কুরআন মজীদ সূরা আল মায়িদাহ আয়াত ১১৭
Qur'an Surah Al-Ma'idah Verse 117
আল মায়িদাহ [৫]: ১১৭ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
مَا قُلْتُ لَهُمْ اِلَّا مَآ اَمَرْتَنِيْ بِهٖٓ اَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ رَبِّيْ وَرَبَّكُمْ ۚوَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا مَّا دُمْتُ فِيْهِمْ ۚ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ كُنْتَ اَنْتَ الرَّقِيْبَ عَلَيْهِمْ ۗوَاَنْتَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ (المائدة : ٥)
- mā
- مَا
- Not
- না
- qul'tu
- قُلْتُ
- I said
- আমি বলেছি
- lahum
- لَهُمْ
- to them
- উদ্দেশ্যে তাদের
- illā
- إِلَّا
- except
- এ ছাড়া
- mā
- مَآ
- what
- যা
- amartanī
- أَمَرْتَنِى
- You commanded me
- আপনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন
- bihi
- بِهِۦٓ
- [with it]
- সম্পর্কে সে
- ani
- أَنِ
- that
- যে
- uʿ'budū
- ٱعْبُدُوا۟
- "You worship
- "তোমরা ইবাদত করো
- l-laha
- ٱللَّهَ
- Allah
- আল্লাহর (যিনি)
- rabbī
- رَبِّى
- my Lord
- আমার রব
- warabbakum
- وَرَبَّكُمْۚ
- and your Lord"
- ও রব তোমাদের"
- wakuntu
- وَكُنتُ
- And I was
- এবং আমি ছিলাম
- ʿalayhim
- عَلَيْهِمْ
- over them
- উপর তাদের
- shahīdan
- شَهِيدًا
- a witness
- সাক্ষী
- mā
- مَّا
- that
- যতক্ষণ
- dum'tu
- دُمْتُ
- as long as I
- আমি ছিলাম
- fīhim
- فِيهِمْۖ
- (was) among them
- মধ্যে তাদের (উপস্থিত)
- falammā
- فَلَمَّا
- then when
- অতঃপর যখন
- tawaffaytanī
- تَوَفَّيْتَنِى
- You raised me
- আমাকে উঠিয়ে নিলেন আপনি
- kunta
- كُنتَ
- You were
- আপনি ছিলেন
- anta
- أَنتَ
- [You]
- আপনি
- l-raqība
- ٱلرَّقِيبَ
- the Watcher
- তত্ত্বাবধায়ক
- ʿalayhim
- عَلَيْهِمْۚ
- over them
- উপর তাদের
- wa-anta
- وَأَنتَ
- and You
- এবং আপনি
- ʿalā
- عَلَىٰ
- (are) on
- উপর
- kulli
- كُلِّ
- every
- সব
- shayin
- شَىْءٍ
- thing
- কিছুরই
- shahīdun
- شَهِيدٌ
- a Witness
- সাক্ষী
Transliteration:
Maa qultu lahum illaa maaa amartanee bihee ani'budul laaha Rabbeee wa Rabbakum; wa kuntu 'alaihim shaheedam maa dumtu feehim falammaa tawaffaitanee kunta Antar Raqeeba 'alaihim; wa Anta 'alaa kulli shai'in Shaheed(QS. al-Māʾidah:117)
English Sahih International:
I said not to them except what You commanded me – to worship Allah, my Lord and your Lord. And I was a witness over them as long as I was among them; but when You took me up, You were the Observer over them, and You are, over all things, Witness. (QS. Al-Ma'idah, Ayah ১১৭)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তুমি আমাকে যে ব্যাপারে নির্দেশ করেছ তা ছাড়া আমি তাদেরকে অন্য কিছুই বলিনি, (তা এই) যে, তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর যিনি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক, আর তাদের কাজ কর্মের ব্যাপারে সাক্ষী ছিলাম যদ্দিন আমি তাদের মাঝে ছিলাম, অতঃপর যখন তুমি আমাকে উঠিয়ে নিলে, তখন তুমিই ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক, আর তুমি হলে প্রত্যেক ব্যাপারে সাক্ষী। (আল মায়িদাহ, আয়াত ১১৭)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তুমি আমাকে যে আদেশ করেছ, তা ব্যতীত তাদেরকে আমি কিছুই বলিনি। (এবং) তা এই যে, তোমরা আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপাসনা কর।[১] আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেক্ষক।[২] আর তুমি সর্ব বস্তুর উপর সাক্ষী।
[১] ঈসা (আঃ) তাওহীদ ও এক আল্লাহর ইবাদতের এই দাওয়াত দুধপান কালে দিয়েছিলেন, যেমনটি সূরা মারয়্যামে বলা হয়েছে। অনুরূপ যুবক ও পরিণত বয়সেও (নবুঅত লাভের পরও) এই একই দাওয়াত দিয়েছেন।
[২] (تَوَفَّيْتَنِي) এর ভাবার্থ হচ্ছে, যখন তুমি আমাকে পৃথিবী হতে তুলে নিলে, যেমন এর ব্যাখ্যা সূরা আল ইমরানের ৩;৫৫ নং আয়াতে পরিবেশিত হয়েছে। এখান থেকে এ কথাও জানা যায় যে, নবীগণ ততটুকুই (গায়বী খবর) জানতেন, যতটুকুর জ্ঞান আল্লাহ কর্তৃক তাঁদেরকে জানানো হত অথবা নিজের জীবদ্দশায় স্বচক্ষে যা দর্শন করে অর্জন করেছিলেন, এ ছাড়া তাঁদের অন্য কোন (অদেখা) কথার জ্ঞান ছিল না। পক্ষান্তরে অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা তিনিই হন, যিনি অন্যের অবহিত করা ব্যতীত নিজে নিজেই প্রত্যেক জিনিস সম্পর্কে সম্যক অবগত হন এবং যাঁর জ্ঞান আদি ও অন্ত পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। এই গুণের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ; তিনি ব্যতীত অন্য কারও মধ্যে এই গুণ নেই। আর এ কারণেই একমাত্র তিনিই হচ্ছেন 'আলেমুল গায়ব'। আর তিনি ব্যতীত গায়েব বা অদৃশ্য সম্পর্কে কেউ অবগত নয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন নবী করীম (সাঃ)-এর দিকে কিছু উম্মতী আসার চেষ্টা করবে; কিন্তু ফিরিশতাগণ তাদেরকে ধরে অন্য দিকে নিয়ে যাবেন। তখন নবী করীম (সাঃ) তাঁদেরকে বলবেন, 'ওদেরকে আসতে দিন, ওরা তো আমার উম্মত!' কিন্তু ফিরিশতাগণ বলবেন, 'আপনি জানেন না যে, ওরা আপনার তিরোধানের পর আপনার দ্বীনের মধ্যে কি কি বিদআত রচনা করেছিল।' যখন এই কথা শুনবেন, তখন তিনি সেই কথাই বলবেন যা আল্লাহর নেক বান্দা ঈসা (আঃ) বলেছেন, (وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنتَ أَنتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ) অর্থাৎ, যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেক্ষক। (বুখারী, মুসলিম)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
‘আপনি আমাকে যে আদেশ করেছেন তা ছাড়া তাদেরকে আমি কিছুই বলিনি, তা এই যেঃ তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কাজকর্মের সাক্ষী, কিন্তু যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন [১] তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কাজকর্মের তত্ত্বাবধায়ক এবং আপনিই সব বিষয়ে সাক্ষী [২]।’
[১] এ বাক্যটিকে ঈসা ‘আলাইহিস সালামের মৃত্যুর দলীল ও আকাশে উত্থিত হওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করার প্রমাণ হিসাবে উপস্থিত করা ঠিক নয়। কেননা, এ কথোপকথন কেয়ামতের দিন হবে। তখন আকাশ থেকে অবতরণের পর তার সত্যিকার মৃত্যু হবে অতীত বিষয়। আয়াতের পূর্ণ অর্থ হচ্ছে, আপনি যখন যমীনের বুকে আমার মেয়াদ পূর্ণ করলেন এবং আমাকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিলেন,তখন আপনিই কেবল তাদের গোপন বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত। আর আপনি সবকিছুর সাক্ষী। আসমান ও যমীনে কোন কিছু আপনার কাছে গোপন নেই। [মুয়াসসার]
[২] এ আয়াতে এবং এর পরবর্তী আয়াতসমূহ বিশেষ করে সূরার শেষ পর্যন্ত বিশেষভাবে বনী-ইসরাঈলের শেষ নবী ঈসা ‘আলাইহিস সালামের সাথে আলোচনা ও তার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহের কিছু বিবরণ দেয়া হয়েছে। হাশরে তাকে একটি বিশেষ প্রশ্ন ও তার উত্তর পরবর্তী আয়াতসমূহে উল্লেখিত হয়েছে। এ প্রশ্নোত্তরের সারমর্ম ও বনীইসরাঈল তথা সমগ্র মানব জাতির সামনে কেয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য তুলে ধরা। এ ময়দানে ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে প্রশ্ন করা হবে যে, আপনার উম্মত আপনাকে আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করেছে। ঈসা আলাইহিস সালাম স্বীয় সম্মান, মাহাত্ম্য, নিষ্পাপতা ও নবুওয়ত সত্ত্বেও অস্থির হয়ে আল্লাহর দরবারে সাফাই পেশ করবেন একবার নয়, বার বার বিভিন্ন ভঙ্গিতে প্রকাশ করবেন যে, তিনি উম্মতকে এ শিক্ষা দেননি। প্রথমে বলবেনঃ “আপনি পবিত্র, আমার কি সাধ্য ছিল যে, আমি এমন কথা বলব, যা বলার অধিকার আমার নেই"? স্বীয় সাফাইয়ের দ্বিতীয় ভঙ্গি এই যে, তিনি স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলাকে সাক্ষী করে বলবেনঃ “যদি আমি এরূপ বলতাম, তবে অবশ্যই আপনার তা জানা থাকত। কেননা, আপনি তো আমার অন্তরের গোপন রহস্য সম্পর্কেও অবগত। কথা ও কর্মেরই কেন, আপনি তো আল্লামুল-গুয়ুব যাবতীয় অদৃশ্য বিষয়ে মহাজ্ঞানী”। এ দীর্ঘ ভূমিকার পর ঈসা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নের উত্তর দেবেন এবং বলবেনঃ “আমি তাদেরকে ঐ শিক্ষাই দিয়েছি, যার নির্দেশ আপনি দিয়েছিলেন যে, আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন কর, যিনি আমার তোমাদের সকলের পালনকর্তা। এ শিক্ষার পর আমি যত দিন তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি তাদের কথাবার্তা ও ক্রিয়াকর্মের সাক্ষী ছিলাম, (তখন পর্যন্ত তাদের কেউ এরুপ কথা বলত না) এরপর আপনি যখন আমাকে উঠিয়ে নেন, তখন তারা আপনার দেখাশোনার মধ্যেই ছিল। আপনিই তাদের কথাবার্তা ও ক্রিয়াকর্মের সম্যক সাক্ষী”। [সা'দী]
Tafsir Bayaan Foundation
‘আমি তাদেরকে কেবল তাই বলেছি, যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আললাহর ইবাদাত কর। আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনি ছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণকারী। আর আপনি সব কিছুর উপর সাক্ষী।
Muhiuddin Khan
আমি তো তাদেরকে কিছুই বলিনি, শুধু সে কথাই বলেছি যা আপনি বলতে আদেশ করেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন কর যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা আমি তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আপনি সর্ববিষয়ে পূর্ণ পরিজ্ঞাত।
Zohurul Hoque
''আমি তাদের বলি নি তুমি যা আমাকে আদেশ করেছ তা ছাড়া অন্য কিছু, যথা -- 'তোমরা আল্লাহ্র উপাসনা করো যিনি আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভু’, আর আমি তাদের সাক্ষী ছিলাম যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, কিন্তু যখন তুমি আমার মৃত্যু ঘটালে তখন তুমিই ছিলে তাদের উপরে প্রহরী। আর তুমিই হচ্ছো সব-কিছুরই সাক্ষী।