূপভাবে অন্য কুকুর এর সাথে মিশে শিকার করলেও সেটা খেয়ো না। [বুখারী ৫৪৭৫; মুসলিম; ১৯২৯]

Tafsir Bayaan Foundation

তারা তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী বৈধ করা হয়েছে? বল, ‘তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সব ভাল বস্তু এবং শিকারী পশু-পাখী, যাদেরকে তোমরা শিকার প্রশিক্ষণ দিয়েছ; সেগুলোকে তোমরা শেখাও, যা আল্লাহ তোমাদেরকে শিখিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তা থেকে খাও, যা তোমাদের জন্য ধরে এনেছে এবং তাতে তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ কর আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।

Muhiuddin Khan

তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে যে, কি বস্তু তাদের জন্যে হালাল? বলে দিন, তোমাদের জন্যে পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হয়েছে। যেসব শিকারী জন্তুকে তোমরা প্রশিক্ষণ দান কর শিকারের প্রতি প্রেরণের জন্যে এবং ওদেরকে ঐ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দাও, যা আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এমন শিকারী জন্তু যে শিকারকে তোমাদের জন্যে ধরে রাখে, তা খাও এবং তার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ সত্ত্বর হিসাব গ্রহণকারী।

Zohurul Hoque

তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করছে কি তাদের জন্য হালাল হয়েছে। বলো -- ''ভালো বস্তু তোমাদের জন্য বৈধ হয়েছে । আর শিকারী পশুপক্ষীদের শিকার করতে যা শিখিয়েছ -- তাদের তোমরা শিখিয়েছ যা আল্লাহ্ তোমাদের শিখিয়েছেন, কাজেই তারা তোমাদের কাছে যা ধরে আনে তা থেকে তোমরা খাও, তবে তার উপরে আল্লাহ্‌র নাম উল্লেখ করো। আর আল্লাহ্‌কে ভয়-ভক্তি করো। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হিসেব-নিকেশে তৎপর।