কুরআন মজীদ সূরা আল মায়িদাহ আয়াত ১১০
Qur'an Surah Al-Ma'idah Verse 110
আল মায়িদাহ [৫]: ১১০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اِذْ قَالَ اللّٰهُ يٰعِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ اذْكُرْ نِعْمَتِيْ عَلَيْكَ وَعَلٰى وَالِدَتِكَ ۘاِذْ اَيَّدْتُّكَ بِرُوْحِ الْقُدُسِۗ تُكَلِّمُ النَّاسَ فِى الْمَهْدِ وَكَهْلًا ۚوَاِذْ عَلَّمْتُكَ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرٰىةَ وَالْاِنْجِيْلَ ۚوَاِذْ تَخْلُقُ مِنَ الطِّيْنِ كَهَيْـَٔةِ الطَّيْرِ بِاِذْنِيْ فَتَنْفُخُ فِيْهَا فَتَكُوْنُ طَيْرًاۢ بِاِذْنِيْ وَتُبْرِئُ الْاَكْمَهَ وَالْاَبْرَصَ بِاِذْنِيْ ۚوَاِذْ تُخْرِجُ الْمَوْتٰى بِاِذْنِيْ ۚوَاِذْ كَفَفْتُ بَنِيْٓ اِسْرَاۤءِيْلَ عَنْكَ اِذْ جِئْتَهُمْ بِالْبَيِّنٰتِ فَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْهُمْ اِنْ هٰذَآ اِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ (المائدة : ٥)
- idh
- إِذْ
- When
- (স্মরণ করো) যখন
- qāla
- قَالَ
- said
- বলেছিলেন
- l-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah
- আল্লাহ
- yāʿīsā
- يَٰعِيسَى
- "O Isa
- "হে ঈসা
- ib'na
- ٱبْنَ
- son
- পূত্র
- maryama
- مَرْيَمَ
- (of) Maryam!
- মারইয়ামের
- udh'kur
- ٱذْكُرْ
- Remember
- তুমি স্মরণ করো
- niʿ'matī
- نِعْمَتِى
- My Favor
- আমার অনুগ্রহ
- ʿalayka
- عَلَيْكَ
- upon you
- উপর তোমার
- waʿalā
- وَعَلَىٰ
- and upon
- ও উপর
- wālidatika
- وَٰلِدَتِكَ
- your mother
- তোমার মাতার
- idh
- إِذْ
- when
- যখন
- ayyadttuka
- أَيَّدتُّكَ
- I strengthened you
- তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম
- birūḥi
- بِرُوحِ
- with (the) Spirit
- দিয়ে আত্মা
- l-qudusi
- ٱلْقُدُسِ
- the Holy
- পবিত্র
- tukallimu
- تُكَلِّمُ
- you spoke
- তুমি কথা বলতে
- l-nāsa
- ٱلنَّاسَ
- (to) the people
- মানুষের(সাথে)
- fī
- فِى
- in
- মধ্যে
- l-mahdi
- ٱلْمَهْدِ
- the cradle
- দোলনার
- wakahlan
- وَكَهْلًاۖ
- and (in) maturity
- এবং পরিণত বয়সেও
- wa-idh
- وَإِذْ
- And when
- এবং যখন
- ʿallamtuka
- عَلَّمْتُكَ
- I taught you
- শিখিয়েছিলাম তোমাকে
- l-kitāba
- ٱلْكِتَٰبَ
- the Book
- কিতাব
- wal-ḥik'mata
- وَٱلْحِكْمَةَ
- and the wisdom
- ও প্রজ্ঞা
- wal-tawrāta
- وَٱلتَّوْرَىٰةَ
- and the Taurat
- ও তাওরাত
- wal-injīla
- وَٱلْإِنجِيلَۖ
- and the Injeel
- ও ইনজীল
- wa-idh
- وَإِذْ
- and when
- এবং (স্মরণ করো) যখন
- takhluqu
- تَخْلُقُ
- you make
- তুমি তৈরী করতে
- mina
- مِنَ
- from
- দিয়ে
- l-ṭīni
- ٱلطِّينِ
- the clay
- মাটি
- kahayati
- كَهَيْـَٔةِ
- like the shape
- মতো আকৃতির
- l-ṭayri
- ٱلطَّيْرِ
- (of) the bird
- পাখির
- bi-idh'nī
- بِإِذْنِى
- by My permission
- নিয়ে আমার অনুমতি
- fatanfukhu
- فَتَنفُخُ
- then you breath
- এরপর ফুঁ দিতে
- fīhā
- فِيهَا
- into it
- মধ্যে তার
- fatakūnu
- فَتَكُونُ
- and it becomes
- তখন হয়ে যেতো সেটা
- ṭayran
- طَيْرًۢا
- a bird
- পাখি
- bi-idh'nī
- بِإِذْنِىۖ
- by My permission
- মাধ্যমে আমার অনুুমতির
- watub'ri-u
- وَتُبْرِئُ
- and you heal
- ও নিরাময় করতে তুমি
- l-akmaha
- ٱلْأَكْمَهَ
- the born blind
- জন্মান্ধকে
- wal-abraṣa
- وَٱلْأَبْرَصَ
- and the leper
- ও কুষ্ঠ রোগীকে
- bi-idh'nī
- بِإِذْنِىۖ
- by My permission
- মাধ্যমে আমার আদেশের
- wa-idh
- وَإِذْ
- and when
- এবং যখন
- tukh'riju
- تُخْرِجُ
- you bring forth
- বের করতে তুমি (জীবিত করে)
- l-mawtā
- ٱلْمَوْتَىٰ
- the dead
- মৃতদেরকে
- bi-idh'nī
- بِإِذْنِىۖ
- by My permission
- মাধ্যমে আমার আদেশের
- wa-idh
- وَإِذْ
- And when
- এবং যখন
- kafaftu
- كَفَفْتُ
- I restrained
- আমি নিবৃত্ত করেছিলাম
- banī
- بَنِىٓ
- (the) Children
- বনী
- is'rāīla
- إِسْرَٰٓءِيلَ
- (of) Israel
- ইসরাঈলকে
- ʿanka
- عَنكَ
- from you
- থেকে তোমার
- idh
- إِذْ
- when
- যখন
- ji'tahum
- جِئْتَهُم
- you came to them
- কাছে এসেছিলে তুমি তাদের
- bil-bayināti
- بِٱلْبَيِّنَٰتِ
- with the clear proofs
- সহ স্পষ্ট নিদর্শনাদি
- faqāla
- فَقَالَ
- then said
- অতঃপর বলেছিলো
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- those who
- যারা
- kafarū
- كَفَرُوا۟
- disbelieved
- অস্বীকার করেছিল
- min'hum
- مِنْهُمْ
- among them
- মধ্য হতে তাদের
- in
- إِنْ
- "Not
- "নয়
- hādhā
- هَٰذَآ
- "(is) this
- "এটা (অন্য কিছু)
- illā
- إِلَّا
- but
- ছাড়া
- siḥ'run
- سِحْرٌ
- magic"
- জাদু"
- mubīnun
- مُّبِينٌ
- clear"
- সুস্পষ্ট"
Transliteration:
Iz qaalal laahu yaa 'Eesab-na-Maryamaz kur ni'matee 'alaika wa 'alaa waalidatik; iz aiyattuka bi Roohil Qudusi tukallimun naasa fil mahdi wa kahlanw wa iz 'allamtukal kitaaba wal Hikmata wa Tawraata wal Injeela wa iz Takhluqu minat teeni kahai 'atit tairi bi iznee fatanfukhu feeha fatakoonu tairam bi iznee wa tubri'ul akmaha wal abrasa bi iznee wa iz tukhrijul mawtaa bi iznee wa iz kafaftu Baneee Israaa'eela 'anka iz ji'tahum bil baiyinaati fa qaalal lazeena kafaroo minhum in haazaaa illaa sihrum mubeen(QS. al-Māʾidah:110)
English Sahih International:
[The Day] when Allah will say, "O Jesus, Son of Mary, remember My favor upon you and upon your mother when I supported you with the Pure Spirit [i.e., the angel Gabriel] and you spoke to the people in the cradle and in maturity; and [remember] when I taught you writing and wisdom and the Torah and the Gospel; and when you designed from clay [what was] like the form of a bird with My permission, then you breathed into it, and it became a bird with My permission; and you healed the blind [from birth] and the leper with My permission; and when you brought forth the dead with My permission; and when I restrained the Children of Israel from [killing] you when you came to them with clear proofs and those who disbelieved among them said, "This is not but obvious magic." (QS. Al-Ma'idah, Ayah ১১০)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
যখন আল্লাহ বলেন, ‘‘হে ‘ঈসা বিন মারইয়াম! তুমি তোমার প্রতি আর তোমার মায়ের প্রতি আমার নি‘মাতের কথা স্মরণ কর। আমি তোমাকে রূহুল কুদ্দুস (জিবরাঈল) দিয়ে শক্তিশালী করেছি, তুমি দোলনায় থাকা অবস্থায় আর পূর্ণ বয়সেও মানুষের সাথে কথা বলেছ। স্মরণ কর আমি তোমাকে কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছিলাম। তুমি আমার অনুমতিক্রমে মাটি দ্বারা পাখীর মত আকৃতি গঠন করতে আর তাতে ফুঁক দিতে তখন তা আমার হুকুমে পাখী হয়ে যেত, জন্মান্ধ আর কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিকে তুমি আমার হুকুমে আরোগ্য করতে, স্মরণ কর আমার হুকুমে তুমি মৃতকে জীবিত করতে, স্মরণ কর যখন আমি তোমার থেকে বানী ইসরাঈলকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম যখন তুমি তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাদি নিয়ে আসলে, তখন তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলল- "এটা তো স্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।" (আল মায়িদাহ, আয়াত ১১০)
Tafsir Ahsanul Bayaan
(স্মরণ কর,) যখন আল্লাহ বলবেন, হে মারয়্যাম-তনয় ঈসা! তোমার প্রতি ও তোমার জননীর প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর, পবিত্র-আত্মা[১] (জিবরীল ফিরিশতা) দ্বারা আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম এবং তুমি দোলনায় থাকা (শিশু) অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলতে।[২] তোমাকে কিতাব, জ্ঞান-বিজ্ঞান, তাওরাত ও ইঞ্জীল শিক্ষা দিয়েছিলাম।[৩] তুমি কাদা দিয়ে আমার অনুমতিক্রমে পাখী সদৃশ আকৃতি গঠন করতে এবং তাতে ফুঁ দিতে, ফলে আমার অনুমতিক্রমে তা পাখী হয়ে যেত, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে তুমি আমার অনুমতিক্রমে নিরাময় করতে এবং আমার অনুমতিক্রমে তুমি মৃতকে জীবিত করতে।[৪] আমি তোমার থেকে বনী ইস্রাঈলকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম। তুমি যখন তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন এনেছিলে[৫] তখন তাদের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল তারা বলেছিল, ‘এ যাদু ছাড়া আর কিছুই না।’[৬]
[১] এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, জিবরীল (আঃ), যেমনটি সূরা বাকারার ২;৮৭নং আয়াতে উল্লেখ হয়েছে।
[২] দোলনায় থাকা শিশু অবস্থায় ঐ সময় কথা বলেছিলেন, যখন মারয়্যাম (আলাইহাস সালাম) তাঁর ঐ সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে নিজ গোত্রের লোকের নিকট আসেন এবং তারা শিশুটিকে দেখে আশ্চর্য হয় এবং তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন শিশু ঈসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে দুগ্ধপানকালীন অবস্থায় কথা বলেছিলেন। আর পরিণত বয়সে কথা বলার ভাবার্থ হল, নবুঅত প্রাপ্তির পর (আল্লাহর পথে তাওহীদের) দাওয়াত ও তবলীগের জন্য যা বলেছিলেন।
[৩] এর ব্যাখ্যা সূরা আলে ইমরানের ৩;৪৮ নং আয়াতে উল্লেখ হয়েছে।
[৪] এই মু'জিযাসমূহের বর্ণনাও সূরা আলে ইমরানের ৩;৪৯ নং আয়াতে পরিবেশিত হয়েছে।
[৫] এখানে ঐ ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা ইয়াহুদীরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা ও ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য করেছিল। তখন আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলেন।
(দ্রষ্টব্যঃ সূরা আলে ইমরানের ৩;৫৪নং আয়াতের টীকা)
[৬] প্রত্যেক নবীর বিরোধীরা, আল্লাহর নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনাবলী দেখে তারা তাকে যাদুই বলেছে। অথচ যাদু হচ্ছে, ভেল্কিবাজির কলা-কৌশল। তার সাথে নবীদের কি সম্পর্ক থাকতে পারে? নবীগণের হাতে প্রকাশিত অলৌকিক জিনিস, আসলে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কুদরতে ও অসীম শক্তির এক বহিঃপ্রকাশ ছিল। কেননা, তা আল্লাহরই আদেশক্রমে তাঁরই ইচ্ছা ও শক্তিতে প্রকাশ পেত। কোন নবীর ইচ্ছা ও এখতিয়ারে এ ছিল না যে, তিনি যখন ইচ্ছা করতেন, আল্লাহর বিনা ইচ্ছায় ও তাঁর নির্দেশ ব্যতীত কোন অলৌকিক জিনিস দেখাতে পারতেন। সুতরাং এখানে লক্ষণীয় যে, ঈসা (আঃ)-এর প্রত্যেক মু'জিযার সাথে আল্লাহ চারবার بإذني (আমার অনুমতিক্রমে) বলেছেন। তার মানে প্রত্যেক মু'জিযা আল্লাহর নির্দেশেই ঘটে থাকে। এই কারণেই মক্কার মুশরিকরা যখন নবী করীম (সাঃ)-কে বিভিন্ন মু'জিযা দেখানোর কথা বলেছিল -- যার বিস্তারিত বর্ণনা সূরা বানী ইসরাঈলের ১৭;৯০-৯৩ আয়াতে রয়েছে -- তখন তাদের উত্তরে নবী করীম (সাঃ) বলেছিলেন, (سُبْحَانَ رَبِّيْ هَلْ كُنْتُ إِلاَّ بَشَرًا رَّسُوْلا) আমার প্রতিপালক অতি পবিত্র (অর্থাৎ তিনি তো এ দুর্বলতা থেকে পবিত্র যে, তিনি এ ধরনের জিনিস দেখাতে পারবেন না, তিনি তো তা দেখাতে সক্ষম। কিন্তু তাঁর হিকমত তা চায় কি না? অথবা কখন তা চাইবে --এ সবই জ্ঞান তাঁরই কাছে। আর তিনি সেই মোতাবেক ফায়সালা করেন।) কিন্তু আমি তো একজন মানুষ ও তাঁর রসূল ব্যতীত অন্য কিছু নই। অর্থাৎ, নিজে থেকে এ ধরনের মু'জিযা দেখানোর শক্তি আমার নেই। বলা বাহুল্য, নবীদের মু'জিযার সাথে যাদুর কোন সম্পর্ক নেই। যদি এমনটিই হত, তাহলে যাদুকররা তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হত। কিন্তু মূসা (আঃ)-এর ঘটনাবলী থেকে প্রমাণিত হয় যে, বড় বড় যাদুকররা একত্রিত হয়েও মূসা (আঃ)-এর মু'জিযার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হয়নি। আর যখন তাদের নিকট মু'জিযা ও যাদুর মধ্যে পার্থক্য প্রকট হয়, তখন তারা মুসলমান হয়ে যায়।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
স্মরণ করুন,যখন আল্লাহ্ বলবেন, ‘ হে মারইয়ামের পুত্র ‘ঈসা ! আপনার প্রতি ও আপনার জননীর প্রতি আমার নেয়ামত [১] স্মরণ করুন,যখন ‘রুহুল কুদুস [২] দিয়ে আমি আপনাকে শক্তিশালী করেছিলাম এবং আপনি দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলতেন; আপনাকে কিতাব ,হিকমত,তাওরাত ও ইঞ্জীল শিক্ষা দিয়েছিলাম; আপনি কাদামাটি দিয়ে আমার অনুমতিক্রমে পাখির মত আকৃতি গঠন করতেন এবং তাতে ফুঁ দিতেন,ফলে আমার অনুমতিক্রমে তা পাখি হয়ে যেত; জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীদেরকে আপনি আমার অনুমতিক্রমে নিরাময় করতেন এবং আমার অনুমতিক্রমে আপনি মৃতকে জীবিত করতেন; আর যখন আমি আপনার থেকে ইসরাঈল-সন্তানকে বিরত রেখেছিলাম [৩]; আপনি যখন তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শন এনেছিলেন তখন তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিলো তারা বলেছিল, ‘এটাতো স্পষ্ট জাদু।’
[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে ঈসা ‘আলাইহিস সালামের ঐসব অনুগ্রহের বিষয় উল্লেখিত হয়েছে, যা বিশেষভাবে ঈসা আলাইহিস সালামকে মু'জিযার আকার দেয়া হয়। এতে একদিকে বিশেষ অনুগ্রহ ও অপরদিকে জবাবদিহির দৃশ্যের অবতারণা করে বনী-ইসরাঈলের ঐ জাতিদ্বয়কে হুশিয়ার করা হয়েছে, যাদের এক জাতি তাকে অপমানিত করে এবং নানা অপবাদ আরোপ করে কষ্ট দেয় এবং অন্য জাতি আল্লাহ' কিংবা 'আল্লাহর পুত্র' আখ্যা দেয়। [আইসারুত তাফসীর]
[২] রুহুল কুদুস অর্থ, পবিত্র আত্মা। এর দ্বারা জীবরিল আলাইহিস সালামকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়ে থাকে। কুরআন ও সুন্নাহয় এ অর্থেই ‘রুহুল কুদুস’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। [যেমন, সুরা বাকারাহ;৮৭, ২৫৩; সূরা মায়েদাহ ১১০; সূরা আন-নাহল; ১০২]
[৩] অর্থাৎ তারা যখন আপনাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন আমি তাদের হাত থেকে আপনাকে হেফাযত করে আপনাকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলাম। অথচ আপনি তাদের কাছে প্রকাশ্য মু'জিযা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। মুয়াসসার]
Tafsir Bayaan Foundation
যখন আল্লাহ বলবেন,‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার উপর ও তোমার মাতার উপর আমার নি‘আমত স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম পবিত্র আত্মা* দিয়ে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে। আর যখন আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল; আর যখন আমার আদেশে কাদামাটি থেকে পাখির আকৃতির মত গঠন করতে এবং তাতে ফুঁক দিতে, ফলে আমার আদেশে তা পাখি হয়ে যেত। আর তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতে এবং যখন আমার আদেশে তুমি মৃতকে জীবিত বের করতে। আর যখন তুমি স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে তখন আমি বনী ইসরাঈলকে তোমার থেকে ফিরিয়ে রেখেছিলাম। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল, এতো স্পষ্ট যাদু।
*‘পবিত্র আত্মা’ বলে জিবরীল (আঃ কে বুঝানো হয়েছে।
Muhiuddin Khan
যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম, তোমার প্রতি ও তোমার মাতার প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার দ্বারা সাহায্য করেছি। তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে কোলে থাকতেও এবং পরিণত বয়সেও এবং যখন আমি তোমাকে গ্রন্থ, প্রগাঢ় জ্ঞান, তওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছি এবং যখন তুমি কাদামাটি দিয়ে পাখীর প্রতিকৃতির মত প্রতিকৃতি নির্মাণ করতে আমার আদেশে, অতঃপর তুমি তাতে ফুঁ দিতে; ফলে তা আমার আদেশে পাখী হয়ে যেত এবং তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্টরোগীকে নিরাময় করে দিতে এবং যখন আমি বনী-ইসরাঈলকে তোমা থেকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম, যখন তুমি তাদের কাছে প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে, অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কাফের ছিল, তারা বললঃ এটা প্রকাশ্য জাদু ছাড়া কিছুই নয়।
Zohurul Hoque
তখন আল্লাহ্ বলবেন -- ''হে মরিয়ম-পুত্র ঈসা! তোমার প্রতি ও তোমার মাতার প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ করো। স্মরণ করো! কেমন ক’রে তোমাকে আমি 'রূহুল ক্কুদুস’ দিয়ে বলীয়ান করেছিলাম, তুমি লোকদের সঙ্গে কথা বলেছিলে দোলনায় থাকাকালে ও বার্ধক্যকালে, আর স্মরণ করো! কেমন ক’রে তোমাকে শিখিয়েছিলাম কিতাব ও জ্ঞান-বিজ্ঞান, আর তওরাত ও ইনজীল, আর স্মরণ করো! কেমন করে তুমি মাটি দিয়ে তৈরি করতে পাখির মতো মূর্তি আমার অনুমতিক্রমে, তারপর তুমি তাতে ফুৎকার দিতে, তখন তা পাখি হয়ে যেত আমার অনুমতিক্রমে, আর তুমি আরোগ্য করতে জন্মান্ধকে ও কুষ্ঠরোগীকে আমার অনুমতিক্রমে, আর স্মরণ করো! কেমন ক’রে তুমি মৃতকে বের করতে আমার অনুমতিক্রমে, আর স্মরণ করো! কেমন ক’রে আমি ইসরাইলবংশীয় লোকদের নিবৃত্ত রেখেছিলাম তোমা থেকে যখন তুমি তাদের কাছে এসেছিলে স্পস্প্রমাণাবলী নিয়ে।’’ কিন্তু তাদের মধ্যের যারা অবিশ্বাস পোষণ করেছিল তারা বলেছিল -- ''এ স্পষ্ট জাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।’’