Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল হুজরাত আয়াত ১০

Qur'an Surah Al-Hujurat Verse 10

আল হুজরাত [৪৯]: ১০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَيْنَ اَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ ࣖ (الحجرات : ٤٩)

innamā
إِنَّمَا
Only
প্রকৃতপক্ষে
l-mu'minūna
ٱلْمُؤْمِنُونَ
the believers
মু'মিনরা
ikh'watun
إِخْوَةٌ
(are) brothers
(পরস্পরে) ভাই ভাই
fa-aṣliḥū
فَأَصْلِحُوا۟
so make peace
অতএব তোমরা মীমাংসা করে দাও
bayna
بَيْنَ
between
মাঝে
akhawaykum
أَخَوَيْكُمْۚ
your brothers
তোমাদের দুই ভাইয়ের
wa-ittaqū
وَٱتَّقُوا۟
and fear Allah
এবং তোমরা ভয় করো
l-laha
ٱللَّهَ
and fear Allah
আল্লাহকে
laʿallakum
لَعَلَّكُمْ
so that you may
তোমাদের উপর সম্ভবতঃ
tur'ḥamūna
تُرْحَمُونَ
receive mercy
অনুগ্রহ করা হবে

Transliteration:

Innamal mu'minoona ikhwatun fa aslihoo baina akhawaykum wattaqul laaha la'allakum tuhamoon (QS. al-Ḥujurāt:10)

English Sahih International:

The believers are but brothers, so make settlement between your brothers. And fear Allah that you may receive mercy. (QS. Al-Hujurat, Ayah ১০)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

মু’মিনরা পরস্পর ভাই ভাই, কাজেই তোমাদের ভাইদের মধ্যে শান্তি-সমঝোতা স্থাপন কর, আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা দয়া প্রাপ্ত হও। (আল হুজরাত, আয়াত ১০)

Tafsir Ahsanul Bayaan

সকল বিশ্বাসীরা তো পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাই-এর মধ্যে সন্ধি স্থাপন কর[১] এবং আল্লাহকে ভয় কর; যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও। [২]

[১] এটি পূর্বের নির্দেশেরই তাকীদ স্বরূপ। অর্থাৎ, মু'মিনরা যখন পরস্পর ভাই ভাই, তখন তাদের সবার মূল বস্তু হল ঈমান। অতএব, এই মূল বস্তুর দাবী হল, একই ধর্মের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারীরা যেন আপোসে লড়ালড়ি না করে। বরং পরস্পর এক সাথে মিলে-জুলে, একে অপরের দুঃখে-সুখে শরীক হয়ে, পরস্পরকে ভালবেসে এবং একে অপরের হিতাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামী হয়ে থাকে। আর যদি কখনও ভুল বুঝাবুঝির ফলে তাদের মধ্যে দূরত্ব ও ঘৃণা সৃষ্টি হয়ে যায়, তবে তা দূর করে তাদের আপোসে পুনরায় সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব কায়েম করতে হবে। (যেহেতু এক মু'মিন অপর মুমিনের জন্য আয়না স্বরূপ।) (আরো দেখুন, সূরা তাওবার ৯;৭১ নং আয়াতের টীকা)

[২] অর্থাৎ, সমস্ত বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর। সম্ভবতঃ এর ফলে তোমরা আল্লাহর রহমতের অধিকারী হয়ে যাবে। সম্ভাবনা ও আশাব্যঞ্জক কথা সম্বোধিত (মানুষের) দিকে লক্ষ্য করে এ রকম বলা হয়েছে। কেননা, আল্লাহর রহমত ও করুণা তো ঈমানদার ও আল্লাহভীরুদের জন্য নিশ্চিত। পরবর্তী আয়াতগুলিতে মুসলিমদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই [১] ; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।

[১] এ আয়াতটি দুনিয়ার সমস্ত মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন পাওয়া যায় না যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। এটাও এ আয়াতের বরকতে সাধিত হয়েছে। এ নির্দেশের দাবী ও গুরুত্বসমূহ কি, বহুসংখ্যক হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বর্ণনা করেছেন। ঐ সব হাদীসের আলোকে এ আয়াতের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোধগম্য হতে পারে। জারীর ইবন আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে তিনটি বিষয়ে “বাই’আত” নিয়েছেন। ‘এক, সালাত কায়েম করবো। দুই, যাকাত আদায় করতে থাকবো। তিন, প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করবো।” [বুখারী; ৫৫]

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।” [বুখারী; ৬০৪৪, মুসলিম; ৬৩] অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম।” [মুসলিম; ২৫৬৪, কিতাবুল বিরর ওয়াসসিলাহ, তিরমিয়ী; ১৯২৭]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকৰ্ম আর নাই। [মুসনাদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। [মুসনাদে আহমাদ; ৫/৩৪০] অপর একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পারস্পরিক ভালবাসা, সুসম্পর্ক এবং একে অপরের দয়ামায়া ও স্নেহের ব্যাপারে মুমিনগণ একটি দেহের মত। দেহের যে অংগেই কষ্ট হোক না কেন তাতে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে। [বুখারীঃ ৬০১১, মুসলিম; ২৫৮৬]

আরো একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মত একে অপরের থেকে শক্তিলাভ করে থাকে ৷ [বুখারী; ২৬৪৬, মুসলিম; ২৫৮৫] অন্য হাদীসে এসেছে, একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করতে পারে না। আবার তাকে ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিতে পারে না। [বুখারী;২৪৪২, মুসলিম;২৫৮০] অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ বান্দার সহযোগিতায় থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে। [মুসলিম;২৬৯৯] হাদীসে আরো এসেছে, কোন মুসলিম যখন তার ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোআ করে তখন ফেরেশতা বলে, আমীন। (কবুল কর) আর তোমার জন্যও তদ্রুপ হোক। [মুসলিম; ২৭৩২]

Tafsir Bayaan Foundation

নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।

Muhiuddin Khan

মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।

Zohurul Hoque

নিঃসন্দেহ মুমিনরা ভাই-ভাই, সুতরাং তোমাদের ভাইদের মধ্যে তোমরা শান্তিস্থাপন করবে, আর তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয়-ভক্তি করবে যেন তোমাদের অনুগ্রহ করা হয়।