Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আন নিসা আয়াত ২৯

Qur'an Surah An-Nisa Verse 29

আন নিসা [৪]: ২৯ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْٓا اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّآ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ ۗ وَلَا تَقْتُلُوْٓا اَنْفُسَكُمْ ۗ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا (النساء : ٤)

yāayyuhā
يَٰٓأَيُّهَا
O you
ওহে
alladhīna
ٱلَّذِينَ
who
যারা
āmanū
ءَامَنُوا۟
believe[d]!
ঈমান এনেছে
لَا
(Do) not
না
takulū
تَأْكُلُوٓا۟
eat
তোমরা খেয়ো
amwālakum
أَمْوَٰلَكُم
your wealth
তোমাদের মাল-সম্পদ
baynakum
بَيْنَكُم
between yourselves
তোমাদের মাঝে
bil-bāṭili
بِٱلْبَٰطِلِ
unjustly
অন্যায়ভাবে
illā
إِلَّآ
But
তবে (অবশ্যই)
an
أَن
that
(যে)
takūna
تَكُونَ
(there) be
হবে
tijāratan
تِجَٰرَةً
business
ব্যবসা
ʿan
عَن
on
ভিত্তিতে
tarāḍin
تَرَاضٍ
mutual consent
সন্তোষের
minkum
مِّنكُمْۚ
among you
তোমাদের মধ্যকার
walā
وَلَا
And (do) not
এবং না
taqtulū
تَقْتُلُوٓا۟
kill
তোমরা হত্যা করো
anfusakum
أَنفُسَكُمْۚ
yourselves
তোমাদের নিজেদেরকে
inna
إِنَّ
Indeed
নিশ্চয়ই
l-laha
ٱللَّهَ
Allah
আল্লাহ
kāna
كَانَ
is
হলেন
bikum
بِكُمْ
to you
তোমাদের উপর
raḥīman
رَحِيمًا
Most Merciful
মেহেরবান

Transliteration:

Yaaa aiyuhal lazeena aamanoo laa taakulooo amwaalakum bainakum bilbaatili 'illaaa an takoona tijaaratan 'an taraadim minkum; wa laa taqtulooo anfusakum; innal laaha kaana bikum Raheemaa (QS. an-Nisāʾ:29)

English Sahih International:

O you who have believed, do not consume one another's wealth unjustly but only [in lawful] business by mutual consent. And do not kill yourselves [or one another]. Indeed, Allah is to you ever Merciful. (QS. An-Nisa, Ayah ২৯)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসায় বৈধ এবং নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনো না কিংবা তোমরা পরস্পরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি কৃপাময়। (আন নিসা, আয়াত ২৯)

Tafsir Ahsanul Bayaan

হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। [১] তবে তোমাদের পরস্পর সম্মতিক্রমে ব্যবসার মাধ্যমে (গ্রহণ করলে তা বৈধ)।[২] আর নিজেদেরকে হত্যা করো না;[৩] নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।

[১] بِالْبَاطِلِ (অন্যায়ভাবে)এর মধ্যে ধোঁকা-প্রতারণা এবং জাল-জুয়াচুরি, ছল-চাতুরী ও ভেজাল মিশ্রিত করা সহ এমন সব ব্যবসা ও অর্থ উপার্জনের পদ্ধতিও শামিল, যা শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ। যেমন, জুয়া, সুদ ইত্যাদি। অনুরূপ নিষিদ্ধ হারাম জিনিসের ব্যবসা করাও অন্যায়ভাবে পরের মাল ভক্ষণ করার শামিল। যেমন, বিনা প্রয়োজনের ছবি তোলা, গান-বাজনা বা ফিল্ম তথা অশ্লীল ছবির ক্যাসেট, সিডি বা তার প্লেয়ার যন্ত্র ইত্যাদি তৈরী করা, বিক্রি করা এবং মেরামত করা সব কিছুই নাজায়েয।

[২] এর জন্যও শর্ত হল, এই আদান-প্রদান হালাল জিনিসের হতে হবে। হারাম জিনিসের ব্যবসা আপোসে সম্মতিক্রমে হলেও তা হারাম হবে। তাছাড়া আপোসের সম্মতিতে 'খিয়ারে মজলিস'-এর বিষয়ও এসে যায়। অর্থাৎ, যতক্ষণ তারা একে অপর থেকে পৃথক না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় বানচাল করার অধিকার থাকবে। যেমন হাদীসে এসেছে, ((البَيْعَانِ بِالْخِيَارِ مَالَمْ يَتَفَرَّقاَ)) "ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের ততক্ষণ পর্যন্ত (ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে) এখতিয়ার থাকে, যতক্ষণ না তারা একে অপর থেকে পৃথক হয়।" (বুখারী, মুসলিম)

[৩] এর অর্থ আত্মহত্যাও হতে পারে, যা মহাপাপ। আর পাপ করাও হতে পারে, কেননা তাও ধ্বংসের কারণ হয়। আবার কোন মুসলিমকে হত্যা করাও হতে পারে। কারণ, সকল মুসলিম একটি দেহের মত। কাজেই কোন মুসলিমকে হত্যা করা মানেই নিজেকে হত্যা করা।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি [১] অন্যায়ভাবে [২] গ্রাস করো না; কিন্তু তোমরা পরস্পর রাযী হয়ে [৩] ব্যবসা করা বৈধ [৪]; এবং নিজেদেরকে হত্যা করো না [৫]; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।

[১] আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, পরস্পরের মধ্যে অন্যায় পন্থায় একের সম্পদ অন্যের পক্ষে ভোগ করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে আরও বুঝা যায় যে, নিজস্ব সম্পদও অন্যায় পথে ব্যয় করা কিংবা অপব্যয় করা নিষিদ্ধ।

[২] আয়াতে উল্লেখিত ‘বাতিল’ শব্দটির তরজমা করা হয়েছে ‘অন্যায়ভাবে’। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং অন্যান্য সাহাবীগণের মতে শরী’আতের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ এবং নাজায়েয সবগুলো পস্থাকেই বাতিল বলা হয়। যেমন, চুরি, ডাকাতি, আত্মসাৎ, বিশ্বাসভঙ্গ, ঘুষ, সুদ, জুয়া প্রভৃতি সকল প্রকার অন্যায় পন্থাই এ শব্দের অন্তর্ভুক্ত। [বাহরে মুহীত]

[৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিক্রির জন্য সন্তুষ্টি অপরিহার্য। [ইবন মাজাহঃ ২১৮৫] এ সন্তুষ্টি সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেচাকেনার ক্ষেত্রে আরও কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন, যেমন, “বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ে সওদা করার স্থান ছেড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত (সওদা বাতিল করার) সুযোগের অধিকারী থাকবে। তবে- পৃথক হওয়ার পরও এ সুযোগ তাদের জন্য থাকবে-যারা খেয়ার বা সুযোগের অধিকার দেয়ার শর্তে সওদা করবে”। [বুখারী; ২১০৭]

[৪] এর দ্বারা বলে দেয়া হয়েছে যে, যেসব ক্ষেত্রে ব্যবসার নামে সুদ, জুয়া, ধোঁকা-প্রতারণা ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পদ হস্তগত করা হয়, সেসব পস্থায় সম্পদ অর্জন করা বৈধ পন্থার অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং হারাম ও বাতিল পন্থা। তেমনি যদি স্বাভাবিক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও লেনদেনের মধ্যে উভয় পক্ষের আন্তরিক সন্তুষ্টি না থাকে, তবে সেরূপ ক্রয়-বিক্রয়ও বাতিল ও হারাম। কাতাদা বলেন, ব্যবসা আল্লাহর রিযক ও আল্লাহর হালালকৃত বিষয়, তবে শর্ত হচ্ছে, এটাকে সত্যবাদিতা ও সততার সাথে পরিচালনা করতে হবে। [তাবারী]

[৫] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে বলে যে, আমি অন্য কোন ধর্মের উপর। তাহলে সে ঐ ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বনী আদম যার মালিক নয় এমন মানত গ্রহণযোগ্য নয়। যে কেউ দুনিয়াতে নিজেকে কোন কিছু দিয়ে হত্যা করবে, এটা দিয়েই তাকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। যে কোন মুমিনকে লা’নত করল সে যেন তাকে হত্যা করল। অনুরূপভাবে যে কেউ কোন মুমিনকে কুফরীর অপবাদ দিল, সেও যেন তাকে হত্যা করল। [বুখারীঃ ৬০৪৭, মুসলিমঃ ১৭৬]

অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কেউ পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে চিরস্থায়ীভাবে পাহাড় থেকে পড়ার অনুরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে বিষ পানের আযাব ভোগ করতে থাকবে। আর যে কেউ কোন ধারাল কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে তা দ্বারা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। [বুখারীঃ ৫৭৭৮, মুসলিমঃ ১৭৫]

Tafsir Bayaan Foundation

হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।

Muhiuddin Khan

হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।

Zohurul Hoque

ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের সম্পত্তি জুচ্চুরি করে নিজেদের মধ্যে গ্রাস করো না, তবে যদি তোমাদের পরস্পর সম্মতিক্রমে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বারা এ হয়ে থাকে, আর নিজেদের লোকদের হত্যা করো না, যেহেতু আল্লাহ্ নিঃসন্দেহ তোমাদের প্রতি অফুরন্ত ফলদাতা।