Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আন নিসা আয়াত ৮৬

Qur'an Surah An-Nisa Verse 86

আন নিসা [৪]: ৮৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَاِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْهَآ اَوْ رُدُّوْهَا ۗ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا (النساء : ٤)

wa-idhā
وَإِذَا
And when
এবং যখন
ḥuyyītum
حُيِّيتُم
you are greeted
তোমাদেরকে সালাম করা হয়
bitaḥiyyatin
بِتَحِيَّةٍ
with a greeting
সম্মান সহকারে
faḥayyū
فَحَيُّوا۟
then greet
তোমরাও তখন সালাম দাও
bi-aḥsana
بِأَحْسَنَ
with better
উত্তমভাবে
min'hā
مِنْهَآ
than it
তার চেয়েও
aw
أَوْ
or
বা
ruddūhā
رُدُّوهَآۗ
return it
তার জওয়াব দাও (অনুরূপ ভাবে)
inna
إِنَّ
Indeed
নিশ্চয়ই
l-laha
ٱللَّهَ
Allah
আল্লাহ
kāna
كَانَ
is
আছেন
ʿalā
عَلَىٰ
of
উপর
kulli
كُلِّ
every
সব
shayin
شَىْءٍ
thing
কিছুর
ḥasīban
حَسِيبًا
an Accountant
হিসাবগ্রহণকারী

Transliteration:

Wa izaa huyyeetum bitahiy yatin fahaiyoo bi ahsana minhaaa aw ruddoohaa; innal laaha kaana 'alaa kulli shai'in Haseeba (QS. an-Nisāʾ:86)

English Sahih International:

And when you are greeted with a greeting, greet [in return] with one better than it or [at least] return it [in a like manner]. Indeed Allah is ever, over all things, an Accountant. (QS. An-Nisa, Ayah ৮৬)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

যখন তোমাদেরকে সসম্মানে সালাম প্রদান করা হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তমরূপে জওয়াবী সালাম দাও কিংবা (কমপক্ষে) অনুরূপভাবে দাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ (ক্ষুদ্র-বৃহৎ) সকল বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। (আন নিসা, আয়াত ৮৬)

Tafsir Ahsanul Bayaan

আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর। [১] নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।

[১] تَحِيَّةٌ আসলে تَحْيِيَةٌ (تَفْعِلَةٌ) ছিল। অতঃপর উভয় يَا (ইয়া)-কে একে অপরের মধ্যে 'ইদগাম' সন্ধি করলে تَحِيَّةٌ হয়ে যায়। এর অর্থ হল, দীর্ঘায়ু কামনার দু'আ কর। এখানে অভিবাদন বা সালাম করার অর্থে ব্যবহার হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর) উত্তম অভিবাদন বা সালাম করার (উত্তর দেওয়ার) ব্যাখ্যা হাদীসে এসেছে যে, 'আসসালামু আলাইকুম'এর উত্তরে 'অরাহমাতুল্লাহ' বৃদ্ধি করা এবং 'আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ'র উত্তরে 'অবারাকাতুহু' বৃদ্ধি করা। তবে কেউ যদি 'আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু' পর্যন্ত বলে, তাহলে কোন কিছু বৃদ্ধি না করে অনুরূপই উত্তর দিয়ে দিবে। (ইবনে কাসীর) অন্য আর একটি হাদীসে এসেছে যে, কেবল 'আসসালামু আলাইকুম' বললে দশটি নেকী হয়, 'অরাহমাতুল্লাহ' যোগ করলে বিশটি নেকী হয় এবং 'অবারাকাতুহু' পর্যন্ত বললে ত্রিশটি নেকী হয়। (মুসনাদ আহমাদ ৪/৪৩৯-৪৪০) মনে রাখা দরকার যে, এই নির্দেশ কেবল মুসলিমদের জন্য। অর্থাৎ, একজন মুসলিম যখন অপর মুসলিমকে সালাম জানাবে তখন উক্ত নীতি পালনীয়। পক্ষান্তরে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের ক্ষেত্রে প্রথমতঃ তাদেরকে প্রথমে সালাম দেওয়া যাবে না। দ্বিতীয়তঃ তারা সালাম দিলে কোন কিছু বৃদ্ধি না করে কেবল, 'অআলাইকুম' বলে উত্তর দিতে হবে। (বুখারী-মুসলিম)

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর তোমাদেরকে যখন অভিবাদন করা হয় তখন তোমরাও তার চেয়ে উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা সেটারই অনুরূপ করবে [১]; নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুর হিসেব গ্রহণকারী [২]।

[১] এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা সালাম ও তার জবাবের আদব বর্ণনা করেছেন। মূলত; ‘আস-সালাম’ শব্দটি আল্লাহ্ তা’আলার উত্তম নামসমূহের অন্যতম। যার অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তার আধার। বান্দা যখন এ কথা বলে তখন সে তার ভাইয়ের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও হেফাযত কামনা করে। সে হিসেবে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ এর অর্থ, ‘আল্লাহ তা’আলা তোমাদের সংরক্ষক’। সালামের উৎপত্তি সম্পর্কে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা যখন আদম ‘আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেন তখন তার উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাহ্ তা’আলা তাকে সৃষ্টি করে বললেন, যাও, ফেরেশ্‌তাদের অবস্থানরত দলকে সালাম করো এবং মন দিয়ে শুনবে, তারা তোমার সালামের কি জবাব দেয়। এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালাম। সুতরাং আদম ‘আলাইহিস সালাম গিয়ে বললেনঃ আসসালামু আলাইকুম। ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন- ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। ফেরেশতাগণ ওয়া রাহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করলেন। তারপর যারা জন্নাতে যাবে তারা প্রত্যেকেই আদম ‘আলাইহিস সালাম-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের উচ্চতা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েই আসছে। [বুখারীঃ ৬২২৭]

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক লোক এসে বললেন, আস্‌সালামুআলাইকুম, রাসূল তার সালামের জবাব দিলেন। তারপর লোকটি বসল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দশ। তারপর আরেকজন এসে বললঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ বিশ। তারপর আরও একজন এসে বললেনঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ ত্রিশ। [আবু দাউদঃ ৫১৯৫, তিরমিযীঃ ২৬৮৯]

এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, ইসলামী অভিবাদন অন্যান্য জাতির অভিবাদন থেকে উত্তম। জগতের প্রত্যেক সভ্য জাতির মধ্যে পারস্পারিক দেখা-সাক্ষাতের সময় ভালবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশার্থে কোন কোন বাক্য আদান-প্রদান করার প্রথা প্রচলিত আছে। কিন্তু তুলনা করলে দেখা যাবে যে, ইসলামী সালাম যতটুকু ব্যাপক অর্থবোধক, অন্য কোন জাতির অভিবাদন ততটুকু নয়। কেননা, এতে শুধু ভালবাসাই প্রকাশ করা হয় না, বরং সাথে সাথে ভালবাসার যথার্থ হকও আদায় করা হয়। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে দোআ করা হয় যে, আল্লাহ আপনাকে সর্ববিধ বিপদাপদ থেকে নিরাপদে রাখুন। এতে এ বিষয়েরও অভিব্যক্তি রয়েছে যে, আমরা ও তোমরা - সবাই আল্লাহ তা'আলার মুখাপেক্ষী। তাঁর অনুমতি ছাড়া আমরা একে অপরের উপকার করতে পারি না। এ অর্থের দিক দিয়ে বাক্যটি একাধারে একটি ইবাদাত এবং মুসলিম ভাইকে আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দেয়ার উপায়ও বটে। মোট কথা এই যে, ইসলামী সালামে বিরাট অর্থগত ব্যাপ্তি রয়েছে। যথা, [১] এটি আল্লাহর একটি নাম । তাছাড়া এতে রয়েছে আল্লাহ তা'আলার যিকর, [২] আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দেয়া, [৩] মুসলিম ভাইয়ের প্রতি ভালবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরকে ভালবাসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ঈমান পূর্ণ হবে না। আমি কি তোমাদেরকে একটা বিষয় শিক্ষা দিব, যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে ? তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও” [মুসলিমঃ ৫৪]

[৪] মুসলিম ভাইয়ের জন্য সর্বোত্তম দো'আ এবং [৫] মুসলিম ভাইয়ের সাথে এ চুক্তি যে, আমার হাত ও মুখ দ্বারা আপনার কোন কষ্ট হবে না। সহীহ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যার হাত ও জিহবা থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ সে-ই প্রকৃত মুসলিম। [বুখারী ১৫ মুসলিম; ৪১]

অমুসলিমরা কেউ যদি মুসলিমদেরকে সালাম দেয় তবে তার উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুম’ পর্যন্ত বলতে হবে। কারণ, তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়। যদি সে ভালো উদ্দেশ্যে বলে থাকে, তবে ভালো পাবে, আর যদি খারাপ উদ্দেশ্যে বলে, তবে এটা তার জন্য বদ দোআর কাজ করবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইয়াহুদীরা যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়, তখন তোমরা প্রত্তোত্তরে ‘ওয়া আলাইকুম’ বা তোমাদের উপরও অনুরূপ হোক এ কথাটি বলবে, কেননা তারা তোমাদের মৃত্যুর দো’আ করে থাকে। [বুখারী; ৬২৫৭; মুসলিম; ২১৬৪]

তাছাড়া সালাম যেহেতু মুসলিমদের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার, সেহেতু অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য তা প্রয়োগ করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে সালাম দিও না; যদি তাদের কারো সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হয়, তবে তাকে সংকীর্ণ পথে চলে যেতে বাধ্য করবে’। [মুসলিম; ২১৬৭]

[২] অর্থাৎ মানুষ এবং ইসলামী অধিকার; যথা সালাম ও সালামের জবাব ইত্যাদি সবই এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ তা’আলা এগুলোরও হিসাব নেবেন।

Tafsir Bayaan Foundation

আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী।

Muhiuddin Khan

আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।

Zohurul Hoque

আল্লাহ্ -- তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি নিশ্চয়ই তোমাদের সমবেত করবেন কিয়ামতের দিনে -- কোনো সন্দেহ নেই তাতে। আর কথা রাখার বেলা আল্লাহ্‌র চাইতে কে বেশী সত্যনিষ্ঠ?