কুরআন মজীদ সূরা আন নিসা আয়াত ৭৫
Qur'an Surah An-Nisa Verse 75
আন নিসা [৪]: ৭৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاۤءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَآ اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ اَهْلُهَاۚ وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّاۚ وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا (النساء : ٤)
- wamā
- وَمَا
- And what
- এবং কি হলো
- lakum
- لَكُمْ
- for you
- তোমাদের
- lā
- لَا
- (that) not
- (যে) না
- tuqātilūna
- تُقَٰتِلُونَ
- you fight
- তোমরা লড়াই করছ
- fī
- فِى
- in
- (মধ্যে)
- sabīli
- سَبِيلِ
- (the) way
- পথে
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- (of) Allah
- আল্লাহর
- wal-mus'taḍʿafīna
- وَٱلْمُسْتَضْعَفِينَ
- and (for) those who are weak
- অথচ দুর্বল
- mina
- مِنَ
- among
- (থেকে)
- l-rijāli
- ٱلرِّجَالِ
- the men
- পুরুষ
- wal-nisāi
- وَٱلنِّسَآءِ
- and the women
- ও নারী
- wal-wil'dāni
- وَٱلْوِلْدَٰنِ
- and the children
- ও শিশু
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- those who
- যারা
- yaqūlūna
- يَقُولُونَ
- say
- বলছে
- rabbanā
- رَبَّنَآ
- "Our Lord
- ''হে আমাদের রব
- akhrij'nā
- أَخْرِجْنَا
- take us out
- আমাদের বের কর
- min
- مِنْ
- of
- হতে
- hādhihi
- هَٰذِهِ
- this
- এই
- l-qaryati
- ٱلْقَرْيَةِ
- [the] town
- জনপদ
- l-ẓālimi
- ٱلظَّالِمِ
- [the] oppressor(s)
- জালিম
- ahluhā
- أَهْلُهَا
- (are) its people
- তার অধিবাসীরা
- wa-ij'ʿal
- وَٱجْعَل
- and appoint
- এবং বানিয়ে দাও
- lanā
- لَّنَا
- for us
- আমাদের জন্য
- min
- مِن
- from
- থেকে
- ladunka
- لَّدُنكَ
- Yourself
- তোমার নিকট
- waliyyan
- وَلِيًّا
- a protector
- কোন অভিভাবক
- wa-ij'ʿal
- وَٱجْعَل
- and appoint
- ও বানাও
- lanā
- لَّنَا
- for us
- আমাদের জন্য
- min
- مِن
- from
- থেকে
- ladunka
- لَّدُنكَ
- Yourself
- তোমার নিকট
- naṣīran
- نَصِيرًا
- a helper
- কোন সাহায্যকারী
Transliteration:
Wa maa lakum laa tuqaatiloona fee sabeelil laahi walmustad'afeena minar rijaali wannisaaa'i walwildaanil lazeena yaqooloona Rabbanaaa akhrijnaa min haazihil qaryatiz zaalimi ahluhaa waj'al lanaa mil ladunka waliyanw waj'al lanaa mil ladunka naseeraa(QS. an-Nisāʾ:75)
English Sahih International:
And what is [the matter] with you that you fight not in the cause of Allah and [for] the oppressed among men, women, and children who say, "Our Lord, take us out of this city of oppressive people and appoint for us from Yourself a protector and appoint for us from Yourself a helper"? (QS. An-Nisa, Ayah ৭৫)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায় নারী-পুরুষ আর শিশুদের (রক্ষার) জন্য লড়াই করবে না, যারা দু‘আ করছে- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ যালিম অধ্যূষিত জনপথ হতে মুক্তি দাও, তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের বন্ধু বানিয়ে দাও এবং তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের সাহায্যকারী করে দাও।’ (আন নিসা, আয়াত ৭৫)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায় নরনারী ও শিশুদের (উদ্ধারের) জন্য সংগ্রাম করবে না? যারা বলছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! অত্যাচারী অধিবাসীদের এই নগর হতে আমাদেরকে বাহির করে অন্যত্র নিয়ে যাও এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের সহায় নিযুক্ত কর।’[১]
[১] 'অত্যাচারী অধিবাসীদের এই নগর' বলতে (অবতীর্ণ হওয়ার দিক দিয়ে) মক্কাকে বুঝানো হয়েছে। হিজরতের পর সেখানে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট মুসলিমগণ --- বিশেষ করে বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা এবং ছোট শিশুরা কাফেরদের যুলুম-অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য দু'আ করতেন। তাই মহান আল্লাহ মুসলিমদেরকে এই বলে সতর্ক করলেন যে, তোমরা ঐ অসহায়-দুর্বল মুসলিমদেরকে কাফেরদের হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জিহাদ কেন কর না? এই আয়াতকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে আলেমগণ বলেছেন, মুসলিমরা যদি এই ধরনের যুলুম-অত্যাচারের শিকার হয় এবং কাফেরদের বেষ্টনে অবরুদ্ধ থাকে, তাহলে তাদেরকে কাফেরদের যুলুম-অত্যাচার থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জিহাদ করা অন্য মুসলিমদের উপর ফরয হয়ে যায়। এটা হল জিহাদের দ্বিতীয় প্রকার। আর প্রথম প্রকার হল, আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠা, প্রচার-প্রসার এবং তাকে জয়যুক্ত করার জন্য জিহাদ করা। এর উল্লেখ পূর্বের আয়াতে এবং পরের আয়াতে রয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নরনারী [১] এবং শিশুদের জন্য, যারা বলে, ‘হে আমাদের রব! এ জনপদ - - -যার অধিবাসী যালিম, তা- - -থেকে আমাদেরকে বের করুন; আর আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কাউকে অভিভাবক করুন এবং আপনার পক্ষ থেকে কাউকে আমাদের সহায় করুন।’
[১] মক্কা নগরীতে এমন কিছু দুর্বল মুসলিম রয়ে গিয়েছিলেন, যারা দৈহিক দুর্বলতা এবং আর্থিক দৈন্যের কারণে হিজরত করতে পারছিলেন না। পরে কাফেররাও তাদেরকে হিজরত করতে বাঁধাদান করেছিল এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতে আরম্ভ করেছিল, যাতে তারা ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। যেমন ইবন আব্বাস ও তাঁর মাতা, সালামা ইবন হিশাম, ওলীদ ইবন ওলীদ, আবু জান্দাল ইবন সাহল্ প্রমূখ। এসব সাহাবী নিজেদের ঈমানী বলিষ্ঠতার দরুন কাফেরদের অসহনীয় উৎপীড়ন সহ্য করেও ঈমানের উপর স্থির থাকেন। অবশ্য তাঁরা এসব অত্যাচার উৎপীড়ন থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য বরাবরই আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের দরবারে দো’আ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের সে প্রার্থনা মঞ্জুর করে নেন এবং মুসলিমদেরকে নির্দেশ দেন যাতে তাঁরা জিহাদের মাধ্যমে সেই নিপীড়িতদেরকে কাফেরদের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘আমি ও আমার মা অসহায়দের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম’ [বুখারী ৪৫৮৭]
এ আয়াতে মুমিনরা আল্লাহ তা’আলার দরবারে দুটি বিষয়ে দোআ করেছিলেন। একটি হলো এই যে, আমাদিগকে এই(মক্কা) নগরী থেকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করুন এবং দ্বিতীয়টি হলো, আমাদের জন্য কোন সহায় বা সাহায্যকারী পাঠান। আল্লাহ তাদের দু’টি প্রার্থনাই কবুল করে নিয়েছিলেন। তা এভাবে যে, কিছু লোককে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, যাতে তাঁদের প্রথম প্রার্থনাটি পূরণ হয়েছিল। অবশ্য কোন কোন লোক সেখানেই রয়ে যান এবং বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্তাব ইবন উসায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে সেসব লোকের মুতাওয়াল্লী নিযুক্ত করেন। অতঃপর তিনি এসব উৎপীড়িতদেরকে অত্যাচারীদের উৎপীড়ন-অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন। আর এভাবেই পূর্ণ হয় তাদের দ্বিতীয় প্রার্থনাটি। আয়াতে বলা হয়েছে যে, জিহাদের নির্দেশ দানের পিছনে একটি কারণ ছিল সে সমস্ত অসহায় দুর্বল নারী-পুরুষের প্রার্থনা। মুসলিমগণকে জিহাদ করার নির্দেশ দানের মাধ্যমে সে প্রার্থনা মঞ্জুরীর কথাই ঘোষণা করা হয়েছে।
Tafsir Bayaan Foundation
আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’
Muhiuddin Khan
আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।
Zohurul Hoque
যারা ঈমান এনেছে তারা যুদ্ধ করে আল্লাহ্র পথে, আর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে, অতএব শয়তানের সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। নিঃসন্দেহ শয়তানের চক্রান্ত চির-দুর্বল।