Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আন নিসা আয়াত ২৩

Qur'an Surah An-Nisa Verse 23

আন নিসা [৪]: ২৩ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ اُمَّهٰتُكُمْ وَبَنٰتُكُمْ وَاَخَوٰتُكُمْ وَعَمّٰتُكُمْ وَخٰلٰتُكُمْ وَبَنٰتُ الْاَخِ وَبَنٰتُ الْاُخْتِ وَاُمَّهٰتُكُمُ الّٰتِيْٓ اَرْضَعْنَكُمْ وَاَخَوٰتُكُمْ مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَاُمَّهٰتُ نِسَاۤىِٕكُمْ وَرَبَاۤىِٕبُكُمُ الّٰتِيْ فِيْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَاۤىِٕكُمُ الّٰتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّۖ فَاِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ ۖ وَحَلَاۤىِٕلُ اَبْنَاۤىِٕكُمُ الَّذِيْنَ مِنْ اَصْلَابِكُمْۙ وَاَنْ تَجْمَعُوْا بَيْنَ الْاُخْتَيْنِ اِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا ۔ (النساء : ٤)

ḥurrimat
حُرِّمَتْ
Forbidden
নিষিদ্ধ করা হয়েছে (বিবাহ)
ʿalaykum
عَلَيْكُمْ
to you
তোমাদের উপর
ummahātukum
أُمَّهَٰتُكُمْ
(are) your mothers
তোমাদের মাতাদেরকে
wabanātukum
وَبَنَاتُكُمْ
and your daughters
ও তোমাদের কন্যাদেরকে
wa-akhawātukum
وَأَخَوَٰتُكُمْ
and your sisters
ও তোমাদের বোনদেরকে
waʿammātukum
وَعَمَّٰتُكُمْ
and your father's sisters
ও তোমাদের ফুফুদেরকে
wakhālātukum
وَخَٰلَٰتُكُمْ
and your mother's sisters
ও তোমাদের খালাদেরকে
wabanātu
وَبَنَاتُ
and daughters
ও কন্যাদেরকে
l-akhi
ٱلْأَخِ
(of) brothers
ভাই এর
wabanātu
وَبَنَاتُ
and daughters
ও কন্যাদেরকে
l-ukh'ti
ٱلْأُخْتِ
(of) sisters
বোনের
wa-ummahātukumu
وَأُمَّهَٰتُكُمُ
and (the) mothers
ও তোমাদের (সেই সব) মাতাদেরকে
allātī
ٱلَّٰتِىٓ
who
যারা
arḍaʿnakum
أَرْضَعْنَكُمْ
nursed you
তোমাদের দুধ পান করিয়েছেন
wa-akhawātukum
وَأَخَوَٰتُكُم
and your sisters
ও বোনদের
mina
مِّنَ
from
(থেকে)
l-raḍāʿati
ٱلرَّضَٰعَةِ
the nursing
দুধ পান করান (সম্পর্কিত)
wa-ummahātu
وَأُمَّهَٰتُ
and mothers
ও মাতাদেরকে
nisāikum
نِسَآئِكُمْ
(of) your wives
তোমাদের স্ত্রীদের
warabāibukumu
وَرَبَٰٓئِبُكُمُ
and your step daughters
ও তোমাদের স্ব-পত্নীদের কন্যাদেরকে
allātī
ٱلَّٰتِى
who
যারা
فِى
(are) in
মধ্যে
ḥujūrikum
حُجُورِكُم
your guardianship
তোমাদের ঘরে (লালিতা-পালিতা)
min
مِّن
of
পক্ষ হতে
nisāikumu
نِّسَآئِكُمُ
your women
তোমাদের স্ত্রীদের
allātī
ٱلَّٰتِى
whom
যাদের
dakhaltum
دَخَلْتُم
you had relations
তোমরা সহবাস করেছ
bihinna
بِهِنَّ
with them
তাদের সাথে
fa-in
فَإِن
but if
যদি তবে
lam
لَّمْ
not
নাই
takūnū
تَكُونُوا۟
you had
করে থাক
dakhaltum
دَخَلْتُم
relations
তোমরা সহবাস
bihinna
بِهِنَّ
with them
তাদের সাথে
falā
فَلَا
then (there is) no
নাই তবে
junāḥa
جُنَاحَ
sin
কোন দোষ (তাদের কন্যা)
ʿalaykum
عَلَيْكُمْ
on you
তোমাদের উপর
waḥalāilu
وَحَلَٰٓئِلُ
And wives
এবং (নিষিদ্ধ) স্ত্রীরা
abnāikumu
أَبْنَآئِكُمُ
(of) your sons
তোমাদের ছেলেদের
alladhīna
ٱلَّذِينَ
those who
যারা
min
مِنْ
(are) from
হতে
aṣlābikum
أَصْلَٰبِكُمْ
your loins
তোমাদের ঔরস
wa-an
وَأَن
and that
এবং (এও নিষিদ্ধ) যে
tajmaʿū
تَجْمَعُوا۟
you gather together
তোমরা একত্রিত করবে
bayna
بَيْنَ
[between]
মাঝে
l-ukh'tayni
ٱلْأُخْتَيْنِ
two sisters
দুই বোনের
illā
إِلَّا
except
কিন্তু
مَا
what
যা
qad
قَدْ
has
হয়েছে
salafa
سَلَفَۗ
passed before
অতীত (সেটা ধর্তব্য নয়)
inna
إِنَّ
Indeed
নিশ্চয়
l-laha
ٱللَّهَ
Allah
আল্লাহ
kāna
كَانَ
is
হলেন
ghafūran
غَفُورًا
Oft-Forgiving
ক্ষমাশীল
raḥīman
رَّحِيمًا
Most-Merciful
মেহেরবান

Transliteration:

Hurrimat 'alaikum umma haatukum wa bannaatukum wa akhawaatukum wa 'ammaatukum wa khaalaatukum wa banaatul akhi wa banaatul ukhti wa ummahaatu kumul laateee arda' nakum wa akhawaatukum minarradaa'ati wa ummahaatu nisaaa'ikum wa rabaaa'i bukumul laatee fee hujoorikum min nisaaa'ikumul laatee dakhaltum bihinna Fa il lam takoonoo dakhaltum bihina falaa junaaha 'alaikum wa halaaa'ilu abnaaa'ikumul lazeena min aslaabikum wa an tajma'oo bainal ukhtaini illaa maa qad salaf; innallaaha kaana Ghafoorar Raheema (QS. an-Nisāʾ:23)

English Sahih International:

Prohibited to you [for marriage] are your mothers, your daughters, your sisters, your father's sisters, your mother's sisters, your brother's daughters, your sister's daughters, your [milk] mothers who nursed you, your sisters through nursing, your wives' mothers, and your step-daughters under your guardianship [born] of your wives unto whom you have gone in. But if you have not gone in unto them, there is no sin upon you. And [also prohibited are] the wives of your sons who are from your [own] loins, and that you take [in marriage] two sisters simultaneously, except for what has already occurred. Indeed, Allah is ever Forgiving and Merciful. (QS. An-Nisa, Ayah ২৩)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে, কিন্তু যদি তাদের সাথে তোমরা সহবাস না করে থাক, তবে (তাদের বদলে তাদের মেয়েদেরকে বিয়ে করলে) তোমাদের প্রতি গুনাহ নেই এবং (তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং এক সঙ্গে দু’ বোনকে (বিবাহ বন্ধনে) রাখা, পূর্বে যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়ালু। (আন নিসা, আয়াত ২৩)

Tafsir Ahsanul Bayaan

তোমাদের জন্য হারাম (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে তোমাদের মাতাগণ, কন্যাগণ, ভগিনীগণ, ফুফুগণ, ভ্রাতুষ্পুত্রীগণ, ভাগিনেয়ীগণ, দুগ্ধ-মাতাগণ, দুগ্ধ-ভগিনীগণ, শাশুড়িগণ ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সহবাস হয়েছে, তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যাগণ, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে, তবে যদি তাদের (কন্যাদের মাতার) সাথে সহবাস না হয়ে থাকে, তাহলে তোমাদের (বিবাহে) কোন দোষ নেই। আর তোমাদের জন্য তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীকে (হারাম করা হয়েছে। হারাম করা হয়েছে) দুই ভগিনীকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা গত হয়ে গেছে, তা (ধর্তব্য নয়)। নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[১]

[১] যে মহিলাদের সাথে বিবাহ হারাম এখানে তার বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে সাত প্রকার নারী বংশীয় সম্পর্কের কারণে হারাম। আর সাত প্রকার নারী দুধ সম্পর্কের কারণে হারাম এবং চার প্রকার নারী বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হারাম। এ ছাড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, ফুফু-ভাইঝি অথবা খালা-বুনঝি উভয়কে একত্রে বিবাহ করা হারাম। বংশীয় সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হলঃ মায়েরা, মেয়েরা, বোনেরা, ফুফুরা, খালারা এবং ভাইঝি ও ভাগ্নীরা। আর দুধ সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হল, দুধমায়েরা, দুধ মেয়েরা, দুধ বোনেরা, দুধ ফুফুরা, দুধ খালারা এবং দুধ ভাইঝি ও ভাগ্নীরা। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হল, শাশুড়ী, সৎ মেয়ে (যে স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছে তার প্রথম স্বামীর মেয়েরা) এবং পুত্রবধু ও দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা। এ ছাড়া পিতার স্ত্রীও হারাম (যার কথা পূর্বে এসেছে)। আর হাদীস অনুযায়ী স্ত্রী যতক্ষণ পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার (স্ত্রীর) ফুফু, খালা এবং তার ভাইঝি ও ভাগ্নীর সাথে বিবাহ হারাম।

মায়েরা বলতে মায়ের মা (নানী), মায়ের দাদী এবং বাপের মা (দাদী) ও দাদীর মা ও তার দাদী এইভাবে পর্যায়ক্রমে যত আসবে সকলেই মায়ের আওতায় পড়বে। আর মেয়ের আওতায় পড়বে, পুতনীরা, নাতনীরা এবং পুতনী ও নাতনীদের মেয়েরা। ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্ম লাভকারিণী বেটি মেয়ের মধ্যে শামিল হবে কি না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তিন ইমাম তাকে মেয়ের মধ্যেই শামিল করেছেন এবং তার সাথে বিবাহ হারাম মনে করেছেন। তবে ইমাম শাফেয়ী বলেছেন, সে বিধিসম্মত মেয়ে নয়। কাজেই যেভাবে সে [يُوصِيكُمُ اللهُ فِي أَوْلادِكُمْ] (মহান আল্লাহ তোমাদেরকে ত্যক্ত সম্পদ সন্তানদের মধ্যে বণ্টন করার নির্দেশ দিচ্ছেন।) সন্তানের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সকলের ঐক্যমতে সে ওয়ারিস হয় না, অনুরূপ সে এই আয়াতেও মেয়ের মধ্যে শামিল হবে না। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। (ইবনে কাসীর) বোনের পর্যায়ে পড়বে সহোদরা বোন, বৈপিত্রেয়ী বোন এবং বৈমাত্রেয়ী বোন সকলেই। ফুফুর মধ্যে বাপের, নানার এবং দাদার তিন প্রকার বোনরা শামিল। খালার অন্তর্ভুক্ত হল, মায়ের এবং নানী ও দাদীর তিন প্রকারের বোনরা। ভাইঝি বলতে তিন প্রকার (সহোদর, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়) ভাইদের আপন মেয়ে এবং তাদের মেয়েদের মেয়ে সকলেই শামিল। ভাগ্নীর পর্যায়ে পড়ে তিন প্রকার বোনদের আপন মেয়ে এবং তাদের মেয়েদের মেয়ে।

দুধ সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হল, দুধ মা, যার দুধ আপনি দুধ পানের নির্দিষ্ট সময়ে (অর্থাৎ, দু'বছরের মধ্যেই) পান করেছেন। দুধ বোন, সেই মহিলা যাকে আপনার আপন মা অথবা দুধমা দুধ পান করিয়েছে। আপনার সাথেই পান করিয়ে থাক অথবা আপনার আগেই কিংবা আপনার পরে আপনার অন্য ভাই-বোনদের সাথে পান করিয়ে থাক। অনুরূপ যে মহিলার আপন মা অথবা দুধমা আপনাকে দুধ পান করিয়েছে, যদিও বিভিন্ন সময়ে পান করিয়ে থাকে। দুধ পানের কারণে সেই সমস্ত সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে, যা বংশীয় কারণে হারাম হয়। অর্থাৎ, দুধ মায়ের বংশীয় ও দুধ সম্পর্কের সন্তানরা দুধ পানকারীর ভাই-বোন, এই মায়ের স্বামী তার পিতা, এই পিতার বোনরা তার ফুফু, এই মায়ের বোনরা তার খালা, এবং এই মায়ের স্বামীর ভায়েরা তার চাচা হয়ে যাবে। আর দুধ পানকারী শিশুর বংশীয় ভাই-বোন ইত্যাদি দুধ পানের কারণে এই পরিবারের উপর হারাম হবে না।

বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা হারাম হয় তারা হল, স্ত্রীর মা অর্থাৎ, শাশুড়ী। (স্ত্রীর নানী-দাদীও এর অন্তর্ভুক্ত হবে) যদি কোন মহিলাকে বিবাহ করার পরে পরেই সহবাস না করেই তালাক দিয়ে দেয়, তবুও তার মায়ের (শাশুড়ীর) সাথে বিবাহ হারাম হবে। তবে যদি কোন মহিলাকে বিয়ের পর সহবাস না করেই তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তার মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয হবে। (ফাতহুল ক্বাদীর) رَبِيْبة 'রাবীবা' (সৎ বেটী) স্ত্রীর আগের স্বামীর মেয়ে। এটা শর্তের ভিত্তিতে হারাম হয়। যেমন, যদি সৎ বেটীর মায়ের সাথে সহবাস করে নেয় তবেই সে হারাম হবে, অন্যথা তার সাথে বিয়ে হালাল। فِي حُجُوْرِكُمْ (যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে) এটা অধিকাংশ অবস্থার দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, শর্ত হিসাবে বলা হয়নি। অতএব এই মেয়ে যদি কোন অন্য কারো অভিভাবকত্বে বা অন্য স্থানে লালিতা-পালিতা হয় বা অন্য জায়গায় বসবাস করে থাকে, তবুও তার সাথে বিবাহ হারাম। حلائل হল حَلِيْلَةٌ এর বহুবচন। حَلَّ يَحِلُّ (অবতরণ করা) ধাতু থেকে فَعِيْلَةٌ এর ওজনে فَاعِلَةٌ এর অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। স্ত্রীকে 'হালীলা' এই জন্য বলা হয়েছে যে, তার (অবতরণের জায়গা) বাসস্থান স্বামীর সাথেই হয়। অর্থাৎ, যেখানে স্বামী অবতরণ করে বা বসবাস করে, সেখানে সেও অবতরণ করে বা বসবাস করে। পোতা ও নাতীরাও পুত্রের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, তাদের স্ত্রীদের সাথেও বিবাহ হারাম। অনুরূপ দুধ সম্পর্কের ছেলেদের স্ত্রীরাও হারাম হবে। مِنْ أَصْلابِكُمْ (তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী) কথাটি সংযুক্ত করে এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, পালিত পুত্রের স্ত্রীর সাথে বিবাহ হারাম নয়। দুই বোনের (দুধ সম্পর্কের হোক বা বংশীয় সম্পর্কের তাদের) সাথে একই সময়ে বিবাহ হারাম। তবে তাদের কোন একজনের মৃত্যুর পর অথবা তালাকের পর ইদ্দত শেষে অপরজনের সাথে বিয়ে জায়েয। অনুরূপ চারজন স্ত্রীর মধ্য থেকে কোন একজনকে তালাক দেওয়ার পর পঞ্চমজনের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাহ করার অনুমতি নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দত পূরণ না হয়েছে।

বিঃ দ্রষ্টব্যঃ ব্যভিচার দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হবে কি না? এ ব্যাপারে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ উলামাগণের উক্তি হল, কোন ব্যক্তি কোন মহিলার সাথে ব্যভিচার করে ফেললে, ব্যভিচারের কারণে হারাম সাব্যস্ত হবে না। অনুরূপ স্ত্রীর মা (শাশুড়ী) অথবা মেয়ের সাথে কেউ ব্যভিচার করে ফেললে, আপন স্ত্রী তার উপর হারাম হয়ে যাবে না। (প্রমাণের জন্য দ্রষ্টব্যঃ ফাতহুল ক্বাদীর) হানাফী ও অন্য কিছু উলামাদের মত হল, ব্যভিচারে হারাম সাব্যস্ত হয়ে যাবে। তবে প্রথমে উল্লিখিত মতের সমর্থন কিছু হাদীসে পাওয়া যায়।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে [১] তোমাদের মা [২], মেয়ে [৩], বোন [৪], ফুফু [৫], খালা [৬], ভাইয়ের মেয়ে [৭], বোনের মেয়ে [৮], দুধমা [৯], দুধবোন [১০], শাশুড়ি ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সংগত হয়েছ তার আগের স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত মেয়ে, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে [১১], তবে যদি তাদের সাথে সংগত না হয়ে থাক তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। আর তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত ছেলের স্ত্রী [১২] ও দুই বোনকে একত্র করা, আগে যা হয়েছে, হয়েছে [১৩]। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

চতুর্থ রুকূ‘

[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে যাদের সাথে বিয়ে হারাম, এমন নারীদের বিবরণ দেয়া হয়েছে। তারা তিনভাগে বিভক্তঃ এক. ঐ সমস্ত হারাম নারী কোন অবস্থাতেই হালাল হয় না, তাদেরকে ‘মুহাররামাতে আবাদীয়া’ বা ‘চিরতরে হারাম মহিলা’ বলা হয়। এ জাতীয় মহিলা তিন শ্রেণীরঃ (১) বংশগত হারাম নারী, (২) দুধের কারণে হারাম নারী এবং (৩) শ্বশুর সম্পর্কের কারণে হারাম নারী চিরতরে হারাম। দুই. কোন কোন নারী চিরতরে হারাম নয়, কোন কোন অবস্থায় তারা হালালও হয়ে যায়। তাদেরকে ‘মুহাররামাতে মুআক্কাতাহ’ বা সাময়িক কারণে হারাম বলা হয়। এরা আবার দু’ শ্রেণীতে বিভক্তঃ (১) পরস্ত্রী সে যতক্ষণ পর্যন্ত পরের স্ত্রী থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম। কিন্তু যখনই অপরের স্ত্রী হওয়া থেকে মুক্ত হবে তখনই সে হালাল হয়ে যাবে। (২) কোন কোন মহিলা শুধুমাত্র অন্যের সাথে একসাথে বিবাহ করা হারাম। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বিবাহ করা হারাম নয়। যেমন, দুই বোনকে একসাথে স্ত্রী হিসেবে রাখা। খালা ও বোনঝিকে একসাথে স্ত্রী হিসেবে রাখা।

[২] অর্থাৎ আপন জননীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে। অর্থের ব্যাপকতায় দাদী, নানী সবই এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

[৩] স্বীয় ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করা হারাম। কন্যার কন্যাকে এবং পুত্রের কন্যাকেও বিয়ে করা হারাম। মোটকথা, কন্যা, পৌত্রী, প্রপৌত্রী, দৌহিত্রী, প্রদৌহিত্রী এদের সবাইকে বিয়ে করা হারাম।

[৪] সহদোরা বোনকে বিয়ে করা হারাম। এমনিভাবে বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রেয়া বোনকেও বিয়ে করা হারাম।

[৫] পিতার সহোদরা, বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রেয়া বোনকে বিয়ে করা হারাম। তিন প্রকার ফুফুকেই বিয়ে করা যায় না।

[৬] আপন জননীর তিন প্রকার বোন, প্রত্যেকের সাথেই বিয়ে করা হারাম।

[৭] ভ্রাতুষ্পপুত্রীর সাথেও বিয়ে হারাম; আপন হোক বৈমাত্রেয় হোক - বিয়ে হালাল নয়।

[৮] বোনের কন্যা অর্থাৎ ভাগ্নেয়ীর সাথেও বিয়ে হারাম। এখানেও বোনকে ব্যাপক অর্থে বুঝতে হবে।

[৯] যেসব নারীর স্তন্য পান করা হয়, তারা জননী না হলেও বিবাহ হারাম হওয়ার ব্যাপারে জননীর পর্যায়ভুক্ত এবং তাদের সাথে বিবাহ হারাম। ফেকাহবিদগণের পরিভাষায় একে ‘হুরমাতে রেযাআত’ বলা হয়। তবে কেবলমাত্র শিশু অবস্থায় দুধ পান করলেই এই ‘হুরমাত’ কার্যকরী হয়।

[১০] অর্থাৎ দুধ পানের সাথে সম্পর্কিত যেসব বোন আছে, তাদেরকে বিয়ে করা হারাম। এর বিশদ বিবরণ এই যে, দুধ পানের নির্দিষ্ট সময়কালে কোন বালক অথবা বালিকা কোন স্ত্রীলোকের দুধ পান করলে সে তাদের মা এবং তার স্বামী তাদের পিতা হয়ে যায়। এছাড়া সে স্ত্রীলোকের আপন পুত্র-কন্যা তাদেরই ভাই-বোন হয়ে যায়। অনুরূপ সে স্ত্রীলোকের বোন তাদের খালা হয় এবং সে স্ত্রীলোকের দেবর-ভাসুররা তাদের চাচা হয়ে যায়। তার স্বামীর বোনেরা শিশুদের ফুফু হয়ে যায়। দুধ পানের কারণে তাদের সবার পরস্পরের বৈবাহিক অবৈধতা স্থাপিত হয়ে যায়। বংশগত সম্পর্কের কারণে পরস্পর যেসব বিয়ে হারাম হয়, দুধ পানের সম্পর্কের কারণে সেসব সম্পৰ্কীদের সাথে বিয়ে করা হারাম হয়ে যায়। তাই একটি বালক ও একটি বালিকা কোন মহিলার দুধ পান করলে তাদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ে হতে পারে না। এমনিভাবে দুধভাই ও বোনের কন্যার সাথেও বিয়ে হতে পারে না। উকবা ইবন হারেস বলেন, তিনি আবি ইহাব ইবন আযীযের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। এক মহিলা এসে বলল, আমি উকবাকে এবং যাকে সে বিয়ে করেছে উভয়কে দুধ পান করিয়েছি। উকবা বললেন, আমি জানি না যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন। এর পূর্বে আপনি আমাকে কখনো বলেননি। তারপর তিনি মদীনায় আসলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কিভাবে এটা সম্ভব অথচ বলা হয়েছে। তখন উকবা তার স্ত্রীকে পৃথক করে দিলেন এবং অন্য একজনকে বিয়ে করেন। [বুখারীঃ ৮৮]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে ছিলেন। এমতাবস্থায় আয়েশা শুনতে পেলেন যে, হাফসার ঘরে যাওয়ার জন্য একজন পুরুষ লোক অনুমতি চাচ্ছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! একলোক আপনার পরিবারভুক্ত ঘরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার তো মনে হয় এটা অমুক ব্যক্তি। হাফসার কোন এক দুধ চাচা। তখন আয়েশা বললেন, অমুক যদি জীবিত থাকত-আয়েশার কোন এক দুধ চাচা তাহলে কি সে আমার কাছে প্রবেশ করতে পারত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যা, জন্মগত কারণে যা হারাম হয়, দুধগত কারণেও তা হারাম হয়৷ [বুখারী ৫০৯৯; মুসলিম; ১৪৪৪]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলতেন, জন্মের কারণে যাদেরকে হারাম গণ্য করো দুধ পানের কারণেও তাদেরকে হারাম গণ্য করবে। [মুসলিম; ১৪৪৫]

তবে এ দুধপান দু’বছরের মধ্যে হয়েছে কি না সে ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন জরুরী; কারণ, হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুধ পানের সময়টুকু যেন ঐ সময়েই সংঘটিত হয় যখন সন্তানের দুধ ছাড়া আর কোন খাবার দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ হতো না। [বুখারী ৫১০২; মুসলিম; ১৪৫৫]

[১১] এখানে অভিভাবকত্ব থাকার কথাটা শর্ত হিসাবে নয়; বরং সাধারণতঃ এ ধরনের মেয়েরা মায়ের সাথেই থাকে আর মা দ্বিতীয় বিবাহের কারণে তার স্বামীর কাছেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং এ ধরনের মেয়েদের অভিভাবকত্ব থাকা না থাকা উভয় অবস্থাতেই তাদের বিয়ে করা হারাম। উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি আবু সুফিয়ানের মেয়েকে বিয়ে করবেন? রাসূল বললেন যে, তাকে বিয়ে করা আমার জন্য জায়েয হবে না। আমি বললাম, আমি শুনেছি আপনি নাকি বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন। রাসূল বললেন, তুমি কি উম্মে সালামার মেয়ের কথা বলছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যদি সে আমার রাবীবা নাও হত তারপরও আমার জন্য জায়েয হত না। কেননা, আমাকে এবং তার পিতাকে সুআইবাহ দুধ পান করিয়েছেন। তোমরা তোমাদের কন্যাদের এবং তোমাদের বোনদের আমার কাছে বিয়ের জন্য পেশ করো না। [বুখারীঃ ৫১০৬]

[১২] অর্থাৎ আপন পুত্রের বিবাহিতা স্ত্রীকে বিবাহ করা হারাম। যদিও পুত্র শুধু বিবাহই করে-সহবাস না করে।

[১৩] এখানে বুঝানো হয়েছে যে, পূর্বে এ ধরনের যা কিছু ঘটেছে তা আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু যদি কেউ এরূপ অবস্থায় ইসলামে প্রবেশ করে তবে তাদের মধ্য থেকে দু’জনের একজনকে তালাক দিতে হবে। হাদীসে এসেছে, ফাইরোয আদ-দাইলামী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললামঃ আমি ঈমান এনেছি অথচ দুই বোন আমার স্ত্রী হিসেবে আছে। রাসূল বললেনঃ তুমি তাদের যে কোন একজনকে তালাক দিয়ে দাও। [ইবন মাজাহঃ ১৯৫১, তিরমিযীঃ ১১২৯]

অনুরূপভাবে এ একত্রিতকরণের মাস’আলার মধ্যে এমন দু’জনকেও একত্রে বিয়ে করা জায়েয নাই, যাদের একজন পুরুষ সাব্যস্ত হলে অন্যজনের জন্য তাকে বিয়ে করা জায়েয হত না। এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মহিলা এবং তার ফুফু অনুরূপভাবে কোন মহিলা ও তার খালাকে একত্রে বিয়ে করা যাবে না। [বুখারীঃ ৫১০৯]

Tafsir Bayaan Foundation

তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র করা(তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

Muhiuddin Khan

তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু।

Zohurul Hoque

তোমাদের জন্য অবৈধ হচ্ছে -- তোমাদের মায়েরা আর তোমাদের মেয়েরা আর তোমাদের বোনেরা আর তোমাদের ফুফুরা আর তোমাদের মাসীরা, আর ভাইয়ের মেয়েরা ও বোনের মেয়েরা, আর তোমাদের মায়েরা যারা তোমাদের স্তন্যদান করেছে, আর দুধ- মায়ের দিক থেকে তোমাদের বোনেরা, আর তোমাদের স্ত্রীদের মায়েরা, আর তোমাদের সৎ-মেয়েরা যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে -- তোমাদের তেমন স্ত্রীদের থেকে যাদের সাথে সহবাস করেছ, কিন্তু যদি তাদের সাথে সহবাস করে না থাক তবে তোমাদের অপরাধ হবে না, আর যারা তোমাদের ঔরস থেকে তোমাদের তেমন ছেলেদের স্ত্রীরা; আর যেন তোমরা দুই বোনের মধ্যে জমায়েৎ করো -- অবশ্য যা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে তা ব্যতীত। অবশ্য আল্লাহ্ হচ্ছেন পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।