কুরআন মজীদ সূরা আল-মু'মিন আয়াত ৬০
Qur'an Surah Ghafir Verse 60
আল-মু'মিন [৪০]: ৬০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِيْٓ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ۗاِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ ࣖࣖࣖ (غافر : ٤٠)
- waqāla
- وَقَالَ
- And said
- এবং বলেন
- rabbukumu
- رَبُّكُمُ
- your Lord
- তোমাদের রব
- id'ʿūnī
- ٱدْعُونِىٓ
- "Call upon Me;
- "তোমরা ডাকো আমাকে
- astajib
- أَسْتَجِبْ
- I will respond
- সাড়া দিবো আমি
- lakum
- لَكُمْۚ
- to you
- তোমাদেরকে
- inna
- إِنَّ
- Indeed
- নিশ্চয়ই
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- those who
- যারা
- yastakbirūna
- يَسْتَكْبِرُونَ
- (are too) proud
- অহংকার করে (বিমুখ থাকে)
- ʿan
- عَنْ
- to
- হ'তে
- ʿibādatī
- عِبَادَتِى
- worship Me
- আমার ইবাদাত
- sayadkhulūna
- سَيَدْخُلُونَ
- will enter
- অবশ্যই তারা প্রবেশ করবে
- jahannama
- جَهَنَّمَ
- Hell
- জাহান্নামে
- dākhirīna
- دَاخِرِينَ
- (in) humiliation"
- অপমানিত হয়ে"
Transliteration:
Wa qaala Rabbukumud 'ooneee astajib lakum; innal lazeena yastakbiroona an 'ibaadatee sa yadkhuloona jahannama daakhireen(QS. Ghāfir:60)
English Sahih International:
And your Lord says, "Call upon Me; I will respond to you." Indeed, those who disdain My worship will enter Hell [rendered] contemptible. (QS. Ghafir, Ayah ৬০)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তোমার প্রতিপালক বলেন- তোমরা আমাকে ডাকো, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব। যারা অহংকারবশতঃ আমার ‘ইবাদাত করে না, নিশ্চিতই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (আল-মু'মিন, আয়াত ৬০)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।[১] যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’[২]
[১] (অর্থাৎ, তোমরা আমার কাছে দু'আ কর, আমি তোমাদের দু'আ কবুল করব।) পূর্বোক্ত আয়াতে যেহেতু মহান আল্লাহ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার কথা আলোচনা করেছেন, তাই এখন এই আয়াতে এমন পথের দিশা দেওয়া হচ্ছে, যা অবলম্বন করে মানুষ পরকালের সৌভাগ্য লাভ করতে পারে। আয়াতে উল্লিখিত 'দু'আ'র অর্থ অধিকাংশ মুফাসসেরগণ ইবাদত নিয়েছেন। অর্থাৎ, কেবল এক আল্লাহরই ইবাদত কর। যেমন, হাদীসেও 'দু'আ'কেই ইবাদত বলা হয়েছে। ((الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ )) (مسند أحمد; ৪/২৭১، السنن الأربعة، مشكاة ২২৩০) এ ছাড়াও পরে উল্লিখিত يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِي থেকেও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এর অর্থ ইবাদত। কেউ কেউ বলেছেন, 'দু'আ' বলতে, দু'আ করাই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, মঙ্গল অর্জন ও অমঙ্গল দূরীভূত করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। কারণ, দু'আর (আভিধানিক অর্থঃ ডাকা এবং) শরীয়তী ও প্রকৃত অর্থ হল, চাওয়া। দ্বিতীয় অর্থে তার ব্যবহার রূপক। এ ছাড়াও দু'আর প্রকৃত অর্থের দিক দিয়ে এবং উল্লিখিত হাদীসের ভিত্তিতে তার অর্থ, ইবাদতই। কেননা, কারণ-ঘটিত নয় এমন অস্বাভাবিক কিছু কারো কাছে চাওয়া ও প্রার্থনা করাই হল তার ইবাদত করা। (ফাতহুল ক্বাদীর) উভয় অবস্থাতেই উদ্দেশ্য একটাই। আর তা হল, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে প্রয়োজন পূরণ এবং সাহায্যের জন্য ডাকা জায়েয নয়। কেননা, কারণ-ঘটিত নয় এমন অস্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণের জন্য কাউকে ডাকলে তা ইবাদত হয়। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য জায়েয নয়।
[২] এটা হল আল্লাহর ইবাদতকে যারা অস্বীকার করে, তা থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় অথবা তাতে যারা অন্যদেরকেও শরীক করে তাদের পরিণাম।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তোমাদের রব বলেছেন, 'তোমরা আমাকে ডাক [১], আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশে আমার 'ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে [২]।'
[১] ‘দোআ’র শাব্দিক অর্থ ডাকা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ কোন প্রয়োজনে ডাকার অর্থে ব্যবহৃত হয়। কখনও যিকরকেও দোআ বলা হয়। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আরাফাতে আমার দো'আ ও পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলগণের দোআ এই কলেমা;
لٰا إِلَهَ إِلَّااللّٰهُ وَحْلَهُ لٰا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
এতে যিকরকে দোআ বলা হয়েছে। কারণ, দো'আ দু' প্রকারঃ ১. প্রার্থনা বা কিছু পেতে দোআ করা ও ইবাদাতের মাধ্যমে দো'আ করা। চাওয়া বা প্রার্থনার দো'আ হল - আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চাওয়া। এতে চাওয়া আছে, যাচঞা আছে। পক্ষান্তরে ইবাদাতের দো’আর মধ্যে চাওয়া নেই। শুধু নৈকট্য লাভের জন্য যা যা করা হয় তাই এ প্রকারের ইবাদত। নৈকট্য লাভের সকল প্রকাশ্য-অপ্ৰকাশ্য কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে; কেননা যে আল্লাহর ইবাদাত করে, সে স্বীয় কথা ও অবস্থার ভাষায় তার রবের কাছে উক্ত ইবাদাত কবুল করার এবং এর উপর সাওয়াব দেয়ার আবেদন করে থাকে। পবিত্র কুরআনে দো’আর যত নির্দেশ এসেছে, আর আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দো'আ করা থেকে যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং দো'আকারীদের যত প্রশংসা করা হয়েছে, সে সবই প্রার্থনার দো'আ ও ইবাদাতের দো’আকে শামিল করে থাকে। যেমন, আল্লাহ বলেন,
فَادْعُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ
“সুতরাং আল্লাহকে ডাক তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে”। [সূরা গাফিরঃ ১৪] আরও বলেন,
وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا
“আর মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জ্বিনঃ ১৮] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এক বাণীতে বলেছেন, ‘দো’আই ইবাদত। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন। [আবু দাউদ; ১৪৭৯, তিরমিযি; ২৯৬৯, ইবন মাজাহ; ৩৮২৮] অর্থাৎ প্রত্যেক দো'আই ইবাদত এবং প্রত্যেক ইবাদতই দো'আ। কারণ এই যে, ইবাদত বলা হয় কারও সামনে চুড়ান্ত দীনতা অবলম্বন করাকে। বলাবাহুল্য, নিজেকে কারও মুখাপেক্ষী মনে করে তার সামনে সওয়ালের হস্ত প্রসারিত করা বড় দীনতা, যা ইবাদতের অর্থ। এমনিভাবে প্রত্যেক ইবাদতের সারমর্মও আল্লাহর কাছে মাগফেরাত ও জান্নাত তলব করা এবং দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা করা। আলোচ্য আয়াতেও “দো’আ” ও “ইবাদত” শব্দ দু'টিকে সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা, প্রথম বাক্যাংশে যে জিনিসকে দোআ শব্দ দ্বারা প্ৰকাশ করা হয়েছে দ্বিতীয় বাক্যাংশে সে জিনিসকেই ইবাদাত শব্দ দ্বারা প্ৰকাশ করা হয়েছে। এ দ্বারা একথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, দো’আই ইবাদাত আর ইবাদতই দো'আ। ঠিক এ বিষয়টিকে আমরা পবিত্র কুরআনের অন্য আয়াতে লক্ষ্য করতে পারি। সেখানে আল্লাহ বলেনঃ
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّن يَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَن لَّا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَن دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ *وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ
“সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে আহবান করে যা ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার আহবানে সাড়া দিবে না? আর অবস্থা তো এরকম যে, এসব কিছু তাদের আহবান সম্পর্কে অবহিতও নয়। যখন (কিয়ামতের দিন) মানুষদেরকে একত্রিত করা হবে, তখন সে সকল কিছু হবে তাদের শত্রু এবং সেগুলো তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে”। [সূরা আল-আহকাফঃ ৫-৬]
[২] উম্মতে মুহাম্মদীয়ার বিশেষ সম্মানের কারণে এই আয়াতে তাদেরকে দো'আ করার আদেশ করা হয়েছে এবং তা কবুল করারও ওয়াদা করা হয়েছে। আর যারা দো'আ করে না, তাদের জন্যে শাস্তিবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে দো'আ অর্থ যদি ইবাদতের দো'আ বোঝানো হয় তবে দো'আ বর্জনকারী অবশ্যই গুনাহগার এমনকি কাফেরও হবে। আর সে হিসেবেই ইবাদত বর্জনকারীকে জাহান্নামের শাস্তিবাণী শোনানো হয়েছে। আর যদি দো'আ' বলে “চাওয়া’ বা “যাচঞা করা” উদ্দেশ্য হয় তখন দোআ না করলে জাহান্নামের শাস্তিবাণী ঐ সময়ই শুধু হবে যখন সে অহংকারবশত; তা বর্জন করে। কেননা, অহংকারবশত; দো'আ বর্জন করা কুফরের লক্ষণ, তাই সে জাহান্নামের যোগ্য হয়ে যায়। নতুবা সাধারণ দো'আ ফরয বা ওয়াজিব নয়। দোআ না করলে গোনাহ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহর কাছে দো'আ অপেক্ষা অধিক সম্মানিত কোন বিষয় নেই। তিরমিযি; ৩৩৭০] অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হন। [তিরমিযি;৩৩৭৩]
উপরোক্ত আয়াতে ওয়াদা রয়েছে যে বান্দা আল্লাহর কাছে যে দো'আ করে, তা কবুল হয়। কিন্তু মানুষ মাঝে মাঝে দো'আ কবুল না হওয়াও প্রত্যক্ষ করে। এর জওয়াব দুটি। এক. দো'আ কবুল হওয়ার উপায় তিনটি। তন্মধ্যে কোন না কোন উপায়ে দো'আ কবুল হয়। (এক) যা চাওয়া হয়, তাই পাওয়া (দুই) প্রার্থিত বিষয়ের পরিবর্তে আখেরাতের কোন সওয়াব ও পুরস্কার দান করা এবং (তিন) প্রার্থিত বিষয় না পাওয়া। কিন্তু কোন সম্ভাব্য আপদ-বিপদ সরে যাওয়া। সুতরাং এর যে কোন একটি হলেই দোআ কবুল হয়েছে ধরে নিতে হবে। দুই. নির্ভরযোগ্য হাদীসমূহে কোন বিষয়কে দো'আ কবুলের পথে বাধা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা জরুরী। এক. হারাম খাবার ও হারাম পরিধেয় পরিধান; হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন কোন লোক খুব সফর করে এবং আকাশের দিকে হাত তুলে ইয়া রব, ইয়া রব, বলে দো'আ করে; কিন্তু তাদের পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছেদ হারাম পস্থায় অর্জিত। এমতাবস্থায় তাদের দো'আ কিরূপে কবুল হবে? [মুসলিম; ১০১৫] দুই. অসাবধান বেপরোয়া ও অন্যমনস্কভাবে দো'আর বাক্যাবলী উচ্চারণ করলে তাও কবুল হয় না বলেও হাদীসে বর্ণিত আছে। [তিরমিযি; ৩৪৭৯] তিন. অন্যায় কোন দো'আ যেন না হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুসলিম আল্লাহর কাছে যে দো”আই করে, আল্লাহ তা দান করেন, যদি তা কোন গোনাহ অথবা সম্পর্কচ্ছেদের দোআ না হয়। [মুসলিম; ২৭৩৫]
Tafsir Bayaan Foundation
আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’
Muhiuddin Khan
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।
Zohurul Hoque
আর তোমাদের প্রভু বলেন -- ''তোমরা আমাকে আহ্বান করো, আমি তোমাদের প্রতি সাড়া দেব। নিঃসন্দেহ যারা আমাকে উপাসনা করার বেলা অহংকার বোধ করে তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়।’’