কুরআন মজীদ সূরা আশ-শুরা আয়াত ১৩
Qur'an Surah Ash-Shuraa Verse 13
আশ-শুরা [৪২]: ১৩ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
۞ شَرَعَ لَكُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا وَصّٰى بِهٖ نُوْحًا وَّالَّذِيْٓ اَوْحَيْنَآ اِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهٖٓ اِبْرٰهِيْمَ وَمُوْسٰى وَعِيْسٰٓى اَنْ اَقِيْمُوا الدِّيْنَ وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِۗ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِيْنَ مَا تَدْعُوْهُمْ اِلَيْهِۗ اَللّٰهُ يَجْتَبِيْٓ اِلَيْهِ مَنْ يَّشَاۤءُ وَيَهْدِيْٓ اِلَيْهِ مَنْ يُّنِيْبُۗ (الشورى : ٤٢)
- sharaʿa
- شَرَعَ
- He has ordained
- তিনি বিধান দিয়েছেন
- lakum
- لَكُم
- for you
- তোমাদের জন্যে (একমাত্র)
- mina
- مِّنَ
- of
- থেকে
- l-dīni
- ٱلدِّينِ
- the religion
- দ্বীনের
- mā
- مَا
- what
- যা
- waṣṣā
- وَصَّىٰ
- He enjoined
- আদেশ দিয়েছিলেন
- bihi
- بِهِۦ
- upon
- সে সম্পর্কে
- nūḥan
- نُوحًا
- Nuh
- নূহকে
- wa-alladhī
- وَٱلَّذِىٓ
- and that which
- এবং (হে নাবী) যা
- awḥaynā
- أَوْحَيْنَآ
- We have revealed
- আমরা ওহী করেছি
- ilayka
- إِلَيْكَ
- to you
- তোমার প্রতিও
- wamā
- وَمَا
- and what
- এবং যা
- waṣṣaynā
- وَصَّيْنَا
- We enjoined
- আমরা আদেশ দিয়েছি
- bihi
- بِهِۦٓ
- upon
- সে সম্পর্কে
- ib'rāhīma
- إِبْرَٰهِيمَ
- Ibrahim
- ইব্রাহীমকে
- wamūsā
- وَمُوسَىٰ
- and Musa
- ও মূসাকে
- waʿīsā
- وَعِيسَىٰٓۖ
- and Isa
- ও ঈসাকে
- an
- أَنْ
- To
- (এ তাগিদসহ) যে
- aqīmū
- أَقِيمُوا۟
- establish
- তোমরা প্রতিষ্ঠিত করো
- l-dīna
- ٱلدِّينَ
- the religion
- দ্বীনকে
- walā
- وَلَا
- and not
- এবং না
- tatafarraqū
- تَتَفَرَّقُوا۟
- be divided
- তোমরা মতবিরোধ করো
- fīhi
- فِيهِۚ
- therein
- তার মধ্যে
- kabura
- كَبُرَ
- Is difficult
- বড় কঠিন হয়েছে
- ʿalā
- عَلَى
- on
- কাছে
- l-mush'rikīna
- ٱلْمُشْرِكِينَ
- the polytheists
- মুশরিকদের
- mā
- مَا
- what
- যার
- tadʿūhum
- تَدْعُوهُمْ
- you call them
- তুমি আহবান করছো তাদেরকে
- ilayhi
- إِلَيْهِۚ
- to it
- তাঁর দিকে
- l-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah
- আল্লাহ
- yajtabī
- يَجْتَبِىٓ
- chooses
- বেছে নেন
- ilayhi
- إِلَيْهِ
- for Himself
- তাঁর দিকে
- man
- مَن
- whom
- যাকে
- yashāu
- يَشَآءُ
- He wills
- তিনি ইচ্ছে করেন
- wayahdī
- وَيَهْدِىٓ
- and guides
- এবং পথ দেখান
- ilayhi
- إِلَيْهِ
- to Himself
- তাঁর দিকে
- man
- مَن
- whoever
- যে
- yunību
- يُنِيبُ
- turns
- মুখ ফিরায় (তাঁর দিকে)
Transliteration:
Shara'a lakum minad deeni maa wassaa bihee Noohanw wallazeee awhainaaa ilaika wa maa wassainaa biheee Ibraaheema wa Moosa wa 'Eesaaa an aqeemud adeena wa laa tatafarraqoo feeh; kabura 'alal mushrikeena maa tad'oohum ilaih; Allaahu yajtabee ilaihi many yashaaa'u wa yahdeee ilaihi mai yuneeb(QS. aš-Šūrā:13)
English Sahih International:
He has ordained for you of religion what He enjoined upon Noah and that which We have revealed to you, [O Muhammad], and what We enjoined upon Abraham and Moses and Jesus – to establish the religion and not be divided therein. Difficult for those who associate others with Allah is that to which you invite them. Allah chooses for Himself whom He wills and guides to Himself whoever turns back [to Him]. (QS. Ash-Shuraa, Ayah ১৩)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের সেই বিধি-ব্যবস্থাই দিয়েছেন যার হুকুম তিনি দিয়েছিলেন নূহকে। আর সেই (বিধি ব্যবস্থাই) তোমাকে ওয়াহীর মাধ্যমে দিলাম যার হুকুম দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে- তা এই যে, তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠিত কর, আর তাতে বিভক্তি সৃষ্টি করো না, ব্যাপারটি মুশরিকদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যার দিকে তুমি তাদেরকে আহবান জানাচ্ছ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন তাঁর পথে বেছে নেন, আর তিনি তাঁর পথে পরিচালিত করেন তাকে, যে তাঁর অভিমুখী হয়। (আশ-শুরা, আয়াত ১৩)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন ধর্ম; যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে এবং যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে[১] এই বলে যে, তোমরা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত কর[২] এবং ওতে মতভেদ করো না।[৩] তুমি অংশীবাদীদের যার প্রতি আহবান করছ, তা তাদের নিকট দুর্বহ মনে হয়।[৪] আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেন[৫] এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে ধর্মের দিকে পরিচালিত করেন।[৬]
[১] شَرَعَ অর্থ, বর্ণনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন এবং নির্দিষ্ট করেছেন। لَكُمْ (তোমাদের জন্য) এ সম্বোধন করা হয়েছে উম্মতে মুহাম্মাদীকে। অর্থাৎ, তোমাদের জন্য সেই দ্বীনই নির্ধারিত করেছেন যার অসিয়ত পূর্বের নবীদেরকে করে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে কিছু মর্যাদাসম্পন্ন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন।
[২] الدِّيْنِ বলতে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, রসূলের আনুগত্য করা এবং তাওহীদ (একত্ব) ও শরীয়তকে মেনে নেওয়া। এটাই ছিল প্রত্যেক নবীর দ্বীন। এরই প্রতি তাঁরা স্ব-স্ব জাতিকে আহবান করেছেন। যদিও প্রত্যেক নবীর শরীয়ত ও নিয়ম-পদ্ধতির মধ্যে আংশিক পার্থক্য ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন, {لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَّمِنْهَاجًا} অর্থাৎ, তোমাদের প্রত্যেকের জন্য এক একটি শরীয়ত (আইন) ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি। (সূরা মাইদাহ ৫;৪৮ আয়াত) কিন্তু উল্লিখিত মৌলিক বিষয়ে সবাই শরীক ছিলেন। এই কথাটাকেই নবী (সাঃ) তাঁর এই ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, "আমরা নবীরা হলাম বৈমাত্রেয় ভাইস্বরূপ। আমাদের সকলের দ্বীন একটাই।" (সহীহ বুখারী ইত্যাদি) আর সেই একটি দ্বীন হল তাওহীদ (একত্ব) ও রসূলের আনুগত্যের নাম। অর্থাৎ, এঁদের (ঐক্যের) সম্পর্ক এমন আংশিক মসলা-মাসায়েলের সাথে নয়, যে ব্যাপারসমূহে দলীলাদির পরস্পর বিরোধ থাকে। অথবা যে ব্যাপারগুলোতে বুঝার মধ্যে কখনো তারতম্য ও তফাৎ থাকে। কেননা, এগুলোর ব্যাপারে নিজ নিজ ইজতিহাদী দ্বিমত অথবা মতবিরোধ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে এই শ্রেণীর গৌণ বিষয়াবলী ভিন্ন ভিন্ন হয় এবং হতে পারে। কিন্তু তাওহীদ ও আনুগত্য (দ্বীনের) কোন আংশিক বিষয় না, বরং তা হল (দ্বীনের) মৌলিক বিষয় যার উপর কুফরী ও ঈমানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।
[৩] কেবল এক আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর আনুগত্য (অথবা তাঁর রসূলের আনুগত্য যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য) করাই হল ঐক্যের ও ভ্রাতৃত্বের মূল। আর তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য থেকে বিমুখতা অথবা এতে অন্যকে শরীক করা হল বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্যের শিকড়। যাকে মহান আল্লাহ 'মতভেদ করো না' বলে নিষেধ করেছেন।
[৪] আর তা হল সেই তাওহীদ এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য।
[৫] অর্থাৎ, যাকে হিদায়াত পাওয়ার যোগ্য মনে করেন, তাকে হিদায়াতের জন্য নির্বাচন করে নেন।
[৬] অর্থাৎ, আল্লাহর দ্বীন অবলম্বন করার এবং তাঁরই জন্য ইবাদতকে বিশুদ্ধ করার তাওফীক তাকেই দান করেন, যে তাঁর আনুগত্য ও ইবাদতের প্রতি প্রত্যাবর্তিত হয়।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে, আর যা আমরা ওহী করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি কর না [১]। আপনি মুশরিকদেরকে যার প্রতি ডাকছেন তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে তার দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি দ্বীনের দিকে হেদায়াত করেন।
[১] দ্বীন প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়ার পর আল্লাহ এ আয়াতে সর্বশেষ যে কথা বলেছেন তা হচ্ছে "দ্বীনে বিভেদ সৃষ্টি করো না’ কিংবা ‘তাতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ো না। পূর্ববর্তী উম্মতদের কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষা গ্ৰহণ করে এ ধরনের কাজ থেকে সাবধান করে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে একটি সরল রেখা টানলেন। অত;পর এর ডানে ও বায়ে আরও কয়েকটি রেখা টেনে বললেন, ডান-বামের এসব রেখা শয়তানের আবিস্কৃত পথ। এর প্রত্যেকটিতে একটি করে শয়তান নিয়োজিত রয়েছে। সে মানুষকে সে পথেই চলার উপদেশ দেয়। অত;পর তিনি মধ্যবর্তী সকল রেখার দিকে ইশারা করে বললেন;
وَاَنَّ هٰذَاِصرَ اطِىْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُ
“আর এটা আমার সরল পথ, সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ কর।” [মুসনাদে আহমাদ; ১/৪৩৫] এ দৃষ্টান্তে সরল পথ বলে নবী-রাসূলগণের অভিন্ন দ্বীনের পথই বোঝান হয়েছে। এতে শাখা-প্ৰশাখা বের করা ও বিভেদ সৃষ্টি করা হারাম ও শয়তানের কাজ। এ সম্পর্কে হাদীসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন; “যে ব্যক্তি মুসলিমদের জামাত (সামষ্টিকভাবে সকল উম্মত) থেকে অর্ধ হাত পরিমাণও দূরে সরে পড়ে, সে-ই ইসলামের বন্ধনই তার কাধ থেকে সরিয়ে দিল’। [আবু দাউদ; ৪৭৬০] তিনি আরও বলেন, ‘জামাত (তথা মুসলিম উম্মতের) উপর আল্লাহর হাত রয়েছে।’ [নাসায়ী; ৪০২০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “শয়তান মানুষের জন্য ব্যাঘ্রস্বরূপ। বাঘ ছাগলের পেছনে লাগে। অত;পর যে ছাগল পালের পেছনে অথবা এদিক ওদিক বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে সেটির উপরই পতিত হয়। তাই তোমাদের উচিত দলের সঙ্গে থাকা-পৃথক না থাকা। [মুসনাদে আহমাদ; ৫/২৩২] মনে রাখতে হবে যে, মুসলিমরা সবাই এক উম্মত; তাদের থেকে কেউ আলাদা কোন দল করে পৃথক হলে সে উম্মতের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ঘটালো। এটাই শরীআতে নিন্দনীয়।
Tafsir Bayaan Foundation
তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। তুমি মুশরিকদেরকে যেদিকে আহবান করছ তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়; আল্লাহ যাকে চান তার দিকে নিয়ে আসেন। আর যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি হিদায়াত দান করেন।
Muhiuddin Khan
তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।
Zohurul Hoque
তিনি তোমাদের জন্য সেই ধর্ম থেকে বিধান দিচ্ছেন যার দ্বারা তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর যা আমরা তোমার কাছে প্রত্যাদেশ করছি, আর যার দ্বারা আমরা ইব্রাহীমকে ও মূসাকে ও ঈসাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম এই বলে -- ''ধর্মকে কায়েম করো, আর এতে একে-অন্যে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’’ মুশরিকদের জন্য এ বড় কঠিন ব্যাপার যার প্রতি তুমি তাদের আহ্বান করছ! আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে তাঁর কারণে নির্বাচিত করেন, আর তাঁর দিকে পরিচালিত করেন তাকে যে ফেরে।